This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Showing posts with label মতামত. Show all posts
Showing posts with label মতামত. Show all posts

৩০ ডিসেম্ভরের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ও ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে

নাহিদ হাসান নোলেজ

৩০ ডিসেম্ভরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘ডাকসু’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করা হয়েছে । আগের ৪ বারের মতো বাতিল না হলে, আগামী ১১ মার্চ -এ নির্বাচন হওয়ার কথা । কেমন নির্বাচন হবে ডাকসুতে ? ৩০ ডিসেম্ভরের মতো ? আরো অভিনব ? ফ্রি এন্ড ফেয়ার ? এসব প্রশ্ন মাথায় না নিয়ে নির্বাচনের আলাপে কেউ ঢুকতে পারবেনা আসলে । ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ এর নির্বাচন সমুহের ইতিহাস মাথায় নিলে দেখা যাবে, ডাকসু’র জন্য ন্যুনতম গ্রহনযোগ্য একটি নির্বাচন করতে হলে কমপক্ষে ২টি শর্ত পুরণ করতে হবে ;
১ । নির্বাচনপূর্ব স্বাভাবিক, নিরাপদ পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিশ্চিত করা ।
২ । নির্বাচনের দিনের পরিবেশ এবং কারচুপি মুক্ত নির্বাচনী ফলাফল নিশ্চিত করা । যার জন্য কমপক্ষে নীচের শর্ত গুলো পুরণ করতে হবে :
ক) এমন একটি ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কেউ আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে না রাখতে পারে অর্থাৎ ভোট গ্রহন শুরুর আগে দায়িত্ব পালনরতদের মিডিয়াকে ডেকে এনে দেখাতে হবে যে ব্যালট বাক্স শুন্য আছে ।
থ) ভোট গ্রহন হতে হবে সবার জন্য নিরাপদ এবং উন্মুক্ত স্থানে অর্থাৎ হলে হলে ভোট গ্রহনের পুরাতন ব্যবস্খার পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে বা সুবিধাজনক অন্য কোন স্থানে ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা হবে ।
গ) ভোটোরের উপস্থিতি, অবস্থান এবং চলাচলকে নিরাপদ করতে হবে অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ- নির্গমন এবং অবস্থানের সময়কালে যাতে কেউ কাউকে আক্রমন, ভয়ভীতি প্রদর্শন বা নিপীড়ন- নির্যাতন না করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সিসি টিভি স্থাপন করতে হবে । সকল ধরনের মিডিয়ার স্বাভাবিক উপস্থিতিরি পরিবেশ ও ব্যবস্থা করতে হবে ।
ঘ) বিকাল ৪-৫টার মধ্যে অংশগ্রহনকারী সংগঠন,ব্যাক্তিদের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শেষ ও ফল ঘোষনার ব্যবস্থা করতে হবে ।
এ কয়েকটি শর্ত পুরণ করার দাবীতে সকল ছাত্র সংগঠন ও সাধারন ছাত্রদের এমনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন,যাতে তারা এ দাবী পুরণে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে বাধ্য করতে পারে । আর তা না করতে পারলে মাস্তানি-গুন্ডামী-চ্যচরামি সবই ‘গণতান্ত্রিক’ বৈধতা পেয়ে যাবে । 
ভাবুন কি করবেন । দেশ আপনার, ভবিষ্যতও আপনার।

লেখকঃ সভাপতি, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
nahidknowledge@gmail.com

কে এই ছক্কা ছয়ফুর?



নাইমুল ইসলাম:

ছক্কা ছয়ফুরের ব্যাপারে অনেক শুনেছি,  লেখা পড়লাম এই প্রথম। 
আরিফ রহমান এর থেকে কপি করে টাইমলাইনে রেখে দিলাম।
---------------------------------------------
এক অনন্য সাধারণ বাংলাদেশি! বাংলার ইতিহাসে আর কখনো এমন মানুষের জন্ম হবে কি না সন্দেহ!

তাঁর নাম ছয়ফুর রহমান। পেশায় ছিলেন বাবুর্চি। খুব নামিদামি বাবুর্চি এমন নয়। সিলেটের সালুটিকর নামের একেবারেই গ্রাম্য বাজারের পাশের ছাপড়া ঘরের দিন আনি দিন খাই বাবুর্চি। তাঁর দ্বিতীয় পেশা ছিল ঠেলাগাড়ি চালনা। যখন বাবুর্চিগিরি করে আয় রোজগার হতো না তখন ঠেলাগাড়ি চালাতেন। কিন্তু এই লোকটির ছিল অসম সাহস। যেকোনো ইস্যুতে তিনি একেবারেই জনসম্পৃক্ত রাজনীতি করতেন। ধরুন সালুটিকর থেকে শহরে আসার বাসভাড়া আটআনা বেড়ে গেছে। ছয়ফুর রহমান কোর্ট পয়েন্টে একটা মাইক বেঁধে নিয়ে ওইদিন বিকালে প্রতিবাদ সভা করবেনই করবেন।

নিজেকে আল্লার গোলাম মো. ছয়ফুর রহমান বলে পরিচয় দিতেন। এমপি থেকে রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপতি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বা তারও নিচে নেমে ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়াই; তার এসব লীলাখেলায় জনগণের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও তিনি একজন বীর মুক্তিযেদ্ধা ও সুবক্তা।

বক্তা হিসেবে অসম্ভব রসিক লোক ছিলেন। ছড়ার সুরে সুরে বক্তৃতা করবেন। তারপর মূল ইস্যু নিয়ে অনেক রসিকতা করবেন; কিন্তু দাবি তাঁর ঠিকই থাকবে।

তার বক্তৃতা শুনতে সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের ভিড় হতো। তো বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরেই তিনি একটুকরো কাপড় বের করে সামনে রাখতেন। তারপর সবাইকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলতেন, 'আমি এই যে আপনাদের জন্য আন্দোলন করতেছি, আমার মাইকের খরচ দিবে কে? মাইকের খরচ দেন।'

অদ্ভুত ব্যাপার হল, কোনোদিনই মাইকের খরচ উঠতে দেরি হয়েছে এমনটা হয়নি। দুই টাকা, এক টাকা করে তার সামনের কাপড়টি ভরে উঠত। তারপর যখন তিনশ' টাকা হয়ে গেল তখন মাইকের খরচ উঠে গেছে; তিনি তার কাপড়টি বন্ধ করে দিতেন।

অনেক সময় তার লেখা বই বিক্রি করেও জনসভার খরচ তুলতেন। অদ্ভুত কয়েকটি চটি সাইজের বই ছিল তার। একটির নাম 'বাবুর্চি প্রেসিডেন্ট হতে চায়'। সেই বইটির পেছনে তার দাত-মুখ খিচানো একটা সাদাকালো ছবি, নিচে লেখা 'দুর্নীতিবাজদেরকে দেখলেই এরকম ভ্যাংচি দিতে হবে'।

ছয়ফুর রহমান প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আশির দশকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে। তখন দেশে সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন। তো সব প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নিরাপত্তার জন্যই সঙ্গে পুলিশ দেওয়া হলো। ছয়ফুর তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেিয়া পুলিশ প্রত্যাখ্যান করে বললেন, 'এদেরকে খাওয়ানোর সাধ্য আমার নাই'। তবু সরকারি চাপাচাপিতে তাকে নূন্যতম দুইজন পুলিশ সঙ্গে নিতে হলো।

সে সময় দেখা যেত রিক্সায় দুইপাশে দুই কনেস্টবল আর ছয়ফুর রহমান রিক্সার মাঝখানে উঁচু হয়ে বসে কোথাও যাচ্ছেন।

নির্বাচনে খারাপ করেননি। সেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ৬০-৬৫ জন প্রার্থীর মাঝে আট নম্বর হয়েছিলেন। তারপর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'আমি দেশের আট নম্বর প্রেসিডেন্ট। ইলেকশনের দিন বাকি সাতজন মারা গেলে আমি প্রেসিডেন্ট হতে পারতাম।'

অদ্ভুত এবং মজাদার সব নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তাঁর। যেমন, দেশের কোনো রাস্তাঘাট পাকা করার দরকার নেই! রাস্তা তুলে দিয়ে সেখানে খাল করে ফেলতে হবে! নদীমাতৃক দেশে সেই খাল দিয়ে নৌকায় লোকজন চলাচল করবে! খালের পানিতে সেচ হবে-সব সমস্যার সহজ সমাধান।

তিনি যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারেন, তাহলে সিলেটের সুরমা নদীর উপরে বিশাল আকৃতির একটি দাঁড়িপাল্লা লটকানোর ওয়াদা করতেন। পাল্লার পাশে একটা অফিস খুলে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন; যার কাজ হবে সিলেটে কোনো অফিসার নিয়োগ হলে প্রথমে তাকে দাঁড়িপাল্লায় তুলে ওজন করে অফিসে রেকর্ড রাখবেন। বছর ছয়মাস পরে তাকে আবারও পাল্লায় উঠানো হবে। এতে যদি দেখা যায় তার ওজন বেড়েছে তাহলে নির্ঘাত বোঝা যাবে সিলেটের মানুষের কাছ থেকে ঘোষ খাইয়া বডি বানাইছে। আর ঘোষখোর অফিসারের রক্ষা নাই।

ঘোষখোর ধরার এই অভিনব পদ্ধতির কথা তিনি সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে টুলের উপর দাঁড়িয়ে প্রায়ই বক্তৃতা দিয়ে জনগণকে মাতিয়ে রাখতেন।

তাঁর দলের নাম ছিল 'ইসলামি সমাজতান্ত্রিক দল'। সেই দলে কোনো সদস্য নেওয়া হতো না। এমনকি উনার স্ত্রীকেও সদস্য করেননি। তিনি বলতেন, 'একের বেশি লোক হলেই দল দুইভাগ হয়ে যাবে'।

ছক্কা ছয়ফুর বেশ কয়েকবার নির্বাচন করেছেন। কখনোই তাঁকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি; সবাই মজার ক্যান্ডিডেট হিসেবেই নিয়েছিল। কিন্তু তিনি ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে এক কাণ্ড ছিল বটে।

যথারীতি ছয়ফুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রতীক-ডাব। তিনি একটা হ্যান্ডমাইক বগলে নিয়ে একা একা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার লিফলেট কিছুই নেই। কিন্তু বক্তৃতা তীর্যক। বাকি প্রার্থীদেরকে তুলাধুনা করে ফেলছেন। এরকম এক সন্ধ্যায় সিলেটের টিলাগড়ে তার উপর অন্য এক প্রার্থীর কয়েকজন পান্ডা হামলা করে বসল।

পরের দিন সেই খবর গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলো। আহা! একেবারেই সাধারণ একটা মানুষ, তাঁর সঙ্গে গুন্ডামি করার কী দরকার ছিল?

