This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

কুড়িগ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার



  • হুমায়ুন কবির সূর্য্য, কুড়িগ্রাম থেকেঃ




আজ(১৯/০৯/১৮) কুড়িগ্রামে দুই কিশোর-কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার ভোরে সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীর কাছে নলেয়ার পাড় এলাকায় পরিত্যক্ত সেচ পাম্পের কাছে তাদেরকে পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। প্রাথমিকভাবে এটি হত্যাকান্ড বলে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, নিহতের মধ্যে সেলিনা আক্তার (১৪) আমিন উদ্দিন দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ডাকুয়াপাড়া গ্রামের জাবেদ আলীর মেয়ে। অপর কিশোর জাহাঙ্গীর আলম (১৬) কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র এবং পাশর্^বর্তি পূর্ব কল্যাণ গ্রামের সৈয়দ আলীর পূত্র। সদর থানা পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে প্রেরণ করে। মরদেহ দুটি’র গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। 
স্থানীয়রা জানান, নিহত দু’জনকে সাইকেলে করে গতকাল ঘুড়তে দেখেছে অনেকেই। স্থানীয়দের ধারণা প্রেমের সম্পর্ক থেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার উদ্দেশ্যেই তারা বের হয়েছিল। 
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মেহেদুল করিম জানান, সুরতহাল রির্পোট অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে হত্যাকান্ড বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।

কবিতা আবৃত্তি: জেলখানার চিঠি | নন্দদুলাল মণ্ডল

জেলখানার চিঠি

নাজিম হিকমতের কবিতা : জেলখানার চিঠি
অনুবাদ - সুভাষ মুখোপাধ্যায়
 আবৃত্তি : নন্দদুলাল মণ্ডল

ইরাটোস্থেনিস কর্তৃক পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



খ্রীষ্টপূর্ব্ব তৃতীয় শতাব্দীতে গ্রীক পণ্ডিত ইরাটোস্থেনিস কেমন করে পৃথিবীর পরিধি মেপেছিলেন তা এখানে সংক্ষেপে বলব। ইরাটোস্থেনিস (খ্রীঃপূঃ ২৭৩–১৯২) ছিলেন আর্কিমিডিসের ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর চেয়ে ১৩-১৪ বছরের ছোটো। তাঁর কর্মস্থল ছিল মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। আলেকজান্দ্রিয়া ছিল তখনকার এক বিখ্যাত নগরী। আলেকজাণ্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্য তিন সেনাপতির মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। মিশর পড়েছিল টলেমির ভাগে। তিনি রাজধানী স্থাপন করেছিলেন মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। টলেমি বংশীয় রাজারা বিদ্যার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং তাঁদের রাজধানীতে সে যুগের বড় বড় পণ্ডিতদের ডেকে এনেছিলেন। আলেকজান্দ্রিয়ায় গড়ে উঠেছিল এক পৃথিবীবিখ্যাত গ্রন্থাগার। সেই গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক ছিলেন ইরাটোস্থেনিস। 

পৃথিবীর ব্যাসের তুলনায় সূর্য এত দূরে যে পৃথিবীর সব স্থানে পতিত সৌররশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হয়। পৃথিবী সমতল হলে একটা কূয়োর জলে রোদ পড়লে সব কূয়োর জলেই রোদ পড়ত। কিন্তু পৃথিবী গোলকাকার। ইরাটোস্থেনিস লক্ষ্য করেছিলেন যে, সূর্য্যের উত্তরায়নের দিন দুপুরবেলায় সৌররশ্মি কর্কটক্রান্তিরেখার উপর অবস্থিত সীন নামক স্থানের গভীর কূয়োর তলদেশ অবধি পৌঁছায় (জলে রোদ পড়ে) অথচ সেখান থেকে প্রায় ৫০০ মাইল উত্তরে অবস্থিত তাঁর কর্ম্মস্থল আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়োর জলে বছরের কোনো দিনই রোদ পড়ে না। এই ঘটনার কারণ কী? এর কারণ হল আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়ো আর সীনের কূয়ো পরস্পর সমান্তরাল নয় — কূয়ো দুটি ভূকেন্দ্রে ৭.২° কোণ উৎপন্ন করে (সঙ্গের ছবি দেখুন)। ছবি দেখে বুঝতে পারা যায় ভূগোলকের ৭.২° মাপের একটি চাপের দৈর্ঘ্য ৫০০ মাইল (AS=৫০০ মাইল)। তাহলে সম্পূর্ণ ভূগোলকের পরিধি কত হবে? সেটা ঐকিক নিয়মের অঙ্ক:

 ৭.২° চাপের দৈর্ঘ্য = ৫০০ মাইল।
 বা ১° চাপের দৈর্ঘ্য = ৫০০÷৭.২ মাইল।
 বা ৩৬০° চাপের দৈর্ঘ্য = (৫০০÷৭.২)x৩৬০ মাইল = ২৫০০০ মাইল।

