This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

প্রহনন থেকে প্রেমপ্রহার | দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়

দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়;
Collaborator at Saint-Petersburg State University


(সিরিয়া থেকে ভাংগর দেখতে দেখতে পাগল হয়ে গিয়ে...)

৭২ সাল। বরানগর। আমার বয়েস ছয়। রক্তচান দেখেছি খড়খড়ির জানলা দিয়ে। এখনো দেখছি, তবে শুধু বরানগরে নয়, এ গ্রহের সর্বত্র।

 দিগন্তবিস্তৃত ফ্যাসিবাদ আজও রণক্লান্ত নয়, হায়! 
বিরামহীন জিঘাংসায় ক্লান্ত লাগে খুব। স্বস্তি মেলেনি এক দণ্ডের জন্যও।

সেইসব রক্তস্মৃতি, বিশ্বাস করুন, আজও ম্লান নয়। আপনার হাতে সুঁই ফুটিয়ে ডাক্তারি-কারণে রক্ত নিতে দেখলেও আতঙ্কিত হই। সম্মত কুমারীর সতীচ্ছদ (? সতী কি??) ফাটানো-অন্তে ক্লীবতা অনিবার্য হয়  রক্তের ফিনকি দেখে। 

ডাক্তারবাবু বললেন, 'রোগ। হেমিয়াটোফোবিয়া।'
রোগ?
সিম্পটম স্পষ্ট!

আতান্তরে পড়ি। সে ঘোর সংকট-- ব্যক্তিক সংকট। নাকি সামূহিক?

শক্তির পদ্য পড়ছিলুম তখন।
খুঁজছিলুম অহিংসার ব্যর্থ পরিহাস। 
সবরমতী আশ্রম কোনদিকে? 
সদাগর-স্পন্সরিত সে আশ্রম। 
কি করি?

"নিরস্ত্রের যুদ্ধে যাই          শস্ত্র হয় মন।"

হাঁক পাড়ি পরম জিঘাংসায়, 
ওহে যত যুদ্ধুবাজ আর অস্ত্রবেনিয়া, সংগঠিত বা অসংগঠিত, থামা তোদের নাচনকোদন। আর যে পারি না সইতে রক্তপাত।
আরো বলি,
এই দেখ আমি নিরস্ত্র, তবু করিনি আত্মসমর্পণ। মারলে মার, বুঝে নে তোদের অধিকার মালিকানার, বুক চিতিয়ে আছি, থামা আমার লাবডুব। 
দেখলুম, শুনলুম, আমার লাবডুবানি ওদের অস্তরের আওয়াজ থেকেও জোরালো। ওরা ভয়ে পালালো... নিমাই নিত্যানন্দকে প্রেমপ্রহার করলেন।

এই মুহূর্তেই সিম্পটম আর সিম্পটম থাকে না, সে বন্দুকের নল থেকে, গুলি নয়, ফুল হয়ে ছিটকে পড়ে-- আমার আশপাশে ফুলশেজরচনা।

(অহিংসা বিনে পন্থা নেই আর। সমস্ত সশস্ত্র প্রতিষ্ঠানের সংগে অসহযোগ....)

এটা বোঝা তো জরুরি যে খ্যামতার ধারা নিরবচ্ছিন্ন এবং জ্ঞানে আসে নানান বাঁক। তাই জিজ্ঞাসা থেকে বিজিগীষায় নয়, বরং জিজ্ঞাসা থেকে কষ্ট করার ইচ্ছেয় পাড়ি দিই... ( will to know থেকে will to power নয়, বরং will to suffer)
______________________________
"Cease fire. Need of the hour: TOTAL DISARMAMENT."

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগ পরীক্ষার সময়সূচী

 পরীক্ষার তারিখঃ ১৪-০৯-২০১৮

  • পদের নামঃ ফিল্ড সুপারভাইজার
  • পরীক্ষার তারিখঃ ১৪-০৯-২০১৮
  •  পদের নামঃ সাটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর
  • পরীক্ষার তারিখঃ  ১৪-০৯-২০১৮
  • এই পরীক্ষার সময়সূচী কোন নোটিশ প্রকাশ হয়নি । আপনারা যারা আবেদন করছেন ,সবার মোবাইলে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দিবে।
  • পরীক্ষার সময়সূচী সহ সম্পূর্ণ তথ্য আপনার এডমিট কার্ডে পাবেন।