ওইদিন বিকালে স্কুল ছুটির পর প্রথম মিছিল বের হলো সিলেট পাইলট স্কুলের ছাত্রদের উদ্যোগে। মিছিল লালদিঘীর রাস্তা হয়ে বন্দরবাজারে রাজাস্কুলের সামনে আসার পর রাজাস্কুলের ছেলেরাও যোগ দিল। ব্যস, বাকিটুকু ইতিহাস। মুহূর্তেই যেন সারা শহরে খবর হয়ে গেল। সন্ধ্যার মধ্যেই পাড়া-মহল্লা থেকে মিছিল শুরু হলো ছয়ফুরের ডাব মার্কার সমর্থনে। একেবারেই সাধারণ নির্দলীয় মানুষের মিছিল। পাড়া মহল্লার দোকানগুলোর সামনে আস্ত আস্ত ডাব ঝুলতে থাকল। রিক্সাওয়ালারা ট্রাফিক জ্যামে আটকেই জোরে জোরে 'ডাব, ডাব' বলে চিৎকার শুরু করে! সেই স্লোগান ম্যাক্সিকান ওয়েভসের মতো প্রতিধ্বনি হয়ে এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় চলে যায়। অনেক প্রেসমালিক নিজেদের সাধ্যমতো হাজার দুইহাজার পোস্টার ছাপিয়ে নিজেদের এলাকায় সাঁটাতে থাকলেন। পাড়া-মহল্লার ক্লাব-সমিতিগুলো নিজেদের উদ্যোগে অফিস বসিয়ে ক্যাম্পেইন করতে থাকল।

অবস্থা এমন হলো যে, ছয়ফুর রহমানকে নির্বাচনী সভায় আনার এপয়েন্টমেন্ট পাওয়াই মুশকিল হয়ে গেল।

ছয়ফুর রহমান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাঁদের অফিস ছেড়ে দিল ছয়ফুরের নির্বাচনী প্রচার অফিস হিসেবে। পাড়ায় পাড়ায় ছেলেরা তাঁর নির্বাচনী জনসভার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেখানে আনতে হলেও আগে মূল অফিসে গিয়ে ৫০০ টাকা এডভান্স করে আসতে হয়, নইলে ছয়ফুর রহমান আসেন না! কারণ, তাঁর বাবুর্চিগিরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফুলটাইম নির্বাচন করতে হলে সংসার খরচ দরকার।

আমার মনে হয় তিনিই একমাত্র প্রার্থী, যাকে তাঁরই নির্বাচনী জনসভায় নিয়ে আসার জন্য উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে।

নির্বাচনের দিন জনগণ এক মহ-বিস্ময় প্রত্যক্ষ করল। আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইফতেখার হোসেন শামীম জামানত রক্ষা করেছিলেন। আর মেজর জিয়ার দল সহ বাকি সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হলো। ডাব প্রতীকে ছয়ফুর পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ভোট আর চাক্কা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইফতেখার হোসেন শামীম পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ভোট।

দক্ষিণ সুরমার এক কেন্দ্রে ছয়ফুর রহমানের ডাব পেয়েছিল ১৮০০+ ভোট! ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রজাপতি মার্কা পেয়েছে কুল্লে ১ ভোট।

আরও অবাক করা একটি ব্যাপার ঘটে নির্বাচনের দিন। প্রায় ভোটকেন্দ্রে জনগণ ডাব
মার্কার ব্যালেটের সাথে টাকাও ব্যালেটবাক্সে ঢুকিয়ে দেয়।

নির্বাচনের পরে ছয়ফুর রহমানের নাম পড়ে গেল ছক্কা ছয়ফুর। তিনি হাসিমুখে সেই উপাধি মেনে নিয়ে বললেন, 'নির্বাচনে ছক্কা পিটানোয় মানুষ এই নাম দিয়েছে'।

উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ছক্কা ছয়ফুর সফল ছিলেন। তাঁর মূল ফোকাস ছিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা ঠিক করা। হুটহাট যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলে ঢুকে পড়তেন। শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেই শোকজ করে দিতেন। সেই সময় প্রাইমারি স্কুলগুলো উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল অনেকটাই।

তবে ছয়ফুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কারণে। ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতি বন্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। এতে ক্ষিপ্ত চেয়ারম্যানরা একজোট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিলে যতদূর মনে পড়ে তাঁর উপজেলা চেয়ারম্যানশিপ স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দিলে ছক্কা ছয়ফুরের স্বল্পমেয়াদী জনপ্রতিনিধিত্বের চিরতরে ইতি ঘটে।

এক নির্বাচনে খরচের জন্য তিনি কিছু টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কোনো কারণে হয়নি। কিন্তু ছয়ফুর জনগণের টাকা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে সেই ঐতিহাসিক কোর্টপয়েন্টে আবার আসলেন। এসে বলেলেন, ‘আপনারা তো আমাকে নির্বাচনে খরচ চালানোর জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে না; তাই আমি আপনাদের টাকাগুলো ফেরত দিতে চাই।’ লোকজন অনেক খুশি হয়ে বলল, ‘আমরা টাকা ফেরত নিতে চাই না; এগুলো আপনি নিয়ে নিন’

তিনি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেন তখন রেজিষ্টারি মাঠে তার প্রথম জনসভা ছিল। হাজার হাজার মানুষের ঢল। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তিনি তার বক্তব্যে প্রথমেই সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন,
‘আমার নির্বাচনের শুরুতে আমার দুইটা ঠেলাগাড়ি ছিল। সংসার চলে না তাই একটি বেছি লাইছি। আর আমার বাড়িতে আপনারার বসাবার জায়গা ও নাই। পয়লা যখন রিলিফের চালান পাইমু সেখান থেকে কিছু বেছিয়া আপনারার বসাবার জায়গা করবো যদি আপনারা অনুমতি দেন।’

তখন হাজার হাজার জনগণ একসাথে হেসে উঠে বলল, ‘অনুমতি দিলাম’।

তিনি ছোট ছোট কয়েকটি বইও রচনা করেন। 'বার্বুচি প্রেসিডেন্ট হতে চায়', ‘পড়, বুঝাে, বল’ তার আলোচিত বই।

অভাবের কারনে তিনি নৌকার মাঝিগিরিও করেছেন।বক্তৃতায় নিজেকে আল্লার গোলাম মোঃ ছয়ফুর বলে পরিচয় দেওয়া ছক্কা ছয়ফুর ওরফে ডাব ছয়ফুর আজ আর নাই। কিন্তু তাঁর কথাগুলো মানুষের অন্তরে রয়ে গেছে।

জীবনের শেষ সময়ে এই মহান মানুষটি সিলেট ডিসি অফিসের বারান্দায় চিকিৎসা খরচের দাবীতে অনশন করেছিলেন এবং দাবীও আদায় করেছিলেন। চিরকালীন দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেই এই মানুষটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। সরলপ্রাণ এই সমাজবিপ্লবীর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

নোট : এই লেখার কিছু অংশ একটা ছদ্মনামের আইডি থেকে পাওয়া। পরে ওই লেখাটা দেখা যায় আরিফ জেবতিক নামে একজন অনেক আগে লিখেছেন। আর বাকি অংশ লোকমুখে শোনা থেকে আমি লিখেছি।

লিখেছেন আরিফ জেবতিক। কালের কন্ঠে পত্রিকায় আবুল কালাম আজাদের ফেসবুক থেকে নেয়া বলে প্রকাশ করেছিল।

কুড়িগ্রাম নিয়ে আমার অনুভূতি অতঃপর সোনাহাট স্থল বন্দর | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান;
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)



এটি আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, কোন গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন নয়। আমার এ অনুভূতির সাথে একমত হতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকথা নেই। কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে অনুগ্রহ করে মন্তব্যে লিখবেন। বানান ও ভাষাগত ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

ওকি গাড়িয়াল ভাই
হাকাও গাড়ী তুই চিলমারী বন্দরে।

বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন আহমদ এর ভাওয়াইয়া গানের রেশ টেনে বলতে চাই কুড়িগ্রাম হচ্ছে ভাটির দেশ। ভাটিয়ালি গানের জন্য বিখ্যাত।দেশের একপ্রান্তে কুড়িগ্রাম জেলা। এ জেলা ০৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত।  এক সময় মঙ্গাপীড়িত দরিদ্র জেলা হিসবে পরিচিত ছিল। যদিও এখন মঙ্গা অনেকটা দূর তবুও  বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দারিদ্র্যের হার এখনো বেশী।

