This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Showing posts with label স্মৃতিচারণা. Show all posts
Showing posts with label স্মৃতিচারণা. Show all posts

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের স্মৃতি কথা




মুক্তিযোদ্ধা মো. শামসুল হক। অনেক স্বপ্ন নিয়ে সম্মুক যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার মাসে তার যুদ্ধকালিন অভিজ্ঞতা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি এবং স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন

১. মরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিক্রম করেছি। আজো আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কারণ, স্বাধীনতার পরই আমরা নানাজন নানা মতে ও পথে বিভক্ত হয়ে পড়েছি। দেশমাতৃকার স্বার্থে এক হতে পারিনি। কিন্তু এখনো সময় ফুরিয়ে যায়নি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পুরো জাতি যেমন এক হয়েছিল তেমনই আবারো এক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে হবে নতুন প্রজন্মকে। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও অনেক। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চের ভাষণ শুনে মুক্তিকামী জনতার সারিতে দাঁড়িয়ে আমিও পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমি চাকরি করতাম যশোর জেলার, মোবারকগঞ্জ সুগার মিলে। সেই সময়ে যশোর সেনানিবাস থেকে সুগার মিলের আশপাশে শীতকালীন মহড়ায় আসা আমার পরিচিত এক বাঙালি সেনা গোপনে আমাকে জানিয়ে দিলেন, পারলে দ্রুত বাড়ি চলে যাও, অবস্থা ভালো না। ১ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে যশোর-ঢাকা রোডে পাক বাহিনী গুলি চালিয়ে রাস্তার সাধারণ মানুষ মেরে সামনে ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পাকসেনার গাড়ি চলে গেলে দেখা যায়, রাস্তার পাশে অনেক সাধারণ মানুষের লাশ পড়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে বাঙালিরা আরো জাগ্রত হয়। অস্ত্র নিয়ে যশোর সেনানিবাস থেকে বাঙালি সেনারা বেরিয়ে এসে স্থানীয় যুবকদের নিয়ে পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে। তারা রাস্তায় ব্যারিকেট দিয়ে সুকৌশলে অনেক পাকসেনাকে পাকড়াও করে মেরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের জন্য আমি এবং নুর আলী বিশ্বাসসহ সংগ্রাম কমিটির সদস্যদের নিয়ে বাসায় বাসায় ঘুরে রুটি চিরা গুড় সংগ্রহ  করি। এভাবে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত কঠিন অসুবিধার মধ্যেও সুগার মিলে ছিলাম। প্রতিদিন বিবিসির খবর শুনে অবস্থা অবগত হতাম আর বাহিরে দেখতাম মিলের পাশ দিয়ে কিভাবে বাঙালিরা স্বজনদের নিয়ে বন্ধু রাষ্ট্রে চলে যাচ্ছে শরণার্থী হয়ে। নিকটতম সব কর্মকর্তা শ্রমিক/কর্মচারী সুগার মিল ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছে। আমি একা খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ি।

২. 
আমার বাড়ি রংপুরের শেষ প্রান্ত ভুরুঙ্গামারীতে। নুর আলী বিশ্বাস আমাকে সাহস দিয়ে বলেন, চলুন মেহেরপুরে যাই। ১৭ এপ্রিল সকালে মেহেরপুরে পৌঁছি। সেখানে গিয়ে দেখি মেহেরপুরের আমবাগানে মুজিব নগর সরকার গঠনের প্রস্তুতি চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যে শপথ গ্রহণ শুরু হবে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপদেশমূলক ভাষণ এবং নির্দেশাবলি শুনি। শপথ অনুষ্ঠান শেষে সুগারমিলে ফেরত চলে আসি।