কবিতাঃ মুক্ত পাখি | শামীমা আক্তার

শামীমা আক্তার

অসংখ্যবার  একটা পাখিকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে,
প্রতিবারই মুক্ত করা হয়েছে, নীলাকাশে যেন স্বাধীনভাবে উড়তে পারে,
এবার খুব ভেবে চিন্তে পাখিটাকে এমনিভাবে মুক্ত করে দেয়া হবে,
সে খুজে পাবে না তার নীলাকাশটা, 
যেথায় সে বিশুদ্ধ নি:শ্বাস নিতো প্রাণভরে, 
পাখি চায়, নীলাকাশ সর্বক্ষেত্রে রাজত্ব,
নীলাকাশ চায়, স্বাধীন আকাশে কারোও হস্তক্ষেপ থাকবে না,
তবে পাখি কি পারে নীলাকাশের সাথে?
পারতো, যদি পাখিটা নি:স্বার্থ হতো,
পাখিটা এখন নীলাকাশ ছেড়ে পালাতে পাড়লে বাঁচে,
এমনি পাখি আর নীল আকাশের সংঘাত ক্রমশই জটিল,
এ জটিলতা অবসান হবার নয়।

কুড়িগ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি নিজেই প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে

কুড়িগ্রামে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আমিনুর রহমান

১৯৮৫ সালে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের পিছনে সরকারী খাস জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলামকে অযৌক্তিক অজুহাতে চলতি বছরের ২৪ জুলাইয়ে সাময়িক বরখাস্ত করার পর থেকে বিদ্যালয়টিতে হযবরল অবস্থা দেখা দেয়।


আজ ৯ সেপ্টম্বর বেলা ১২ টার দিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রেসক্লাবের একদল সাংবাদিক সরেজমিনে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী  বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান কাগজ কলমে ১শত ৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে মাত্র ১৭জন শিক্ষার্থী এবং ১০ শিক্ষকের মধ্যে ৫জন শিক্ষকের দেখা পাওয়া যায়।

প্রতিমাসে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলে কর্মরত ১৯ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন খাতে প্রায় ৩ লাখ টাকা আসে। এতো অর্থ ব্যয়ের মাধ্যম্যে আমাদের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সন্তানরা কতখানি শিক্ষা অর্জন করে ? এ বিষয় সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে হবে।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সব চেয়ে বড় দৃষ্টিকটু বিষয় হচ্ছে বর্তমানে এ বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিন আল পারভেজ। একজন ইউএনও কিভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

অনুগল্পঃ ডিক্‌শনারী দেখা | খায়রুল আনাম

খায়রুল আনাম


ইংরেজী ডিক্‌শনারী মানে অভিধান কেমন করে ব্যবহার করতে হয় জানেন না বুঝি? আচ্ছা বলে দিচ্ছিঃ

১) আপনি জেনে রাখুন, আপনার সুবিধার জন্য অভিধানে শব্দগুলো বর্ণানুক্রমিকভাবে সাজানো আছে। মানে যে শব্দগুলি A দিয়ে আরম্ভ হয়েছে যেমন Apple, তারপর যে শব্দগুলি B দিয়ে আরম্ভ হয়েছে যেমন Boy থেকে শেষ মেশ Z দিয়ে যেগুলো আরম্ভ হয়েছে সেগুলি, যেমন Zebra। এভাবেই।

২) ওহ, যে শব্দটি দেখতে চান, তার বানানও আপনি জানেন না? কুছ পরোয়া নেই। আপনি তার প্রতিশব্দ কি সেটা দেখুন। ওহ, প্রতিশব্দের ইংরেজী কি তা জানেন না। ওটাকে বলে Synonym. এখন এটাকে নিয়ে কি করবেন তাও বুঝতে পারছেন না?

৩) আরে মশাই, প্রতিশব্দের ইংরেজী বানানটা তো দেখিয়ে দিয়েছি, আপনার আর অসুবিধা হবার কথা নয়। লিখুন Synonym of আপনার ইংরেজী শব্দ মানে Word টা।

৪) হা ঈশ্বর! তাতেও হচ্ছে না? তার মানে আপনি যে শব্দটি চয়ন করেছেন, তার কোন মানে হয়না। অথবা যা আপনি আশা করেছিলেন, শব্দটার মানে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু।

৫) ঠিক বুঝলেন না বোধ হয়। আসলে এ ধরণের সমস্যাকে ইংরেজীতে বলে “Insuperable”.