চিলমারী একসময় নৌ বন্দরের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন নৌ বন্দর চালু নেই।  চিলমারী কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। দাদুবাড়ি এবং নানুবাড়ি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তখনকার বন্দর এবং তাকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মচাঞ্চল্যের কথা শুনেছি। বড় বড় জাহাজ আসতো আবার বড়ো বড়ো নৌকায় পাট এবং অনান্য কৃষিজাত পণ্য বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমন কি ভারতে রপ্তানি করা হতো। বয়সে তখন অনেক ছোট, এখন আধো আধো মনে  আছে, জাহাজ এসেছে বলে মামারা তা দেখাতে নিয়ে গেলেন। ফেরার সময় হাট থেকে পায়ের এক জোড়া মোজাও কিনে দিয়েছিল। অনেক ভীড় ছিল এতটুকু মনে অাছে। এখন মনে হয়,  অনেক কর্মসংস্থান তখন তৈরি হয়েছিল। ব্রম্রপূত্র নদের ভাঙ্গনে দাদুবাড়ি নানুবাড়ি তা গ্রাস করায়  খুব একটা সেখানে যাওয়া হয় না। দেশ স্বাধীন হবার  পূর্বে নদীবন্দর স্থগিত হওয়ায় সেখানে কর্মচাঞ্চল্য অনেকটা স্থবির হয় যার ঢেউ এসে সবচেয়ে আঘাত হানে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়।

এক সময় রেল ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও যাতায়াতের সুযোগ ছিল না। তাও ছিল মাত্র দুটো।  পরে তিনটা। বর্তমানে একটি বা দুটি। জেলা থেকে সামান্য দূরে রাজারহাট উপজেলা। সেখানে স্বল্প জমি থাকায় বাবা  প্রায়শঃ যেতেন।  দুপুরে ট্রেনে উঠলে রাত্রের ট্রেনে ১১ টায় ফিরতেন। আমাদের অনেক সহপাঠী সেখান থেকে ট্রেনে ক্লাস করতেন।১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিস্তা রেল সেতুতে সড়ক পরিবহনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ জেলার যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিলেন। তখন থেকে সড়ক পরিবহন মানুষের নিকট আকৃষ্ট হলো এবং আস্তে আস্তে রেল পথ অবহেলার শিকার হলো। আজ কোন কারণে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে কুড়িগ্রাম সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর একটি অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়। যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম থাকা উচিত। একটির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বিকল্প ব্যবস্থায় প্রয়োজন মিটানো যায়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে আন্তঃ নগর ট্রেনের ব্যবস্থা করে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। পরবর্তী সরকার প্রধানগন এ কার্যক্রম তরান্নিত করলেও এখন পর্যন্ত এ জেলা সে সুযোগ পায়নি। এ প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ  আন্তঃনগর ট্রেনের দাবীতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সে সংগে নৌ পথ চালুর দাবীতে ঐক্যবদ্ধ। আমি তাঁদের দাবীর সাথে নৈতিকভাবে সহমত পোষণ করি।

 উত্তর ধরলা বলে খ্যাত সদর উপজেলার কতিপয় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী,ফুলবাড়ী এবং ভূরাঙ্গামারী অনেক অনেক বছর ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৯৬ সালের পর তৎকালিন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ( বর্তমানেও) শেখ হাসিনা ধরলা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন। সে আমলেই ব্রিজের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বাকী কাজগুলো সুসম্পন্ন করতঃ প্রাক্তন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসে তা উদ্বোধন করেন। বেড়ে যায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। এখনো কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলা রৌমারী এবং রাজিবপুর নদী দ্বারা অনেকটা জেলার সাথে বিচ্ছিন্ন।

এ জেলার মানুষ কাজ চায়। তাঁদের যে কোন কাজ করার আগ্রহ আছে। আজ ( ২৫ জানুয়ারি) ভুরাঙ্গামারী উপজেলায় একবারে প্রান্তিক গ্রামে মেঠোপথ ধরে বাইকে স্ত্রীসহ ঘুরলাম। উদ্দেশ্য আমার দাদা শ্বশুরের পুরাতন বাড়ি দেখা। এক সময় গ্রাম অঞ্চলে ছন বা খরের তৈরি বাড়িগুলো উধাও হয়ে সেখানে ঠাঁই নিয়েছে টিনের তৈরি ঘর বাড়ি। মাঝেমধ্যে ইটের তৈরি হাফ বিল্ডিং। শুনলাম এ জেলার শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অট্টালিকা ও  রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের কষ্টার্জিত শ্রম যেমন দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছে তেমনি পারিবারিক উন্নয়ন এবং জেলার উন্নয়নে সমানতালে অবদান রেখে চলেছে। অনার্স মাস্টার্স কোর্স কুড়িগ্রামে চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীবৃন্দের সাথে মেশার সুযোগ হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা যে কোন কাজ করার জন্য প্রস্তুত।  বর্তমানে অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশানি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের লেখাপড়া খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই সংস্থান করছেন।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ সালে শ্বশুর বাড়ীতে গমন করেছিলাম। উক্ত বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত করা হয় না। এর জন্য স্ত্রীর নিকট কম ঝাড়ি খাইনি। পৌছা মাত্র বড় মেয়ের বায়না সোনাহাট স্থল বন্দর দেখবে। এর আগে যখন সেখানে বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম তখন বন্দর চালু হয়নি। বিকাল ৪ ঘটিকায় পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে পৌঁছিলাম। দেখলাম সেখানে একধরনের প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। কাস্টমস কর্মকর্তার নিকট নিজ পরিচয় দেবার পর জানতে পারলাম পুরাদমে বন্দর চালু হয়নি। ভারত থেকে ১৮ টি পণ্যের মধ্যে মাত্র দুটি পণ্য কয়লা এবং পাথর আমদানী হচ্ছে। এদেশ থেকে  কোন পণ্য সেখানে রপ্তানি হচ্ছে না। এর কারণ আমি নিজে যেটি উপলব্ধি করেছি এবং কথাবার্তা থেকে যেটি অনুমান করেছি সেটি হচ্ছে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা। সেখানে অনেক C& F (Clearing and Forwarding Agent) এর অফিস ঘরও দেখলাম। আমার জানামতে ভারতের 7 Sisters নামে খ্যাত ৭টি রাজ্যের মধ্যে বর্তমানে সোনাহাটসহ তিনটি বন্দর চালু আছে। বাকিগুলো ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাথে। উদ্দেশ্য হলো- সোনাহাটের সাথে ভারতের আসাম রাজ্যের সংযোগ সাধন করা। উক্ত বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ভারত তাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রায় প্রস্তুত করেছে। আমাদের এখানে অনেক অবকাঠামোর কাজ বাকি আছে।

কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আমার কতিপয় সুপারিশঃ

১। দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের ব্যাপারে সকলকে ঐক্যমত্য হতে হবে।
২। সোনাহাট স্থল বন্দরে যাতায়াত করার জন্য দুধকুমোর নদীর উপর রেলপথসহ সড়ক ব্রিজ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩। বর্তমানের ব্রিজটির অত্যন্ত বেহাল অবস্থা হয়েছে। যে কোন সময়ে ভারী যানবাহন চললে তা ভেঙ্গে যেতে পারে। ব্রিজ নির্মাণ যেহেতু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেহেতু নদী ড্রেজিং করে ফেরীর ব্যবস্থা চালু করে ভারী যানবাহনের পথ সুগম করা।
৪। সোনাহাট স্থল বন্দরে পণ্য আমদানি রপ্তানির পাশাপাশি ভিসার ব্যবস্থা চালু করা। এতে দু দেশের জনগণ এবং ব্যবসায়ীবৃন্দের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৫। প্রস্তাবিত ২য় তিস্তা এবং ধরলা ব্রিজে সড়কের পাশাপাশি রেলপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬। রৌমারী এবং রাজিবপুরের সাথে যোগাযোগের জন্য কুড়িগ্রামের মোল্লাহাট এবং রৌমারী দাঁতভাঙ্গার সাথে যে নদীপথ সংযোগ করার কথা শোনা যাচ্ছে,  তা অবিলম্বে চালু করা। এতে ঢাকা,  সিলেট এবং চট্রগ্রামের সাথে সড়কপথের যেমন বিকল্প ব্যবস্থা চালু হবে ঠিক তেমনি দূরত্বের পরিমাণ ও সময় অনেক হ্রাস পাবে। অদূর ভবিষ্যতে ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করলে তাতে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী ব্রিজের ক্রমবর্ধমান চাপ অনেক কমবে।
৭। আন্তঃনগর ট্রেন এবং নৌপথ চালু করা।
৮। Out sourcing ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের কাজ করার যে আগ্রহ আছে সেখানে তারা যাতে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা। এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সুখকর নয়।
৯। তরুণ সমাজকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আবেগকে প্রশ্রয় না দেওয়া। বাস্তব যতই কঠিন হউক না কেন তা মোকাবেলা করা। নিজেদের প্রয়োজনে একে অন্যকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জানা জ্ঞান বিতরণেরর ব্যবস্থা করা। উদাহরণস্বরূপ হয়তো একজন ইংরেজিতে একটু দক্ষ কিন্তু অংকে দুর্বল।  আবার আরেকজন এর বিপরীত।

এগুলো ছাড়াও  বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কুড়িগ্রাম উন্নয়নের যে সুপারিশ প্রদান করেছেন,  সেগুলোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমার বিশ্বাস  এক সময় দেশের অন্যতম জেলা হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে শ্রম সস্তা, সহজলভ্য কৃষিজাত পণ্য এবং ভারতে আমদানী এবং রপ্তানি পণ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং শিল্প কলকারখানার মালিক গণ এখানে ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী হবেন। কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে এখনকার তরুণ সমাজের হতাশাও দূর হবে ইনশাল্লাহ।