এই হল পৃথিবীর পরিধি। ইরাটোস্থেনিসের মতে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্ব ৫০০০ স্টাডিয়া (১ স্টাডিয়া মানে গ্রীকদের একটি স্টেডিয়ামের দৈর্ঘ্য), তাই পৃথিবীর পরিধি = (৩৬০÷৭.২) x৫০০০= ২৫০০০০ স্টাডিয়া। এখন গ্রীকদের একটি স্টেডিয়ামের দৈর্ঘ্য ঠিক কত ছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে। 

পৃথিবীর পরিধি যদি ২৫০০০ মাইল হয় তাহলে তার ব্যাস কত? গোলকের পরিধিকে ৩.১৪ দিয়ে ভাগ করলে তার ব্যাস পাওয়া যায়। তাহলে পৃথিবীর ব্যাস = (২৫০০০÷৩.১৪) মাইল = ৭৯৬১ মাইল (প্রায়)। মনে রাখুন পৃথিবীর ব্যাস মোটামুটি ৮০০০ মাইল। তাহলে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ প্রায় ৪০০০ মাইল। যদি আরো সঠিক জানতে চান তো বলি পৃথিবীর ব্যাসার্ধের অধুনা নির্ণীত মান ৩৯৫৯ মাইল।

প্রশ্ন: আলেকজান্দ্রিয়ার কূয়া আর সীনের কূয়ার ভিতরের কোণটার মান যে ৭.২° ইরাটোস্থেনিস তা কী করে জেনেছিলেন? উত্তরে বলি যে ঐ দিন সীনে সূর্য্যকে দেখা যায় আকাশের সুবিন্দুতে আর আলেকজান্দ্রিয়ার আকাশে সূর্য্যকে দেখা যায় সুবিন্দু থেকে ৭.২° দক্ষিণে। ছবিতে দেখুন যে, মধ্যাহ্ন সূর্য্যের এই অবনমনই (যা সহজেই মাপা যায়, তবে তার পদ্ধতিটা এখন বলার অবকাশ নাই) আলেকজান্দ্রিয়া ও সীনের দুই কূয়ার ভিতরের কোণ, যা ইরাটোস্থেনিস মেপেছিলেন। তারপরের প্রশ্ন: ইরাটোস্থেনিস আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্বটা কী ক'রে মাপলেন? উত্তরে বলি যে, সেজন্য উনি একটা লোক ভাড়া করেছিলেন। সেই লোকটা একটা উটের পিঠে মরুভূমি (মিশর মরুভূমির দেশ) পেরিয়ে চলে গেল আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীন। তাতে ক'দিন লাগল, একটা উট দিনে কতক্ষণ চলে আর কতক্ষণ বিশ্রাম নেয়, উটের গতিবেগ কত — এইসব তথ্য থেকে সহজেই বেরিয়ে যায় আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সীনের দূরত্ব।

ইরাটোস্থেনিস যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর পরিধি মেপেছেন তা বেশ সুন্দর! তাঁর পরিমাপে কিছুটা ভুল হয়েছিল (আমি আধুনিক মানগুলি দিয়েছি), কিন্তু আজকের দিনে এই পদ্ধতিতে অনায়াসে পৃথিবীর পরিধির মান সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা যায়। তাঁর পদ্ধতিটা একদম ঠিক, এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। এখন আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে আরো আলোচনা করলে অনেকে উপকৃত হবেন। ধন্যবাদ।

স্বপ্ন | বিপ্লবী সাজু

                      বিপ্লবী সাজু


তুই আর কত স্বপ্ন দেখাবি...অভি
সিড়ি বেয়ে চাদের দেশে 
নিবি।
কাগজের নৌকা করে
মহাসাগর পাড়ি দিবি।

মহাকাশে স্যাটেলাইট হয়ে নয়
নক্ষত্র হয়ে জ্বলবি নিশিত রাতে।
সারা গায়ে চাদের আলো মেখে
চিনতে যেন পারেনা কেউ প্রাতে।।

মেঘলা আকাশে একটু লূকোচূরি

হালকা খুনটুসি।

চঞ্চলা বালিকার বাম পাজরে
হালকা দেওয়া ঘুসি।

বৃষ্টি হয়ে ভিজিয়ে দিতে..
কিশোরীর নরম গা।
সাবধানে চলতে গিয়েও
পিছলে পরবে পা ।।

অট্টহেসে  তাকিয়ে কিশোর 
কিশোরীর পানে চেয়ে।
ঝরের তালে উম্মাদ বালক
আপন মনে গেয়ে।

কাগজের দূরবীণ | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র

শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্রের তৈরি কাগজের দূরবীণ


সম্প্রতি বাড়ীর কিছু বাতিল দ্রব্য থেকে আমি একটি ছোটো দূরবীণ তৈরী করেছি। সঙ্গে তার ছবি দিলাম। এই দূরবীণের নলটার অনেকটাই কাগজের তৈরী, তাই একে কাগজের দূরবীণ বলছি। এখন এই দূরবীণ নিয়ে কিছু কথা বলি।