৬) নিয়মটা তো বলে দিয়েছি। এখন “insuperable” কথাটার মানে ঐ ডিকশিনারী থেকে বের করুন।


লেখকঃ খায়রুল আনাম (শিকাগো প্রবাসী)

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের ভূত | নাহিদ হাসান

নাহিদ হাসান

১.
জন্ম থেকেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের ভূত দেখে আসছে। কিন্তু দেখতে দেখতে সেই ভূত বাস্তব হয়ে ঘাড়ে চেপে বসেছে কিনা, এই তর্ক টেবিল থেকে রাস্তা পর্যন্ত। নাকি ভ্রুণ থেকে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নিয়ে অধির আগ্রহে কাতরাচ্ছিল, যাকে কেউ কেউ বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের হেঁটে হেঁটে ভারত যাত্রার মধ্যেই তা রয়ে গিয়েছিল? নইলে জন্মেই কিভাবে রক্ত স্নাত এত বড় জনগোষ্টীকে স্রেফ পাশ কাটিয়ে একব্যক্তিকেন্দ্রীক সংবিধান প্রনয়ণকরা সম্ভব হলো? গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এত আত্মদানের পরও জন্ম থেকেই বাংলাদেশে রাজতন্ত্র কায়েম হয়ে আছে। পরাধীন সমাজ ও সংস্কৃতিতে বাক্যবাগীশ ও ক্যারিশম্যাটিক নেতা তৈরি হবে, এটা স্বাভাবিক। ইওরোপে যা অস্বাভাবিক, আমাদের এখানে যেন তা স্বাভাবিক! রুশ তাত্ত্বিক লিঁও ট্রটস্কি বলেছেন, যে মুহূর্তে বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্র তার সংসদীয় কাঠামো ও 'স্বাভাবিক' পুলিশও মিলিটারী পরিকাঠামোর মাধ্যমে সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়, সেই মুহূর্তটাই ফ্যাসিবাদী মুহূর্ত।
আর বাংলাদেশ তো এখনও বুর্জোয়া গণতন্ত্রের স্তরেই পৌঁছে নাই। তবে এটাও ঠিক, বুর্জোয়া-গণতান্ত্রিক বিপ্লব এখানে না সংগঠিত হলেও, কৃষিসহ সর্বত্র ধনতন্ত্রের বিকাশমান পরিস্থিতি থাকায় বুর্জোয়া সংস্কৃতির উপাদানগুলোরও বিকাশ ঘটেছে। ফলে উন্মত্ত পেটি বুর্জোয়া জনতা, শ্রেণীচ্যূত গোষ্ঠীগুলো ও জাতি-ধর্মগর্বী ছাত্র সমাজেরও জন্ম ঘটেছে, যারা ফ্যাসিবাদের অন্যতম হাতিয়ার। এদেরকে দিয়েই সার্বভৌম ক্ষমতার সমস্ত প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনিক ও মতাদর্শীক প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, প্রেস, ট্রেড ইউনিয়ন ও সমবায় সমিতিসহ সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করে নেয়। তাই আমরা ইতালি-জার্মানির ফ্যাসিস্ট প্রবণতাও দেখব, আবার লাতিন আমেরিকার হত্যা-গুম-অপহরণের সংস্কৃতিও দেখব। আবার আমরা দেখব, পরাধীন আমলে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ও জনগণ যে পরিমাণ বাক স্বাধীনতা ভোগ করতেন, স্বাধীন দেশে তাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমার শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির দিকে তাকালেই আমরা তুলনাটা টের পাবো।
ইতালির ফ্যাসিস্ট দলের নেতা মুসোলিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা যে তিনটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে নিজে তালুবন্দী করে, সেগুলো হচ্ছে: ১. রাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণের অধীনে শ্রমিকদের সঙ্গে পুঁজিপতিদের সহযোগ স্থাপন ও বাধ্যতামূলক আপোসের বন্দোবস্ত করা। ২. রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে কেন্দ্রস্থ করা। এবং ৩. প্রেসের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন করে সংকুচিত করা।
আগে আমরা মে দিবসে স্লোগান শুনতাম, দুনিয়ার মজুর এক হও! এখন শুনি, শ্রমিক-মালিক ভাই ভাই। সংবিধান পড়লেই বুঝি, ৭২ সাল থেকে সকল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অর্থাৎ মুসোলিনির ১ থেকে ৩ নম্বর শর্ত ৭২ সাল থেকেই বহাল। সেজন্য ৭২ সাল থেকেই ফ্যাসিবাদ শব্দটি রাজনৈতিক এলাকায় চালু আছে।
মুসোলিনির আমলে ইতালি ঘুরে বেড়িয়েছেন জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সন্তান সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি সেখানে অর্ধাহারে-অনাহারে লোকজনকে যক্ষায় মরতে দেখেছেন। দেখেছেন, পথে পথে অসংখ্য ভিক্ষুক। অথচ ফ্যাসিস্ট নেতারা প্রায়ই বলতেন, ইতালিতে ভিক্ষুক নেই। গ্রামে-গঞ্জে জনগণের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কোন চিহ্ন না দেখতে পেলেও মুসোলিনিকে প্রায়ই বলতে শুনেছেন, 'যখন পৃথিবীর অন্য সমস্ত দেশে ক্রাইসিসের ফলে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় থেকে শোচনীয়তর হয়ে উঠেছে, একমাত্র ফ্যাসিস্ট ইতালিতেই জনসাধারণের অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।' -যেমনটি আমরা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হতে দেখি সাগরে সাগরে কাজের সন্ধানে বাংলাদেশিদের মরতে দেখেও।


