![]() |
লেখকঃ বাদশা সৈকত |
ছেলে একদিন ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসলো এবং রাতের খাবারের পর বাবা-মায়ের পাশের ঘরে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু ছেলে ঘুমাতে পারলো না। রাত যতই গভীর হতে থাকলো বাবার গোঙ্গানীর শব্দটা ততই বাড়তে থাকলো। সাথে শুকনো কাশির ঢকাশ ঢকাশ শব্দ। মায়েরও কোকানীর শব্দটা রাতের নিস্তদ্ধতাকে দুরে ঠেলে ছেলের কানে আঘাত করতে থাকলো।
বাবা মায়ের এ অবস্থা দেখে ছেলে বিছানা ছেড়ে উঠে বাবা-মায়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ডাকতে থাকলো। ছেলের কন্ঠ শুনে মা কোন রকমে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দিলো। সে নাগাত বাবারও গোঙ্গানীর শব্দটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ছেলে তার মাকে বললো-
-আজও দুজনেই ঔষধ খাননি।
মা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলে আবার বললো-
-কথা বলছেন না কেন? ঔষধ কি শেষ হয়ে গেছে?
এবার মা বললেন-
-তোর বাবা ঔষধ আনতে ভুলে গেছে।
ছেলে বললো-
-আমি জানি বাবা কেনন ঔষধ আনতে ভুলে যান। আমি না কতবার বলেছি আমাকে আর টাকা পাঠাতে হবে না। আমি টিউশনি করেই আমার লেখা-পড়ার খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। বুঝেছি বাবা বাজারে ঔষধ কেনার টাকা নিয়ে গিয়ে সেই টাকাই আবারও আমাকে পাঠিয়েছে।
ছেলে আর কোন কথা না বলে তার ঘরে ফিরে গিয়ে বিছানায় গা দিলো। কিন্তু বাকী রাত আর ঘুমাতে পারলো না। যদিও বা বাবা-মায়ের গোঙ্গানীর শব্দটা তেমন আর শোনা যাচ্ছিলো না। ছেলে জানে তার বাবা-মা কতটা কষ্ট করে শরীরের কষ্টগুলোকে চেপে রেখেছে। যাতে করে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে তাদের কষ্টের শব্দ শুনে কোন কষ্ট না পায়।
ছেলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে তাদের অতীত আর বর্তমানের কথা ভাবতে থাকলো।
কৃষক পরিবারের অতীতটা ভালোই কাটছিল তাদের। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া আর সংসারের ব্যায়ভার বেড়ে যাওয়ায় অভাব তাদের সংসারে হাতছানী দিতে থাকে। সামান্য জমির ধান, গাছের সুপারীর টাকায় এখন আর কুলায় না। তারপরও বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের এই আশায় নিজের জীবনকে বাজি রেখে লেখা-পড়া করাচ্ছেন যে তারা একদিন শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরী করবে। তখন আর অভাব নামের কোন দ্বৈত্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে পারবে না।
এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ফজর হয়ে আসলো। ছেলে ভাবে তার বাবা-মা হয়তো বর্তমানের বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তারা ভাবেন তাদের অসুখের কষ্টের চেয়ে সন্তানের না খেয়ে থাকার কষ্টটাই তাদের কাছে বেশি বেদনা দায়ক। অথচ বাবা-মায়ের এই খাঁটি কষ্টের আশাগুলোই বন্দী হয়ে আছে দেশে রাজনীতির ঘাঁড়ে পা রাখা কিছু ভন্ড, কুলাঙ্গার নেতার হাতে। এই ব্লাডি বাস্ট্রার্ডরা জানেই না এসব সন্তানদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের কতটা চাপা কষ্ট বুকে ধারন করে লেখা-পড়া শেখান। তারা শুনতেই পান না এসব পরিবারের কষ্টের নিঃশব্দ কান্না গুলি।
0 Comments:
Post a Comment