বাড়ীতে একটা বহু দিনের পুরাণো ও খারাপ হয়ে যাওয়া ১৫x৫০ প্রিজম বাইনোকুলার ছিল। তার চারটা প্রিজমের একটা ভাঙা, তাছাড়া তাতে একটা জিনিষকে দু'টা দেখাত। এর ফলে সেটাকে বিশেষ ব্যবহার করা যেত না। সেই বাইনোকুলারের একটা অভিলক্ষ্য (যা একটি উত্তল লেন্স মাত্র), বাড়ীতে থাকা একটা পুরাণো অণুবীক্ষণের অভিনেত্র (মাইক্রোস্কোপের আইপিস) আর কিছুটা কাগজের নল দিয়ে আমি বর্ত্তমান ক্ষুদ্র দূরবীণটি তৈরী করেছি। এই দূরবীণের কাগজের নলটার এক দিকে আছে উত্তল লেন্সটা (যা  এর অভিলক্ষ্য), অন্যদিকে (সরু দিকটায়) আছে অভিনেত্রটা। ব্যাস! আর কিছু এতে নাই। নলটার দৈর্ঘ্য ঐ লেন্সের (অভিলক্ষ্যের) ফোকাস দূরত্বের সমান। কাছের ও দূরের বস্তু দেখার জন্য অভিনেত্রটাকে কাগজের নলের ভিতর দিয়ে সামনে-পিছনে সরিয়ে বস্তুটিকে ফোকাস করা যায়। এই কাজে সুবিধার জন্য একটা জলের বোতলের মুখের অংশটা কেটে নলের সরু প্রান্তটার ভিতরে লাগিয়ে দিয়েছে (সূতা দিয়ে খুব শক্ত করে বাঁধা আছে)। অভিনেত্রটা তার ভিতর দিয়ে স্বচ্ছন্দে যাতায়াত (sliding) করতে পারে। সবকিছু আটকাতে সূতা, টেপ, লিউকোপ্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করেছি। সবকটি দ্রব্যই বাড়ীতে ছিল, তাই এই দূরবীণ বানাতে আমার এক পয়সাও খরচ হয়নি।

এই দূরবীণে চাঁদের পাহাড়, বৃহস্পতির চারটি বৃহৎ উপগ্রহ, অ্যাণ্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, শুক্রের কলা (সরু কাস্তের মতো দশাটা), তারাপুঞ্জ (Star clusters) ইত্যাদি দেখা সম্ভব। কৃত্তিকা, মৌচাক ইত্যাদি পুঞ্জগুলিকে এতে নয়নাভিরাম লাগে...

এই দূরবীণে চাঁদের পাহাড়, বৃহস্পতির চারটি বৃহৎ উপগ্রহ, অ্যাণ্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি, শুক্রের কলা (সরু কাস্তের মতো দশাটা), তারাপুঞ্জ (Star clusters) ইত্যাদি দেখা সম্ভব। কৃত্তিকা, মৌচাক ইত্যাদি পুঞ্জগুলিকে এতে নয়নাভিরাম লাগে। অবশ্য শনির বলয়টা এতে দেখা সম্ভব নয়। এটাকে একটা ষ্ট্যাণ্ডে লাগাতে পারলে আকাশ দেখার আরো সুবিধা হতে পারে, কিন্তু সে ব্যবস্থা আমি করে উঠতে পারিনি।

প্রসঙ্গত, গ্যালিলিওর তৈরী দূরবীণ (যা দিয়ে তিনি আকাশপর্যবেক্ষণে  যুগান্তর এনেছিলেন) এর চেয়ে খুব একটা বেশী শক্তিশালী ছিল না। আমি যেখানে অভিনেত্র (আইপিস) হিসাবে একটা মাইক্রোস্কোপের অভিনেত্র ব্যবহার করেছি, গ্যালিলিও সেখানে অভিনেত্র হিসাবে একটা ছোটো অবতল লেন্স মাত্র ব্যবহার করেছিলেন। তার ফলে তাঁর দূরবীণে প্রতিবিম্ব সোজা দেখাত। সেই তুলনায় আমার এই দূরবীণে প্রতিবিম্ব উল্টা (inverted) দেখায়। তবে আকাশ দেখার সময় তাতে কোনো অসুবিধা হয় না।

আপনাদের কারো বাড়ীতে একটি ভাল মানের উত্তল লেন্স  থাকলে তিনি এমন একটি দূরবীণ বানানোর চেষ্টা করতে পারেন। অভিনেত্র কলকাতার কলেজ ষ্ট্রীট থেকে কিনে নিতে পারেন।
  • ওপার বাংলার লেখকঃ শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