১৯ এপ্রিল আমি শরণার্থীদের সাথে হেঁটে বাগদা সীমান্ত পার হয়ে বনগাঁ গিয়ে মাগুরার ছোহরাব হোসেন এবং যশোরের রওশন আলীর নিকট থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে বনগাঁ থেকে ট্রেনে কলকাতায় যাই। যাওয়ার পথে ট্রেনে এক মহিলা যাত্রী আমাকে দেখে রাগ করে বলেন, আপনারা যুবক ছেলেরা জয় বাংলা ছেড়ে চলে আসছেন কেন? মুক্তিযুদ্ধে যান। আমরা সম্ভ্রম হারিয়ে এসেছি। উনার কথায় আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি। 

এরপর কলকাতায় গিয়ে হাওরা স্টেশন থেকে জলপাইগুড়িগামী ট্রেনে উঠে কুচবিহারের উদ্দেশে রওনা হলাম। এরপর কুচবিহার পৌঁছে সেখান থেকে বাসে করে দিনহাটা হয়ে সাহেবগঞ্জ নেমে হেঁটে বিকাল ৫টায় মুক্ত এলাকা ভুরঙ্গামারী পৌঁছি। জামতলায় জব্বার মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে শামসুল হক চৌধুরী এমপি, পেটলা মজিবর রহমান, ফজলার রহমান, আব্দুল জলিল সরকার, জয়নাল মিয়া, ডা. নিয়ামত আলী, আব্দুল মান্নান, কাদের ব্যাপারী, ফনী ভুষণ সাহা, আক্তার মন্ডল, ইসহাক ব্যাপারী, তমিজ মাস্টার, মধু মাস্টার, হাকিম শিকদারসহ আরো অনেককে মিটিং করতে দেখতে পাই। শামসুল হক চৌধুরী আমাকে দেখে চিৎকার করে কাছে ডেকে বললেন, তুই কেমন করে আসলি? ঐদিকের খবর বল। আমি বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি আমাকে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের সাথে কাজ করার নির্দেশ দিলেন।

৩.
পরের দিন ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের সাথে দেখা করি। তার নির্দেশক্রমে প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের যাতায়াত ও খাবার ব্যবস্থার জন্য ফায়ার সার্ভিসের একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে আসামের গোলকগঞ্জ থেকে পেট্রোল এবং জয়মনিরহাট, নাগেশ্বরীর খাদ্যগুদাম থেকে চাল সংগ্রহ করে এনে সিও অফিসে ক্যাপ্টেনের কাছে রাখতে শুরু করি। এ ছাড়া উত্তর ধরলামুক্ত থাকার সময়ে নাগেশ্বরীর আওয়ামী লীগের সংগঠক শেখ মজিবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডা. ওয়াশেক আহম্মেদ ও ভুরুঙ্গামারীর মজিবুর রহমানের সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে বিভিন্ন সলাপরামর্শ করি। কুড়িগ্রাম পাকবাহিনীর দখলে চলে গেলে উত্তর ধরলামুক্ত রাখার জন্য আমাদের জোয়ানরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু বেশি দিন মুক্ত রাখা সম্ভব হয়নি। এরপর ঊর্ধ্বতন সংগঠকদের নির্দেশে আমরা ভারতের বর্ডারে চলে যাই। কুচবিহার ৬নং সেক্টরের জোনাল অ্যাডমিনিসট্রেটর মতিউর রহমানের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নেই। সাহেবগঞ্জে ক্যাপ্টেন নওয়াজেশের ৬নং সেক্টরের ‘সাব সেক্টর’ অফিস চালু করি। এরপর নাজিরহাটে ঝন্টু মিয়ার জমিতে ‘যুব শিবির’ তৈরি করি। নাজিরহাট যুব শিবিরে প্রতিদিন ৪০/৫০ জন যুবক ভর্তি হতে থাকেন। এদের খাওয়া, যাতায়াতসহ সব কিছু আমাকে দেখতে হয়েছে। ২/৩ দিন শিবিরে রেখে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়ে দিনহাটায় শিবিরে পাঠানো হতো। সেখান থেকে ভারতের সহায়তায় সামরিক ট্রেনিংয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতো।