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ভূত | নাহিদ হাসান

নাহিদ হাসান

১.
জন্ম থেকেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের ভূত দেখে আসছে। কিন্তু দেখতে দেখতে সেই ভূত বাস্তব হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে কিনা, এই তর্ক টেবিল থেকে রাস্তা পর্যন্ত। নাকি ভ্রুণ থেকে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নিয়ে অধির আগ্রহে কাতরাচ্ছিল, যাকে কেউ কেউ বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের হেঁটে হেঁটে ভারত যাত্রার মধ্যেই তা রয়ে গিয়েছিল? নইলে জন্মেই কিভাবে রক্ত স্নাত এত বড় জনগোষ্টীকে স্রেফ পাশ কাটিয়ে একব্যক্তিকেন্দ্রীক সংবিধান প্রনয়ণকরা সম্ভব হলো? গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এত আত্মদানের পরও জন্ম থেকেই বাংলাদেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে আছে। পরাধীন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বাক্যবাগীশ ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। ইওরোপে যা অস্বাভাবিক, আমাদের এখানে যেন তা স্বাভাবিক! রুশ তাত্ত্বিক লিঁও ট্রটস্কি বলেছেন, যে মুহূর্তে বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্র তার সংসদীয় কাঠামো ও 'স্বাভাবিক' পুলিশও মিলিটারী পরিকাঠামোর মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, সেই মুহূর্তটাই ফ্যাসিবাদী মুহূর্ত।
আর বাংলাদেশ তো এখনও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের স্তরেই পৌঁছে নাই। তবে এটাও ঠিক, বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব এখানে না সংগঠিত হলেও, কৃষিসহ সর্বত্র ধনতন্ত্রের বিকাশমান পরিস্থিতি থাকায় বুর্জোয়া সংস্কৃতির উপাদানগুলোরও বিকাশ ঘটেছে। ফলে উন্মত্ত পেটি বুর্জোয়া জনতা, শ্রেণীচ্যূত গোষ্ঠীগুলো ও জাতি-ধর্মগর্বী ছাত্র সমাজেরও জন্ম ঘটেছে, যারা ফ্যাসিবাদের অন্যতম হাতিয়ার। এদেরকে দিয়েই সার্বভৌম ক্ষমতার সমস্ত প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ও মতাদর্শীক প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, প্রেস, ট্রেড ইউনিয়ন ও সমবায় সমিতিসহ সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করে নেয়। তাই আমরা ইতালি-জার্মানির ফ্যাসিস্ট প্রবণতাও দেখব, আবার লাতিন আমেরিকার হত্যা-গুম-অপহরণের সংস্কৃতিও দেখব। আবার আমরা দেখব, পরাধীন আমলে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ও জনগণ যে পরিমাণ বাক স্বাধীনতা ভোগ করতেন, স্বাধীন দেশে তাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমার শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির দিকে তাকালেই আমরা তুলনাটা টের পাবো।
ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা মুসোলিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা যে তিনটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজে তালুবন্দী করে, সেগুলো হচ্ছে: ১. রাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণের অধীনে শ্রমিকদের সঙ্গে পুঁজিপতিদের সহযোগ স্থাপন ও বাধ্যতামূলক আপোসের বন্দোবস্ত করা। ২. রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রস্থ করা। এবং ৩. প্রেসের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন করে সংকুচিত করা।
আগে আমরা মে দিবসে স্লোগান শুনতাম, দুনিয়ার মজুর এক হও! এখন শুনি, শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই। সংবিধান পড়লেই বুঝি, ৭২ সাল থেকে সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অর্থাৎ মুসোলিনির ১ থেকে ৩ নম্বর শর্ত ৭২ সাল থেকেই বহাল। সেজন্য ৭২ সাল থেকেই ফ্যাসিবাদ শব্দটি রাজনৈতিক এলাকায় চালু আছে।
মুসোলিনির আমলে ইতালি ঘুরে বেড়িয়েছেন জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি সেখানে অর্ধাহারে-অনাহারে লোকজনকে যক্ষায় মরতে দেখেছেন। দেখেছেন, পথে পথে অসংখ্য ভিক্ষুক। অথচ ফ্যাসিস্ট নেতারা প্রায়ই বলতেন, ইতালিতে ভিক্ষুক নেই। গ্রামে-গঞ্জে জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কোন চিহ্ন না দেখতে পেলেও মুসোলিনিকে প্রায়ই বলতে শুনেছেন, 'যখন পৃথিবীর অন্য সমস্ত দেশে ক্রাইসিসের ফলে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হয়ে উঠেছে, একমাত্র ফ্যাসিস্ট ইতালিতেই জনসাধারণের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।' -যেমনটি আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হতে দেখি সাগরে সাগরে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের মরতে দেখেও।


২.
ইতালি প্রথম মহাযুদ্ধের অস্ট্রিয়ার অন্তর্গত দক্ষিণ তিরোল দখল করে নেয়। সেই দক্ষিণ তিরোলের জার্মাণ অধিবাসীদের ইতালিয়ান করে তোলার জন্য মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সরকার ১৯২৩ সালের জুন মাসে একটি প্রোগ্রাম ঘোষণা করে: দক্ষিণ তিরোলে রাষ্ট্রের সমস্ত অফিসে কেবল ইতালীয় ভাষা ব্যবহার, সেখানকার জার্মাণ কর্মচারিদের ইতালির অন্য প্রদেশে বদলি, শহর ও রাস্তাগুলির পুরাতন জার্মাণ নাম বদলে ইতালীয় নাম রাখা, পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইতালীয়দের দক্ষিণ তিরোলে পাঠিয়ে সেখানকার জমি দখল করে বসবাসের বন্দোবস্ত করা, ইতালীয় ভাষাকে চালু করা, বিচারালয়ে ইতালীয় কাজকর্ম ও বহুসংখ্যক ইতালীয় সৈন্য মজুদ রাখা।-এই সমস্ত কাজ আমাদের শাসকশ্রেণীও পার্বত্য এলাকায় করেছে এবং আমাদের কাছ থেকে তার সম্মতিও আদায় করেছে।
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ সালে তাঁর 'ফ্যাসিবাদ' বইএ শিল্পী-সাহিত্যিকরা কীভাবে মুসোলিনিকে সমর্থন যুগিয়েছেন, তা আমরা বুঝব ফিউচারিস্টদের সঙ্গে ফ্যাসিজমের সম্পর্ক কী, এটা ফিউচারিস্টদের নেতা মারিনেত্তি লেখককে কী বলেছেন তা থেকেই। মারিনেত্তি তাঁকে বলেছেন, "ফ্যাসিজম ফিউচারিজম ও মহাযুদ্ধে ইতালির যোগদানের ফলস্বরূপ। ফ্যাসিজম ফিউচারিজম দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করেছে। ফ্যাসিজমের মধ্যে সেই জাতীয়তার গর্ব, ঘোরতর যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও স্বদেশপ্রেম আছে ও সর্বদা থাকবে, সেগুলির সম্পর্কে আমরা ফিউচারিস্টরাই ইতালির জনসাধারণকে সর্বপ্রথম সচেতন করে তুলি।" 
বলা ভাল, ১৯২২ সালে মুসোলিনির সরকার গঠনের সাথে সাথে এই কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদকরা ফ্যাসিস্ট মূর্তিতে দেখা দেয়। তারা প্রচার করত, ইতালির ভবিষ্যৎ হচ্ছে ন্যাশনালিজম ও ধর্মের বিস্তারের দ্বারা আধ্যাত্মিক জীবনের আদর্শ প্রচার করা।-আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মদীনা সনদ কি একসাথে চলছে না?


৩.
বিপুল সংখ্যক মানুষের যুক্তিবোধকে অসার করে দেওয়াটা ফ্যাসিস্ট প্রচারের লক্ষ্য। নেতাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন করতে পারার মধ্যে ফ্যাসিবাদের প্রচার নির্ভরশীল। নেতা আর সাধারণের মত না, এটা প্রমাণ করতেই হবে। মুসোলিনি দুচে আর হিটলার ফুয়েরার। রাষ্ট্রনেতাকে শুধু তার নামে ডাকা যাবে না। নেতাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মিথ্যা তৈরি করা হয়। ঠাণ্ডা মাথায় নেতার ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়। গোটা ইতালি জুড়ে একটা স্লোগান তোলা হয়, মুসোলিনি সব সময় সঠিক। ইতালি জুড়ে মুসোলিনির ছবি, তার নিচে স্লোগান: বিশ্বাস কর, মেনে চলো, লড়াই কর। তার তিন ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়: ১. তিনি নবজাগরণের প্রতিনিধি, ২. অনন্য সাংগঠনিক প্রতিভা ও ৩. সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। কবি এজরা পাউণ্ড এবং স্বল্প সময়ের জন্য রবীন্দ্রনাথও মুসোলিনির গুণমুগ্ধ ছিলেন। পুরো ইতালির ইতিহাসবিদ ও কয়েকশ জীবনীকার এটা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন যে, জন্ম থেকেই তিনি কত বড় প্রতিভাবান ছিলেন! ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারে মুসোলিনি নিজেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে ও পরম ভাবতে শুরু করেছিলেন।-আশা করি আমরা আমাদের ইতিহাসের সাথে মিল পেয়ে যাচ্ছি।

৪.
ইতালি আর জার্মানি ছিল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র, আর বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদের শিকার। কিন্তু শাসকশ্রেণীর আচরণের মধ্যে সাদৃশ্য। এগুলো ফ্যাসিবাদের উপরি দিক। মর্মবস্তুতে ফ্যাসিবাদ বুঝতে হয় উৎপাদন-সম্পর্কে, ব্যাংক ও শিল্প পুঁজির দ্বন্দ্বের মধ্যে। বাংলাদেশ সে জায়গায় যায়নি, কিন্তু ভারত সেই যাত্রায় উপস্থিত। ৪০ লক্ষ বাঙালি আর মাও বাদের ভূত দেখার রাজনৈতিক প্রবণতার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের ভূত বাস্তব হয়ে ওঠে, তা উপরে বললাম। বাংলাদেশ ভারত নামের ফ্যাসিবাদী দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা হাজির করছে নিজ রাষ্ট্রের ভূত-ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়েই। ইতালি-জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান ঘটেছিল বলশেভিক বিপ্লবকে মোকাবিলার জন্য, বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চালু হয়েছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে ঠেকাতেই। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পপুলার ফ্রন্ট ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করেছে ইওরোপে, আমরা প্রবণতাকে ঠেকাব কী করে? স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াই ছাড়া এই ফ্যাসিবাদের ভূত ঠেকানোর ওঝা নেই।



