অবশেষে সরকার সফল হয়েছে | নাহার কৃপা

Nahar Kripa

পোস্টটি লিখেছেনঃ Nahar Kripa


আন্দোলন কি সফল ? নতুন খসড়া আইন; মন্ত্রী সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে, এটাকে কিঞ্চিত সাফল্য বলা যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড পৃথিবীর কোথাও নেই। আমাদের এখানে বলা হল, ইচ্ছেকৃত হত্যা প্রমাণ হলে ফৌজদারি আইনে মৃত্যুদণ্ড। এটা খুবই হাস্যকর হল। কারণ, কোনটা ইচ্ছেকৃত সেটা এই ট্রাফিক ব্যবস্থায় কখনোই প্রমাণ করা যাবে না। আর ইচ্ছে করে ড্রাইভাররা মারতেই বা যাবে কেন। একদম ফিট গাড়ি এবং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কি দুর্ঘটনা ঘটে না ? অবশ্যই ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ বিবিধ। সাধারণ কিছু উল্লেখ করি, ১) ট্রাফিক আইন না মানা, ২)অদক্ষ ড্রাইভার, ৩)গাড়ির যান্ত্রিক সমস্যা, ৪) পথচারীদের ও যাত্রীদের অসচেতনতা, ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানা, ৫)রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, ৬) ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার মোড়, ৭) ড্রাইভিং এর সময় মোবাইলে কথা, হেডফোন লাগানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ কাজ করা, ৮) ড্রাইভারদের মধ্যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা, ৯) প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় গাড়ি চালানো, ১০) মুখোমুখি সংঘর্ষে এক গাড়ির ড্রাইভারসহ সব ঠিক থাকলেও অপর গাড়ির অথবা ড্রাইভারের সমস্যা, ১১) অতিরিক্ত যাত্রী বহন, ১২)ড্রাইভারদের অতিরিক্ত পরিশ্রম আরও ইত্যাদি ইত্যাদি কারণ আছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ সবচেয়ে অবহেলিত বিষয় হল ড্রাইভারদের মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষা। এটা আমাদের দেশে একেবারেই হয় না । অথচ উন্নত বিশ্বে সব ঠিক থাকলেও এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে কিছুতেই কেউ লাইসেন্স পাবে না। 

ড্রাইভিং সভ্যতা ও সমাজের জন্য চিকিৎসার মতই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ভুল চিকিৎসায় যেমন রোগীর মৃত্যু হয় ঠিক তেমনি একটু অসতর্ক ড্রাইভিং এ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মাথা ঠাণ্ডা রাখা ভালো-ড্রাইভিং এর অন্যতম শর্ত। মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষার ফলে কি হয় ? পারিবারিক, ব্যক্তিগত, সামাজিক নানা অশান্তির মধ্যেও গাড়ি চালানোর সময় ড্রাইভাররা মনোযোগ স্থির রাখে, অকারণ অনৈতিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় না, প্রতিটি প্রাণকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বা পাত্তাহীন মনোভাব থাকে না, যথেষ্ট উপস্থিত বুদ্ধি থাকে, অতি যাত্রী অতি টাকার লোভ থাকলেও সে একটা ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করে, তীব্র গরম- যানজট-চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির পরেও গাড়ি চালানোর সময় মাথা স্থির রাখতে পারে। ইত্যাদি এরকম আরও বেশ কিছু বিষয় আছে যা মানসিক সক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা জানি, অনিয়মের এই দেশে অসহনীয় সমাজ ব্যবস্থায় আমরা কতটা হতাশ, অধৈর্য ও অসহিষ্ণু হয়ে পড়ি সময়ে সময়ে। পারিপার্শ্বিক নৈরাজ্যে আমাদের মানসিক অবস্থা মোটেই ভালো থাকে না। জীবন দুর্বিষহ মনে হয় কখনো কখনো। ড্রাইভাররা এসবের বাইরে নয়। রাস্তাঘাটে তাদের মানসিক স্খলন ঘটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু এসবের মধ্যেও যারা মানসিক সক্ষমতার পরীক্ষায় উতরে যাবেন তাদের দ্বারা দুর্ঘটনা যে খুব কম হবে সেটা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়। কিন্তু ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়ার ব্যাপারে বর্তমানে বহাল যে নিয়ম কানুন আছে সেগুলোই যখন ঠিকমত মানা হয় না তখন এই পরীক্ষার বিষয় যে ভাগাড়ে থাকবে তা বলাই বাহুল্য। আর নেবেনই বা কারা, খোদ মন্ত্রীই তো মানসিকভাবে অক্ষম ব্যাক্তি। কঠোরতার প্রয়োজন নেই, কিন্তু অসততা না থেকে সিস্টেম প্রপার চললে কত কিছুই না পাল্টে যেতো। এখন দেশের প্রতিটা মানুষকে যেমন রাস্তাঘাটে সচেতন থাকতে হবে তেমনি পরিবহণ কর্মীদেরও দেশের সাধারণ নাগরিক বোধ থেকে নিজে নিজেই সচেতন হতে হবে। এই সিস্টেম বা শাস্তিতে তাদের উন্নতি ঘটবে না। অথচ তাদের এইসব প্রশিক্ষণ দিতে পারতো সওজ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো।


পুনশ্চঃ
ছবি এবং পোস্ট লেখকের fb আইডি থেকে সংগৃহীত।

0 Comments:

Post a Comment