৪.
দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের কতো করুণ স্মৃতি/ইতিহাস মনের ভেতরে আছে তা ভাষায় বোঝানো কঠিন। ক্লান্তি বলে শরীর থেমে থাকেনি। যখন যেখানে ডাক পড়েছে ছুটে গেছি। ভুরঙ্গামারী পাকবাহিনী দখলে থাকা অবস্থায় গেরিলা কায়দায় কয়েক রাত্রি ভুরঙ্গামারী এসেছি। কিন্তু নিজের বাড়ি খুঁজে পাইনি। রাজাকাররা আমাদের বাড়ি ঘর সব পুড়িয়ে এবং গাছপালা কেটে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭১ সালে ১৪ নভেম্বর ভুরঙ্গামারী হানাদার মুক্ত হলে পরিবারের লোকজন নিয়ে ভারত থেকে নিজ ভ‚মিতে ফিরে আসি। খোলা আকাশের নিচে অনেক দিন তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হয়েছে।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে দীর্ঘ ৯ মাসের দুঃখ বেদনা ভুলে আমরা আনন্দে মেতে উঠি। এরপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর মোবরকগঞ্জ সুগার মিলে পৌঁছে আবার কর্মে যোগ দেই। যারা ঐ সময়ে সুগার মিলে ছিলেন তারা আমাকে দেখে চিৎকার দিয়ে বলে উঠেন আপনাকে নাকি বর্ডার পার হওয়ার সময় খান সেনারা মেরে ফেলেছে। আপনার মৃত্যুর সংবাদে আমরা শোক সভা, গায়েবি জানাজা এবং মসজিদে দোয়া মাহফিল করেছি এই আপনার ভাগ্য

এতো সংগ্রাম এবং কষ্টের বিজয়কে ফলপ্রসূ করার জন্য স্বাধীনতার মাসে এই নতুন প্রজন্মের কাছে আমার বিনীত আরজ আমরা বাঙালি বীরের জাতি। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নিচু করবে না। শেখ মজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে বীর বাঙালি দলমত নির্বিশেষে এক জোট হয়ে মাত্র ৯ মাসেই একটি দেশ স্বাধীন করেছি। বিশ্বের ইতিহাসে এমন সাহসিক বিজয়ের নজির নেই। সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক জোট হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে সুখী সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করো।

প্রহনন থেকে প্রেমপ্রহার | দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়;
Collaborator at Saint-Petersburg State University


(সিরিয়া থেকে ভাংগর দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গিয়ে...)

৭২ সাল। বরানগর। আমার বয়েস ছয়। রক্তচান দেখেছি খড়খড়ির জানলা দিয়ে। এখনো দেখছি, তবে শুধু বরানগরে নয়, এ গ্রহের সর্বত্র।

 দিগন্তবিস্তৃত ফ্যাসিবাদ আজও রণক্লান্ত নয়, হায়! 
বিরামহীন জিঘাংসায় ক্লান্ত লাগে খুব। স্বস্তি মেলেনি এক দণ্ডের জন্যও।

সেইসব রক্তস্মৃতি, বিশ্বাস করুন, আজও ম্লান নয়। আপনার হাতে সুঁই ফুটিয়ে ডাক্তারি-কারণে রক্ত নিতে দেখলেও আতঙ্কিত হই। সম্মত কুমারীর সতীচ্ছদ (? সতী কি??) ফাটানো-অন্তে ক্লীবতা অনিবার্য হয়  রক্তের ফিনকি দেখে। 

ডাক্তারবাবু বললেন, 'রোগ। হেমিয়াটোফোবিয়া।'
রোগ?
সিম্পটম স্পষ্ট!

আতান্তরে পড়ি। সে ঘোর সংকট-- ব্যক্তিক সংকট। নাকি সামূহিক?

শক্তির পদ্য পড়ছিলুম তখন।
খুঁজছিলুম অহিংসার ব্যর্থ পরিহাস। 
সবরমতী আশ্রম কোনদিকে? 
সদাগর-স্পন্সরিত সে আশ্রম। 
কি করি?