লেখকঃ সভাপতি, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
nahidknowledge@gmail.com

মূল্যায়নের আশায় থেকো না | বব ডিলান

বব ডিলান



বব ডিলান ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী। কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে। বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায়। বিগত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে সংগীতজগৎ। গ্র্যামি, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পুলিৎজারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বব ডিলান টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিংশ শতাব্দীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অন্যতম। সূত্র: ওয়েবসাইট. ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে স্কট কোহেনকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন অঞ্জলি সরকার 

অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চায়। কিন্তু আমি যদি পারতাম, তাহলে সেই সব মানুষের সাক্ষাৎকার নিতাম, যারা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু ফেলে রেখে গেছেন অনেক অসমাপ্ত কাহিনি, জন্ম দিয়েছেন অনেক প্রশ্নের। হ্যাঙ্ক উইলিয়ামস, মেরিলিন মনরো, জন এফ কেনেডি, এমন আরও অনেকে, যাঁদের জীবন মানুষকে এখনো ভাবিয়ে তোলে। কোটিপতিদের জীবন আমাকে আকৃষ্ট করে না। আমি জানি না, টাকার পাহাড় জীবনে কী-ই বা দিতে পারে। যাঁদের কাজ আমার পছন্দ হয়, আমি সেই কাজগুলোকে শ্রদ্ধা করেই খুশি থাকি। 

আমার মনে হয়, একজন গীতিকারের সবচেয়ে অসাধারণ গানগুলো পুরোপুরি তাঁর কল্পনার জগৎ থেকে আসে, যা তিনি বাস্তবে কখনো ছুঁয়ে দেখেননি। এ যেন এক অন্য রকম মুক্তি! যদিও নিজের বেলায় এমনটা করা সাধারণত হয়ে ওঠে না। বেশির ভাগ সময় চারপাশে যা ঘটে চলেছে, সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। কলেজের পড়াশোনার পাট আমার প্রথম বছরেই চুকে গিয়েছিল। লেখালেখি কিংবা সাহিত্য নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমি শুধু আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াই। আমি জানি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক জানাশোনা থাকার কথা, কিন্তু সত্যিটা তার বিপরীত। আমি এসব নিয়ে তেমন কিছুই জানি না। আমি লিখতে শুরু করেছিলাম কারণ, আমি গান গাইতাম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল আমার জন্য। সবকিছু তখন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল আর আমার কেবলই মনে হতো, কোনো একটি ব্যাপার নিয়ে গান থাকা উচিত। কারও না কারও সেই গানটি লেখা উচিত। তখন আমিই সেই গান লিখতে শুরু করে দিলাম। কারণ, আমি তা গাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম। আমার আগেই যদি সেসব গান কেউ লিখে ফেলত, তাহলে আমি আর গান লেখা শুরু করতাম না। 

এভাবেই জীবনে একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আমিও নিজের মতো গান লিখতে থাকি। এসবের কোনোটাই আমি খুব গুছিয়ে কিংবা পরিকল্পনা করে করিনি। কবিতার বেলায়ও ঠিক তাই। হাইস্কুলের চৌকাঠ পেরোনোর আগে আমি কখনো কবিতা লিখিনি। 

আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমার হাতে এসে পড়ে গিন্সবার্গ, গ্যারি সিন্ডার, ফিলিপ হোয়ালেনের লেখা। তারপর আমি ফরাসি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ি, কবিতায় সুর বসাতে থাকি। তখনকার দিনে ফোক মিউজিক আর জ্যাজ ক্লাবের দারুণ চল ছিল, সেখানে কবিরা গানের সঙ্গে তাঁদের কবিতাও পড়ে শোনাতেন। আমার মনে বইয়ের পাতায় আটকে থাকা কবিতার চেয়ে কবির কণ্ঠে সেই প্রাণবন্ত কবিতা অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল। 

১৯৬১ সালে আমি একের পর এক ফোক মিউজিক কোম্পানির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হই। ফোকওয়েজ, ট্র্যাডিশন, প্রেস্টিজ, ভ্যানগার্ড—এরা সবাই আমাকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর আমি কলাম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করি। সেটা ছিল আমার জন্য একটি বিরাট ঘটনা। এভাবেই হয়তো আপাতদৃষ্টিতে যাকে ব্যর্থতা মনে হয়, নিজের অজান্তে সেটি ভবিষ্যতের সাফল্য বয়ে আনে। তখন আমি যদি সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ফোক মিউজিকের চুক্তি করতাম, তাহলে আমার সবকিছুই অন্য রকমভাবে হতো। মনে হয় না তাদের সঙ্গে আমার বেশি দিন থাকা হতো। মজার ব্যাপার হলো, তাদের অনেকের ব্যবসাই এখন উঠে গেছে! 

১৯৬৬ সালে আমার খুব খারাপ ধরনের একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। আমার মেরুদণ্ডের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায় আর আমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। আমার ক্যারিয়ার যেভাবে এগিয়ে চলছিল, তাতে বেশ ভালোভাবেই ছেদ পড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দেয়, আমি নতুন করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। এখন আমার মনে হয় সেই দুর্ঘটনা আমার জীবনে আশীর্বাদই বয়ে এনেছিল! 

আমার ছোটবেলা কেটেছে দাদির কাছে। দারুণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি, এখনো খুব মনে পড়ে তাঁকে। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বড় হতে হয়েছে আমাকে। এমনকি কিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, ভবিষ্যতে কী হবে তাও সব সময় পরিষ্কার ছিল না। আমার একাকিত্বই আমাকে শক্তি জোগাত। কারণ, আমার জীবনকে আমি সম্পূর্ণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলাম আর যা চাইতাম, ঠিক তা-ই করতাম। মিনেসোটার উত্তরে আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে আমার জীবনের অনেকখানি মিশে আছে। আমি জানি না, আমার জীবনটা কেমন হতো যদি আমি ইথিওপিয়া কিংবা দক্ষিণ আমেরিকায় বেড়ে উঠতাম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নিলেও আমি হয়তো সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হতাম। আমার মনে হয়, পরিবেশের এই প্রভাবটা সবার বেলায়ই সত্যি। 

যখন কেউ নতুন কিছু করে, পরিবর্তনের কথা বলে, তখন অধিকাংশ সময়ই তার পরিচিত মানুষেরা বা নিজের দেশের লোকেরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে না। স্বদেশে সে হয়তো উপহাসের পাত্র হয়, কিন্তু দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের লোকেরা ঠিকই তার কদর বুঝতে পারে। গৌতম বুদ্ধের কথাই ধরা যাক, তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের সম্পদ। এখন বৌদ্ধধর্ম সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছে কোথায়? চীন, জাপানসহ এশিয়ার অন্য প্রান্তে। তবে হ্যাঁ, সত্যকে প্রথম প্রথম কেউই মেনে নিতে না চাইলেও একসময় তা নিজগুণেই প্রকাশিত হয়। তত দিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতাও গড়ে ওঠে। আপনা-আপনিই তখন লোকে সেই আদর্শে চলতে থাকে, যে আদর্শকে তারাই একদিন তাচ্ছিল্য করেছিল। 

লোকে তোমার নামে অনেক কিছুই বলতে পারে। গণমাধ্যম অনেক গল্পই বানাতে পারে তোমাকে নিয়ে। এখনকার দিনে কোনো কিছু গণমাধ্যমে না আসার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই! সবকিছুই যেন ব্যবসা; ভালোবাসা, সত্য, সৌন্দর্য—সব। মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনও আজ বাণিজ্যের উপকরণ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কাছে এসবের কোনো কিছুই টিকবে না। তুমি নিজেকে কী মনে করো, তোমার কত বড় উপাধি আছে, এসব তাঁর কাছে অর্থহীন। তিনি কখনো মানুষকে সম্পদ কিংবা পেশা দিয়ে বিবেচনা করবেন না। তিনি বলবেন না এ একজন কোটিপতি, ও একজন চিকিৎসক, সে একজন খেটে খাওয়া মানুষ। 

এখন পৃথিবীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে গেছে। ষাটের দশকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করত, তাদের অধ্যাপকেরা ছিলেন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তাঁদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীরা পথে ছড়িয়ে পড়ত। আমি রাজনীতি নিয়ে যা জেনেছি, শিখেছি, সবই এসেছে পথে নামা সেই মানুষগুলোর কাছ থেকে। তখনকার পরিবেশটাই ছিল অন্য রকম। এখন সবাই অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যে যার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। একতা বলতে যেন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তখনকার দিনে এত বিভেদ ছিল না। আজকের সঙ্গে সেদিনের তুলনা করতে গেলে মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদটাই আমার চোখে সবার আগে ধরা পড়ে। 

সময় তার নিজের নিয়মে বয়ে চলছে। সবকিছুই বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন, একটু একটু করে। আমি নিজের চলার গতি কমিয়ে দিয়েছি, কিন্তু বাকি সবকিছুই বড় বেশি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আমি যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম, আমি শিশুর মতো ভাবতাম। যখন বড় হলাম, আমি সেই শিশুসুলভ ভাবনাগুলোকে সরিয়ে রেখে দিলাম। আমি একটা ব্যাপার কখনোই বুঝতে পারি না, আর তা হলো মানুষ উদ্ধত হয় কেন? কেন মানুষ অহংকারী হয়ে ওঠে? লোকে এমনভাবে কথা বলে, চলাফেরা করে, জীবন কাটায় যেন অনন্তকাল ধরে তারা এভাবেই বেঁচে থাকবে। যেন মৃত্যু তাদের কখনো স্পর্শ করবে না। সবচেয়ে বড় সত্যিটাকেই তারা এভাবে অস্বীকার করে। আর মৃত্যুর পর তারা পৃথিবীতে কী রেখে যায়? ছেড়ে যাওয়া খোলসের মতো একটা শরীর আর কিছুই না।

