This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

কুড়িগ্রামের জন্য কুড়িটি দাবি


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
চিলমারী টু ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু, রৌমারী পর্যন্ত রেললাইন ও গ্যাসলাইন সম্প্রসারণ, ৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয় চালু ও নির্বাচনী আইন সংস্কারসহ 'কুড়িগ্রামের জন্য কুড়িটি দাবি' সংসদ প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে তারা বলেন, গণকমিটি জন্মের পর থেকে দৃঢ়ভাবে একটানা লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে চিলমারীতে পেদীখাওয়া বাঁধের ক্ষতিপূরণ আদায়, চিলমারীকে রক্ষায় ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ণ, রমনা লোকাল দুইবার চলাচল, বাঁধের বাসিন্দাদের সম্মতিবিহীন ও পুনর্বাসনহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ ও চিলমারী নদীবন্দর চালুর দাবি প্রতিষ্ঠা; উলিপুরে বুড়িতিস্তা আন্দোলন, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের গঙ্গাধর নদী অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকানোসহ জেলা সদরে একটি শাটল ট্রেন আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নদনদীর ড্রেজিং এর প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছি।
আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রেলমন্ত্রীর সাক্ষাৎ আমরা পেয়েছি কিন্তু নিজ এলাকার সাংসদরা দরখাস্তে সুপারিশ তো দূর কি বাৎ, সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেননি। সাক্ষাৎ এর জন্য তাজুল চৌধুরীর পিএস ঘুষ পর্যন্ত নিয়েছে। তাই ভোটের আগে সাফ কথা জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের দাবিগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্ত করা না হলে ব্যালটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব আমরা দিব।

আমাদের দাবিসমূহ :
১. চিলমারী টু ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু।
২. ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী, রৌমারী-রাজীবপুর ও কুড়িগ্রামের বাকি অংশে ১ টি করে মোট ৩ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।
৩. চিলমারী টু রৌমারী/রাজীবপুর নৌ রুটে ফেরী সার্ভিস চালু।
৪. সোনাহাট টু কুড়িগ্রাম ও রৌমারী টু জামালপুর রেল লাইন চালু ও চিলমারী নদীবন্দর বাস্তবায়ন।
৫. রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর স্থাপন ও ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা।
৬. ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদনদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে কৃষি জমিসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা।
৭. ব্রহ্মপুত্রের খনিজ সম্পদ ব্যবহারপূর্বক কাঁচ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প স্থাপন এবং বাকি বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের দুই পাশে শহর গড়ে তুলে চরবাসিকে আধুনিক জীবনের সাথে যুক্ত করা।
৮. ব্রহ্মপুত্রে চরে হারিয়ে যাওয়া বন পুনরুদ্ধার করে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি ও মাছ-পাখি-কাছিম-শুশুকের বাস্তুসংস্থান নিশ্চিত করা।
৯. ৩শ মেঃওয়াট সম্পন্ন কয়েকটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা।
১০. আগামি ৫ বছরে রাষ্ট্রীয় খরচে ৫লক্ষ শ্রমিককে বিদেশে প্রেরণ করতে হবে।
১১. লালমনিরহাটে বিমানবন্দর ও আধুনিক রেলকারখানা স্থাপন করতে হবে।
১২. নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করতে হবে।
১৩. কুড়িগ্রাম জেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা ও ব্রহ্মপুত্রের তীর ধরে উলিপুর-চিলমারী ব্যাপী মেরিন ড্রাইভ সড়ক স্থাপন করা।
১৪. চরগবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা।
১৫. হাটগুলোতে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
১৬. চিলমারী-হরিপুর সেতুর নকশাঁয় রেলপথ যুক্ত করা।
১৭.দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপন ও অডিটরিয়ামগুলোকে সংস্কার করা এবং প্রতিটি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর স্থাপন।
১৮. অবৈধ ফকরুদ্দীন সরকারের দল নিবন্ধন আইন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আইন বাতিলের দাবি তোলা।
১৯. এক স্তরের সরকারের বদলে দুই স্তরের সরকারের দাবি তোলা। যেন কেন্দ্রীয় সরকার ও সাংসদগণ শুধু আইন প্রবর্তন করবেন আর স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা উন্নয়ন কাণ্ড পরিচালনা করবেন। এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণকে যেকোন সময় প্রত্যাহার করা যায়।
২০. ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার পূর্বক জনগণের হাতে ফেরান, প্রধানমন্ত্রী নামক পদের বদলে সবার হাতে ক্ষমতার বন্টন এর দাবি সংসদে তুলতে হবে।
জেলা কমিটির সভাপতি সালেহা ইয়াসমিন লাইলীর সভাপতিত্বে দাবিনামা পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার রায়। এছাড়াও জেলা ও উপজেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নানা রকমের সময় | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



স্থানীয় সময়, স্থানীয় মধ্য সময়, প্রমাণ সময় ইত্যাদি বিষয়গুলির ঠিকঠাক সংজ্ঞা ভূগোল বইগুলিতে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে অনেকের নানা অসম্পূর্ণ ও ভুল ধারণা আছে বলে আমি লক্ষ করেছি। যেমন ধরুন কেউ কেউ মনে করেন যে গ্রীণিচের স্থানীয় সময়কে গ্রীণিচের মধ্য সময় বা GMT (Greenwich mean time) বলে। আসলে কিন্তু তা নয়। ওরা 'Greenwich mean time' শব্দগুচ্ছে mean শব্দটির তাৎপর্য্য না বুঝে বিষয়টি ভুল বুঝে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে গ্রীণিচের স্থানীয় মধ্যসময়কে GMT বলে (স্থানীয় সময়কে নয়)। বর্ত্তমান নিবন্ধে এই বিষয়গুলি আলোচনা করছি, যা ভূগোলের শিক্ষকশিক্ষিকা ও ছাত্রদের এবং আগ্রহী সকলের খুব কাজে লাগবে বলে আমি আশা করি। এখানে আপাত সূর্য্য (apparent sun), মধ্যসূর্য্য (astronomical mean sun), স্থানীয় সময় (local time), মধ্যসময় (local mean time), কাল সমীকরণ (local mean time) ইত্যাদি বিষয়গুলির কথা আলোচনা করা হবে।

কোনো স্থানে সূর্য্যঘড়ি যে সময় দেয় তাকে ঐ স্থানের স্থানীয় সময় (local time) বলে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা হিসাবে সূর্য্য খুব একটা ভাল নয়। সূর্য্যঘড়ি সারা বছর ঠিক সময় দেয় না। একটা সংশোধনের দরকার হয়। ঐসংশোধনটা কবে কত (সূর্যঘড়ি কতটা স্লো বা কতটা ফাস্ট) তার গাণিতিক হিসাব আছে। প্রশ্ন: ঋতুভেদে দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি হয়, কিন্তু দিনরাত্রি মিলে সর্বদা ২৪ ঘণ্টাই থাকে কি? যদি তা থাকত, অর্থাৎ সূর্য যদি বছরের প্রতিদিনই ঠিক ২৪ ঘণ্টায় এক পাক খেত (আপাত), তাহলে ঋতুভেদে সূর্যঘড়িতে কোনো পরিবর্তন দরকার হত না। কিন্তু সৌরদিন সর্বদা সমান (২৪ ঘণ্টা) থাক না — কখনো একটু বেশী, কখনো একটু কম হয়। বছরের নানা তারিখে সৌরদিনের মান দেখুন:

 তারিখ সৌরদিন 
 ১লা জানুয়ারী ২৪ ঘণ্টা - ২৫.৩ সেকেণ্ড ( - মানে 'মাইনাস')
 ১৫ই ফেব্রুয়ারী  ২৪ ঘণ্টা -২.৮ সেকেণ্ড 
 ১লা এপ্রিল ২৪ ঘণ্টা -১৭.৯ সেকেণ্ড
 ১লা জুলাই  ২৪ ঘণ্টা -১১.৬ সেকেণ্ড
 ১৫ই সেপ্টেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +১৮.৯ সেকেণ্ড
 ১৫ই অক্টোবর  ২৪ ঘণ্টা +১৩.৪ সেকেণ্ড
 ১লা নভেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +১.৭ সেকেণ্ড
 ১৫ই ডিসেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +২৮.৮ সেকেণ্ড

তালিকায় দখছেন ১লা জানুয়ারী সেৌরদিন ২৪ ঘণ্টার চয়ে ২৫.৩ সেকেণ্ড কম, ১৫ই অক্টোবর ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১৩.৪ সেকেণ্ড বেশী। সৌরদিনের গড় মান ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সারা বছর ধ'রে সেৌরদিনর মান কিছুটা বাড়া-কমা করে (সৌরদিনর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মানের পার্থক্য প্রায় ৫৭ সেকেণ্ড)। এই বাড়া-কমার কারণ কী? পৃথিবী কি নিজ অক্ষে কখনো ধীরে, কখনো দ্রুত ঘোরে? না, তা নয়। পৃথিবীর অক্ষাবর্তন যথেষ্ট নিয়মিত। কিন্তু পৃথিবীতে দিনরাত্রির আবর্তনে আহ্নিকগতি  ছাড়া পৃথিবীর বার্ষিকগতিরও একটু প্রভাব আছে। সেটা সারা বছর সমান নয়। পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্য্যের চারদিকে ঘোরে। কক্ষপথের সব জায়গায় পৃথিবীর বেগ সমান থাকে না। এর ফলেই সারা বছর জুড়ে সেৌরদিনের একটু বাড়া-কমা হয়।

আকাশে সূর্যের দৈনিক আবর্তন সম্পূর্ণ নিয়মিত নয় — সূর্য কখনো একটু স্লো, কখনো একটু ফাস্ট ঘোরে। ঘড়ির কাঁটা হিসাবে সূর্য আদর্শ নয়। সূর্য্যঘড়ির এই অসুবিধা এড়াতে একটা কাল্পনিক সূর্যের কথা ভাবা হয় যা সর্বদাই ঠিক ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীকে এক পাক খায়। একে মধ্য সূর্য্য (astronomical mean sun) বলে। সূর্যঘড়ি অনুযায়ী যে সময় তাকে স্থানীয় সময় (local time) এবং মধ্য সূর্য্য অনুযায়ী যে সময় তাকে স্থানীয় মধ্য সময় (local mean time) বলে। আমাদের হাতঘড়িগুলি চলে মধ্য সময় অনুযায়ী।

স্থানীয় সময় থেকে স্থানীয় মধ্য সময়কে বিয়োগ করলে বিয়োগ ফলকে কাল সমীকরণ (equation of time) বলে। অর্থাৎ, কাল সমীকরণ = স্থানীয় সময় (সূর্য্যঘড়ির সময়) - স্থানীয় মধ্য সময়। বা, স্থানীয় মধ্য সময় = স্থানীয় সময় (সূর্য্যঘড়ির সময়) - কাল সমীকরণ। কাল সমীকরণের মান বছরের কবে কত তার একটা তালিকা দিই:

 তারিখ          কাল সমীকরণ           
 ০১ Jan         -০৩ মি. ৪৫ সে.   ( - মানে 'মাইনাস')
 ১৫ Jan         -০৯ মি. ৩৪ সে.         
 ০১ Feb          -১৩ মি. ৩৮ সে.         
 ১৫ Feb          -১৪ মি. ৭ সে.           
 ০১ Mar          -১২ মি. ২১ সে.         
 ১৫ Mar          -০৮ মি. ৫১ সে. 
 ০১ Apr          -০৩ মি. ৪৮ সে. 
 ১৫ Apr         -০২ সে.                     
 ০১ May       -০২ মি. ৫৭ সে. 
 ১৫ May       -০৩ মি. ৪০ সে. 
 ০১ June       -০২ মি. ৯ সে. 
 ১৫ June        -৩১সে.
০১ Jul          -০৩ মি. ৫৩ সে.
১৫ Jul          -০৫ মি. ৫৯ সে.
০১ Aug      -০৬ মি. ১৮ সে.
১৫ Aug         -০৪ মি. ২৪ সে.
০১ Sep         +০৬ সে.
১৫ Sep         +০৪ মি. ৫৫ সে.
০১ Oct         +১০ মি. ২৬ সে.
১৫ Oct       +১৪ মি. ১৭ সে.
০১Nov          +১৬ মি. ২৪ সে.
১৫ Nov     +১৫ মি. ২০ সে.
০১ Dec      +১০ মি. ৫০ সে.                 
১৫ Dec      +০৪ মি. ৪১ সে.