জরীফ উদ্দীনের খোলা চিঠি | জরীফ উদ্দীন

জরীফ উদ্দীন


তুই গরীব, তুই কথা কইস না।
তুই না খেয়ে মর কিংবা বিষ আলু খেয়ে মর। তবুও তুই প্রশ্ন করবি না কেন তুই দারিদ্র্যের শীর্ষে। না তুই বলতেই পাবি না কারণ এখানে শুধু তুই থাকিস না থাকে ভদ্দর লোকও। ওদের ইজ্জত বলতে তো কথা আছে!
শরম তখন লাগে না যখন কেউ জাল পরে গতর ঢাকে? ইজ্জত তখন যায় না যখন বিষাক্ত আলু খেয়ে মানুষ মারা যায় খুদার তাড়নায়? যখন চড়া মূল্য দিতে না পারায় বাসের সাদে করে ঢাকা, ফেনি, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা যায় কাজের জন্য  কিংবা যখন ফিরে আসে। তখন কোথায় থাকে আপনাদের লজ্জা? তোরা এই প্রশ্নও করতে পাবি না। কারণ তোরা গরিব।
তোদের জেলা দারিদ্র্য শীর্ষে থাক। তুইও বছরের পর বছর চ্যাম্পিয়ন হ দারিদ্র্যে। আর ওরা ওদের জমিদারি টিকিয়ে রাখুক, ওদের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াক, ওদের ছেলে মেয়েররা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল পড়ুক, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুক, ঢাকায় ওরা ফ্লাট কিনে নেক, ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করুক ইত্যাদি ইত্যাদি। তুই চেয়ে দেখ। কারণ তুই পাবি না তোর ভাগ্যের চাকা উল্টাতে। 
আর যদি চাকা উল্টাতে চাস তাহলে আওয়াজ তোল:

১. বালাসিঘাট-দেওয়ানগঞ্জ টানেলের সাথে লালমনিরহাট/কুড়িগ্রাম জেলাকে যুক্ত করতে চিলমারী-সুন্দরগঞ্জ তিস্তা সেতুতে রেলপথ যুক্ত কর। 
২. বর্তমান চিলমারী-ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু; 
৩. একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা; 
৪. নবায়ণযোগ্য ৫শ মেঃ ক্ষমতার সৌরবিদ্যূৎকেন্দ্র নির্মাণ; 
৫. সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বিশ্ববিদ্যালয়; 
৬. মাছ-পাখি-প্রাণ ও জমি রক্ষায় স্থানীয় ও জাতীয় বালুদস্যুদের হটাও ও ব্রহ্মপুত্রের খনিজ ভিত্তিক শিল্পায়ণ; 
৭. রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে গেজেট প্রকাশ, ভাঙ্গন থেকে রক্ষা ও গ্যাস পাইপ-রেললাইন সম্প্রসারণ; 
৮. কুড়িগ্রাম থেকে সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত রেলসংযোগ; 
৯. চিলমারী টু রৌমারী/রাজীবপুর ফেরী সংযোগ চালু; 
১০. লালমনিরহাট বিমানবন্দর পুনরায় চালু; 
১১. মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত গরীব কৃষকদের রক্ষা; ১২. কুড়িগ্রাম জেলার জন্য বিশেষ বাজেট চালু করতে হবে।

ফিরোজ সরকার- এক অদম্য শিল্পী | আনু ইসলাম

শিল্পী ফিরোজ সরকার


চার(০৪) বছর বয়সে প্রাণ প্রিয় মা'কে চিরদিনের জন্য হারাবার পর লেখাপড়ায় মন বসতোনা, এমনকি বসাতেও পারতেননা। ভালোলাগতোনা কোন কিছুই। এদিক সেদিক করে চৌঁদিকে ছুটতেন তো ছুটতেন কেবলই কষ্টের বিপরীতে একটু যুত-কিঞ্চিত সুখের তরে। দিন যায় রাত কাটে অন্তরে বাসা বাঁধা কষ্টের সমাধান অসমাপ্তিই রয়ে যায়। বড়ই নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ত্ব আর হতাশায় কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। জানে ফিরে পাবেনা তবুও পাগলের মত খুঁজে ফেরত মা'কে। শান্ত্বনা নামের আল্পনা আর প্রকৃতির সুন্দর্যে খুঁজে নিত শূণ্য হৃদয়ে একতিলক শীতল মমতা। এ যেন শুষ্ক উত্তপ্ত বালির বুকে কিঞ্চিত জলে কেবলই শীতলতা আনার মত। যেখানে বুক ভরেনা শূণ্যতা রয়েই যায় তথাপিও। তবু কিছুটা লেখাপড়া করেছে নানার বাসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একমাত্র অবশিষ্ট আপন সম্বল নানীও বিডিআর বিদ্রোহকালীন সময়ে ইন্তেকাল করেন। আপন বলতে আর কেউ রইলোনা। 


এমন এ অভাগা দিনে অশান্ত ক্লান্ত কমল মনে বয়ে আসে এক মহিয়সী নারীর প্রেম। বড়ই উল্মাদ হয়ে পড়েন ফিরোজ ভাইয়া। অতঃপর জীবন সঙ্গীনি সেই সে অপূর্ব নারী। শূণ্যতার বুকে পূর্ণতা আর নিরাশার বুকে আশা নিয়ে বাঁচতে শিখেন ফিরোজ ভাই। নিজেকে সাজিয়ে নেন হরেক রঙে