২.
ইতালি প্রথম মহাযুদ্ধের অস্ট্রিয়ার অন্তর্গত দক্ষিণ তিরোল দখল করে নেয়। সেই দক্ষিণ তিরোলের জার্মাণ অধিবাসীদের ইতালিয়ান করে তোলার জন্য মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট সরকার ১৯২৩ সালের জুন মাসে একটি প্রোগ্রাম ঘোষণা করে: দক্ষিণ তিরোলে রাষ্ট্রের সমস্ত অফিসে কেবল ইতালীয় ভাষা ব্যবহার, সেখানকার জার্মাণ কর্মচারিদের ইতালির অন্য প্রদেশে বদলি, শহর ও রাস্তাগুলির পুরাতন জার্মাণ নাম বদলে ইতালীয় নাম রাখা, পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, ইতালীয়দের দক্ষিণ তিরোলে পাঠিয়ে সেখানকার জমি দখল করে বসবাসের বন্দোবস্ত করা, ইতালীয় ভাষাকে চালু করা, বিচারালয়ে ইতালীয় কাজকর্ম ও বহুসংখ্যক ইতালীয় সৈন্য মজুদ রাখা।-এই সমস্ত কাজ আমাদের শাসকশ্রেণীও পার্বত্য এলাকায় করেছে এবং আমাদের কাছ থেকে তার সম্মতিও আদায় করেছে।
সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪ সালে তাঁর 'ফ্যাসিবাদ' বইএ শিল্পী-সাহিত্যিকরা কীভাবে মুসোলিনিকে সমর্থন যুগিয়েছেন, তা আমরা বুঝব ফিউচারিস্টদের সঙ্গে ফ্যাসিজমের সম্পর্ক কী, এটা ফিউচারিস্টদের নেতা মারিনেত্তি লেখককে কী বলেছেন তা থেকেই। মারিনেত্তি তাঁকে বলেছেন, "ফ্যাসিজম ফিউচারিজম ও মহাযুদ্ধে ইতালির যোগদানের ফলস্বরূপ। ফ্যাসিজম ফিউচারিজম দ্বারা নিজেকে পুষ্ট করেছে। ফ্যাসিজমের মধ্যে সেই জাতীয়তার গর্ব, ঘোরতর যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ও স্বদেশপ্রেম আছে ও সর্বদা থাকবে, সেগুলির সম্পর্কে আমরা ফিউচারিস্টরাই ইতালির জনসাধারণকে সর্বপ্রথম সচেতন করে তুলি।" 
বলা ভাল, ১৯২২ সালে মুসোলিনির সরকার গঠনের সাথে সাথে এই কবি-সাহিত্যিক-সম্পাদকরা ফ্যাসিস্ট মূর্তিতে দেখা দেয়। তারা প্রচার করত, ইতালির ভবিষ্যৎ হচ্ছে ন্যাশনালিজম ও ধর্মের বিস্তারের দ্বারা আধ্যাত্মিক জীবনের আদর্শ প্রচার করা।-আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মদীনা সনদ কি একসাথে চলছে না?


৩.
বিপুল সংখ্যক মানুষের যুক্তিবোধকে অসার করে দেওয়াটা ফ্যাসিস্ট প্রচারের লক্ষ্য। নেতাকে অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন করতে পারার মধ্যে ফ্যাসিবাদের প্রচার নির্ভরশীল। নেতা আর সাধারণের মত না, এটা প্রমাণ করতেই হবে। মুসোলিনি দুচে আর হিটলার ফুয়েরার। রাষ্ট্রনেতাকে শুধু তার নামে ডাকা যাবে না। নেতাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মিথ্যা তৈরি করা হয়। ঠাণ্ডা মাথায় নেতার ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়। গোটা ইতালি জুড়ে একটা স্লোগান তোলা হয়, মুসোলিনি সব সময় সঠিক। ইতালি জুড়ে মুসোলিনির ছবি, তার নিচে স্লোগান: বিশ্বাস কর, মেনে চলো, লড়াই কর। তার তিন ধরনের ভাবমূর্তি তৈরি করা হয়: ১. তিনি নবজাগরণের প্রতিনিধি, ২. অনন্য সাংগঠনিক প্রতিভা ও ৩. সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি। কবি এজরা পাউণ্ড এবং স্বল্প সময়ের জন্য রবীন্দ্রনাথও মুসোলিনির গুণমুগ্ধ ছিলেন। পুরো ইতালির ইতিহাসবিদ ও কয়েকশ জীবনীকার এটা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন যে, জন্ম থেকেই তিনি কত বড় প্রতিভাবান ছিলেন! ক্রমাগত মিথ্যা প্রচারে মুসোলিনি নিজেই মিথ্যাকে বিশ্বাস করতে ও পরম ভাবতে শুরু করেছিলেন।-আশা করি আমরা আমাদের ইতিহাসের সাথে মিল পেয়ে যাচ্ছি।