কাল সমীকরণ হচ্ছে সূর্য্যঘড়ি বছরের কবে কতটা স্লো বা ফাস্ট যায় তার হিসাব। ফেব্রুয়ারী মাসে সূর্য্যঘড়ি প্রায় ১৪ মিনিট স্লো যায়, তখন সূর্যঘড়ির সময়ের সঙ্গে ১৪ মিনিট যোগ করলে তবে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যাবে। মে মাসে সূর্যঘড়ি ৩-৪ মিনিট ফাস্ট যায়, তখন সূর্য্যঘড়ির সময় থেকে ঐ ৩-৪ মিনিট বিয়োগ করলে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যাবে। উপরের তালিকায় সূর্য্যঘড়ি স্লো গেলে কাল সমীকরণকে ঋণাত্মক এবং ফাস্ট গেলে কাল সমীকরণকে ধনাত্মক ধরা হয়েছে। সূর্যঘড়ির সময় থেকে কাল সমীকরণকে বীজগাণিতিক প্রথায় বিয়োগ করলে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যায়। ১৬ই এপ্রিল, ১৪ই জুন, ১লা সেপ্টেম্বর, ২৫শে ডিসেম্বর — এই চারটি দিনে কাল সমীকরণের মান প্রায় শূন্য। এই দিনগুলিতে স্থানীয় সময় ও স্থানীয় মধ্য সময় একই। এই দিনগুলিতে সূর্য (বাস্তব সূর্য্য) এবং মধ্য সূর্য্য একই সঙ্গে মধ্যরেখা অতিক্রম করে। বছরের বিভিন্ন তারিখে কাল সমীকরণের মান নিয়ে একটি লেখচিত্র অঙ্কন করলে কেমন হবে তা সঙ্গের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

সূর্য্যঘড়ির সময় থেকে ভারতীয় প্রমাণ সময় কী ক'রে বের করা যায় তা বলি। সূর্য্যঘড়ির সময় দেখুন (এটি আপনার স্থানের স্থানীয় সময়)। আপনার স্থানটি এলাহাবাদের পূর্বদিকে হলে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সূর্যঘড়ির সময় থেকে ৪ মিনিট সময় বিয়োগ করুন, স্থানটি এলাহাবাদের পশ্চিমে হলে ঐসময়টা যোগ করুন। পেলেন এলাহাবাদের স্থানীয় সময়। এলাহাবাদের স্থানীয় সময় থেকে ঐদিনের কাল সমীকরণ বিয়োগ করলে পাবেন এলাহাবাদের স্থানীয় মধ্য সময় বা ভারতের প্রমাণ সময়।

পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের বিস্তৃতি ৬৮°৭′ পূর্ব দ্রাঘিমা (অরুণাচলের পূর্ব সীমান্ত) থেকে ৯৭°২৫′ পূর্ব দ্রাঘিমা (গুজরাটের পশ্চিম সীমান্ত) পর্যন্ত। দুই দ্রাঘিমার পার্থক্য ২৯°১৮′ বা প্রায় ৩০°। ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় প্রায় ৪ মিনিট। তাহলে ৩০° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় ১২০ মিনিট বা ২ ঘণ্টা। অরুণাচলে যখন সূর্য্য অস্ত যায় গুজরাটে তার প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক পরে অস্ত যায়। পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের প্রায় মাঝখানে অবস্থিত এলাহাবাদের শহরের (৮২.৫° পূর্ব দ্রাঘিমা) স্থানীয় মধ্য সময় অনুযায়ী সারা ভারতের রেল, ডাক, বেতার এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম ইত্যাদি চালানো হয়। এলাহাবাদের স্থানীয় মধ্য সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় বলে।

আশা করি এখন বিষয়গুলি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হল। সকলকে ধন্যবাদ।

সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার এবং সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার এবং সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব বিষয়ে সামোসের অ্যারিস্টার্কাসের গবেষণা

খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে সামোসের অ্যারিস্টার্কাস (৩১০-২৩০ খ্রীঃপূঃ) অর্ধচন্দ্র ও সূর্য্যের কৌণিক দূরত্বের পরিমাপ করে এবং চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্ব থেকে পৃথিবী থেকে সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত এবং এই তিনি জ্যোতিষ্কের ব্যাসের অনুপাত নির্ণয় করেন। তাঁর পদ্ধতিটা খুবই সহজ। তবে তাঁর পরিমাপে কিছুটা ভুল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন সূর্য্য চাঁদের ১৯ গুণ দূরে আর তার ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ৬.৭ গুণ। আজকের দিনে আমরা জানি যে সূর্য্য চাঁদের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে আর তার ব্যাস পৃথিবীর প্রায় ১১০গুণ (চাঁদের ব্য়াসের প্রায় ৪০০ গুণ)। পরিমাপে ভুল করলেও সূর্য যে পৃথিবীর চেয়ে অনেক গুণ বড়, তা তিনি প্রমাণ করেছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলাফল ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বে তাঁর অনাস্থা এনে দেয়। সূর্য এত বড়, পৃথিবী এত ছোট — তাহলে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরবে কী ক'রে? তাঁর সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হল একটা বড় বস্তুর চারদিকেই একটা ছোটো বস্তুর ঘোরা উচিত। তখন তিনি বললেন যে আকাশের বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনির মতো পৃথিবীও একটি গ্রহ আর সব গ্রহই আসলে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। এছাড়া পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের কথাও তিনি বলেছিলেন। কোপার্নিকাসের বহু (প্রায় ১৮০০ বছর) আগে সৌরজগতের সম্পূর্ণ তত্ত্বটাই তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। তবে প্রাচীনকালের মানুষ তাঁর কথা মানেনি।

অ্য়ারিস্টার্কাস কী করে সূর্য্য ও তাঁদের দূরত্বের অনুপাত বের করেছিলেন তা বুঝতে গেলে সঙ্গের ছবি দেখুন। অর্ধচন্দ্র সূর্যের সঙ্গে নিঁখুত সমকোণ করে না, কোণটার মান ৯০° অপেক্ষা কিছু কম। কতটা কম? সেটাই আপনাকে মেপে দেখতে হবে। তাহলেই বের করতে পারবেন সূর্য চাঁদের কতগুণ দূরে। ছবিতে চাঁদের CD ব্যাসটা বাড়িয়ে দিলে পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে। AB ব্যাসটা তার সমকোণে, সেটা বাড়িয়ে দিলে সূর্যে পৌঁছায়। আপনি পৃথিবী থকে চাঁদের ADB  অর্ধাংশকে দেখতে পাবেন। সেটা একটা অর্ধ গোলক। সূর্যের আলো পড়ছে চাঁদের CBD অর্ধ গোলকে। পৃথিবী থেকে আপনি যে ADB  অংশ দেখছেন তার শুধু ODB  অংশ আলোকিত। AOD অংশে আলো পড়ছে না। ফলে আপনি যতটা দেখছেন তার পূর্বের অর্ধাংশ AOD  কালো আর পশ্চিমের অর্ধাংশ BOD আলোকিত। এজন্য আপনি দেখবেন আধখানা চাঁদ। ঐ অর্ধেন্দু কিন্তু আসলে চাঁদের গোলকের এক-চতুর্থাংশ। অতদূরে দৃষ্টির গভীরতা  কাজ করে না বলেই অমন (অর্ধবৃত্তাকার চাকতির মতো) দেখায়। ছবিতে চাঁদের কলা ½ (অর্ধচন্দ্র) বলে AB ও CD পরস্পর লম্ব।  AB সূর্যে পৌঁছায়, CD পৃথিবীতে। D বিন্দু ADB চাপটির মধ্য বিন্দু হবে। তাই ∠EOS=৯০°। অতএব ∠AES-এর মান ৯০° অপেক্ষা কম হবে। কারণ ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০°। সূর্যের দূরত্ব অসীম নয় বলে ∠ESO-র মান শূন্য হতে পারে না। পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখি ES রেখায়, চাঁদকে EO রেখায়। সূর্য ও চাঁদের কৌণিক ব্যবধান তাই ∠OES, এই কোণটা ৯০° অপেক্ষা কম। পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় ∠OES-এর মান প্রায় ৮৯পূর্ণ৬/৭°। আমাদের চাই সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত, অর্থাৎ ES/EO । কী ক'রে সেটা পাব? খুব সহজ: △EOS আঁকুন যাতে ∠SOE=৯০°, ∠SEO= ৮৯পূর্ণ৬/৭° (প্রায়) এবং∠ESO= ⅐°(প্রায়) হয়। ES এবং EO-এর দৈর্ঘ্য স্কেল দিয়ে মেপে নিয়ে ভাগ ক'রে ফেলুন, তাহলেই হল। ত্রিভুজটা বড় আঁকুন, ছোটো আঁকুন তাতে কোন অসুবিধা নেই; যদি কোণগুলি একই থাকে তবে ES/EO-এর মান সর্বদা একই পাবেন। এর কারণ সদৃশকোণী ত্রিভুজের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক। অবশ্য আপনাকে বডে়া করেই ত্রিভুজটা আঁকতে হবে। তাছাড়া  ⅐° কোণ আঁকা সহজ নয়। ES/EO  হচ্ছে ∠ESO (=⅐°)–এর সাপেক্ষে অতিভুজ ও লম্বের অনুপাত। ত্রিকোণমিতিতে একে বলে cosec ⅐°। ত্রিকোণমিতির তালিকা থেকে পাওয়া যায় cosec⅐°=৪০০ (চার শত, প্রায়)। অর্থাৎ সূর্য চাঁদের ৪০০ (চার শত) গুণ দূরে। ত্রিকোণমিতি জানলে আপনাকে বিরাট ত্রিভুজ অঙ্কন ক'রে মাপজোক করতে হবে না। ত্রিকোণমিতিক তালিকা দেখেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন।

অর্ধচন্দ্র যে সূর্যের সঙ্গে 89⁶/₇° (৮৯পূর্ণ৬/৭°)কোণ ক'রে থাকে (পৃথিবীতে বা আপনার চোখে) সেটা মাপবেন কী ক'রে? মাপা যায়, তার অনেক উপায় আছে। প্রাচীনকালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিজের হাতে কোণ মাপার যন্ত্র তৈরী করতেন। আজকাল অনেক ভাল ভাল সেক্সট্যাণ্ট যন্ত্র পাওয়া যায়। অ্যারিস্টার্কাস যে কী কায়দায় ঐকোণটা মেপেছিলেন তা আমার জানা নেই। আর একটা অসুবিধা আছে। চাঁদ যে কখন আধখানা হল তা বুঝবেন কী ক'রে? আলো-আঁধারের সংযোগস্থল ঠিক কখন সরলরেখা হল, খালি চোখে তার সঠিক সময়টা বোঝা কষ্টকর। দূরবীণে আরো সহজে বোঝা যায়। অ্যারিস্টার্কাসের ভুলটা এখানেই হয়েছিল। তিনি সূর্য ও অর্ধচন্দে্রর মধ্যবর্তী কোণটা ৮৯পূর্ণ৬/৭°-এর বদলে পেয়েছিলেন ৮৭°। তাই তিনি বলেছিলেন সূর্য চাঁদের ১৯ গুণ দূরে (আসলে ৪০০গুণ হবে)।

সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত ৪০০ বলে তো জানলাম, তাদের ব্যাসের অনুপাত কত? খুব সহজ, সূর্যের ব্যাসও চাঁদের ব্যাসের ৪০০ গুণ। কারণ আকাশে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের চাকতিই সমান মাপের দেখায়। সূর্যের ব্যাস চাঁদের ৪০০ গুণ এবং দূরত্বও ৪০০ গুণ, তাই সূর্যকে চাঁদের সমান দেখায় (প্রায়)। চাঁদ ও সূর্যের চাকতি যে প্রায় সমান আকারেরই দেখায় তা বুঝবেন কী ক'রে? ভেবে দেখুন, চাঁদের চাকতি সূর্যের চাকতির চেয়ে ছোটো হলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় তা পুরো সূর্যকে অল্প সময়ের জন্য (বড়জোর কয়েক মিনিট) ঢেকে দেয় কী ক'রে? মাঝে মাঝে আবার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়, তখন গ্রহণগ্রস্ত সূর্যের একেবারে কিনারার দিকে আলো থাকে। তখন চাঁদের চাকতি সূর্যের চাকতির চেয়ে একটুখানি ছোটো থাকে বলে চঁাদ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢাকতে পারে না, কিনারায় বলয়ের মতো একটু সরু আলোকিত ফালি থেকে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্য বা চাঁদ কারও দূরত্বই সর্বদা সমান থাকে না। তাই তাদের চাকতিগুলির ব্যাস সর্বদা সমান দেখায় না। কিন্তু পৃথিবী থেকে তাদের আপাত আকারটা গড়ে আমরা প্রায় সমান সমানই দেখি। মাপজোক ক'রেও এটা প্রমাণ করা যায়। চাঁদের চাকতির একটি ব্যাসের দু'টি প্রান্ত থেকে আপনার চোখ পর্যন্ত দু'টি রেখা টানলে তারা প্রায় ½° কোণ তৈরী করে। একে বলে চাঁদের কৌণিক ব্যাস। সূর্যের কৌণিক ব্যাসও ½° (প্রায়)।