এমন এ অভাগা দিনে অশান্ত ক্লান্ত কমল মনে বয়ে আসে এক মহিয়সী নারীর প্রেম। বড়ই উল্মাদ হয়ে পড়েন ফিরোজ ভাইয়া। অতঃপর জীবন সঙ্গীনি সেই সে অপূর্ব নারী। শূণ্যতার বুকে পূর্ণতা আর নিরাশার বুকে আশা নিয়ে বাঁচতে শিখেন ফিরোজ ভাই। নিজেকে সাজিয়ে নেন হরেক রঙে। কর্মের সন্ধানে রাজারহাট থেকে ছুটে আসেন কুড়িগ্রাম সদরে। কাজও পান। স্টিল মিস্ত্রির কাজ। মন বসতনা কোন ভাবেই। পরবর্তিতে কলেজ মোড়ে আর্ট স্টোল দেন। মনের আনন্দে অন্তরের মাধুরী মিশায়ে দিন-ভর কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অনেকবার বিভিন্ন কারনবশত স্থান পরিবর্তন করলেও ২০০৭ সালে তর্তাবোধায়ক সরকার ফকরুদ্দিন এর শাষনামলে উচ্ছ্বেদ করে দেওয়া হয় ফিরোজ ভাইয়ার চির সাধনার সেই আর্ট স্টোল। অর্থনৈতিকভাবে প্রায় পঙ্গু হয়ে যান ভাইয়া। তন্মধ্যে ভাবি হঠাৎ ব্রেইন স্টক করলে বড়ই হিমশিমে পরে যান এবং অনেক ঋৃণ করে বসেন। হাস্যজ্জ্বল সংসারে নেমে আসে এক গাঢ়কালো নিষ্ঠুর নির্মম হতাশা ও দূর্দিন। কিন্তু ভাইয়া তাতেও সাহস হারাননি। একনিষ্ঠ কাজ করতেন। আজ তিনি ঋৃণ মুক্ত প্রায়। তাই অন্য দশ জনের মতই একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন তার দুটি বাচ্চার ভালো একটা ভবিষ্যতের। হয়তো প্রশ্ন করছেন নিজেকে, যে কে এই ফিরোজ???


ফিরোজ ভাই অন্য কেউ না। একজন সাদামাটা আর সহজ সরল প্রাঞ্জল মনের মানুষ। পেশায় আর্টিস এবং ফটোগ্রাফার।যিনি অসামান্য ঋৃণে ঋৃণী করেছেন কুড়িগ্রামবাসীকে। যার তুলির ছোয়ায় আজও জীবন্ত হয়ে আছে কুড়িগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ফলক, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শহীদ মিনার, ইতিহাস বিভাগের দেয়ালে দিপ্তমান শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি(যা বর্তমানে চুনকামে ঢাকা), রোভার স্কাউট সহ প্রতিটি বিভাগের ব্যানার দেয়ালিকায় জীবন্ত হয়ে আছে উনার হাতের পরশ। যিনি দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা কুড়িগ্রামের জর্জ কোর্ট এলাকা, নাট্যশালা, শাপলা চত্ত্বর সহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাকে স্বপ্নের শহরে রুপায়িত করেছেন তারই পরম তুলির আঁচরে। কথা বলে জানলাম গত ১৯৯৪ থেকে এখন অবধি সূদীর্ঘ পথ পারি দিয়ে কাজ করছেন রাজশাহী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, পীরগাছা(রংপুর) ও লালমনিরহাট অঞ্চলে। 


আলপনা, ফম ফন্ট ডিজাইন, বিয়ের যাবতীয় সাজ সজ্জা, বর কনে ও বিয়ের গাড়ি সাজানো, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ব্যানার, পাথর খুদাই সহ হরেক রকম কাজের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট ফিরোজ ভাইয়া। কুড়িগ্রামের সাথে সাথে বাহিরে অনেক কদর এবং দর আছে উনার কাজের। শিল্পমনা মানুষটি তার পরিবারকেও গড়ে তুলেছেন সেভাবে। এখন সুখে দিন কাটে অল্প আয়েও। স্বপ্ন দেখেন বড় একটা পুষ্প ভান্ডার করবেন। সেখানে আরো থাকবে ডিজিটাল অনেক যন্ত্রপাতি। যা তার কাজগুলোকে সহজ করে দিবে অনেকাংশে। স্বপ্ন পুরোন হোক ফিরোজ ভাইয়ের, সুখ অসীম সুখ ধরা দেক তার সংসারে। আমাদের সকলের অনুপ্রেরনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হোক ফিরোজ ভাইয়া।

গল্প: নিঃশব্দ কান্না | বাদশা সৈকত

লেখকঃ বাদশা সৈকত


ছেলে একদিন ভার্সিটি থেকে বাড়ি আসলো এবং রাতের খাবারের পর বাবা-মায়ের পাশের ঘরে শুয়ে পড়লেন। কিন্তু ছেলে ঘুমাতে পারলো না। রাত যতই গভীর হতে থাকলো বাবার গোঙ্গানীর শব্দটা ততই বাড়তে থাকলো। সাথে শুকনো কাশির ঢকাশ ঢকাশ শব্দ। মায়েরও কোকানীর শব্দটা রাতের নিস্তদ্ধতাকে দুরে ঠেলে ছেলের কানে আঘাত করতে থাকলো।