৪.
ইতালি আর জার্মানি ছিল সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র, আর বাংলাদেশ সাম্রাজ্যবাদের শিকার। কিন্তু শাসকশ্রেণীর আচরণের মধ্যে সাদৃশ্য। এগুলো ফ্যাসিবাদের উপরি দিক। মর্মবস্তুতে ফ্যাসিবাদ বুঝতে হয় উৎপাদন-সম্পর্কে, ব্যাংক ও শিল্প পুঁজির দ্বন্দ্বের মধ্যে। বাংলাদেশ সে জায়গায় যায়নি, কিন্তু ভারত সেই যাত্রায় উপস্থিত। ৪০ লক্ষ বাঙালি আর মাও বাদের ভূত দেখার রাজনৈতিক প্রবণতার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের ভূত বাস্তব হয়ে ওঠে, তা উপরে বললাম। বাংলাদেশ ভারত নামের ফ্যাসিবাদী দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্র হিসেবে ফ্যাসিবাদী প্রবণতা হাজির করছে নিজ রাষ্ট্রের ভূত-ভবিষ্যৎ জলাঞ্জলি দিয়েই। ইতালি-জার্মানিতে ফ্যাসিস্টদের উত্থান ঘটেছিল বলশেভিক বিপ্লবকে মোকাবিলার জন্য, বাংলাদেশেও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি চালু হয়েছে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে ঠেকাতেই। শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে পপুলার ফ্রন্ট ফ্যাসিবাদকে প্রতিহত করেছে ইওরোপে, আমরা প্রবণতাকে ঠেকাব কী করে? স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের লড়াই ছাড়া এই ফ্যাসিবাদের ভূত ঠেকানোর ওঝা নেই।



লেখকঃ সভাপতি, রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
nahidknowledge@gmail.com

এককাপ চা | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান


সোনালি অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। মন চায় সেই অতীতে ফিরে যাই।চাই আগের মতো সবার সাথে জম্পেশ আড্ডা মারতে। কিন্তু তা তো হবার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তেমনি একটি ঘটনা ----

দিনক্ষণ মনে নেই। সম্ভবত ১৯৮৮ সাল হবে তখন। এক বন্ধুর হলে গেলাম। অনেক কথাবার্তা হলো। উঠে আসবো তখনি বলল
 -যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা। 
 - ধন্যবাদ বন্ধু ,আরেকদিন এসে খেয়ে যাবো। আজ তাড়া আছে। 
- ঠিক আছে, যা তাহলে। 

এরপর কয়েকদিন কেটে গেলে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতাম। সেই হলে অর্থনীতি বিভাগের ব্যাচমেট রোজের কাছে একদিন অন্য হলের একজন বন্ধু এলো। সেসময়ে আমিও ছিলাম। বন্ধুটির যাবার সময় রোজ বললো - দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।বন্ধুটি ধন্যবাদ দিয়ে চা পান না করে চলে গেল।

রুমে এসে ভাবলাম - অনেকক্ষণ তো ছিল সে বন্ধুটি। তবে শুরুতে  আমন্ত্রণ না করে কেন যাবার সময় করলো? ওরে বাবা! এবার বুঝলাম। এরপর যদি কোনদিন কেহ আমাকে বলে তবেই বুঝবে।