এখন প্রশ্ন: অ্যারিস্টার্কাস কী করে সূর্য্য, চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত মাপলেন? চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। সেই ছায়ার ব্যাস মেপে আমরা সূর্য ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত জানতে পারি, কারণ পৃথিবী থেকে সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাতটা আমাদের জানা।পৃথিবীর ছায়াটা শঙ্কুর মতো সরু হয়ে মিলিয়ে যায়, তার কারণ সূর্য পৃথিবীর চেয়ে বড়। তা না হলে ছায়াটা ক্রমাগত সরু হওয়ার পরিবর্তে উল্টানো শঙ্কুর মতো মোটা হতে থাকত। তাহলে পৃথিবী নয়, সূর্যই বড়। কতগুণ বড়? সেটা বের করতে গেলে চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়া চাকতির কৌণিক ব্যাস জানতে হবে। চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্ব থেকে সেটা জানা যেতে পারে।
চাঁদর কৌণিক ব্যাস ½°। চাঁদর দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার কৌণিক ব্যাস, ধরুন, x°। ছায়াটা আর চাঁদ যদি পরস্পরক মাঝ বরাবর অতিক্রম করে তবেই গ্রহণের স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশী হবে। আমরা আকাশে সূর্য্যকে (ও তার উল্টাদিকে পৃথিবীর ছায়াকেও) ঘণ্টায় ১৫° এবং চাঁদকে ঘণ্টায় ১৪.৫° করে ঘুরতে দেখি। তাহলে চাঁদের দিকে পৃথিবীর ছায়াটা ঘণ্টায় (১৫°-১৪.৫°) বা ½° ক'রে এগোয়। যদি পৃথিবীর ছায়া এবং চন্দ্রবিম্ব কেন্দ্র বরাবর পরস্পরকে অতিক্রম করে তাহলে পৃথিবীর ছায়াকে নিজের ও চাঁদের ব্যাসের যোগফলের সমান (½°+x°) পথ অতিক্রম করতে হবে। পৃথিবীর ছায়া চাঁদের দিকে প্রতি ঘণ্টায় ½° এগিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে চন্দ্রগ্রহণ সর্বোচ্চ পৌনে চার ঘণ্টা (৩.৭৫ ঘণ্টা) পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তার অর্থ ছায়াটা মোট ½°x৩.৭৫ বা, ১.৮৭৫° যায়। এর থেকে চাঁদের চাকতির ব্যাস ½° বাদ দিলে বাকী (১.৮৭৫-½°) বা ১.৩৭৫° হল পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস। এই ব্যাস চাঁদের ব্যাসের ১.৩৭৫/½ বা ২.৭ গুণ (প্রায়)। মানে চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস চাঁদের ব্যাসের ২.৭ গুণ। এবার সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর কতগুণ তা সহজ অঙ্ক কষেই বের করা যায়। আপনারা সে অঙ্ক কষার চেষ্টা করতে পারেন (না পারলে বর্ত্তমান লেখকের 'প্রাথমিক জ্য়োতির্বিজ্ঞান' গ্রন্থ দেখতে পারেন)। অঙ্ক কষে দেখুন যে, সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ১১০ গুণ। আয়তন ব্যাসের ঘনের সমানুপাতিক বলে সূর্যের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ১১০-এর ঘন বা প্রায় ১৩,০০,০০০ গুণ হবে। অর্থাৎ, সূর্যের পেটে প্রায় তের লক্ষ পৃথিবী এঁটে যাবে!

চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত কত? আমরা চাঁদের ব্যাস ১ ধরলে সূর্যের ব্যাস=৪০০। সুতরাং পৃথিবীর ব্যাস=সূর্যের ব্যাসের ১১০ ভাগের এক ভাগ=৪০০/১১০=৩.৬ (প্রায়)। তাহলে পৃথিবীর ব্যাস ও চাঁদের ব্যাসের অনুপাত=৩.৬ঃ১, মানে চাঁদের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের চারভাগের একভাগ প্রায় (তার চেয়ে কিছু বেশী)। অবশ্য বিজ্ঞানীরা আরো ভাল ক'রে হিসাব ক'রে দেখেছেন ৩.৬-এর চেয়ে ৩.৭ সংখ্যাটাই আরও সঠিক। তাহলে পৃথিবীর আয়তন চাঁদের (৩.৭)-এর ঘন বা ৫০ গুণ (প্রায়)।

অ্যারিস্টার্কাসের হিসাবে অবশ্য চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস চাঁদের দ্বিগুণ। আর তিনি তাঁর হিসাবে সূর্যের দূরত্ব চাঁদের দূরত্বের ১৯ গুণ পেয়েছিলেন। সেই মতো তিনি বলেছিলেন সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ৬.৭ গুণ এবং আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৬.৭-এর ঘন বা ৩০০ গুণ (প্রায়)। পরিমাপে ভুল হলেও তাঁর পদ্ধতিটা সঠিক, এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। তাঁর পদ্ধতি অবলম্বন ক'রে আজকের দিনে আমরা সঠিক পরিমাপ পেতে পারি।

সূর্য যখন পৃথিবীর চেয়ে অত বড় তখন পৃথিবীর চারদিকে সূর্য না ঘুরে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘোরাটাই তাঁর স্বাভাবিক বলে মনে হল। বুধ আর শুক্র যে সূর্যের চারদিকে ঘোরে সেকথা আগেই বলে গিয়েছিলেন পন্টুসের হেরাক্লিদেস (৩৮৮-৩১৫ খ্রীঃপূঃ)। হেরাক্লিদেস আরো বলেছিলেন তারায় ভরা আকাশ নয়, পৃথিবীটাই পশ্চিম থেকে পূর্বে রোজ এক পাক ক'রে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী থেকে ধ্রুবতারা পর্যন্ত রেখাটাকে অক্ষ ক'রে। এরই ফলে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার প্রত্যহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে গতি লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বার্ষিক গতির কথা অবশ্য হেরাক্লিদেসের মাথায় আসেনি। সেটা এল অ্যারিস্টার্কাসের মাথায়। তিনি বিশ্বজগতের কেন্দ্র থেকে পৃথিবীকে হটিয়ে সেখানে সূর্যকে বসালেন। বললেন বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি সবাই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর আকাশের তারারা আছে সেখান থেকে বহু গুণ দূরে। সেইসঙ্গে হেরাক্লিডিস উদ্ভাবিত পৃথিবীর আহ্নিক গতির কথাও তিনি স্বীকার ক'রে নিলেন। এই আহ্নিক গতির জন্যই সূর্য-চন্দ্র-গ্রহ-তারার দৈনিক উদয়-অস্ত হয়। আর বার্ষিক গতির জন্য কী হয়? সেজন্য তারাদের পটভূমিতে সূর্যকে রোজ প্রায় ১° ক'রে পশ্চিম থেকে পূর্বে সরে যেতে দেখি। পৃথিবী তার কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূর্বে যত ঘুরবে, সূর্যকে তত পশ্চিম থেকে পূর্বে এক তারা ছেড়ে অন্য তারায় আসতে দেখা যাবে। এক বছর পরে সে আবার ফিরে আসবে আগের তারাটির পাশে। তারারা যে সূর্যের চেয়ে বেশী দূরে তা কিন্তু খালি চোখে আমরা বুঝতে পারি না। এর কারণ আমাদের দৃষ্টির গভীরতা অত দূরে কাজ করে না। পৃথিবী থেকে দেখে মনে হয় চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা সবাই সমান দূরে, তাই আকাশটা একটা ফাঁকা গোলকের মতো মনে হয়। আর মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনির রোজ পূর্বে উদয় ও পশ্চিমে অস্ত যাওয়া পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবীর অক্ষাবর্তনের ফল। তারা যে সূর্যের চারদিকেও ঘোরে তা বুঝবেন কী ক'রে? সেটা বোঝা যায় তারাও পশ্চিম থেকে পূর্বে একতারা ছেডে় অন্য তারায় আসে বলে। তারাদের পটভূমিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে পুরো এক পাক খেতে মঙ্গলের ৬৮৭ দিন, বৃহস্পতির ১২ বছর, শনির ২৯½ বছর লাগে। এই গতি আসলে তাদের সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর চেয়েও দূরে থেকে আবর্তনের ফল। তবে মাঝে মধ্যে গ্রহগুলি পশ্চিম থেকে পূর্বের তারায় না এসে পূর্ব থেকে পশ্চিমের তারার দিকে যায়, একে বলে বক্রগতি। এটা কেন হয়? মঙ্গলের কথা ভাবুন। সূর্যের চারদিকে নিজ নিজ কক্ষে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী আর মঙ্গল একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাশাপাশি এসে পড়ে। তখন অপেক্ষাকৃত দ্রুতগামী পৃথিবী মঙ্গলকে অতিক্রম ক'রে চলে যায়। ফলে পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হয় মঙ্গল যেন উল্টা দিকে যাচ্ছে। গ্রহদের বক্রগতির এই ব্যাখ্যা অ্যারিস্টার্কাস কতটা করতে পেরেছিলেন তা আমার জানা নেই। কোপার্নিকাস এই ব্যাখ্যাটা করেছিলেন। গ্রহগুলি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে ভাবলে কেন তারা পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরতে ঘুরতে কখনো কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে এই খামখেয়ালিপনা ব্যাখ্যা করা দুষ্কর।

পৃথিবী যদি সূর্যের চারদিকে ঘোরে তবে সারা বছর জুড়ে নক্ষত্রমণ্ডলগুলির আকৃতিতে একটা পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা উচিত। কালপুরুষের কথা ভাবুন। পৃথিবীর কক্ষপথের বিভিন্ন অবস্থান থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে দেখার জন্য সারা বছর তাকে একই রকম দেখার কথা নয়। পৃথিবীর আহ্নিকগতির জন্য যেমন তারাদের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরতে দেখা যায় তেমনি বার্ষিক গতির জন্যও তো তারাদের একটা গতি লক্ষ্য করা উচিত? পৃথিবীর কক্ষপথের একটা বিন্দু থেকে কালপুরুষকে আজকে যেমন দেখি, এক বছর পর পৃথিবী সেই বিন্দুতে ফিরে এলে তাকে আবার আগের মতোই দেখব কিন্তু ৬ মাস আগে-পরে দেখলেও কালপুরুষকে একই রকম দেখায় কেন? এর উত্তরে অ্যারিস্টার্কাস বললেন যে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসের তুলনায় তারাদের দূরত্ব বহুগুণ বেশী। তাই পৃথিবীর বার্ষিকগতির জন্য তারাদের কোনো বার্ষিক লম্বন (পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য তারাদের ঐগতিটাকে 'বার্ষিক লম্বন' বলে) দেখা যায় না। কক্ষপথে পরিক্রমণরত পৃথিবীকে নিয়ে সূর্য তারাদের দূরতে তুলনায় একটি বিন্দু বিশেষ। এইভাবে তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রসার বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন।

অ্যারিস্টার্কাসের চেয়ে প্রায় ২৩ বছরের ছোটো সমসাময়িক কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী আর্কিমিডিস তাঁর বিখ্যাত 'Sand Reckoner' গ্রন্থে অ্যারিস্টার্কাসের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধারণার কথা বলে গেছেন। আর্কিমিডিস তাঁর ঐ বইয়ে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বালুকণা দিয়ে ভর্তি করতে কতগুলি বালুকণা লাগবে সেই বিশাল সংখ্যাটি হিসাব করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছিলেন অ্যারিস্টার্কাসের ব্রহ্মাণ্ডের ধারণা। তবু, দুঃখের বিষয়, অার্কিমিডিস অ্যারিস্টার্কাসকে সমর্থন করেননি।

অ্যারিস্টার্কাস তাঁর সমসাময়িক কালের চেয়ে সহস্রাধিক বছর এগিয়ে ছিলেন। তাঁকে বোঝার মতো মানুষ তখন ছিল না। পশ্চিম এশিয়া মাইনরের সমুদ্র উপকূলের কাছে তখনকার দিনের বিখ্যাত নগরী মিলেটাসের সামোস দ্বীপে খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০ সালে তাঁর জন্ম। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তখন মিলেটাস বা সামোস নয়, গ্রীসের মূল ভূখণ্ডের এথেন্সও নয়, তা তখন চলে গেছে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত গ্রন্থাগারে। সামোস দ্বীপেই জন্ম হয়েছিল বিখ্যাত পণ্ডিত পিথাগোরাসের, তাঁর প্রায় তিন শতাব্দী আগে। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় দুই শতাব্দী আগে মিলেটাসের উত্তরে ক্লাজোমেনায়ে জন্মেছিলেন অ্যানােক্সাগোরাস নামে আর এক পণ্ডিত। পেরিক্লিসের আমলে তিনি এথেন্সে এসেছিলেন। চাঁদের যে নিজস্ব আলো নেই, চাঁদ যে সূর্যালোকে আলোকিত হয় একথা তিনি বলেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন চন্দ্রকলার কারণ ব্যাখ্যা করার। তিনি আরো বলেছিলেন চাঁদ মৃত্তিকা দিয়ে তৈরী এবং সূর্য একটা বড়, উত্তপ্ত, অগ্নিময় প্রস্তর। বলেছিলেন সূর্য নাকি অনেক বড়, এমনকি সমগ্র পেলপনেসাসের চেয়েও বড়! তখনকার লোকেরা অ্যানােক্সাগোরাসের এইসব কথা মেনে নিতে পারেননি। তখন লোকে ভাবত সূর্য ও চন্দ্র দুই দেবতা বিশেষ। অ্যানােক্সোগোরাস পেরিক্লিসের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বে পেরিক্লিস আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু পেরিক্লিসের শত্রুরা অ্যানােক্সাগোরাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ধর্মবিরুদ্ধ মতবাদ ও নাস্তিকতার অভিযোগে তাঁর কারাদণ্ড হয়েছিল। সম্ভবত পেরিক্লিস কোনোরকমে তাঁকে কারামুক্ত করতে পেরেছিলেন। অ্যানােক্সাগোরাস এথেন্স ত্যাগ ক'রে চলে যান। পরবর্তী কালে অ্যারিস্টটল বলেছিলেন চাঁদ কেন বাড়েকমে, গ্রহণ কেন হয় তা নিয়ে ভাবার কিছু নেই, ওটা চাঁদের স্বভাব। প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের চিন্তায় ছিল প্রধানত নীতিবাদ ও ধর্মের প্রাধান্য। অ্যারিস্টার্কাস জন্মেছিলেন অ্যারিস্টটলের প্রায় ৯৮ বছর পরে। তবু তাঁর সমসাময়িক আলেকজান্দ্রিয়ার বড় বড় পণ্ডিতেরা তাঁর যুগান্তকারী তত্ত্বটিকে সমর্থন করেননি। সেদিনকার চিন্তাবিদেরা তখনো অতটা সাহস অর্জন করতে পারেননি। ক্লিন্থেস নামে সমসাময়িক এক পণ্ডিত বলেছিলেন,“গ্রীকদের কর্তব্য সামোসের অ্যারিস্টার্কাসকে অধর্মের জন্য অভিযুক্ত করা। পর্যবেক্ষণলব্ধ কিছু ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে তিনি কিনা এই মহাবিশ্বের বাসগৃহ পৃথিবীকে বৃত্তপথে চলমান এবং ঘূর্ণায়মান ভেবেছেন !” প্রাচীনকালে শুধু একজন মাত্র পণ্ডিত অ্যারিস্টার্কাসকে সমর্থন করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি হলেন টাইগ্রিস নদী তীরের সেলেকিউস (জীবনকাল ১৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি)।