বাবা মায়ের এ অবস্থা দেখে ছেলে বিছানা ছেড়ে উঠে বাবা-মায়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের ডাকতে থাকলো। ছেলের কন্ঠ শুনে মা কোন রকমে বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দিলো। সে নাগাত বাবারও গোঙ্গানীর শব্দটা বন্ধ হয়ে গেছে।
ছেলে তার মাকে বললো-
         -আজও দুজনেই ঔষধ খাননি।
মা কোন কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলে আবার বললো-
         -কথা বলছেন না কেন? ঔষধ কি শেষ হয়ে গেছে?
এবার মা বললেন-
          -তোর বাবা ঔষধ আনতে ভুলে গেছে।
ছেলে বললো-
          -আমি জানি বাবা কেনন ঔষধ আনতে ভুলে যান। আমি না কতবার বলেছি আমাকে আর টাকা পাঠাতে হবে না। আমি টিউশনি করেই আমার লেখা-পড়ার খরচ চালিয়ে নিচ্ছি। বুঝেছি বাবা বাজারে ঔষধ কেনার টাকা নিয়ে গিয়ে সেই টাকাই আবারও আমাকে পাঠিয়েছে।

ছেলে আর কোন কথা না বলে তার ঘরে ফিরে গিয়ে বিছানায় গা দিলো। কিন্তু বাকী রাত আর ঘুমাতে পারলো না। যদিও বা বাবা-মায়ের গোঙ্গানীর শব্দটা তেমন আর শোনা যাচ্ছিলো না। ছেলে জানে তার বাবা-মা কতটা কষ্ট করে শরীরের কষ্টগুলোকে চেপে রেখেছে। যাতে করে ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে তাদের কষ্টের শব্দ শুনে কোন কষ্ট না পায়।

ছেলে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে তাদের অতীত আর বর্তমানের কথা ভাবতে থাকলো।
কৃষক পরিবারের অতীতটা ভালোই কাটছিল তাদের। ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া আর সংসারের ব্যায়ভার বেড়ে যাওয়ায় অভাব তাদের সংসারে হাতছানী দিতে থাকে। সামান্য জমির ধান, গাছের সুপারীর টাকায় এখন আর কুলায় না। তারপরও বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের এই আশায় নিজের জীবনকে বাজি রেখে লেখা-পড়া করাচ্ছেন যে তারা একদিন শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকুরী করবে। তখন আর অভাব নামের কোন দ্বৈত্য ঘরের ভিতর প্রবেশ করতে পারবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ফজর হয়ে আসলো। ছেলে ভাবে তার বাবা-মা হয়তো বর্তমানের বাস্তবতা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তারা ভাবেন তাদের অসুখের কষ্টের চেয়ে সন্তানের না খেয়ে থাকার কষ্টটাই তাদের কাছে বেশি বেদনা দায়ক। অথচ বাবা-মায়ের এই খাঁটি কষ্টের আশাগুলোই বন্দী হয়ে আছে দেশে রাজনীতির ঘাঁড়ে পা রাখা কিছু ভন্ড, কুলাঙ্গার নেতার হাতে। এই ব্লাডি বাস্ট্রার্ডরা জানেই না এসব সন্তানদের বাবা-মা তাদের সন্তানদের কতটা চাপা কষ্ট বুকে ধারন করে লেখা-পড়া শেখান। তারা শুনতেই পান না এসব পরিবারের কষ্টের নিঃশব্দ কান্না গুলি।

কুড়িগ্রাম নিয়ে আমার অনুভূতি অতঃপর সোনাহাট স্থল বন্দর | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান;
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা)



এটি আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা, কোন গবেষণালব্ধ প্রতিবেদন নয়। আমার এ অনুভূতির সাথে একমত হতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকথা নেই। কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে অনুগ্রহ করে মন্তব্যে লিখবেন। বানান ও ভাষাগত ত্রুটি থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।

ওকি গাড়িয়াল ভাই
হাকাও গাড়ী তুই চিলমারী বন্দরে।

বিখ্যাত কন্ঠ শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন আহমদ এর ভাওয়াইয়া গানের রেশ টেনে বলতে চাই কুড়িগ্রাম হচ্ছে ভাটির দেশ। ভাটিয়ালি গানের জন্য বিখ্যাত।দেশের একপ্রান্তে কুড়িগ্রাম জেলা। এ জেলা ০৯টি উপজেলা নিয়ে গঠিত।  এক সময় মঙ্গাপীড়িত দরিদ্র জেলা হিসবে পরিচিত ছিল। যদিও এখন মঙ্গা অনেকটা দূর তবুও  বাংলাদেশের পরিসংখ্যানে দারিদ্র্যের হার এখনো বেশী।

চিলমারী একসময় নৌ বন্দরের জন্য বিখ্যাত ছিল। এখন নৌ বন্দর চালু নেই।  চিলমারী কুড়িগ্রাম জেলার একটি উপজেলা। দাদুবাড়ি এবং নানুবাড়ি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে তখনকার বন্দর এবং তাকে ঘিরে বিভিন্ন কর্মচাঞ্চল্যের কথা শুনেছি। বড় বড় জাহাজ আসতো আবার বড়ো বড়ো নৌকায় পাট এবং অনান্য কৃষিজাত পণ্য বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এমন কি ভারতে রপ্তানি করা হতো। বয়সে তখন অনেক ছোট, এখন আধো আধো মনে  আছে, জাহাজ এসেছে বলে মামারা তা দেখাতে নিয়ে গেলেন। ফেরার সময় হাট থেকে পায়ের এক জোড়া মোজাও কিনে দিয়েছিল। অনেক ভীড় ছিল এতটুকু মনে অাছে। এখন মনে হয়,  অনেক কর্মসংস্থান তখন তৈরি হয়েছিল। ব্রম্রপূত্র নদের ভাঙ্গনে দাদুবাড়ি নানুবাড়ি তা গ্রাস করায়  খুব একটা সেখানে যাওয়া হয় না। দেশ স্বাধীন হবার  পূর্বে নদীবন্দর স্থগিত হওয়ায় সেখানে কর্মচাঞ্চল্য অনেকটা স্থবির হয় যার ঢেউ এসে সবচেয়ে আঘাত হানে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়।