প্রচণ্ড রোদফাঁটা এক দুপুরে তৃষ্ণা আর খুদার জ্বালায় অস্তির হয়ে হলে ফিরছি। তার আগে বাস স্ট্যান্ডে আমাদের শহুরে ললনাদের দেখতে ভুল করি নাই। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে একাই ফিরছি। একটু চিপায় রোজের মতো একজনকে মনে হলো। একটু একটু করে পা ফেলছি আর রোজ আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। আরেকটু কাছে আসতেই কড়া ইন্ডিয়ান পারফিউমের গণ্ড নাকে আসলো। পায়ে হেভি কেডস, সিঙ্গাপুরের জিনস, থাইল্যান্ডের গেঞ্জি আর গলায় সোনার চেন পরে মাঞ্জা মারছেন আমাদের হবু অর্থনীতিবিদ রোজ সাহেব। মনে হচ্ছে হট নায়ক অনিল কাপুর।আমি কাছে আসতেই ব্রিটিশ ’৫৫৫’ প্যাকেট বের করে চুলগুলোতে একটা ঝাঁকি মেরে রজনী কান্তের মতো একটা সিগারেট উপরে ছুঁড়ে মেরে সেটি মাটিতে পড়ার আগে ক্ষিপ্র গতিতে দুই ঠোঠের মধ্যে নিয়ে স্টাইল মেরে সিগারেটটি ধরাল। সিগারেটটি ধরার পর প্যাকেটটি একটু দূরে ছুড়ে মারল।  আরে এ তো সেই রোজ! যে কিনা হলে আলু ভর্তা কিংবা কোন কোন দিন এক আধতা ডিম ভেজে কোনমতে খাবার খায়। খাওয়ার পর নাসির বিড়ি ফুঁকিয়ে অর্থনীতিবিদগিরী দেখায় আর বাহিরে এত উদার হস্ত। আর দু পা এগোতেই এক অতীব সুন্দরি এক ললনার মুখ দেখা গেল। 

ওদের দেখে ভাবছি কথা বলব কি না। ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাবার আগে রোজ বলে উঠল – কি রে হলে যাচ্ছিস?
মনে মনে বললাম –হলে না গিয়ে  এই ভর দুপুরে কোন ললনার সাথে ধুতরা ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলব নাকি! কিন্তু তা না বলে বললাম – হাঁ রে যাচ্ছি তো হলে। তুই কখন ফিরবি?
- ওকে হলে দিয়ে একটু পরে ফিরব।
- কে উনি? উনার সাথে কার যেন একটু মিল খুঁজে পাচ্ছি। 
 বলার সাথে সাথে রোজের চোখেমুখে আত্মতৃপ্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। সে বলে উঠল -কার সাথে মিল রে? জানো, ও না খুব সহজ সরল। নিশ্চয় রংপুরে মফিজের নাম শুনেছো। ওকে দেখলে তোমাকে আর মফিজ দেখতে হবে না। 

শালা আমাকে মফিজ বলে। আজ বুঝবি মফিজ কাকে বলে, কত প্রকার  ও কি কি। 
কিন্তু বিরক্তির ভাব চোখেমুখে ফুটে না তুলে বরং একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে বললাম – মোহিনীর সাথে।
- মোহিনী! মানে?
- কি রে খালি তো সারাক্ষণ আড্ডা মারিস, আর যখন মোহিনীর নাম শুনিস তখন তো প্রায় লাফিয়ে উঠিস? 
সঙ্গের সাথী সেই ললনা রাগত কণ্ঠে বলে উঠল – কে ভাই মোহিনী? আর ওর সাথে কি সম্পর্ক?
ললনার প্রশ্ন শুনে বুঝলাম , আজ আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। বললাম – আরে এ মোহিনী সেই মোহিনী নয়। আপনি যা ভাবছেন তা নয়।তেজাব ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত 'মোহিনী' চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কি রে রোজ তুই সহ আমরা অনেকে তো 'তেজাব' দেখেছি । মোহিনী চরিত্রের কথা ভুলে গেছিস! নিশ্চয় এর সাথে সাথে এক দো তিন নাচের কথাও মনে নেই? 