সৌরজগৎ নিয়ে অ্যারিস্টার্কাসের বইটি কিন্তু পাওয়া যায়নি। তাঁর শুধু একটি বইই পাওয়া গেছে, সেটির নাম 'সূর্য ও চাঁদের আকার ও দূরত্ব প্রসঙ্গে' (On The Size and Distances of the Sun and the Moon)। এই বইয়ে আছে শুধু চাঁদ ও সূর্যের দূরত্বের অনুপাত এবং সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের ব্যাসের অনুপাতের আলোচনা। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বার্ষিকগতির কথা এ বইয়ে নেই। এর কারণ কী? সৌরজগতের তত্ত্ব তিনি যে সত্যি সত্যিই আবিষ্কার করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর্কিমিডিস Sand Reckoner নামক বিখ্যাত গ্রন্থে অ্যারিস্টার্কাসের সৌরকন্দ্রিক তত্ত্বের কথা পরিষ্কার বলে গেছেন, এবং এই বিষয়ে আর্কিমিডিসের মতো বিদ্বাণের সাক্ষ্যকে চূড়ান্ত ধরার অসুবিধা নাই।

অ্যারিস্টার্কাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেলেও বেঁচে আছে তাঁর বিরুদ্ধে বহু পণ্ডিতের সমালোচনা। 'সূর্য ও চাঁদের আকার ও দূরতম প্রসঙ্গে' বইটিতে তিনি কেন ভূকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী মেনে নিয়েছিলেন? অ্যানােক্সাগোরাসের দুর্দশার কথা আমরা জানি। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় ১৯০০ বছর পরে গ্যালিলিওর লা²নার কথাও আমরা জানি। হতে পারে এই ধরণের একটা ভীতি অ্যারিস্টার্কাসকে প্রভাবিত করেছিল। সূর্য ও চাঁদের আকার নির্ণয়ে যে পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন তাতে ভূকেন্দ্রিক ও সৌরকেন্দ্রিক উভয় তত্ত্বেই কাজ চলে। তাই লোকে মেনে নেবে না ভেবে চট ক'রে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের কথা না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছিলেন। আবার এমনও হতে পারে যে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কার তাঁর  'সূর্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার বিষয়ে' বইটি লেখার পরবর্তী কালের চিন্তা এবং গবেষণার ফল।

কোপার্নিকাস তাঁর সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন ১৫৪৩ সালে। অ্যারিস্টার্কাসের সঙ্গে তাঁর প্রায় ১৮০০ বছরের ব্যবধান। ভাবতে অবাক লাগে অ্যারিস্টার্কাস এত আগে বলে গেলেও গ্রহদের গতিরহস্য পরবর্তী ১৮০০ বছর ধ'রে মানুষ বুঝতে পারেনি! গ্যালিলিও বলেছিলেন যে কোপার্নিকাস সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কর্তা নন, তিনি প্রাচীনকালের এই বিস্মৃতপ্রায় তত্ত্বটিকে উদ্ধার করেছিলেন। কোপার্নিকাস যখন ইটালীতে ডাক্তারী পড়তে গিয়েছিলেন তখন সদ্য আবিষ্কৃত প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিতদের লেখাগুলি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কোপার্নিকাস কিন্তু অ্যারিস্টার্কাসের থেকে নকল করেননি। একটি চিঠিতে কোপার্নিকাস লিখেছেন,“সিসেরোর মতে সাইরাকিউজবাসী হিসেটাস পৃথিবীর গতির কথা বলেছিলেন। প্লুটার্কের মতে প্রাচীনকালে আরো কেউ কেউ এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন।” এখানে প্লুটার্ক অ্যারিস্টার্কাসের কথা লিখেছিলেন। কাজেই কোপার্নিকাস অ্যারিস্টার্কাসের তত্ত্বের কথা জানতেন। তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ 'স্বর্গীয় গোলকদের ঘূর্ণন'-এর পাণ্ডুলিপিতে কোপার্নিকাস অ্যারিস্টার্কাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু বইটি ছাপাবার সময় তা বাদ পডে় যায়। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় বিস্মৃত তত্ত্বটির কতটুকু যে কোপার্নিকাসের হাতে পৌঁছেছিল সেটা অবশ্য খুবই সন্দেহজনক। প্রাচীনকালে কারও কারও রচনায় সেৌরকন্দ্রিক তত্ত্বের সমর্থন আছে সেটুকু জেনেই তিনি খুশি ছিলেন। তারপর বহুবছর ধ'রে নানা গাণিতিক হিসাবনিকাশ ক'রে ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বের চেয়ে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি প্রমাণ করেছিলেন। কোপার্নিকাস পেয়েছিলেন গ্যালিলিও এবং কেপলারের মতো যোগ্য উত্তরসূরী। সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে কোপার্নিকাস, কেপলার ও গ্যালিলিওর। তবু অ্যারিস্টার্কাসকে আমরা ভুলে যেতে পারি না। তাঁর বুদ্ধি এবং সাহস আমাকে অবাক করে।

ফ্রি ডাউনলোড করুন

A BROKEN DREAM: Rule of Law, Human Right, & Democracy by JUSTICE SURENDRA KUMAR SINHA



সীমাহীন দুর্ভোগে ২০ হাজার জনসাধারণ

রতনপুর থেকে মধুরহাইল্যা রাস্তার বেহাল দশা

  • হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:


কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রতনপুর থেকে মধুর হাইল্যা পর্যন্ত কাচা রাস্তাটি বেহাল অবস্থা হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার জনসাধারণ। পাকাকরণ না হওয়ায় শিক্ষা ও ব্যবসাসহ অন্যান্য উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। সরেজিমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রতনপুর এলাকা থেকে নাগেশ^রী পৌরসভার মধুর হাইল্যা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার কাচা রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। কোনো যান চলাচল করতে পারে না। রাস্তাটি দিয়ে বোর্ডেরবাজার, আদর্শপাড়া, সাপখাওয়া, তেলিয়ানিপাড়, মোল্লারভিটা, মধুরহাইল্যাসহ কয়েক এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এ রাস্তা দিয়ে চলাচলল করে। ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষাসহ সকল প্রকার যোগাযোগের মাধ্যম এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে প্রায় ১ হাজার জনসাধারন। বর্তমান সরকারের ব্যাপক উন্নয়নে এসব অঞ্চলের মানুষ খুশি থাকলেও তাদের মাঝে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই রাস্তাটি। সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। বেহাল রাস্তাটিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানা-খন্দক। বিভিন্ন জায়গায় দেবে গিয়ে উঁচু-নিচু হয়েছে। বৃষ্টির দিনে পানি আর কাদা জমে যাওয়ায় বিপাকে পড়তে হয় পথচারীদের। অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের কারনে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার এসব অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আন্দোলন করে আসছেন সামাজিক সংগঠন উচ্ছ¡াস এর যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান। তিনি প্রতিনিয়ত সাংবাদিক, স্থানীয় সরকার, রাজনীতিবিদ, ও সরকারি কর্মকর্তাসহ, চেয়ারম্যানগণকে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি তুলে ধরছেন। এ বিষয়ে মিজানুর রহমান মিজান বলেন, সাপখাওয়া বাজারে আমার ছোট খাটো একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু বাজার যেতে আমাদের কষ্টের সীমা থাকে না। বৃষ্টির দিনে রাস্তা দিয়ে চলাচর করতে পারি না। সাপখাওয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি ডা. শেখ মো. নুর ইসলাম জানান, আমাদের বাড়ি থেকে বাজার যাওয়া আসার রাস্তাটিতে কয়েক জায়গায় বড় বড় গর্ত ও খানা খন্দক রয়েছে। গাড়ি নিয়ে বের হওয়া যায না। বৃষ্টির দিনে যাতায়াতই বন্ধ করি। নাগেশ^রী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মোর্শেদা, লিজা বলেন প্রতিনিয়ত আমরা এ রাস্তা দিয়ে কলেজে যাই। রাস্তা খরাপের কারনে দ্বিগুন ভাড়া দিলেও রিকশা যায় না। তাই হেঁটে যেতে হয়। সাপখাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রয়হান, লিপা, রাহাত বলেন বৃষ্টির দিনে আমরা স্কুলে যেতে পারি না। আমাদের অনেক সমস্যা হয়। অনেক সময় পিছলে পড়ে যায় অনেকেই। রতনপুর এলাকার বাসিন্দা রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসম আব্দুল্লাহ আল ওয়ালিদ মাসুম বলেন, কয়েক এলাকার মানুষের চলাচলের মাধ্যম এই রাস্তা। কিন্তু এই কাচা রাস্তাটি পাকাকরণ না হওয়ায় অনেকদূর ঘুরে উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয়। এতে খরচও দ্বিগুণ পড়ে। রাস্তাটি অবিলম্বে পাকাকরণ হলে প্রায় ২০হাজার মানুষ কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। উপজেলা প্রকৌশলী বাদশা আলমগীর বলেন রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য একটি প্রকল্পে ধরা আছে। অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

কুড়িগ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার



  • হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম থেকেঃ




আজ(১৯/০৯/১৮) কুড়িগ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোরে সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীর কাছে নলেয়ার পাড় এলাকায় পরিত্যক্ত সেচ পাম্পের কাছে তাদেরকে পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিহতের মধ্যে সেলিনা আক্তার (১৪) আমিন উদ্দিন দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ডাকুয়াপাড়া গ্রামের জাবেদ আলীর মেয়ে। অপর কিশোর জাহাঙ্গীর আলম (১৬) কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং পাশর্^বর্তি পূর্ব কল্যাণ গ্রামের সৈয়দ আলীর পূত্র। সদর থানা পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করে। মরদেহ দুটি’র গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। 
স্থানীয়রা জানান, নিহত দু’জনকে সাইকেলে করে গতকাল ঘুড়তে দেখেছে অনেকেই। স্থানীয়দের ধারণা প্রেমের সম্পর্ক থেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যেই তারা বের হয়েছিল। 
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম জানান, সুরতহাল রির্পোট অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

কবিতা আবৃত্তি: জেলখানার চিঠি | নন্দদুলাল মণ্ডল

জেলখানার চিঠি

নাজিম হিকমতের কবিতা : জেলখানার চিঠি
অনুবাদ - সুভাষ মুখোপাধ্যায়
 আবৃত্তি : নন্দদুলাল মণ্ডল

ইরাটোস্থেনিস কর্তৃক পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



খ্রীষ্টপূর্ব্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রীক পণ্ডিত ইরাটোস্থেনিস কেমন করে পৃথিবীর পরিধি মেপেছিলেন তা এখানে সংক্ষেপে বলব। ইরাটোস্থেনিস (খ্রীঃপূঃ ২৭৩–১৯২) ছিলেন আর্কিমিডিসের ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর চেয়ে ১৩-১৪ বছরের ছোটো। তাঁর কর্মস্থল ছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। আলেকজান্দ্রিয়া ছিল তখনকার এক বিখ্যাত নগরী। আলেকজাণ্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য তিন সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। মিশর পড়েছিল টলেমির ভাগে। তিনি রাজধানী স্থাপন করেছিলেন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। টলেমি বংশীয় রাজারা বিদ্যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাঁদের রাজধানীতে সে যুগের বড় বড় পণ্ডিতদের ডেকে এনেছিলেন। আলেকজান্দ্রিয়ায় গড়ে উঠেছিল এক পৃথিবীবিখ্যাত গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন ইরাটোস্থেনিস। 

পৃথিবীর ব্যাসের তুলনায় সূর্য এত দূরে যে পৃথিবীর সব স্থানে পতিত সৌররশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হয়। পৃথিবী সমতল হলে একটা কূয়োর জলে রোদ পড়লে সব কূয়োর জলেই রোদ পড়ত। কিন্তু পৃথিবী গোলকাকার। ইরাটোস্থেনিস লক্ষ্য করেছিলেন যে, সূর্য্যের উত্তরায়নের দিন দুপুরবেলায় সৌররশ্মি কর্কটক্রান্তিরেখার উপর অবস্থিত সীন নামক স্থানের গভীর কূয়োর তলদেশ অবধি পৌঁছায় (জলে রোদ পড়ে) অথচ সেখান থেকে প্রায় ৫০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত তাঁর কর্ম্মস্থল আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়োর জলে বছরের কোনো দিনই রোদ পড়ে না। এই ঘটনার কারণ কী? এর কারণ হল আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়ো আর সীনের কূয়ো পরস্পর সমান্তরাল নয় — কূয়ো দুটি ভূকেন্দ্রে ৭.২° কোণ উৎপন্ন করে (সঙ্গের ছবি দেখুন)। ছবি দেখে বুঝতে পারা যায় ভূগোলকের ৭.২° মাপের একটি চাপের দৈর্ঘ্য ৫০০ মাইল (AS=৫০০ মাইল)। তাহলে সম্পূর্ণ ভূগোলকের পরিধি কত হবে? সেটা ঐকিক নিয়মের অঙ্ক:

 ৭.২° চাপের দৈর্ঘ্য = ৫০০ মাইল।
 বা ১° চাপের দৈর্ঘ্য = ৫০০÷৭.২ মাইল।
 বা ৩৬০° চাপের দৈর্ঘ্য = (৫০০÷৭.২)x৩৬০ মাইল = ২৫০০০ মাইল।

এই হল পৃথিবীর পরিধি। ইরাটোস্থেনিসের মতে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্ব ৫০০০ স্টাডিয়া (১ স্টাডিয়া মানে গ্রীকদের একটি স্টেডিয়ামের দৈর্ঘ্য), তাই পৃথিবীর পরিধি = (৩৬০÷৭.২) x৫০০০= ২৫০০০০ স্টাডিয়া। এখন গ্রীকদের একটি স্টেডিয়ামের দৈর্ঘ্য ঠিক কত ছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। 

পৃথিবীর পরিধি যদি ২৫০০০ মাইল হয় তাহলে তার ব্যাস কত? গোলকের পরিধিকে ৩.১৪ দিয়ে ভাগ করলে তার ব্যাস পাওয়া যায়। তাহলে পৃথিবীর ব্যাস = (২৫০০০÷৩.১৪) মাইল = ৭৯৬১ মাইল (প্রায়)। মনে রাখুন পৃথিবীর ব্যাস মোটামুটি ৮০০০ মাইল। তাহলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৪০০০ মাইল। যদি আরো সঠিক জানতে চান তো বলি পৃথিবীর ব্যাসার্ধের অধুনা নির্ণীত মান ৩৯৫৯ মাইল।

প্রশ্ন: আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়া আর সীনের কূয়ার ভিতরের কোণটার মান যে ৭.২° ইরাটোস্থেনিস তা কী করে জেনেছিলেন? উত্তরে বলি যে ঐ দিন সীনে সূর্য্যকে দেখা যায় আকাশের সুবিন্দুতে আর আলেকজান্দ্রিয়ার আকাশে সূর্য্যকে দেখা যায় সুবিন্দু থেকে ৭.২° দক্ষিণে। ছবিতে দেখুন যে, মধ্যাহ্ন সূর্য্যের এই অবনমনই (যা সহজেই মাপা যায়, তবে তার পদ্ধতিটা এখন বলার অবকাশ নাই) আলেকজান্দ্রিয়া ও সীনের দুই কূয়ার ভিতরের কোণ, যা ইরাটোস্থেনিস মেপেছিলেন। তারপরের প্রশ্ন: ইরাটোস্থেনিস আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্বটা কী ক'রে মাপলেন? উত্তরে বলি যে, সেজন্য উনি একটা লোক ভাড়া করেছিলেন। সেই লোকটা একটা উটের পিঠে মরুভূমি (মিশর মরুভূমির দেশ) পেরিয়ে চলে গেল আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীন। তাতে ক'দিন লাগল, একটা উট দিনে কতক্ষণ চলে আর কতক্ষণ বিশ্রাম নেয়, উটের গতিবেগ কত — এইসব তথ্য থেকে সহজেই বেরিয়ে যায় আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্ব।

ইরাটোস্থেনিস যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর পরিধি মেপেছেন তা বেশ সুন্দর! তাঁর পরিমাপে কিছুটা ভুল হয়েছিল (আমি আধুনিক মানগুলি দিয়েছি), কিন্তু আজকের দিনে এই পদ্ধতিতে অনায়াসে পৃথিবীর পরিধির মান সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা যায়। তাঁর পদ্ধতিটা একদম ঠিক, এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। এখন আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা করলে অনেকে উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।

স্বপ্ন | বিপ্লবী সাজু

                      বিপ্লবী সাজু


তুই আর কত স্বপ্ন দেখাবি...অভি
সিড়ি বেয়ে চাদের দেশে 
নিবি।
কাগজের নৌকা করে
মহাসাগর পাড়ি দিবি।

মহাকাশে স্যাটেলাইট হয়ে নয়
নক্ষত্র হয়ে জ্বলবি নিশিত রাতে।
সারা গায়ে চাদের আলো মেখে
চিনতে যেন পারেনা কেউ প্রাতে।।

মেঘলা আকাশে একটু লূকোচূরি

হালকা খুনটুসি।

চঞ্চলা বালিকার বাম পাজরে
হালকা দেওয়া ঘুসি।

বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিতে..
কিশোরীর নরম গা।
সাবধানে চলতে গিয়েও
পিছলে পরবে পা ।।

অট্টহেসে  তাকিয়ে কিশোর 
কিশোরীর পানে চেয়ে।
ঝরের তালে উম্মাদ বালক
আপন মনে গেয়ে।

কাগজের দূরবীণ | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র

শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্রের তৈরি কাগজের দূরবীণ


সম্প্রতি বাড়ীর কিছু বাতিল দ্রব্য থেকে আমি একটি ছোটো দূরবীণ তৈরী করেছি। সঙ্গে তার ছবি দিলাম। এই দূরবীণের নলটার অনেকটাই কাগজের তৈরী, তাই একে কাগজের দূরবীণ বলছি। এখন এই দূরবীণ নিয়ে কিছু কথা বলি।

বাড়ীতে একটা বহু দিনের পুরাণো ও খারাপ হয়ে যাওয়া ১৫x৫০ প্রিজম বাইনোকুলার ছিল। তার চারটা প্রিজমের একটা ভাঙা, তাছাড়া তাতে একটা জিনিষকে দু'টা দেখাত। এর ফলে সেটাকে বিশেষ ব্যবহার করা যেত না। সেই বাইনোকুলারের একটা অভিলক্ষ্য (যা একটি উত্তল লেন্স মাত্র), বাড়ীতে থাকা একটা পুরাণো অণুবীক্ষণের অভিনেত্র (মাইক্রোস্কোপের আইপিস) আর কিছুটা কাগজের নল দিয়ে আমি বর্ত্তমান ক্ষুদ্র দূরবীণটি তৈরী করেছি। এই দূরবীণের কাগজের নলটার এক দিকে আছে উত্তল লেন্সটা (যা  এর অভিলক্ষ্য), অন্যদিকে (সরু দিকটায়) আছে অভিনেত্রটা। ব্যাস! আর কিছু এতে নাই। নলটার দৈর্ঘ্য ঐ লেন্সের (অভিলক্ষ্যের) ফোকাস দূরত্বের সমান। কাছের ও দূরের বস্তু দেখার জন্য অভিনেত্রটাকে কাগজের নলের ভিতর দিয়ে সামনে-পিছনে সরিয়ে বস্তুটিকে ফোকাস করা যায়। এই কাজে সুবিধার জন্য একটা জলের বোতলের মুখের অংশটা কেটে নলের সরু প্রান্তটার ভিতরে লাগিয়ে দিয়েছে (সূতা দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা আছে)। অভিনেত্রটা তার ভিতর দিয়ে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত (sliding) করতে পারে। সবকিছু আটকাতে সূতা, টেপ, লিউকোপ্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করেছি। সবকটি দ্রব্যই বাড়ীতে ছিল, তাই এই দূরবীণ বানাতে আমার এক পয়সাও খরচ হয়নি।

এই দূরবীণে চাঁদের পাহাড়, বৃহস্পতির চারটি বৃহৎ উপগ্রহ, অ্যাণ্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, শুক্রের কলা (সরু কাস্তের মতো দশাটা), তারাপুঞ্জ (Star clusters) ইত্যাদি দেখা সম্ভব। কৃত্তিকা, মৌচাক ইত্যাদি পুঞ্জগুলিকে এতে নয়নাভিরাম লাগে...

এই দূরবীণে চাঁদের পাহাড়, বৃহস্পতির চারটি বৃহৎ উপগ্রহ, অ্যাণ্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, শুক্রের কলা (সরু কাস্তের মতো দশাটা), তারাপুঞ্জ (Star clusters) ইত্যাদি দেখা সম্ভব। কৃত্তিকা, মৌচাক ইত্যাদি পুঞ্জগুলিকে এতে নয়নাভিরাম লাগে। অবশ্য শনির বলয়টা এতে দেখা সম্ভব নয়। এটাকে একটা ষ্ট্যাণ্ডে লাগাতে পারলে আকাশ দেখার আরো সুবিধা হতে পারে, কিন্তু সে ব্যবস্থা আমি করে উঠতে পারিনি।

প্রসঙ্গত, গ্যালিলিওর তৈরী দূরবীণ (যা দিয়ে তিনি আকাশপর্যবেক্ষণে  যুগান্তর এনেছিলেন) এর চেয়ে খুব একটা বেশী শক্তিশালী ছিল না। আমি যেখানে অভিনেত্র (আইপিস) হিসাবে একটা মাইক্রোস্কোপের অভিনেত্র ব্যবহার করেছি, গ্যালিলিও সেখানে অভিনেত্র হিসাবে একটা ছোটো অবতল লেন্স মাত্র ব্যবহার করেছিলেন। তার ফলে তাঁর দূরবীণে প্রতিবিম্ব সোজা দেখাত। সেই তুলনায় আমার এই দূরবীণে প্রতিবিম্ব উল্টা (inverted) দেখায়। তবে আকাশ দেখার সময় তাতে কোনো অসুবিধা হয় না।

আপনাদের কারো বাড়ীতে একটি ভাল মানের উত্তল লেন্স  থাকলে তিনি এমন একটি দূরবীণ বানানোর চেষ্টা করতে পারেন। অভিনেত্র কলকাতার কলেজ ষ্ট্রীট থেকে কিনে নিতে পারেন।
  • ওপার বাংলার লেখকঃ শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



জরীফ উদ্দীনের খোলা চিঠি | জরীফ উদ্দীন

জরীফ উদ্দীন


তুই গরীব, তুই কথা কইস না।
তুই না খেয়ে মর কিংবা বিষ আলু খেয়ে মর। তবুও তুই প্রশ্ন করবি না কেন তুই দারিদ্র্যের শীর্ষে। না তুই বলতেই পাবি না কারণ এখানে শুধু তুই থাকিস না থাকে ভদ্দর লোকও। ওদের ইজ্জত বলতে তো কথা আছে!
শরম তখন লাগে না যখন কেউ জাল পরে গতর ঢাকে? ইজ্জত তখন যায় না যখন বিষাক্ত আলু খেয়ে মানুষ মারা যায় খুদার তাড়নায়? যখন চড়া মূল্য দিতে না পারায় বাসের সাদে করে ঢাকা, ফেনি, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা যায় কাজের জন্য  কিংবা যখন ফিরে আসে। তখন কোথায় থাকে আপনাদের লজ্জা? তোরা এই প্রশ্নও করতে পাবি না। কারণ তোরা গরিব।
তোদের জেলা দারিদ্র্য শীর্ষে থাক। তুইও বছরের পর বছর চ্যাম্পিয়ন হ দারিদ্র্যে। আর ওরা ওদের জমিদারি টিকিয়ে রাখুক, ওদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াক, ওদের ছেলে মেয়েররা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পড়ুক, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুক, ঢাকায় ওরা ফ্লাট কিনে নেক, ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করুক ইত্যাদি ইত্যাদি। তুই চেয়ে দেখ। কারণ তুই পাবি না তোর ভাগ্যের চাকা উল্টাতে। 
আর যদি চাকা উল্টাতে চাস তাহলে আওয়াজ তোল:

১. বালাসিঘাট-দেওয়ানগঞ্জ টানেলের সাথে লালমনিরহাট/কুড়িগ্রাম জেলাকে যুক্ত করতে চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুতে রেলপথ যুক্ত কর। 
২. বর্তমান চিলমারী-ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু; 
৩. একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা; 
৪. নবায়ণযোগ্য ৫শ মেঃ ক্ষমতার সৌরবিদ্যূৎকেন্দ্র নির্মাণ; 
৫. সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বিশ্ববিদ্যালয়; 
৬. মাছ-পাখি-প্রাণ ও জমি রক্ষায় স্থানীয় ও জাতীয় বালুদস্যুদের হটাও ও ব্রহ্মপুত্রের খনিজ ভিত্তিক শিল্পায়ণ; 
৭. রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে গেজেট প্রকাশ, ভাঙ্গন থেকে রক্ষা ও গ্যাস পাইপ-রেললাইন সম্প্রসারণ; 
৮. কুড়িগ্রাম থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলসংযোগ; 
৯. চিলমারী টু রৌমারী/রাজীবপুর ফেরী সংযোগ চালু; 
১০. লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালু; 
১১. মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত গরীব কৃষকদের রক্ষা; ১২. কুড়িগ্রাম জেলার জন্য বিশেষ বাজেট চালু করতে হবে।