"নিরস্ত্রের যুদ্ধে যাই          শস্ত্র হয় মন।"

হাঁক পাড়ি পরম জিঘাংসায়, 
ওহে যত যুদ্ধুবাজ আর অস্ত্রবেনিয়া, সংগঠিত বা অসংগঠিত, থামা তোদের নাচনকোদন। আর যে পারি না সইতে রক্তপাত।
আরো বলি,
এই দেখ আমি নিরস্ত্র, তবু করিনি আত্মসমর্পণ। মারলে মার, বুঝে নে তোদের অধিকার মালিকানার, বুক চিতিয়ে আছি, থামা আমার লাবডুব। 
দেখলুম, শুনলুম, আমার লাবডুবানি ওদের অস্তরের আওয়াজ থেকেও জোরালো। ওরা ভয়ে পালালো... নিমাই নিত্যানন্দকে প্রেমপ্রহার করলেন।

এই মুহূর্তেই সিম্পটম আর সিম্পটম থাকে না, সে বন্দুকের নল থেকে, গুলি নয়, ফুল হয়ে ছিটকে পড়ে-- আমার আশপাশে ফুলশেজরচনা।

(অহিংসা বিনে পন্থা নেই আর। সমস্ত সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানের সংগে অসহযোগ....)

এটা বোঝা তো জরুরি যে খ্যামতার ধারা নিরবচ্ছিন্ন এবং জ্ঞানে আসে নানান বাঁক। তাই জিজ্ঞাসা থেকে বিজিগীষায় নয়, বরং জিজ্ঞাসা থেকে কষ্ট করার ইচ্ছেয় পাড়ি দিই... ( will to know থেকে will to power নয়, বরং will to suffer)
______________________________
"Cease fire. Need of the hour: TOTAL DISARMAMENT."

এককাপ চা | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান


সোনালি অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। মন চায় সেই অতীতে ফিরে যাই।চাই আগের মতো সবার সাথে জম্পেশ আড্ডা মারতে। কিন্তু তা তো হবার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তেমনি একটি ঘটনা ----

দিনক্ষণ মনে নেই। সম্ভবত ১৯৮৮ সাল হবে তখন। এক বন্ধুর হলে গেলাম। অনেক কথাবার্তা হলো। উঠে আসবো তখনি বলল
 -যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা। 
 - ধন্যবাদ বন্ধু ,আরেকদিন এসে খেয়ে যাবো। আজ তাড়া আছে। 
- ঠিক আছে, যা তাহলে। 

এরপর কয়েকদিন কেটে গেলে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতাম। সেই হলে অর্থনীতি বিভাগের ব্যাচমেট রোজের কাছে একদিন অন্য হলের একজন বন্ধু এলো। সেসময়ে আমিও ছিলাম। বন্ধুটির যাবার সময় রোজ বললো - দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।বন্ধুটি ধন্যবাদ দিয়ে চা পান না করে চলে গেল।

রুমে এসে ভাবলাম - অনেকক্ষণ তো ছিল সে বন্ধুটি। তবে শুরুতে  আমন্ত্রণ না করে কেন যাবার সময় করলো? ওরে বাবা! এবার বুঝলাম। এরপর যদি কোনদিন কেহ আমাকে বলে তবেই বুঝবে।