আমার বলার সাথে সাথে রোজের ভয়ার্ত ভাব কেটে গিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। আর মোহিনী ম্যাডামের মুখে লজ্জা রাঙানো পূর্ণিমা চাঁদ দেখা গেল। মোহিনী বলে উঠল – কি যে বলেন ভাই! কোথায় মাধুরী দীক্ষিত আর কোথায় আমি! তাঁর সাথে কি আমার তুলনা চলে।
- আলবত চলে। ওরা আমাদের মতো অভাব অনটন আর দুঃখ কষ্টে থাকলে বুঝত। এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে পান করতে হয় না।
- ঠিক বলেছেন ভাই। বলেই একগাদা অভাব অভিযোগের কথা বলতে লাগল। মোহিনী বলছে আর আমি আড় চোখে রোজের দিকে তাকাচ্ছি। আর ভাবছি- তুই শেষ রে রোজ! রোজের চোখমুখে বিরক্তের ভাব ফুটে উঠছে। আর আড় চোখে  ছুঁড়ে মারা প্যাকেটটির দিকে বারবার তাঁকাচ্ছে।প্রেমিকাকে বাদ দিয়ে বারবার প্যাকেটটির দিকে তাকাচ্ছে কেন চান্দু ? নিশ্চয় কিছু আছে বাপধন। প্যাকেটের দিকে এগাতেই রোজ বলে উঠল
 – আরে কী করিস?
- নারে হঠাৎ ছোট একটু লেখার দরকার পড়ল। প্যাকেটটি ছিঁড়লে লেখার কাজ হবে।
- বাদ দে তো। ফেলে দেওয়া নোংরা প্যাকেট দিয়ে কি হবে। তারচেয়ে এই নে তোর লেখার কাগজ। বলেই একটু উঠে দাঁড়িয়ে পাছার নীচে এতক্ষণ বসে থাকা প্যাডের সাদা কাগজটি আমার দিকে দিল। শালা! তোর বসে থাকা পাছার কাগজটি নোংরা হলো না হলো ওই প্যাকেটটি। নিশ্চয় ওখানে সিগারেট আছে । আমাকে নিতেই হবে। কিছু হিবিজিবি লিখে ইচ্ছাকৃত ভাবে কলমটি ফেলে দিলাম। একটু বকবক করে খুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বললাম - যাই রে।
- যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

সদ্য দেখা জুদাই ছবির কথা মনে পড়ল। সেই ছবিতে জনি লিভার এক সুন্দরি মেয়ের মুখে – আব্বা জুব্বা ডাব্বা শুনে গদগদ হয়েছিল। কিন্তু জনি লিভার জানতো না সেই মেয়েটি 'আব্বা জুব্বা ডাব্বা ' ছাড়া আর কোন কথা বলতে পারতো না। যখন সে বুঝলো তখন মাথার চুল ছিড়া  ব্যতীত কিছুই করার ছিল না। আজ তোকে সেই জনি লিভার বানিয়েই ছাড়বো। আমাকে রংপুরের মফিজ বলার স্বাদ চিরতরে বন্ধ করবো। 

- খাওয়াবি চা? তাহলে খাওয়া। 
রোজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল – বাদ দে, দুপুরবেলা চা না খাওয়াই ভাল। তারচেয়ে হলে গিয়ে ভাত খা। চা এর পাওনা বিকালে মিটাবো।

শালা তুই বিকালে খাওয়াবি! তাহলে তো দুনিয়া উল্টে যাবে। মুখে এসব না বলে বললাম – ঠিক বলেছিস বন্ধু। এখন ভাত খাবার সময়। চল ভাত খাই। মোহিনী ম্যাডামের তো খুদা লেগেছে  তাই না?
- না না ভাই। এই ,তুমি না ওনাকে খাওয়াতে চাইলে তাহলে ভাইকে নিয়ে খেয়ে এসো। আমি হলে ফিরলাম।

ললনা কথা শুনে বিষম খাবার যোগাড় হলো। মনে মনে আওড়াচ্ছি - আরে মোহনী, তুমি গেলে তো আমার আর ওর কাছ থেকে খোসানো হবে না। কোনভাবে সেই অপ্সরীকে যেতে দেওয়া যাবে না। আমি বললাম – এ কি কথা বললেন! আপনি যাবেন আর আমি খাব।কখনই নয়। খেলে একসাথে খাবো।
- কোথায় খেতে চান?
-দুপুর হয়ে গেছে।কাছাকাছি কোথাও যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হয় সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ায়। 

সেদিন ছিল সম্ভবত সোমবার। আর সোমবারে ক্যাফেটেরিয়াতে স্পেশাল বিরিয়ানি হয়। 
বন্ধুটির চোখেমুখে ঘোর আমবশ্যা নেমে এসেছে। সেই ললনা খুব সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠল – এই চলো না।

 ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে দু এক কদম পা বাড়ালাম। রোজের মেঘাচ্ছন্ন মুখটি কণে বিদায় দিবার সময় বাবা মা এর হয় যেমনটি হয় প্রায় তেমনটি হলো। অনিল কাপুর শেষবারের মতো প্যাকেটটির দিকে তাঁকাল। আরো দু কদম এগতে আমি বুক পকেটে হাত দিয়ে বললাম – এই ছেড়েছে! আমার কলমটি মনে হয় লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলে এসেছি। তোমরা আগাও আমি আসছি। 

বলেই দ্রুত সেখানে গিয়ে কলম আর প্যাকেটটি তুললাম। প্যাকাটিতে হাত দিয়ে বুঝলাম অন্তত চার পাঁচটা সিগারেট সেখানে আছে। দ্রুত সেটি প্যান্টের পকেটে চালান করে দিয়ে ওদের সাথে এক হলাম। রাস্তায় মোহিনীর আর একদফা প্রশংসার সাগরে ভাসালাম। মোহিনী খুব খুশিতে গদগদ হয়ে আসে। 