ফিরোজ সরকার- এক অদম্য শিল্পী | আনু ইসলাম

শিল্পী ফিরোজ সরকার


চার(০৪) বছর বয়সে প্রাণ প্রিয় মা'কে চিরদিনের জন্য হারাবার পর লেখাপড়ায় মন বসতোনা, এমনকি বসাতেও পারতেননা। ভালোলাগতোনা কোন কিছুই। এদিক সেদিক করে চৌঁদিকে ছুটতেন তো ছুটতেন কেবলই কষ্টের বিপরীতে একটু যুত-কিঞ্চিত সুখের তরে। দিন যায় রাত কাটে অন্তরে বাসা বাঁধা কষ্টের সমাধান অসমাপ্তিই রয়ে যায়। বড়ই নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ত্ব আর হতাশায় কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। জানে ফিরে পাবেনা তবুও পাগলের মত খুঁজে ফেরত মা'কে। শান্ত্বনা নামের আল্পনা আর প্রকৃতির সুন্দর্যে খুঁজে নিত শূণ্য হৃদয়ে একতিলক শীতল মমতা। এ যেন শুষ্ক উত্তপ্ত বালির বুকে কিঞ্চিত জলে কেবলই শীতলতা আনার মত। যেখানে বুক ভরেনা শূণ্যতা রয়েই যায় তথাপিও। তবু কিছুটা লেখাপড়া করেছে নানার বাসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একমাত্র অবশিষ্ট আপন সম্বল নানীও বিডিআর বিদ্রোহকালীন সময়ে ইন্তেকাল করেন। আপন বলতে আর কেউ রইলোনা। 


এমন এ অভাগা দিনে অশান্ত ক্লান্ত কমল মনে বয়ে আসে এক মহিয়সী নারীর প্রেম। বড়ই উল্মাদ হয়ে পড়েন ফিরোজ ভাইয়া। অতঃপর জীবন সঙ্গীনি সেই সে অপূর্ব নারী। শূণ্যতার বুকে পূর্ণতা আর নিরাশার বুকে আশা নিয়ে বাঁচতে শিখেন ফিরোজ ভাই। নিজেকে সাজিয়ে নেন হরেক রঙে


এমন এ অভাগা দিনে অশান্ত ক্লান্ত কমল মনে বয়ে আসে এক মহিয়সী নারীর প্রেম। বড়ই উল্মাদ হয়ে পড়েন ফিরোজ ভাইয়া। অতঃপর জীবন সঙ্গীনি সেই সে অপূর্ব নারী। শূণ্যতার বুকে পূর্ণতা আর নিরাশার বুকে আশা নিয়ে বাঁচতে শিখেন ফিরোজ ভাই। নিজেকে সাজিয়ে নেন হরেক রঙে। কর্মের সন্ধানে রাজারহাট থেকে ছুটে আসেন কুড়িগ্রাম সদরে। কাজও পান। স্টিল মিস্ত্রির কাজ। মন বসতনা কোন ভাবেই। পরবর্তিতে কলেজ মোড়ে আর্ট স্টোল দেন। মনের আনন্দে অন্তরের মাধুরী মিশায়ে দিন-ভর কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অনেকবার বিভিন্ন কারনবশত স্থান পরিবর্তন করলেও ২০০৭ সালে তর্তাবোধায়ক সরকার ফকরুদ্দিন এর শাষনামলে উচ্ছ্বেদ করে দেওয়া হয় ফিরোজ ভাইয়ার চির সাধনার সেই আর্ট স্টোল। অর্থনৈতিকভাবে প্রায় পঙ্গু হয়ে যান ভাইয়া। তন্মধ্যে ভাবি হঠাৎ ব্রেইন স্টক করলে বড়ই হিমশিমে পরে যান এবং অনেক ঋৃণ করে বসেন। হাস্যজ্জ্বল সংসারে নেমে আসে এক গাঢ়কালো নিষ্ঠুর নির্মম হতাশা ও দূর্দিন। কিন্তু ভাইয়া তাতেও সাহস হারাননি। একনিষ্ঠ কাজ করতেন। আজ তিনি ঋৃণ মুক্ত প্রায়। তাই অন্য দশ জনের মতই একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন তার দুটি বাচ্চার ভালো একটা ভবিষ্যতের। হয়তো প্রশ্ন করছেন নিজেকে, যে কে এই ফিরোজ???


ফিরোজ ভাই অন্য কেউ না। একজন সাদামাটা আর সহজ সরল প্রাঞ্জল মনের মানুষ। পেশায় আর্টিস এবং ফটোগ্রাফার।যিনি অসামান্য ঋৃণে ঋৃণী করেছেন কুড়িগ্রামবাসীকে। যার তুলির ছোয়ায় আজও জীবন্ত হয়ে আছে কুড়িগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ফলক, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শহীদ মিনার, ইতিহাস বিভাগের দেয়ালে দিপ্তমান শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি(যা বর্তমানে চুনকামে ঢাকা), রোভার স্কাউট সহ প্রতিটি বিভাগের ব্যানার দেয়ালিকায় জীবন্ত হয়ে আছে উনার হাতের পরশ। যিনি দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা কুড়িগ্রামের জর্জ কোর্ট এলাকা, নাট্যশালা, শাপলা চত্ত্বর সহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাকে স্বপ্নের শহরে রুপায়িত করেছেন তারই পরম তুলির আঁচরে। কথা বলে জানলাম গত ১৯৯৪ থেকে এখন অবধি সূদীর্ঘ পথ পারি দিয়ে কাজ করছেন রাজশাহী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, পীরগাছা(রংপুর) ও লালমনিরহাট অঞ্চলে। 


আলপনা, ফম ফন্ট ডিজাইন, বিয়ের যাবতীয় সাজ সজ্জা, বর কনে ও বিয়ের গাড়ি সাজানো, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ব্যানার, পাথর খুদাই সহ হরেক রকম কাজের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট ফিরোজ ভাইয়া। কুড়িগ্রামের সাথে সাথে বাহিরে অনেক কদর এবং দর আছে উনার কাজের। শিল্পমনা মানুষটি তার পরিবারকেও গড়ে তুলেছেন সেভাবে। এখন সুখে দিন কাটে অল্প আয়েও। স্বপ্ন দেখেন বড় একটা পুষ্প ভান্ডার করবেন। সেখানে আরো থাকবে ডিজিটাল অনেক যন্ত্রপাতি। যা তার কাজগুলোকে সহজ করে দিবে অনেকাংশে। স্বপ্ন পুরোন হোক ফিরোজ ভাইয়ের, সুখ অসীম সুখ ধরা দেক তার সংসারে। আমাদের সকলের অনুপ্রেরনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হোক ফিরোজ ভাইয়া।

গল্প: নিঃশব্দ কান্না | বাদশা সৈকত

লেখকঃ বাদশা সৈকত


ছেলে একদিন ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসলো এবং রাতের খাবারের পর বাবা-মায়ের পাশের ঘরে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু ছেলে ঘুমাতে পারলো না। রাত যতই গভীর হতে থাকলো বাবার গোঙ্গানীর শব্দটা ততই বাড়তে থাকলো। সাথে শুকনো কাশির ঢকাশ ঢকাশ শব্দ। মায়েরও কোকানীর শব্দটা রাতের নিস্তদ্ধতাকে দুরে ঠেলে ছেলের কানে আঘাত করতে থাকলো।

বাবা মায়ের এ অবস্থা দেখে ছেলে বিছানা ছেড়ে উঠে বাবা-মায়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ডাকতে থাকলো। ছেলের কন্ঠ শুনে মা কোন রকমে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দিলো। সে নাগাত বাবারও গোঙ্গানীর শব্দটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ছেলে তার মাকে বললো-
         -আজও দুজনেই ঔষধ খাননি।
মা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলে আবার বললো-
         -কথা বলছেন না কেন? ঔষধ কি শেষ হয়ে গেছে?
এবার মা বললেন-
          -তোর বাবা ঔষধ আনতে ভুলে গেছে।
ছেলে বললো-
          -আমি জানি বাবা কেনন ঔষধ আনতে ভুলে যান। আমি না কতবার বলেছি আমাকে আর টাকা পাঠাতে হবে না। আমি টিউশনি করেই আমার লেখা-পড়ার খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। বুঝেছি বাবা বাজারে ঔষধ কেনার টাকা নিয়ে গিয়ে সেই টাকাই আবারও আমাকে পাঠিয়েছে।

ছেলে আর কোন কথা না বলে তার ঘরে ফিরে গিয়ে বিছানায় গা দিলো। কিন্তু বাকী রাত আর ঘুমাতে পারলো না। যদিও বা বাবা-মায়ের গোঙ্গানীর শব্দটা তেমন আর শোনা যাচ্ছিলো না। ছেলে জানে তার বাবা-মা কতটা কষ্ট করে শরীরের কষ্টগুলোকে চেপে রেখেছে। যাতে করে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে তাদের কষ্টের শব্দ শুনে কোন কষ্ট না পায়।

ছেলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে তাদের অতীত আর বর্তমানের কথা ভাবতে থাকলো।
কৃষক পরিবারের অতীতটা ভালোই কাটছিল তাদের। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া আর সংসারের ব্যায়ভার বেড়ে যাওয়ায় অভাব তাদের সংসারে হাতছানী দিতে থাকে। সামান্য জমির ধান, গাছের সুপারীর টাকায় এখন আর কুলায় না। তারপরও বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের এই আশায় নিজের জীবনকে বাজি রেখে লেখা-পড়া করাচ্ছেন যে তারা একদিন শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরী করবে। তখন আর অভাব নামের কোন দ্বৈত্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে পারবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ফজর হয়ে আসলো। ছেলে ভাবে তার বাবা-মা হয়তো বর্তমানের বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তারা ভাবেন তাদের অসুখের কষ্টের চেয়ে সন্তানের না খেয়ে থাকার কষ্টটাই তাদের কাছে বেশি বেদনা দায়ক। অথচ বাবা-মায়ের এই খাঁটি কষ্টের আশাগুলোই বন্দী হয়ে আছে দেশে রাজনীতির ঘাঁড়ে পা রাখা কিছু ভন্ড, কুলাঙ্গার নেতার হাতে। এই ব্লাডি বাস্ট্রার্ডরা জানেই না এসব সন্তানদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের কতটা চাপা কষ্ট বুকে ধারন করে লেখা-পড়া শেখান। তারা শুনতেই পান না এসব পরিবারের কষ্টের নিঃশব্দ কান্না গুলি।

কুড়িগ্রাম নিয়ে আমার অনুভূতি অতঃপর সোনাহাট স্থল বন্দর | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান;
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)



এটি আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, কোন গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন নয়। আমার এ অনুভূতির সাথে একমত হতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকথা নেই। কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে অনুগ্রহ করে মন্তব্যে লিখবেন। বানান ও ভাষাগত ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

ওকি গাড়িয়াল ভাই
হাকাও গাড়ী তুই চিলমারী বন্দরে।

বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন আহমদ এর ভাওয়াইয়া গানের রেশ টেনে বলতে চাই কুড়িগ্রাম হচ্ছে ভাটির দেশ। ভাটিয়ালি গানের জন্য বিখ্যাত।দেশের একপ্রান্তে কুড়িগ্রাম জেলা। এ জেলা ০৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত।  এক সময় মঙ্গাপীড়িত দরিদ্র জেলা হিসবে পরিচিত ছিল। যদিও এখন মঙ্গা অনেকটা দূর তবুও  বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দারিদ্র্যের হার এখনো বেশী।

চিলমারী একসময় নৌ বন্দরের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন নৌ বন্দর চালু নেই।  চিলমারী কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। দাদুবাড়ি এবং নানুবাড়ি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তখনকার বন্দর এবং তাকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মচাঞ্চল্যের কথা শুনেছি। বড় বড় জাহাজ আসতো আবার বড়ো বড়ো নৌকায় পাট এবং অনান্য কৃষিজাত পণ্য বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমন কি ভারতে রপ্তানি করা হতো। বয়সে তখন অনেক ছোট, এখন আধো আধো মনে  আছে, জাহাজ এসেছে বলে মামারা তা দেখাতে নিয়ে গেলেন। ফেরার সময় হাট থেকে পায়ের এক জোড়া মোজাও কিনে দিয়েছিল। অনেক ভীড় ছিল এতটুকু মনে অাছে। এখন মনে হয়,  অনেক কর্মসংস্থান তখন তৈরি হয়েছিল। ব্রম্রপূত্র নদের ভাঙ্গনে দাদুবাড়ি নানুবাড়ি তা গ্রাস করায়  খুব একটা সেখানে যাওয়া হয় না। দেশ স্বাধীন হবার  পূর্বে নদীবন্দর স্থগিত হওয়ায় সেখানে কর্মচাঞ্চল্য অনেকটা স্থবির হয় যার ঢেউ এসে সবচেয়ে আঘাত হানে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়।