আমার একটি স্বপ্ন আছেঃ মার্টিন লুথার কিং

বক্তব্যরতাবস্থায় মার্টিন লুথার কিং


ইতিহাস ডেস্ক :মার্টিন লুথার কিং আমেরিকায় বর্ণবৈষম্য দূর করার পেছনে একজন অগ্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ভাষণটি সবাই এখন ‘I have a dream’ শিরোনামে জানে। এই ভাষণে উঠে এসেছে নিগ্রোদের প্রতি অত্যাচারের কথা, তাদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা। তিনি বলেছেন তার স্বপ্নের কথা। স্বপ্ন দেখেছেন সাম্যের, স্বপ্ন দেখেছেন শোষণমুক্ত এক সমাজের যেখানে সব মানুষ সমান হবে। আজ সেই ভাষণ বাংলায় উপস্থাপন করা হলো রোর বাংলার পাঠকদের জন্য।
  • Advertisement 
  • “আপনাদের সাথে থাকতে পেরে গর্বিত অনুভব করছি। আজকের এই দিন ইতিহাসের পাতায় আমাদের দেশের স্বাধীনতার নিদর্শন হিসেবে লেখা থাকবে। পাঁচ বছর আগে একজন মহান আমেরিকান মুক্তির ঘোষণা সই করেন। এই গুরুত্বপূর্ণ আইনটি লাখ লাখ নিগ্রো দাসের কাছে আশার আলো হিসেবে এসেছিল, যারা বিধ্বংসী অবিচারের আগুনে পুড়ছিল। রাতভর অত্যাচারের পর এটা এসেছিল ভোর হিসেবে।
কিন্তু এর একশ বছর পরেও নিগ্রোরা স্বাধীন নয়। একশ বছর পরেও নিগ্রোরা পৃথকীকরণ এবং বৈষম্যের বেড়াজালে বন্দী হয়ে আছে। একশ বছর পরেও নিগ্রোরা আজ জাগতিক ধন-সম্পদের সাগরে দারিদ্র্যের এক দ্বীপে বাস করে। একশ বছর পরেও নিগ্রোদের আমেরিকান সমাজের এক কোনায় দুর্বল করে ফেলে রাখা হয়েছে, যেন নিজেদের দেশে নিজেরাই নির্বাসিত। আমরা আজ এই লজ্জাজনক অবস্থার রূপ দেখতে এসেছি।
  • আমরা এক অর্থে দেশের রাজধানীতে এসেছি একটা চেক ভাঙানোর জন্য। যখন আমাদের দেশের কারিগরেরা সংবিধানের অসাধারণ শব্দগুলো লিখেছিলেন এবং স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, তখন আসলে তারা একটি কর্জপত্র সই করছিলেন, যার উপর সব আমেরিকানের অধিকার আছে। এটা একটা অঙ্গীকার ছিল যে, সব মানুষ সাদা-কালো নির্বিশেষে ‘জীবন, স্বাধীনতা এবং সুখের’ জন্য একই অধিকার পাবে। বর্ণভেদে আমেরিকা এই অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়েছে। আমেরিকা নিগ্রোদের একটি খারাপ চেক দিয়েছে, যে চেকে লেখা আছে পর্যাপ্ত ব্যাল্যান্স নেই।
  • মার্টিন লুথার কিং; Source: getty images
  • কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না বিচারের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি না এই দেশের বিশাল ভল্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ নেই। আর তাই আমারা এই চেক ভাঙাতে এসেছি, যে চেক আমাদের স্বাধীনতা এবং সুবিচার দেবে।
  • আমরা এই পবিত্র জায়গায় এসেছি আমেরিকাকে এখনই পদক্ষেপ নেয়ার গুরুত্বকে মনে করিয়ে দিতে। অবস্থা শান্ত হওয়ার জন্য সময় দেয়ার কিংবা ক্রমানুসারে পরিবর্তনের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার বিলাসিতা করার সময় নেই। এখনই গণতন্ত্রের প্রতি সত্যিকারের অঙ্গীকার করার সময়। এখনই অন্ধকার থেকে জেগে ওঠার এবং বৈষম্যের উপত্যকাকে জনশূন্য করে সূর্যের আলোয় স্নাত জাতিগত ন্যায়বিচারের দিকে যাওয়ার সময়। এখনই সময় আমাদের দেশকে জাতিগত অবিচারের চোরাবালি থেকে উঠিয়ে ভ্রাতৃত্বের কঠিন পাথরে নিয়ে আসার। এখনই সময় ঈশ্বরের সব সন্তানের জন্য ন্যায়বিচারকে বাস্তবে পরিণত করার।
  • Advertisement 
  • এই মুহূর্তের গুরুত্বকে এড়িয়ে গেলে তা এই দেশের জন্য সর্বনাশা হবে। নিগ্রোদের বৈধ অসন্তোষের এই তীব্র তাপ ততক্ষণ পর্যন্ত যাবে না যতক্ষণ না স্বাধীনতা ও সাম্যের উদ্দীপ্ত শরৎকাল আসবে। ১৯৬৩ শেষ নয়, বরং শুরু। যারা আশা করে নিগ্রোদের ঠাণ্ডা হওয়া উচিত, তারা এখন তুষ্ট হবে, কারণ পুরো দেশ জেগে উঠলে এটা খুব কঠিন এক জাগরণ হবে। নিগ্রোদের নাগরিক অধিকার দেয়ার আগপর্যন্ত আমেরিকাতে কোনো বিশ্রাম থাকবে না। ন্যায়বিচারের দিন আসার আগপর্যন্ত বিদ্রোহের ঘূর্ণিঝড় এ দেশের ভীতকে নাড়াতে থাকবে।
  • রিচার্ড নিক্সনের সাথে মার্টিন লুথার কিং; Source: The Daily Beast
  • যারা ন্যায়বিচারের প্রাসাদের পথে দাঁড়িয়ে আছে, আমি আমার সেই মানুষদের বলতে চাই। আমাদের বৈধ দাবি আদায়ের জন্য কোনো ভুল কাজ করব না। আমরা আমাদের স্বাধীনতার তৃষ্ণাকে তিক্ততা এবং ঘৃণার পেয়ালা থেকে নিবারণ করবো না। আমাদের সৃজনশীল প্রতিবাদকে শারীরিক আক্রমণে পরিণত করবো না। আমরা বারংবার শারীরিক শক্তির সাথে আত্মিক শক্তির মিলন ঘটাবো।
  • নতুন জঙ্গিবাদ নিগ্রো সম্প্রদায়কে গ্রাস করে ফেলেছে। এটা যাতে সব শ্বেতাঙ্গের প্রতি আমাদের অবিশ্বাস গড়ে না তোলে। অনেক শ্বেতাঙ্গ ভাইদের কারণে আজকে আমাদের এখানে আসা সম্ভব হয়েছে। আমরা এটা বুঝতে পেরেছি যে তাদের ভাগ্য আমাদের ভাগ্যের সাথে একই সুতায় বাঁধা। তারাও বুঝতে পেরেছে তাদের স্বাধীনতা আমাদের স্বাধীনতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
  • আমরা একা চলতে পারবো না। এবং যখন আমরা হাঁটবো আমাদের এই পণ করা উচিত, আমরা সবসময় সামনের দিকে এগোবো। আমাদের পেছনে ফেরা যাবে না।
  • তারা নাগরিক অধিকার সেবকদের জিজ্ঞেস করে, “তোমরা কখন সন্তুষ্ট হবে?” আমরা কখনও সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ পর্যন্ত নিগ্রোরা পুলিশের অকথ্য ভয়ঙ্কর বর্বরতার শিকার হবে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বিদেশ ভ্রমণে অবসাদগ্রস্ত দেহ রাজপথের পাশের মোটেলে, শহরের হোটেলে থাকার জায়গা পাবে না। আমরা সন্তুষ্ট হব না যতক্ষণ পর্যন্ত নিগ্রোদের গতিশীলতা কেবল ছোট বস্তি থেকে বড় বস্তিতে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না যতক্ষণ পর্যন্ত ‘শুধুমাত্র শ্বেতাঙ্গদের জন্য’ এই প্রতীক দিয়ে আমাদের শিশুদের আত্মপরিচয়, তাদের মর্যাদা ছিনিয়ে নেয়া হবে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তুষ্ট হব না যতদিন মিসিসিপির নিগ্রোরা ভোট দিতে পারবে না এবং নিউইয়র্কের নিগ্রোরা ভোট দেয়ার মতো কাউকে পাবে না। না, না, আমরা সন্তুষ্ট না এবং সন্তুষ্ট হব না যতদিন ন্যায়বিচার পানির মতো বইবে না, ন্যায়পরায়ণতা বিশাল স্রোতের মতো বইবে না।
  • Advertisement 
  • নিজ বাসায় মার্টিন লুথার কিং; Source: gettyimages
  • তোমরা এখানে অনেকেই কঠিন দুঃখ কষ্টের মধ্য থেকে এসেছ, এ ব্যাপারে আমি উদাসীন নই। তোমাদের কেউ সদ্য জেল থেকে এসেছ। তোমাদের অনেকেই এমন জায়গা থেকে এসেছ যেখানে তোমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে নিপীড়নের ঝড় দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে এবং পুলিশি নির্মমতার ঝড়ো হাওয়া দিয়ে ছুরি মারা হয়েছে। বিশ্বাসের সাথে কাজ করছ, কিন্তু যে কষ্টের মূল্য পাওয়া যায় না তা মুক্তির ডাক আনে। মিসিসিপি, আলাবামা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, লুইজিয়ানাতে ফিরে যাও, বস্তি এবং মহল্লাতে ফিরে যাও, এই অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে এবং পরিবর্তন হবে।
  • বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের বলছি, তোমরা হতাশার উপত্যকায় অধঃপতিত হবে না। যদিও আমরা আজকের এবং কালকের বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছি, তা-ও আমার একটি স্বপ্ন আছে। এই স্বপ্নের শিকড় আমেরিকান স্বপ্নের মধ্যে প্রোথিত।
  • আমি স্বপ্ন দেখি এই জাতি একদিন জেগে উঠবে এবং এর ধর্মবিশ্বাসের সত্যকে জীবনে কাজে লাগাবে যে, “আমরা এই সত্যগুলোকে প্রমাণিত বলে মানি যে, সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
  • আমি স্বপ্ন দেখি একদিন জর্জিয়ার লাল পাহাড়ে, আগের দাসদের সন্তানরা এবং আগের দাস মালিকদের সন্তানরা ভ্রাতৃত্বের টেবিলে একসাথে বসতে পারবে। আমি স্বপ্ন দেখি, এমনকি মিসিসিপি প্রদেশ যেটা অবিচার এবং নিপীড়নের তীব্র তাপে জর্জরিত, তা-ও একদিন স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের আশ্রয়স্থলে পরিণত হবে।
  • আমি স্বপ্ন দেখি আমার ছোট ছোট চার সন্তান এমন একটি দেশে বাস করবে যেখানে তাদেরকে তাদের গায়ের রং দিয়ে বিচার করা হবে না, বরং তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে বিচার করা হবে। আজ আমার একটি স্বপ্ন আছে।
  • Advertisement 
  • সন্তানদের সাথে লুথার কিং; Source: gettyimages
  • আমি স্বপ্ন দেখি, আলবামা, যেখানে রয়েছে দুশ্চরিত্র বর্ণবাদী লোক, যেখানের গভর্নরের মুখ থেকে হস্তক্ষেপ এবং অকার্যকর এ ধরনের শব্দ বের হয়, একদিন এই আলবামাতে ছোট ছোট কাল ছেলে মেয়েরা সাদা ছেলেমেয়েদের সাথে ভাই-বোন হিসেবে হাত মেলাবে।
  • আজ আমার একটি স্বপ্ন আছে। আমি স্বপ্ন দেখি, উপত্যকাগুলো সুউচ্চ হবে, প্রতিটি পাহাড় এবং পর্বতকে নিচু করা হবে, বন্ধুর পথকে সমতল করা হবে এবং বাকা জায়গাকে সোজা করা হবে। ঈশ্বরের অলৌকিকতা প্রকাশ পাবে এবং সকল রক্ত-মাংসের মানুষ তা একসাথে দেখবে।
  • এটাই আমাদের আশা এবং আমি এই বিশ্বাসে দক্ষিণে যাই। এই বিশ্বাসের সাথে আমরা হতাশার পর্বত থেকে আশার পাথর খুঁড়ে আনতে পারবো। এই বিশ্বাসের সাথে আমরা অনৈক্যকে ভ্রাতৃত্বের ঐকতানে পরিণত করতে পারবো। এই বিশ্বাসের সাথে আমরা একসাথে কাজ করতে পারবো, একসাথে প্রার্থনা করতে পারবো, একসাথে সংগ্রাম করতে পারবো, একসাথে জেলে যেতে পারবো, স্বাধীনতার জন্য একসাথে দাঁড়াতে পারবো, আমরা জানবো আমরা একদিন স্বাধীন হবো। এবং এটাই হবে সেই দিন- এটাই হবে সেই দিন যেদিন ঈশ্বরের সন্তানেরা নতুন অর্থের সাথে গান গাইতে পারবে-
  • আমার দেশ, এটা স্বাধীনতার ভূমি,আমি এর গান গাই,এখানেই আমার পূর্বপুরুষেরা মারা গিয়েছেন, এটা তীর্থযাত্রীদের গর্ব,প্রতিটি পর্বতের গাত্র থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বেজে উঠুক।এবং আমেরিকাকে যদি একটা মহান রাষ্ট্র হতে হয় তাহলে এটা সত্য হতে হবে।
  • নিউ হ্যাম্পশায়ারের পাহাড়ের চূড়া থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক। স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক নিউইয়র্কের বিশাল পর্বত থেকে। পেনসিলভানিয়া এলেগেনির চূড়া থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক। কলোরাডোর রকির তুষার চূড়া থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক। স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক ক্যালিফোর্নিয়ার মোহনীয় ঢাল থেকে। শুধু তা-ই নয়, জর্জিয়ার শিলা পর্বত থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক। টেনেসির পর্বতের দৃশ্য থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক। মিসিসিপির প্রতিটি পাহাড় এবং ঢিবি থেকে স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজুক।
  • Advertisement 
  • শিকাগোতে মার্টিন লুথার কিং; Source: getty images
  • এবং এটা যখন হবে, আমরা যখন স্বাধীনতার ঘণ্টা বাজতে দেবো, প্রতিটা গ্রাম প্রতিটা পল্লী প্রতিটা প্রদেশ প্রতিটা শহর থেকে যখন আমরা স্বাধীনতার ঘণ্টাকে বাজতে দেবো তখন আমরা ঐ দিনটাকে ত্বরান্বিত করব যেদিন ঈশ্বরের সন্তানেরা, কালো এবং সাদা, ইহুদী এবং অইহুদী, প্রটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথোলিক, সবাই মিলে হাত ধরে নিগ্রোদের পুরনো আধ্যাত্মিক গানটা গাইতে পারবে-
  • অবশেষে মুক্তি পেলাম, অবশেষে মুক্তি পেলাম,
    মহাশক্তিশালী ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমরা অবশেষে মুক্তি পেলাম।”
  • ফিচার ইমেজ: Gettyimages  