প্রচণ্ড রোদফাঁটা এক দুপুরে তৃষ্ণা আর খুদার জ্বালায় অস্তির হয়ে হলে ফিরছি। তার আগে বাস স্ট্যান্ডে আমাদের শহুরে ললনাদের দেখতে ভুল করি নাই। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে একাই ফিরছি। একটু চিপায় রোজের মতো একজনকে মনে হলো। একটু একটু করে পা ফেলছি আর রোজ আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। আরেকটু কাছে আসতেই কড়া ইন্ডিয়ান পারফিউমের গণ্ড নাকে আসলো। পায়ে হেভি কেডস, সিঙ্গাপুরের জিনস, থাইল্যান্ডের গেঞ্জি আর গলায় সোনার চেন পরে মাঞ্জা মারছেন আমাদের হবু অর্থনীতিবিদ রোজ সাহেব। মনে হচ্ছে হট নায়ক অনিল কাপুর।আমি কাছে আসতেই ব্রিটিশ ’৫৫৫’ প্যাকেট বের করে চুলগুলোতে একটা ঝাঁকি মেরে রজনী কান্তের মতো একটা সিগারেট উপরে ছুঁড়ে মেরে সেটি মাটিতে পড়ার আগে ক্ষিপ্র গতিতে দুই ঠোঠের মধ্যে নিয়ে স্টাইল মেরে সিগারেটটি ধরাল। সিগারেটটি ধরার পর প্যাকেটটি একটু দূরে ছুড়ে মারল।  আরে এ তো সেই রোজ! যে কিনা হলে আলু ভর্তা কিংবা কোন কোন দিন এক আধতা ডিম ভেজে কোনমতে খাবার খায়। খাওয়ার পর নাসির বিড়ি ফুঁকিয়ে অর্থনীতিবিদগিরী দেখায় আর বাহিরে এত উদার হস্ত। আর দু পা এগোতেই এক অতীব সুন্দরি এক ললনার মুখ দেখা গেল। 

ওদের দেখে ভাবছি কথা বলব কি না। ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাবার আগে রোজ বলে উঠল – কি রে হলে যাচ্ছিস?
মনে মনে বললাম –হলে না গিয়ে  এই ভর দুপুরে কোন ললনার সাথে ধুতরা ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলব নাকি! কিন্তু তা না বলে বললাম – হাঁ রে যাচ্ছি তো হলে। তুই কখন ফিরবি?
- ওকে হলে দিয়ে একটু পরে ফিরব।
- কে উনি? উনার সাথে কার যেন একটু মিল খুঁজে পাচ্ছি। 
 বলার সাথে সাথে রোজের চোখেমুখে আত্মতৃপ্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। সে বলে উঠল -কার সাথে মিল রে? জানো, ও না খুব সহজ সরল। নিশ্চয় রংপুরে মফিজের নাম শুনেছো। ওকে দেখলে তোমাকে আর মফিজ দেখতে হবে না। 

শালা আমাকে মফিজ বলে। আজ বুঝবি মফিজ কাকে বলে, কত প্রকার  ও কি কি। 
কিন্তু বিরক্তির ভাব চোখেমুখে ফুটে না তুলে বরং একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে বললাম – মোহিনীর সাথে।
- মোহিনী! মানে?
- কি রে খালি তো সারাক্ষণ আড্ডা মারিস, আর যখন মোহিনীর নাম শুনিস তখন তো প্রায় লাফিয়ে উঠিস? 
সঙ্গের সাথী সেই ললনা রাগত কণ্ঠে বলে উঠল – কে ভাই মোহিনী? আর ওর সাথে কি সম্পর্ক?
ললনার প্রশ্ন শুনে বুঝলাম , আজ আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। বললাম – আরে এ মোহিনী সেই মোহিনী নয়। আপনি যা ভাবছেন তা নয়।তেজাব ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত 'মোহিনী' চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কি রে রোজ তুই সহ আমরা অনেকে তো 'তেজাব' দেখেছি । মোহিনী চরিত্রের কথা ভুলে গেছিস! নিশ্চয় এর সাথে সাথে এক দো তিন নাচের কথাও মনে নেই? 