এক সময় রেল ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও যাতায়াতের সুযোগ ছিল না। তাও ছিল মাত্র দুটো।  পরে তিনটা। বর্তমানে একটি বা দুটি। জেলা থেকে সামান্য দূরে রাজারহাট উপজেলা। সেখানে স্বল্প জমি থাকায় বাবা  প্রায়শঃ যেতেন।  দুপুরে ট্রেনে উঠলে রাত্রের ট্রেনে ১১ টায় ফিরতেন। আমাদের অনেক সহপাঠী সেখান থেকে ট্রেনে ক্লাস করতেন।১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিস্তা রেল সেতুতে সড়ক পরিবহনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ জেলার যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিলেন। তখন থেকে সড়ক পরিবহন মানুষের নিকট আকৃষ্ট হলো এবং আস্তে আস্তে রেল পথ অবহেলার শিকার হলো। আজ কোন কারণে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে কুড়িগ্রাম সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর একটি অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়। যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম থাকা উচিত। একটির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বিকল্প ব্যবস্থায় প্রয়োজন মিটানো যায়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে আন্তঃ নগর ট্রেনের ব্যবস্থা করে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। পরবর্তী সরকার প্রধানগন এ কার্যক্রম তরান্নিত করলেও এখন পর্যন্ত এ জেলা সে সুযোগ পায়নি। এ প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ  আন্তঃনগর ট্রেনের দাবীতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সে সংগে নৌ পথ চালুর দাবীতে ঐক্যবদ্ধ। আমি তাঁদের দাবীর সাথে নৈতিকভাবে সহমত পোষণ করি।

 উত্তর ধরলা বলে খ্যাত সদর উপজেলার কতিপয় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী,ফুলবাড়ী এবং ভূরাঙ্গামারী অনেক অনেক বছর ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৯৬ সালের পর তৎকালিন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ( বর্তমানেও) শেখ হাসিনা ধরলা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন। সে আমলেই ব্রিজের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বাকী কাজগুলো সুসম্পন্ন করতঃ প্রাক্তন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসে তা উদ্বোধন করেন। বেড়ে যায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। এখনো কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলা রৌমারী এবং রাজিবপুর নদী দ্বারা অনেকটা জেলার সাথে বিচ্ছিন্ন।

এ জেলার মানুষ কাজ চায়। তাঁদের যে কোন কাজ করার আগ্রহ আছে। আজ ( ২৫ জানুয়ারি) ভুরাঙ্গামারী উপজেলায় একবারে প্রান্তিক গ্রামে মেঠোপথ ধরে বাইকে স্ত্রীসহ ঘুরলাম। উদ্দেশ্য আমার দাদা শ্বশুরের পুরাতন বাড়ি দেখা। এক সময় গ্রাম অঞ্চলে ছন বা খরের তৈরি বাড়িগুলো উধাও হয়ে সেখানে ঠাঁই নিয়েছে টিনের তৈরি ঘর বাড়ি। মাঝেমধ্যে ইটের তৈরি হাফ বিল্ডিং। শুনলাম এ জেলার শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অট্টালিকা ও  রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের কষ্টার্জিত শ্রম যেমন দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছে তেমনি পারিবারিক উন্নয়ন এবং জেলার উন্নয়নে সমানতালে অবদান রেখে চলেছে। অনার্স মাস্টার্স কোর্স কুড়িগ্রামে চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীবৃন্দের সাথে মেশার সুযোগ হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা যে কোন কাজ করার জন্য প্রস্তুত।  বর্তমানে অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশানি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের লেখাপড়া খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই সংস্থান করছেন।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ সালে শ্বশুর বাড়ীতে গমন করেছিলাম। উক্ত বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত করা হয় না। এর জন্য স্ত্রীর নিকট কম ঝাড়ি খাইনি। পৌছা মাত্র বড় মেয়ের বায়না সোনাহাট স্থল বন্দর দেখবে। এর আগে যখন সেখানে বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম তখন বন্দর চালু হয়নি। বিকাল ৪ ঘটিকায় পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে পৌঁছিলাম। দেখলাম সেখানে একধরনের প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। কাস্টমস কর্মকর্তার নিকট নিজ পরিচয় দেবার পর জানতে পারলাম পুরাদমে বন্দর চালু হয়নি। ভারত থেকে ১৮ টি পণ্যের মধ্যে মাত্র দুটি পণ্য কয়লা এবং পাথর আমদানী হচ্ছে। এদেশ থেকে  কোন পণ্য সেখানে রপ্তানি হচ্ছে না। এর কারণ আমি নিজে যেটি উপলব্ধি করেছি এবং কথাবার্তা থেকে যেটি অনুমান করেছি সেটি হচ্ছে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা। সেখানে অনেক C& F (Clearing and Forwarding Agent) এর অফিস ঘরও দেখলাম। আমার জানামতে ভারতের 7 Sisters নামে খ্যাত ৭টি রাজ্যের মধ্যে বর্তমানে সোনাহাটসহ তিনটি বন্দর চালু আছে। বাকিগুলো ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাথে। উদ্দেশ্য হলো- সোনাহাটের সাথে ভারতের আসাম রাজ্যের সংযোগ সাধন করা। উক্ত বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ভারত তাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রায় প্রস্তুত করেছে। আমাদের এখানে অনেক অবকাঠামোর কাজ বাকি আছে।

কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আমার কতিপয় সুপারিশঃ

১। দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের ব্যাপারে সকলকে ঐক্যমত্য হতে হবে।
২। সোনাহাট স্থল বন্দরে যাতায়াত করার জন্য দুধকুমোর নদীর উপর রেলপথসহ সড়ক ব্রিজ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩। বর্তমানের ব্রিজটির অত্যন্ত বেহাল অবস্থা হয়েছে। যে কোন সময়ে ভারী যানবাহন চললে তা ভেঙ্গে যেতে পারে। ব্রিজ নির্মাণ যেহেতু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেহেতু নদী ড্রেজিং করে ফেরীর ব্যবস্থা চালু করে ভারী যানবাহনের পথ সুগম করা।
৪। সোনাহাট স্থল বন্দরে পণ্য আমদানি রপ্তানির পাশাপাশি ভিসার ব্যবস্থা চালু করা। এতে দু দেশের জনগণ এবং ব্যবসায়ীবৃন্দের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৫। প্রস্তাবিত ২য় তিস্তা এবং ধরলা ব্রিজে সড়কের পাশাপাশি রেলপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬। রৌমারী এবং রাজিবপুরের সাথে যোগাযোগের জন্য কুড়িগ্রামের মোল্লাহাট এবং রৌমারী দাঁতভাঙ্গার সাথে যে নদীপথ সংযোগ করার কথা শোনা যাচ্ছে,  তা অবিলম্বে চালু করা। এতে ঢাকা,  সিলেট এবং চট্রগ্রামের সাথে সড়কপথের যেমন বিকল্প ব্যবস্থা চালু হবে ঠিক তেমনি দূরত্বের পরিমাণ ও সময় অনেক হ্রাস পাবে। অদূর ভবিষ্যতে ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করলে তাতে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী ব্রিজের ক্রমবর্ধমান চাপ অনেক কমবে।
৭। আন্তঃনগর ট্রেন এবং নৌপথ চালু করা।
৮। Out sourcing ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের কাজ করার যে আগ্রহ আছে সেখানে তারা যাতে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা। এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সুখকর নয়।
৯। তরুণ সমাজকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আবেগকে প্রশ্রয় না দেওয়া। বাস্তব যতই কঠিন হউক না কেন তা মোকাবেলা করা। নিজেদের প্রয়োজনে একে অন্যকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জানা জ্ঞান বিতরণেরর ব্যবস্থা করা। উদাহরণস্বরূপ হয়তো একজন ইংরেজিতে একটু দক্ষ কিন্তু অংকে দুর্বল।  আবার আরেকজন এর বিপরীত।

এগুলো ছাড়াও  বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কুড়িগ্রাম উন্নয়নের যে সুপারিশ প্রদান করেছেন,  সেগুলোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমার বিশ্বাস  এক সময় দেশের অন্যতম জেলা হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে শ্রম সস্তা, সহজলভ্য কৃষিজাত পণ্য এবং ভারতে আমদানী এবং রপ্তানি পণ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং শিল্প কলকারখানার মালিক গণ এখানে ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী হবেন। কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে এখনকার তরুণ সমাজের হতাশাও দূর হবে ইনশাল্লাহ।

প্রহনন থেকে প্রেমপ্রহার | দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়;
Collaborator at Saint-Petersburg State University


(সিরিয়া থেকে ভাংগর দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গিয়ে...)

৭২ সাল। বরানগর। আমার বয়েস ছয়। রক্তচান দেখেছি খড়খড়ির জানলা দিয়ে। এখনো দেখছি, তবে শুধু বরানগরে নয়, এ গ্রহের সর্বত্র।

 দিগন্তবিস্তৃত ফ্যাসিবাদ আজও রণক্লান্ত নয়, হায়! 
বিরামহীন জিঘাংসায় ক্লান্ত লাগে খুব। স্বস্তি মেলেনি এক দণ্ডের জন্যও।

সেইসব রক্তস্মৃতি, বিশ্বাস করুন, আজও ম্লান নয়। আপনার হাতে সুঁই ফুটিয়ে ডাক্তারি-কারণে রক্ত নিতে দেখলেও আতঙ্কিত হই। সম্মত কুমারীর সতীচ্ছদ (? সতী কি??) ফাটানো-অন্তে ক্লীবতা অনিবার্য হয়  রক্তের ফিনকি দেখে। 

ডাক্তারবাবু বললেন, 'রোগ। হেমিয়াটোফোবিয়া।'
রোগ?
সিম্পটম স্পষ্ট!

আতান্তরে পড়ি। সে ঘোর সংকট-- ব্যক্তিক সংকট। নাকি সামূহিক?

শক্তির পদ্য পড়ছিলুম তখন।
খুঁজছিলুম অহিংসার ব্যর্থ পরিহাস। 
সবরমতী আশ্রম কোনদিকে? 
সদাগর-স্পন্সরিত সে আশ্রম। 
কি করি?

"নিরস্ত্রের যুদ্ধে যাই          শস্ত্র হয় মন।"

হাঁক পাড়ি পরম জিঘাংসায়, 
ওহে যত যুদ্ধুবাজ আর অস্ত্রবেনিয়া, সংগঠিত বা অসংগঠিত, থামা তোদের নাচনকোদন। আর যে পারি না সইতে রক্তপাত।
আরো বলি,
এই দেখ আমি নিরস্ত্র, তবু করিনি আত্মসমর্পণ। মারলে মার, বুঝে নে তোদের অধিকার মালিকানার, বুক চিতিয়ে আছি, থামা আমার লাবডুব। 
দেখলুম, শুনলুম, আমার লাবডুবানি ওদের অস্তরের আওয়াজ থেকেও জোরালো। ওরা ভয়ে পালালো... নিমাই নিত্যানন্দকে প্রেমপ্রহার করলেন।

এই মুহূর্তেই সিম্পটম আর সিম্পটম থাকে না, সে বন্দুকের নল থেকে, গুলি নয়, ফুল হয়ে ছিটকে পড়ে-- আমার আশপাশে ফুলশেজরচনা।

(অহিংসা বিনে পন্থা নেই আর। সমস্ত সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানের সংগে অসহযোগ....)

এটা বোঝা তো জরুরি যে খ্যামতার ধারা নিরবচ্ছিন্ন এবং জ্ঞানে আসে নানান বাঁক। তাই জিজ্ঞাসা থেকে বিজিগীষায় নয়, বরং জিজ্ঞাসা থেকে কষ্ট করার ইচ্ছেয় পাড়ি দিই... ( will to know থেকে will to power নয়, বরং will to suffer)
______________________________
"Cease fire. Need of the hour: TOTAL DISARMAMENT."

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচী

 পরীক্ষার তারিখঃ ১৪-০৯-২০১৮

  • পদের নামঃ ফিল্ড সুপারভাইজার
  • পরীক্ষার তারিখঃ ১৪-০৯-২০১৮
  •  পদের নামঃ সাটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর
  • পরীক্ষার তারিখঃ  ১৪-০৯-২০১৮
  • এই পরীক্ষার সময়সূচী কোন নোটিশ প্রকাশ হয়নি । আপনারা যারা আবেদন করছেন ,সবার মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিবে।
  • পরীক্ষার সময়সূচী সহ সম্পূর্ণ তথ্য আপনার এডমিট কার্ডে পাবেন।


কবিতাঃ মুক্ত পাখি | শামীমা আক্তার

শামীমা আক্তার

অসংখ্যবার  একটা পাখিকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে,
প্রতিবারই মুক্ত করা হয়েছে, নীলাকাশে যেন স্বাধীনভাবে উড়তে পারে,
এবার খুব ভেবে চিন্তে পাখিটাকে এমনিভাবে মুক্ত করে দেয়া হবে,
সে খুজে পাবে না তার নীলাকাশটা, 
যেথায় সে বিশুদ্ধ নি:শ্বাস নিতো প্রাণভরে, 
পাখি চায়, নীলাকাশ সর্বক্ষেত্রে রাজত্ব,
নীলাকাশ চায়, স্বাধীন আকাশে কারোও হস্তক্ষেপ থাকবে না,
তবে পাখি কি পারে নীলাকাশের সাথে?
পারতো, যদি পাখিটা নি:স্বার্থ হতো,
পাখিটা এখন নীলাকাশ ছেড়ে পালাতে পাড়লে বাঁচে,
এমনি পাখি আর নীল আকাশের সংঘাত ক্রমশই জটিল,
এ জটিলতা অবসান হবার নয়।

কুড়িগ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি নিজেই প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে

কুড়িগ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আমিনুর রহমান

১৯৮৫ সালে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের পিছনে সরকারী খাস জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলামকে অযৌক্তিক অজুহাতে চলতি বছরের ২৪ জুলাইয়ে সাময়িক বরখাস্ত করার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে হযবরল অবস্থা দেখা দেয়।


আজ ৯ সেপ্টম্বর বেলা ১২ টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবের একদল সাংবাদিক সরেজমিনে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী  বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান কাগজ কলমে ১শত ৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৭জন শিক্ষার্থী এবং ১০ শিক্ষকের মধ্যে ৫জন শিক্ষকের দেখা পাওয়া যায়।

প্রতিমাসে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলে কর্মরত ১৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন খাতে প্রায় ৩ লাখ টাকা আসে। এতো অর্থ ব্যয়ের মাধ্যম্যে আমাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সন্তানরা কতখানি শিক্ষা অর্জন করে ? এ বিষয় সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সব চেয়ে বড় দৃষ্টিকটু বিষয় হচ্ছে বর্তমানে এ বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিন আল পারভেজ। একজন ইউএনও কিভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

অনুগল্পঃ ডিক্‌শনারী দেখা | খায়রুল আনাম

খায়রুল আনাম


ইংরেজী ডিক্‌শনারী মানে অভিধান কেমন করে ব্যবহার করতে হয় জানেন না বুঝি? আচ্ছা বলে দিচ্ছিঃ

১) আপনি জেনে রাখুন, আপনার সুবিধার জন্য অভিধানে শব্দগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো আছে। মানে যে শব্দগুলি A দিয়ে আরম্ভ হয়েছে যেমন Apple, তারপর যে শব্দগুলি B দিয়ে আরম্ভ হয়েছে যেমন Boy থেকে শেষ মেশ Z দিয়ে যেগুলো আরম্ভ হয়েছে সেগুলি, যেমন Zebra। এভাবেই।

২) ওহ, যে শব্দটি দেখতে চান, তার বানানও আপনি জানেন না? কুছ পরোয়া নেই। আপনি তার প্রতিশব্দ কি সেটা দেখুন। ওহ, প্রতিশব্দের ইংরেজী কি তা জানেন না। ওটাকে বলে Synonym. এখন এটাকে নিয়ে কি করবেন তাও বুঝতে পারছেন না?