অবশেষে সরকার সফল হয়েছে | নাহার কৃপা

Nahar Kripa

পোস্টটি লিখেছেনঃ Nahar Kripa


আন্দোলন কি সফল ? নতুন খসড়া আইন; মন্ত্রী সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে, এটাকে কিঞ্চিত সাফল্য বলা যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড পৃথিবীর কোথাও নেই। আমাদের এখানে বলা হল, ইচ্ছেকৃত হত্যা প্রমাণ হলে ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ড। এটা খুবই হাস্যকর হল। কারণ, কোনটা ইচ্ছেকৃত সেটা এই ট্রাফিক ব্যবস্থায় কখনোই প্রমাণ করা যাবে না। আর ইচ্ছে করে ড্রাইভাররা মারতেই বা যাবে কেন। একদম ফিট গাড়ি এবং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কি দুর্ঘটনা ঘটে না ? অবশ্যই ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ বিবিধ। সাধারণ কিছু উল্লেখ করি, ১) ট্রাফিক আইন না মানা, ২)অদক্ষ ড্রাইভার, ৩)গাড়ির যান্ত্রিক সমস্যা, ৪) পথচারীদের ও যাত্রীদের অসচেতনতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, ৫)রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, ৬) ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার মোড়, ৭) ড্রাইভিং এর সময় মোবাইলে কথা, হেডফোন লাগানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ কাজ করা, ৮) ড্রাইভারদের মধ্যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা, ৯) প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় গাড়ি চালানো, ১০) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক গাড়ির ড্রাইভারসহ সব ঠিক থাকলেও অপর গাড়ির অথবা ড্রাইভারের সমস্যা, ১১) অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ১২)ড্রাইভারদের অতিরিক্ত পরিশ্রম আরও ইত্যাদি ইত্যাদি কারণ আছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় হল ড্রাইভারদের মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা। এটা আমাদের দেশে একেবারেই হয় না । অথচ উন্নত বিশ্বে সব ঠিক থাকলেও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কিছুতেই কেউ লাইসেন্স পাবে না। 

ড্রাইভিং সভ্যতা ও সমাজের জন্য চিকিৎসার মতই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ভুল চিকিৎসায় যেমন রোগীর মৃত্যু হয় ঠিক তেমনি একটু অসতর্ক ড্রাইভিং এ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মাথা ঠাণ্ডা রাখা ভালো-ড্রাইভিং এর অন্যতম শর্ত। মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষার ফলে কি হয় ? পারিবারিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক নানা অশান্তির মধ্যেও গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভাররা মনোযোগ স্থির রাখে, অকারণ অনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না, প্রতিটি প্রাণকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বা পাত্তাহীন মনোভাব থাকে না, যথেষ্ট উপস্থিত বুদ্ধি থাকে, অতি যাত্রী অতি টাকার লোভ থাকলেও সে একটা ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করে, তীব্র গরম- যানজট-চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির পরেও গাড়ি চালানোর সময় মাথা স্থির রাখতে পারে। ইত্যাদি এরকম আরও বেশ কিছু বিষয় আছে যা মানসিক সক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জানি, অনিয়মের এই দেশে অসহনীয় সমাজ ব্যবস্থায় আমরা কতটা হতাশ, অধৈর্য ও অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি সময়ে সময়ে। পারিপার্শ্বিক নৈরাজ্যে আমাদের মানসিক অবস্থা মোটেই ভালো থাকে না। জীবন দুর্বিষহ মনে হয় কখনো কখনো। ড্রাইভাররা এসবের বাইরে নয়। রাস্তাঘাটে তাদের মানসিক স্খলন ঘটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এসবের মধ্যেও যারা মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষায় উতরে যাবেন তাদের দ্বারা দুর্ঘটনা যে খুব কম হবে সেটা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। কিন্তু ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে বর্তমানে বহাল যে নিয়ম কানুন আছে সেগুলোই যখন ঠিকমত মানা হয় না তখন এই পরীক্ষার বিষয় যে ভাগাড়ে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। আর নেবেনই বা কারা, খোদ মন্ত্রীই তো মানসিকভাবে অক্ষম ব্যাক্তি। কঠোরতার প্রয়োজন নেই, কিন্তু অসততা না থেকে সিস্টেম প্রপার চললে কত কিছুই না পাল্টে যেতো। এখন দেশের প্রতিটা মানুষকে যেমন রাস্তাঘাটে সচেতন থাকতে হবে তেমনি পরিবহণ কর্মীদেরও দেশের সাধারণ নাগরিক বোধ থেকে নিজে নিজেই সচেতন হতে হবে। এই সিস্টেম বা শাস্তিতে তাদের উন্নতি ঘটবে না। অথচ তাদের এইসব প্রশিক্ষণ দিতে পারতো সওজ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো।


