জীবনের বাঁকে বাঁকে | কাজী শফিকুর রহমান শফিক

কাজী শফিকুর রহমান শফিক



সময় বহমান। স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক #সুরা_আছরে সময়ের কসম দিয়ে বলেছেন - মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শরিয়ত মোতাবেক না চলার কারণে তো বটে, ফলে মানুষের নৈতিকতার হ্রাস এবং লোভ লালসার পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ অধেল অর্থ এবং অসম প্রতিযোগিতার পিছনে ছুটতে গিয়ে শারীরিক পরিশ্রম কিংবা ব্যায়াম না করা নেশাগ্রস্ত দ্রব্যাদি গ্রহণ এবং অতিরিক্ত খাবার খেতে গিয়ে নিজের শরীর ধ্বংস করে চলছে।

#সুরা_আছরেই মহান আল্লাহ্ পাক আরো বলেছেন  ক্ষতিগ্রস্ত তারাই হবেন না - যাঁরা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছেন, সৎকাজ করেছেন, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দিয়ে চলছেন এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছেন। আর মানুষ যদি তা পালন করে অবশ্যই অবশ্যই নৈতিকতার পথে চলবে। দুর হবে সব অন্ধকার।

কৈশোরকালে বিশেষ করে ঈদে এবং বিকালের সময় সাইকেল চালানো কেন্দ্র করে বড় ভাইয়ের সাথে ছোট খাটো বসসা লেগে যেতো।বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালীন পকেটটি ঠুঠো জগন্নাথ হলেও প্রেস্টিজ জ্ঞান ছিল ভরপুর। তাই বাসার আদরের সাইকেলটি অনাদরে এক কোনে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে গেল।

১৯৯৬ সালে নিজের একখানি মোটরবাইক হলো। মোটরবাইকটি হাতে নিয়ে সেদিনেই প্রতিজ্ঞা করলাম - একান্ত প্রয়োজন না পরলে সন্ধ্যায় পর বাহিরে আড্ডা মারতে মোটরসাইকেলটি চালাবো না। রিক্সা বা অন্যকোন বাহনে না চড়ে পা হেটে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা মারতাম। শারীরিক কসরত না করলেও প্রায় প্রতিদিন কমপক্ষে তিন চার কিলোমিটার পথ হাটাহাটির অভ্যাস হয়ে গেল।

 আজও এই বয়সে বন্ধু বাবুল ( সমাজ) এর সাথে প্রায় তিন  কিলোমিটার দূরত্বের  পৌরমার্কেটে হেটে গিয়ে বাবুল (স্বর্ণ) এর দোকানে আড্ডা মারি। ফিরার পথে অতিরিক্ত ভার না হলে হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে কোন প্রকার দুশ্চিন্তা না করে আবারো প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বের পথ হেটে বাসায় ফিরি। মানুষ কে কীভাবে নিবে সেটি তাদের ব্যাপার কিন্তু নিজের শরীর তো আগে।

বর্তমান প্রজন্মের অনেকে ঘর থেকে বেড়াতে চায় না। জাঙ্ক ফুড গ্রহণ, ব্যায়াম আর খেলাধুলা না করার কারণে স্থূল থেকে স্থূলকায় হয়ে পড়ছে।প্রতিবছর মানুষ হৃদরোগ এবং ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে। ফলে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের ভেজালে দেশ ছয়লাপ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় পত্রিকায় প্রায় দেখা যায় রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে ফলমূল টাকটা রাখা কৃত্রিম রঙ এবং রাসায়নিক ফ্লেভার মিশ্রিত করে ফলের জুস সহ বিভিন্ন পানীয় এবং জাঙ্ক ফুড তৈরি করছে। এসব অতি মুনাফাখোরদের জন্য আমরা আমজনতা ক্যানসার নামক জীবানু নিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছি। সত্যি এ যুগে মানুষ নিজের ইচ্ছায় কিংবা পরোক্ষভাবে কতই না ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গত দুবছর আগে শখ করে সাইকেল কিনলাম। কয়েকদিন সাইকেল নিয়ে শহরে ঘুরাঘুরি পর্যন্ত করেছিলাম। অনেকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখলো। তারপর কী যে হলো সাইকেল চড়া বাদ পরলো। গতকাল ( ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮) সাইকেলটির মেরামত করে আজ আবারো সেটি নিয়ে ধরলার নদীর দিকে গেলাম।

নদীর পানি বাড়ছে। জানিনা সামনে কোন বিপদ আছে কিনা। আমরা মরছি প্রাকৃতিক কারণে, মরছি নির্বুদ্ধিতার কারণে আবার মরছি অতি মুনাফাখোর লোভী ব্যবসায়ীর কারণে।

মহান আল্লাহ্ পাক আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন।

0 Comments:

Post a Comment