৩) আরে মশাই, প্রতিশব্দের ইংরেজী বানানটা তো দেখিয়ে দিয়েছি, আপনার আর অসুবিধা হবার কথা নয়। লিখুন Synonym of আপনার ইংরেজী শব্দ মানে Word টা।

৪) হা ঈশ্বর! তাতেও হচ্ছে না? তার মানে আপনি যে শব্দটি চয়ন করেছেন, তার কোন মানে হয়না। অথবা যা আপনি আশা করেছিলেন, শব্দটার মানে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু।

৫) ঠিক বুঝলেন না বোধ হয়। আসলে এ ধরণের সমস্যাকে ইংরেজীতে বলে “Insuperable”.

৬) নিয়মটা তো বলে দিয়েছি। এখন “insuperable” কথাটার মানে ঐ ডিকশিনারী থেকে বের করুন।


লেখকঃ খায়রুল আনাম (শিকাগো প্রবাসী)

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ভূত | নাহিদ হাসান

নাহিদ হাসান

১.
জন্ম থেকেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের ভূত দেখে আসছে। কিন্তু দেখতে দেখতে সেই ভূত বাস্তব হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে কিনা, এই তর্ক টেবিল থেকে রাস্তা পর্যন্ত। নাকি ভ্রুণ থেকে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নিয়ে অধির আগ্রহে কাতরাচ্ছিল, যাকে কেউ কেউ বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের হেঁটে হেঁটে ভারত যাত্রার মধ্যেই তা রয়ে গিয়েছিল? নইলে জন্মেই কিভাবে রক্ত স্নাত এত বড় জনগোষ্টীকে স্রেফ পাশ কাটিয়ে একব্যক্তিকেন্দ্রীক সংবিধান প্রনয়ণকরা সম্ভব হলো? গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এত আত্মদানের পরও জন্ম থেকেই বাংলাদেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে আছে। পরাধীন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বাক্যবাগীশ ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। ইওরোপে যা অস্বাভাবিক, আমাদের এখানে যেন তা স্বাভাবিক! রুশ তাত্ত্বিক লিঁও ট্রটস্কি বলেছেন, যে মুহূর্তে বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্র তার সংসদীয় কাঠামো ও 'স্বাভাবিক' পুলিশও মিলিটারী পরিকাঠামোর মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, সেই মুহূর্তটাই ফ্যাসিবাদী মুহূর্ত।
আর বাংলাদেশ তো এখনও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের স্তরেই পৌঁছে নাই। তবে এটাও ঠিক, বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব এখানে না সংগঠিত হলেও, কৃষিসহ সর্বত্র ধনতন্ত্রের বিকাশমান পরিস্থিতি থাকায় বুর্জোয়া সংস্কৃতির উপাদানগুলোরও বিকাশ ঘটেছে। ফলে উন্মত্ত পেটি বুর্জোয়া জনতা, শ্রেণীচ্যূত গোষ্ঠীগুলো ও জাতি-ধর্মগর্বী ছাত্র সমাজেরও জন্ম ঘটেছে, যারা ফ্যাসিবাদের অন্যতম হাতিয়ার। এদেরকে দিয়েই সার্বভৌম ক্ষমতার সমস্ত প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ও মতাদর্শীক প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, প্রেস, ট্রেড ইউনিয়ন ও সমবায় সমিতিসহ সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করে নেয়। তাই আমরা ইতালি-জার্মানির ফ্যাসিস্ট প্রবণতাও দেখব, আবার লাতিন আমেরিকার হত্যা-গুম-অপহরণের সংস্কৃতিও দেখব। আবার আমরা দেখব, পরাধীন আমলে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ও জনগণ যে পরিমাণ বাক স্বাধীনতা ভোগ করতেন, স্বাধীন দেশে তাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমার শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির দিকে তাকালেই আমরা তুলনাটা টের পাবো।
ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা মুসোলিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা যে তিনটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজে তালুবন্দী করে, সেগুলো হচ্ছে: ১. রাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণের অধীনে শ্রমিকদের সঙ্গে পুঁজিপতিদের সহযোগ স্থাপন ও বাধ্যতামূলক আপোসের বন্দোবস্ত করা। ২. রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রস্থ করা। এবং ৩. প্রেসের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন করে সংকুচিত করা।
আগে আমরা মে দিবসে স্লোগান শুনতাম, দুনিয়ার মজুর এক হও! এখন শুনি, শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই। সংবিধান পড়লেই বুঝি, ৭২ সাল থেকে সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অর্থাৎ মুসোলিনির ১ থেকে ৩ নম্বর শর্ত ৭২ সাল থেকেই বহাল। সেজন্য ৭২ সাল থেকেই ফ্যাসিবাদ শব্দটি রাজনৈতিক এলাকায় চালু আছে।
মুসোলিনির আমলে ইতালি ঘুরে বেড়িয়েছেন জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি সেখানে অর্ধাহারে-অনাহারে লোকজনকে যক্ষায় মরতে দেখেছেন। দেখেছেন, পথে পথে অসংখ্য ভিক্ষুক। অথচ ফ্যাসিস্ট নেতারা প্রায়ই বলতেন, ইতালিতে ভিক্ষুক নেই। গ্রামে-গঞ্জে জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কোন চিহ্ন না দেখতে পেলেও মুসোলিনিকে প্রায়ই বলতে শুনেছেন, 'যখন পৃথিবীর অন্য সমস্ত দেশে ক্রাইসিসের ফলে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হয়ে উঠেছে, একমাত্র ফ্যাসিস্ট ইতালিতেই জনসাধারণের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।' -যেমনটি আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হতে দেখি সাগরে সাগরে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের মরতে দেখেও।


২.
ইতালি প্রথম মহাযুদ্ধের অস্ট্রিয়ার অন্তর্গত দক্ষিণ তিরোল দখল করে নেয়। সেই দক্ষিণ তিরোলের জার্মাণ অধিবাসীদের ইতালিয়ান করে তোলার জন্য মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সরকার ১৯২৩ সালের জুন মাসে একটি প্রোগ্রাম ঘোষণা করে: দক্ষিণ তিরোলে রাষ্ট্রের সমস্ত অফিসে কেবল ইতালীয় ভাষা ব্যবহার, সেখানকার জার্মাণ কর্মচারিদের ইতালির অন্য প্রদেশে বদলি, শহর ও রাস্তাগুলির পুরাতন জার্মাণ নাম বদলে ইতালীয় নাম রাখা, পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইতালীয়দের দক্ষিণ তিরোলে পাঠিয়ে সেখানকার জমি দখল করে বসবাসের বন্দোবস্ত করা, ইতালীয় ভাষাকে চালু করা, বিচারালয়ে ইতালীয় কাজকর্ম ও বহুসংখ্যক ইতালীয় সৈন্য মজুদ রাখা।-এই সমস্ত কাজ আমাদের শাসকশ্রেণীও পার্বত্য এলাকায় করেছে এবং আমাদের কাছ থেকে তার সম্মতিও আদায় করেছে।
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ সালে তাঁর 'ফ্যাসিবাদ' বইএ শিল্পী-সাহিত্যিকরা কীভাবে মুসোলিনিকে সমর্থন যুগিয়েছেন, তা আমরা বুঝব ফিউচারিস্টদের সঙ্গে ফ্যাসিজমের সম্পর্ক কী, এটা ফিউচারিস্টদের নেতা মারিনেত্তি লেখককে কী বলেছেন তা থেকেই। মারিনেত্তি তাঁকে বলেছেন, "ফ্যাসিজম ফিউচারিজম ও মহাযুদ্ধে ইতালির যোগদানের ফলস্বরূপ। ফ্যাসিজম ফিউচারিজম দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করেছে। ফ্যাসিজমের মধ্যে সেই জাতীয়তার গর্ব, ঘোরতর যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও স্বদেশপ্রেম আছে ও সর্বদা থাকবে, সেগুলির সম্পর্কে আমরা ফিউচারিস্টরাই ইতালির জনসাধারণকে সর্বপ্রথম সচেতন করে তুলি।" 
বলা ভাল, ১৯২২ সালে মুসোলিনির সরকার গঠনের সাথে সাথে এই কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদকরা ফ্যাসিস্ট মূর্তিতে দেখা দেয়। তারা প্রচার করত, ইতালির ভবিষ্যৎ হচ্ছে ন্যাশনালিজম ও ধর্মের বিস্তারের দ্বারা আধ্যাত্মিক জীবনের আদর্শ প্রচার করা।-আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মদীনা সনদ কি একসাথে চলছে না?


৩.
বিপুল সংখ্যক মানুষের যুক্তিবোধকে অসার করে দেওয়াটা ফ্যাসিস্ট প্রচারের লক্ষ্য। নেতাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন করতে পারার মধ্যে ফ্যাসিবাদের প্রচার নির্ভরশীল। নেতা আর সাধারণের মত না, এটা প্রমাণ করতেই হবে। মুসোলিনি দুচে আর হিটলার ফুয়েরার। রাষ্ট্রনেতাকে শুধু তার নামে ডাকা যাবে না। নেতাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মিথ্যা তৈরি করা হয়। ঠাণ্ডা মাথায় নেতার ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়। গোটা ইতালি জুড়ে একটা স্লোগান তোলা হয়, মুসোলিনি সব সময় সঠিক। ইতালি জুড়ে মুসোলিনির ছবি, তার নিচে স্লোগান: বিশ্বাস কর, মেনে চলো, লড়াই কর। তার তিন ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়: ১. তিনি নবজাগরণের প্রতিনিধি, ২. অনন্য সাংগঠনিক প্রতিভা ও ৩. সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। কবি এজরা পাউণ্ড এবং স্বল্প সময়ের জন্য রবীন্দ্রনাথও মুসোলিনির গুণমুগ্ধ ছিলেন। পুরো ইতালির ইতিহাসবিদ ও কয়েকশ জীবনীকার এটা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন যে, জন্ম থেকেই তিনি কত বড় প্রতিভাবান ছিলেন! ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারে মুসোলিনি নিজেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে ও পরম ভাবতে শুরু করেছিলেন।-আশা করি আমরা আমাদের ইতিহাসের সাথে মিল পেয়ে যাচ্ছি।

৪.
ইতালি আর জার্মানি ছিল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র, আর বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদের শিকার। কিন্তু শাসকশ্রেণীর আচরণের মধ্যে সাদৃশ্য। এগুলো ফ্যাসিবাদের উপরি দিক। মর্মবস্তুতে ফ্যাসিবাদ বুঝতে হয় উৎপাদন-সম্পর্কে, ব্যাংক ও শিল্প পুঁজির দ্বন্দ্বের মধ্যে। বাংলাদেশ সে জায়গায় যায়নি, কিন্তু ভারত সেই যাত্রায় উপস্থিত। ৪০ লক্ষ বাঙালি আর মাও বাদের ভূত দেখার রাজনৈতিক প্রবণতার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের ভূত বাস্তব হয়ে ওঠে, তা উপরে বললাম। বাংলাদেশ ভারত নামের ফ্যাসিবাদী দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা হাজির করছে নিজ রাষ্ট্রের ভূত-ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়েই। ইতালি-জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান ঘটেছিল বলশেভিক বিপ্লবকে মোকাবিলার জন্য, বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চালু হয়েছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে ঠেকাতেই। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পপুলার ফ্রন্ট ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করেছে ইওরোপে, আমরা প্রবণতাকে ঠেকাব কী করে? স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াই ছাড়া এই ফ্যাসিবাদের ভূত ঠেকানোর ওঝা নেই।



লেখকঃ সভাপতি, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
nahidknowledge@gmail.com