আমার বলার সাথে সাথে রোজের ভয়ার্ত ভাব কেটে গিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। আর মোহিনী ম্যাডামের মুখে লজ্জা রাঙানো পূর্ণিমা চাঁদ দেখা গেল। মোহিনী বলে উঠল – কি যে বলেন ভাই! কোথায় মাধুরী দীক্ষিত আর কোথায় আমি! তাঁর সাথে কি আমার তুলনা চলে।
- আলবত চলে। ওরা আমাদের মতো অভাব অনটন আর দুঃখ কষ্টে থাকলে বুঝত। এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে পান করতে হয় না।
- ঠিক বলেছেন ভাই। বলেই একগাদা অভাব অভিযোগের কথা বলতে লাগল। মোহিনী বলছে আর আমি আড় চোখে রোজের দিকে তাকাচ্ছি। আর ভাবছি- তুই শেষ রে রোজ! রোজের চোখমুখে বিরক্তের ভাব ফুটে উঠছে। আর আড় চোখে  ছুঁড়ে মারা প্যাকেটটির দিকে বারবার তাঁকাচ্ছে।প্রেমিকাকে বাদ দিয়ে বারবার প্যাকেটটির দিকে তাকাচ্ছে কেন চান্দু ? নিশ্চয় কিছু আছে বাপধন। প্যাকেটের দিকে এগাতেই রোজ বলে উঠল
 – আরে কী করিস?
- নারে হঠাৎ ছোট একটু লেখার দরকার পড়ল। প্যাকেটটি ছিঁড়লে লেখার কাজ হবে।
- বাদ দে তো। ফেলে দেওয়া নোংরা প্যাকেট দিয়ে কি হবে। তারচেয়ে এই নে তোর লেখার কাগজ। বলেই একটু উঠে দাঁড়িয়ে পাছার নীচে এতক্ষণ বসে থাকা প্যাডের সাদা কাগজটি আমার দিকে দিল। শালা! তোর বসে থাকা পাছার কাগজটি নোংরা হলো না হলো ওই প্যাকেটটি। নিশ্চয় ওখানে সিগারেট আছে । আমাকে নিতেই হবে। কিছু হিবিজিবি লিখে ইচ্ছাকৃত ভাবে কলমটি ফেলে দিলাম। একটু বকবক করে খুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বললাম - যাই রে।
- যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

সদ্য দেখা জুদাই ছবির কথা মনে পড়ল। সেই ছবিতে জনি লিভার এক সুন্দরি মেয়ের মুখে – আব্বা জুব্বা ডাব্বা শুনে গদগদ হয়েছিল। কিন্তু জনি লিভার জানতো না সেই মেয়েটি 'আব্বা জুব্বা ডাব্বা ' ছাড়া আর কোন কথা বলতে পারতো না। যখন সে বুঝলো তখন মাথার চুল ছিড়া  ব্যতীত কিছুই করার ছিল না। আজ তোকে সেই জনি লিভার বানিয়েই ছাড়বো। আমাকে রংপুরের মফিজ বলার স্বাদ চিরতরে বন্ধ করবো। 

- খাওয়াবি চা? তাহলে খাওয়া। 
রোজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল – বাদ দে, দুপুরবেলা চা না খাওয়াই ভাল। তারচেয়ে হলে গিয়ে ভাত খা। চা এর পাওনা বিকালে মিটাবো।

শালা তুই বিকালে খাওয়াবি! তাহলে তো দুনিয়া উল্টে যাবে। মুখে এসব না বলে বললাম – ঠিক বলেছিস বন্ধু। এখন ভাত খাবার সময়। চল ভাত খাই। মোহিনী ম্যাডামের তো খুদা লেগেছে  তাই না?
- না না ভাই। এই ,তুমি না ওনাকে খাওয়াতে চাইলে তাহলে ভাইকে নিয়ে খেয়ে এসো। আমি হলে ফিরলাম।

ললনা কথা শুনে বিষম খাবার যোগাড় হলো। মনে মনে আওড়াচ্ছি - আরে মোহনী, তুমি গেলে তো আমার আর ওর কাছ থেকে খোসানো হবে না। কোনভাবে সেই অপ্সরীকে যেতে দেওয়া যাবে না। আমি বললাম – এ কি কথা বললেন! আপনি যাবেন আর আমি খাব।কখনই নয়। খেলে একসাথে খাবো।
- কোথায় খেতে চান?
-দুপুর হয়ে গেছে।কাছাকাছি কোথাও যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হয় সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ায়। 