পুনশ্চঃ
ছবি এবং পোস্ট লেখকের fb আইডি থেকে সংগৃহীত।

মঙ্গা নয় চাঙ্গার দেশ কুড়িগ্রাম; সৈয়দ শামসুল হক

AZ Arif


পোস্টটি লিখেছেন- AZ Arif

“এদ্দিন তো ছিডোত থাকি হিস্যাবোত আছন্যুংন্যা, এ্যলা তাও গনতিত আসনু ফির শ্যাখের বেটিও আমাক গুলাক দেইখব্যার আসিল, ইয়্যার চাইতে আর কি পাবার আছে আমারগুল্যার বাহে….”; অধুনা বিলুপ্ত মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউনিয়নের জনৈক ব্যক্তি;
..এই বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি বাংলাদেশ জিন্দাবাদ….থুক্কু,থুক্কু….ও ঐটা বলি নাই? এইটা দিয়ে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছিল, জাতীয় শ্লোগান হইল জয় বাংলা, অবশ্যই বলবো জয়য়য়য়য়য় বঙ্গবন্ধ…!!! ;তাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিরোধী দলীয় চিফহুইপ, কুড়িগ্রামের সাংসদ।
[০২]
রক্তপাত-অস্ত্র-যুদ্ধ ছাড়াই মুজিব ইন্দিরা চুক্তির বাস্তবায়নে পাওয়া ছিটমহল নামক ভূখন্ডের মানুষগুলোকে দেখতে এসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ঐতিহাসিক সফরে যে আলো ছড়িয়ে গেলেন তা কুড়িগ্রামবাসীর কাছে সোনায় সোহাগা। তিনি উন্নয়নের যে শুভ সূচনা করেছেন বা করবেন এ অঞ্চলের মানুষের জন্য, তাঁর অতি-আন্তরিক কথাগুলো একেবারে সভামঞ্চের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলাম। ১৬টি উন্নয়ন কর্মের উদ্বোধন করলেন আর বাকীটা আগামী নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে রেখে গেলেন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রতিশ্রুতি গুলোর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রতিশ্রুতি নং ১। সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন,
প্রতিশ্রুতি নং ২। প্রত্যেক উপজেলায় ১টি করে হাই স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৩। জেলার ১৭টি নদীর নাব্যতার ফিরে আনতে ড্রেজিং চালুকরণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৪। জেলায় শিল্প কারখানার জন্য বিশেষ অর্থনৈতি অঞ্চল প্রতিষ্ঠাকরণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৫। দুধকুমর নদীতে ব্রিজ নির্মাণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৬। ধরলা ব্রিজের পাশে শিশু পার্ক স্থাপন,
প্রতিশ্রুতি নং ৭। প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম স্থাপণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৮। কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেল যোগাযোগ সংস্করণ,
প্রতিশ্রুতি নং ৯। কুড়িগ্রাম-তিস্তা সড়ক নির্মাণ ইত্যাদি
“বাস্তবায়ন হবে তো!… ? বাস্তবায়ন চাই”…… জনৈক আশাবাদী;
[০৩]
“আমার কাছে দাবী দাওয়া পেশ করার প্রয়োজন নেই, একটা দেশের কিভাবে উন্নয়ণ করতে হয় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ তা ভাল করে জানে”………প্রধানমন্ত্রী
(১৫-১০-২০১৫খ্রি:, মুজিব-ইন্দিরা দাশিয়ারছড়া ইউনিয়ন পরিদর্শণ শেষে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজ মাঠের সভাস্থলের অভিজ্ঞতা থেকে)

করতে কুড়িগ্রামের উন্নয়ন, রুখতে হবে নদী ভাঙ্গন | আনু ইসলাম

আনু ইসলাম


বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘খানা আয় ব্যয় জরিপ’-২০১৪ এবং ২০১৬ সালে দারিদ্র্যে শীর্ষ জেলাঃ কুড়িগ্রাম। বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ২২৪৫.০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তন এবং ছোট বড় মিলে মোট ১৬টি নদনদী নিয়ে গড়ে উঠেছে এই জেলাটি। যার মোট নদী পথের দৈর্ঘ্য ১৪৭.২০ কিলোমিটার। উক্ত জেলায় প্রবাহমান মূল ধারার নদনদীগুলো- ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, দুধকুমার এবং তিস্তা। নদী অববাহিকায় গড়ে উঠা এই জেলাটির ৯টি উপজেলার, ৩টি পৌরসভা ও ৭৩টি ইউনিয়নে ২০.৬৯ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৪লাখ মানুষ ৬০-৬৫টি ইউনিয়নের ৪৫০টি চরে মানবেতর জীবন যাপন করে। কুড়িগ্রাম জেলায় শিক্ষার গড় হার ৫৬.৪৫ শতাংশ, যা বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য বড় লজ্জার বিষয়। কুড়িগ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই জনগোষ্ঠির আয়ের ৭০.৪১ শতাংশই আসে কৃষি থেকে। বর্তমান জেলাটির মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১,৬৭,৪৬৭ হেক্টর। যা বর্না ও নদী ভাঙ্গনের ফলে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে বৃহত্তর এই জনগোষ্ঠি ধাবিত হচ্ছে চরম এক সংকটের দিকে।

নদী ভাঙ্গন বাংলাদেশের একটি স্থায়ী ও পুনঃসংঘটিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদী যত পরিণত পর্যায়ে এগোতে থাকে (যেমন তিন প্রমত্ত নদী- ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনার ক্ষেত্রে ঘটেছে) ততই সেগুলি মন্থর ও বিসর্পিল (আঁকাবাঁকা) আকৃতির হতে থাকে, নদীর এই দোলন নদীতীরের ব্যাপক ভাঙ্গন সংঘটিত করে। যার বাস্তব দৃশ্য- কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণে প্রবাহমান ব্রহ্মপুত্র, ব্রহ্মপত্রের শেষ প্রান্ত থেকে বিস্তর দক্ষিণে প্রবাহমান যমুনা, খাড়া উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহমান ফুলকুমার এবং উত্তর-পশ্চিম হতে পূর্ব-দক্ষিণে প্রবামান ধরলা ও তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে ফুটে উঠে। প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনের কারণে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষেতের ফসল, ফসলি জমি ও বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। অনাদীকাল থেকে জেলাটির ৯টি উপজেলায় নদী ভাঙ্গন ও বন্যার দূর্ভোগ যেন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৭টি উপজেলা সর্বাধিত ক্ষতিগ্রস্ত। নদী ভাঙ্গনের আর্থ-সামাজিক প্রভাব মারাত্মক। উলে­খ্য যে, অধিকাংশ নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন একে প্রাকৃতিক ঘটনা হিসাবে ধরে নেয়। অনেকে আবার দোয়া-মানৎ ইত্যাদির শরনাপন্ন হয়। আজ কুড়িগ্রামের জাতীয় দারিদ্র্যের বড় কারণ এই নদী ভাঙ্গন।

সা¤প্রতিক বছরগুলিতে নদী ভাঙ্গনের কারণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং বিপদাপন্ন লোকের সংখ্যা আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নিঃস্ব, রিক্ত ও সর্বশান্ত মানুষ ভূমিহীনের কাতারে সামিল হয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। জেলাটিতে প্রতি বছর প্রায় ৪০হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। প্রায় ৯হাজার গৃহহীন পরিবার উন্মুক্ত আকাশের নীচে, পথের পাশে, বাঁধে, ফুটপাত ও সরকারের খাস জমিতে এসে আশ্রয় নেয়। নদীতীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙ্গনের ফলে গ্রামীন কৃষিকাজ দারুনভাবে ব্যাহত হয়। বসত ভিটার  সঙ্গে কৃষিজমি, অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়। ফলে বিপন্ন জনগোষ্ঠির কৃষি আয় দারুনভাবে কমে আসে। বড় বড় কৃষকরা এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পর মাঝারি কৃষক ও প্রান্তিক চাষির দল। ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা সম্পদ হারিয়ে জমানো সঞ্চয়ের উপর হাত বাড়ায় এবং প্রায়শই নতুন ঋণে জড়িয়ে পরে। সুযোগে এনজিও এবং চরা সুদের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের বোঝা তুলে দেয় অসহায় এই জনগোষ্ঠির উপর। গবেষকদের মতে ভাঙ্গনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ভূমির পরিমাণ নদীর তলদেশ  থেকে জেগে উঠা নতুন ভূমির পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। এ নদী পয়স্তি ও নদী সিকস্তি ঘটনা জেলাটির নদী গতি পথ ব্যবস্থার একটা বৈশিষ্টপূর্ণ বৈচিত্র, যা স্থানীয় রাজনীতির জন্ম দেয়। সঙ্গত কারণেই ‘কুড়িগ্রাম জেলা’ আজ বাংলাদেশে শীর্ষ দারিদ্র্যের অংশীদারি। তাই বাংলাদেশ সরকার এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন এই যে, নদী ভাঙ্গন ও বন্যা কবলিত সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল চিহ্নিত করে সেখানে কাঠামোগত ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষিজমি রক্ষাপূর্বক এই উপেক্ষিত জনগোষ্ঠির দারিদ্র্য বিমোচন করতঃ জনগোষ্ঠির উন্নয়নের রাস্তা সুগম করে দিতে একান্ত মর্জি হয়।

প্রচারেঃ ঢাকাস্থ কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র ও যুব ঐক্য পরিষদ।