এক সময় রেল ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও যাতায়াতের সুযোগ ছিল না। তাও ছিল মাত্র দুটো।  পরে তিনটা। বর্তমানে একটি বা দুটি। জেলা থেকে সামান্য দূরে রাজারহাট উপজেলা। সেখানে স্বল্প জমি থাকায় বাবা  প্রায়শঃ যেতেন।  দুপুরে ট্রেনে উঠলে রাত্রের ট্রেনে ১১ টায় ফিরতেন। আমাদের অনেক সহপাঠী সেখান থেকে ট্রেনে ক্লাস করতেন।১৯৮০ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তিস্তা রেল সেতুতে সড়ক পরিবহনে ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ জেলার যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিলেন। তখন থেকে সড়ক পরিবহন মানুষের নিকট আকৃষ্ট হলো এবং আস্তে আস্তে রেল পথ অবহেলার শিকার হলো। আজ কোন কারণে সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলে কুড়িগ্রাম সারাদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর একটি অঞ্চলের জনগণের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়। যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম থাকা উচিত। একটির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে বিকল্প ব্যবস্থায় প্রয়োজন মিটানো যায়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে আন্তঃ নগর ট্রেনের ব্যবস্থা করে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। পরবর্তী সরকার প্রধানগন এ কার্যক্রম তরান্নিত করলেও এখন পর্যন্ত এ জেলা সে সুযোগ পায়নি। এ প্রজন্মের একঝাঁক তরুণ  আন্তঃনগর ট্রেনের দাবীতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সে সংগে নৌ পথ চালুর দাবীতে ঐক্যবদ্ধ। আমি তাঁদের দাবীর সাথে নৈতিকভাবে সহমত পোষণ করি।

 উত্তর ধরলা বলে খ্যাত সদর উপজেলার কতিপয় ইউনিয়ন, নাগেশ্বরী,ফুলবাড়ী এবং ভূরাঙ্গামারী অনেক অনেক বছর ধরলা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৯৯৬ সালের পর তৎকালিন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ( বর্তমানেও) শেখ হাসিনা ধরলা নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করেন। সে আমলেই ব্রিজের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে বাকী কাজগুলো সুসম্পন্ন করতঃ প্রাক্তন মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এসে তা উদ্বোধন করেন। বেড়ে যায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য। এখনো কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলা রৌমারী এবং রাজিবপুর নদী দ্বারা অনেকটা জেলার সাথে বিচ্ছিন্ন।

এ জেলার মানুষ কাজ চায়। তাঁদের যে কোন কাজ করার আগ্রহ আছে। আজ ( ২৫ জানুয়ারি) ভুরাঙ্গামারী উপজেলায় একবারে প্রান্তিক গ্রামে মেঠোপথ ধরে বাইকে স্ত্রীসহ ঘুরলাম। উদ্দেশ্য আমার দাদা শ্বশুরের পুরাতন বাড়ি দেখা। এক সময় গ্রাম অঞ্চলে ছন বা খরের তৈরি বাড়িগুলো উধাও হয়ে সেখানে ঠাঁই নিয়েছে টিনের তৈরি ঘর বাড়ি। মাঝেমধ্যে ইটের তৈরি হাফ বিল্ডিং। শুনলাম এ জেলার শ্রমজীবী মানুষ বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অট্টালিকা ও  রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। তাদের কষ্টার্জিত শ্রম যেমন দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছে তেমনি পারিবারিক উন্নয়ন এবং জেলার উন্নয়নে সমানতালে অবদান রেখে চলেছে। অনার্স মাস্টার্স কোর্স কুড়িগ্রামে চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীবৃন্দের সাথে মেশার সুযোগ হচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলে জানতে পারি তারা যে কোন কাজ করার জন্য প্রস্তুত।  বর্তমানে অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশানি এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজের লেখাপড়া খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা নিজেরাই সংস্থান করছেন।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

যে মঙ্গার কথা আগে শুনা যেতো, তা অনেকটা দূরীভূত হতে চলেছে। এখন চরবাড়িতে বাদাম ভুট্রা,কাউন, ডাল ইত্যাদি ধরনের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন হচ্ছে। তারপরেও বেকার মানুষের সংখ্যা অনেক। এদের ঠিকমতো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিলে এ জেলার দারিদ্র্যের হার অনেক নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।

গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ সালে শ্বশুর বাড়ীতে গমন করেছিলাম। উক্ত বাড়িতে খুব একটা যাতায়াত করা হয় না। এর জন্য স্ত্রীর নিকট কম ঝাড়ি খাইনি। পৌছা মাত্র বড় মেয়ের বায়না সোনাহাট স্থল বন্দর দেখবে। এর আগে যখন সেখানে বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম তখন বন্দর চালু হয়নি। বিকাল ৪ ঘটিকায় পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে পৌঁছিলাম। দেখলাম সেখানে একধরনের প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। কাস্টমস কর্মকর্তার নিকট নিজ পরিচয় দেবার পর জানতে পারলাম পুরাদমে বন্দর চালু হয়নি। ভারত থেকে ১৮ টি পণ্যের মধ্যে মাত্র দুটি পণ্য কয়লা এবং পাথর আমদানী হচ্ছে। এদেশ থেকে  কোন পণ্য সেখানে রপ্তানি হচ্ছে না। এর কারণ আমি নিজে যেটি উপলব্ধি করেছি এবং কথাবার্তা থেকে যেটি অনুমান করেছি সেটি হচ্ছে যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা। সেখানে অনেক C& F (Clearing and Forwarding Agent) এর অফিস ঘরও দেখলাম। আমার জানামতে ভারতের 7 Sisters নামে খ্যাত ৭টি রাজ্যের মধ্যে বর্তমানে সোনাহাটসহ তিনটি বন্দর চালু আছে। বাকিগুলো ভারতের পশ্চিম বঙ্গের সাথে। উদ্দেশ্য হলো- সোনাহাটের সাথে ভারতের আসাম রাজ্যের সংযোগ সাধন করা। উক্ত বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ভারত তাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো প্রায় প্রস্তুত করেছে। আমাদের এখানে অনেক অবকাঠামোর কাজ বাকি আছে।

কুড়িগ্রামের উন্নয়নে আমার কতিপয় সুপারিশঃ

১। দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের ব্যাপারে সকলকে ঐক্যমত্য হতে হবে।
২। সোনাহাট স্থল বন্দরে যাতায়াত করার জন্য দুধকুমোর নদীর উপর রেলপথসহ সড়ক ব্রিজ নির্মাণে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৩। বর্তমানের ব্রিজটির অত্যন্ত বেহাল অবস্থা হয়েছে। যে কোন সময়ে ভারী যানবাহন চললে তা ভেঙ্গে যেতে পারে। ব্রিজ নির্মাণ যেহেতু সময় সাপেক্ষ ব্যাপার সেহেতু নদী ড্রেজিং করে ফেরীর ব্যবস্থা চালু করে ভারী যানবাহনের পথ সুগম করা।
৪। সোনাহাট স্থল বন্দরে পণ্য আমদানি রপ্তানির পাশাপাশি ভিসার ব্যবস্থা চালু করা। এতে দু দেশের জনগণ এবং ব্যবসায়ীবৃন্দের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
৫। প্রস্তাবিত ২য় তিস্তা এবং ধরলা ব্রিজে সড়কের পাশাপাশি রেলপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৬। রৌমারী এবং রাজিবপুরের সাথে যোগাযোগের জন্য কুড়িগ্রামের মোল্লাহাট এবং রৌমারী দাঁতভাঙ্গার সাথে যে নদীপথ সংযোগ করার কথা শোনা যাচ্ছে,  তা অবিলম্বে চালু করা। এতে ঢাকা,  সিলেট এবং চট্রগ্রামের সাথে সড়কপথের যেমন বিকল্প ব্যবস্থা চালু হবে ঠিক তেমনি দূরত্বের পরিমাণ ও সময় অনেক হ্রাস পাবে। অদূর ভবিষ্যতে ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা করলে তাতে বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী ব্রিজের ক্রমবর্ধমান চাপ অনেক কমবে।
৭। আন্তঃনগর ট্রেন এবং নৌপথ চালু করা।
৮। Out sourcing ব্যাপারে নতুন প্রজন্মের কাজ করার যে আগ্রহ আছে সেখানে তারা যাতে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা। এ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত খবর সুখকর নয়।
৯। তরুণ সমাজকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আবেগকে প্রশ্রয় না দেওয়া। বাস্তব যতই কঠিন হউক না কেন তা মোকাবেলা করা। নিজেদের প্রয়োজনে একে অন্যকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে জানা জ্ঞান বিতরণেরর ব্যবস্থা করা। উদাহরণস্বরূপ হয়তো একজন ইংরেজিতে একটু দক্ষ কিন্তু অংকে দুর্বল।  আবার আরেকজন এর বিপরীত।

এগুলো ছাড়াও  বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কুড়িগ্রাম উন্নয়নের যে সুপারিশ প্রদান করেছেন,  সেগুলোর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমার বিশ্বাস  এক সময় দেশের অন্যতম জেলা হিসেবে বিবেচিত হবে। এখানে শ্রম সস্তা, সহজলভ্য কৃষিজাত পণ্য এবং ভারতে আমদানী এবং রপ্তানি পণ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উদ্যোক্তা এবং শিল্প কলকারখানার মালিক গণ এখানে ব্যবসায় স্থাপনে আগ্রহী হবেন। কর্মচাঞ্চল্যের মাধ্যমে এখনকার তরুণ সমাজের হতাশাও দূর হবে ইনশাল্লাহ।