সেদিন ছিল সম্ভবত সোমবার। আর সোমবারে ক্যাফেটেরিয়াতে স্পেশাল বিরিয়ানি হয়। 
বন্ধুটির চোখেমুখে ঘোর আমবশ্যা নেমে এসেছে। সেই ললনা খুব সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠল – এই চলো না।

 ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে দু এক কদম পা বাড়ালাম। রোজের মেঘাচ্ছন্ন মুখটি কণে বিদায় দিবার সময় বাবা মা এর হয় যেমনটি হয় প্রায় তেমনটি হলো। অনিল কাপুর শেষবারের মতো প্যাকেটটির দিকে তাঁকাল। আরো দু কদম এগতে আমি বুক পকেটে হাত দিয়ে বললাম – এই ছেড়েছে! আমার কলমটি মনে হয় লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলে এসেছি। তোমরা আগাও আমি আসছি। 

বলেই দ্রুত সেখানে গিয়ে কলম আর প্যাকেটটি তুললাম। প্যাকাটিতে হাত দিয়ে বুঝলাম অন্তত চার পাঁচটা সিগারেট সেখানে আছে। দ্রুত সেটি প্যান্টের পকেটে চালান করে দিয়ে ওদের সাথে এক হলাম। রাস্তায় মোহিনীর আর একদফা প্রশংসার সাগরে ভাসালাম। মোহিনী খুব খুশিতে গদগদ হয়ে আসে। 

ক্যাফেটেরিয়ায় এসে মোহিনী বলে উঠল – কী খাবেন ভাই?
গরম বিরিয়ানির খুশবু পুরো ক্যাফেটেরিয়াময়। বললাম – বিরিয়ানি। 
রোজ রূপী অনিল কাপুর সাথেসাথে বলে উঠল – আরে বিরিয়ানি খেলে পেট খারাপ হতে  পারে, তারচেয়ে নাস্তা খাই।
- ছি ছি ! তুমি এত কিপটে। মানুষ কি আর এমনি বলে - অর্থনীতিতে যারা পড়ে তার হাড় কিপটে হয়। ছি ছি তোমার এই কিপটেমির কারণে ভাইটি কী মনে করবেন। 

মোহিনীর রাগ দেখে রোজ নাকি সুরে তিন প্লেট বিরিয়ানির অর্ডার করল। যথাসময়ে বিরিয়ানি চলে এলো। এবার আমি খুব আয়েসের ভঙ্গিতে বিরিয়ানি চিবচ্ছি আর তাদের দুজনার প্রশংসা করে চলছি। আর রোজের কালিমাখা মুখ দেখে মনে মনে বললাম – আজ বেচারা কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে। তা না হলে কি এই বাঁদরের সাথে দেখা হয়! 

খাওয়া শেষে রোজকে বললাম – দোস্ত অনেকদিন পর আজ না যোশ করে খেলাম। সিগারেট চা খাওয়াবি না।
রাগ করে বলল- না। এত বেশি চা চা করিস না তো। যা ভাগ।

মোহিনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সেই প্যাকেটটি খুলে একটা সিগারেট বের করে ভাবলাম – রোজ কি আমাকে দেখে আর কখনো  বলবে না  -দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সেই সংগে রহিল ঈদ মোবারক। সাথে রহিল চায়ের আমন্ত্রণ। কী ভাবছেন, আপনারা উঠার সময়  বলবো - যাবেন, এক কাপ চা পান করে অন্তত যান। আরে না, আপনারা বসার সাথে সাথে এক কাপ ধূমায়িত চা পাবেন। ভাল থাকুন। বাঁচতে হলে প্রাণ খুলে হাসুন।


পুনশ্চঃ 
লেখা এবং ছবি লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।