ক্যাফেটেরিয়ায় এসে মোহিনী বলে উঠল – কী খাবেন ভাই?
গরম বিরিয়ানির খুশবু পুরো ক্যাফেটেরিয়াময়। বললাম – বিরিয়ানি। 
রোজ রূপী অনিল কাপুর সাথেসাথে বলে উঠল – আরে বিরিয়ানি খেলে পেট খারাপ হতে  পারে, তারচেয়ে নাস্তা খাই।
- ছি ছি ! তুমি এত কিপটে। মানুষ কি আর এমনি বলে - অর্থনীতিতে যারা পড়ে তার হাড় কিপটে হয়। ছি ছি তোমার এই কিপটেমির কারণে ভাইটি কী মনে করবেন। 

মোহিনীর রাগ দেখে রোজ নাকি সুরে তিন প্লেট বিরিয়ানির অর্ডার করল। যথাসময়ে বিরিয়ানি চলে এলো। এবার আমি খুব আয়েসের ভঙ্গিতে বিরিয়ানি চিবচ্ছি আর তাদের দুজনার প্রশংসা করে চলছি। আর রোজের কালিমাখা মুখ দেখে মনে মনে বললাম – আজ বেচারা কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে। তা না হলে কি এই বাঁদরের সাথে দেখা হয়! 

খাওয়া শেষে রোজকে বললাম – দোস্ত অনেকদিন পর আজ না যোশ করে খেলাম। সিগারেট চা খাওয়াবি না।
রাগ করে বলল- না। এত বেশি চা চা করিস না তো। যা ভাগ।

মোহিনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সেই প্যাকেটটি খুলে একটা সিগারেট বের করে ভাবলাম – রোজ কি আমাকে দেখে আর কখনো  বলবে না  -দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সেই সংগে রহিল ঈদ মোবারক। সাথে রহিল চায়ের আমন্ত্রণ। কী ভাবছেন, আপনারা উঠার সময়  বলবো - যাবেন, এক কাপ চা পান করে অন্তত যান। আরে না, আপনারা বসার সাথে সাথে এক কাপ ধূমায়িত চা পাবেন। ভাল থাকুন। বাঁচতে হলে প্রাণ খুলে হাসুন।


পুনশ্চঃ 
লেখা এবং ছবি লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।

মূল্যায়নের আশায় থেকো না | বব ডিলান

বব ডিলান



বব ডিলান ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী। কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে। বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায়। বিগত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে সংগীতজগৎ। গ্র্যামি, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পুলিৎজারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বব ডিলান টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিংশ শতাব্দীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অন্যতম। সূত্র: ওয়েবসাইট. ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে স্কট কোহেনকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন অঞ্জলি সরকার 

অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চায়। কিন্তু আমি যদি পারতাম, তাহলে সেই সব মানুষের সাক্ষাৎকার নিতাম, যারা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু ফেলে রেখে গেছেন অনেক অসমাপ্ত কাহিনি, জন্ম দিয়েছেন অনেক প্রশ্নের। হ্যাঙ্ক উইলিয়ামস, মেরিলিন মনরো, জন এফ কেনেডি, এমন আরও অনেকে, যাঁদের জীবন মানুষকে এখনো ভাবিয়ে তোলে। কোটিপতিদের জীবন আমাকে আকৃষ্ট করে না। আমি জানি না, টাকার পাহাড় জীবনে কী-ই বা দিতে পারে। যাঁদের কাজ আমার পছন্দ হয়, আমি সেই কাজগুলোকে শ্রদ্ধা করেই খুশি থাকি। 

আমার মনে হয়, একজন গীতিকারের সবচেয়ে অসাধারণ গানগুলো পুরোপুরি তাঁর কল্পনার জগৎ থেকে আসে, যা তিনি বাস্তবে কখনো ছুঁয়ে দেখেননি। এ যেন এক অন্য রকম মুক্তি! যদিও নিজের বেলায় এমনটা করা সাধারণত হয়ে ওঠে না। বেশির ভাগ সময় চারপাশে যা ঘটে চলেছে, সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। কলেজের পড়াশোনার পাট আমার প্রথম বছরেই চুকে গিয়েছিল। লেখালেখি কিংবা সাহিত্য নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমি শুধু আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াই। আমি জানি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক জানাশোনা থাকার কথা, কিন্তু সত্যিটা তার বিপরীত। আমি এসব নিয়ে তেমন কিছুই জানি না। আমি লিখতে শুরু করেছিলাম কারণ, আমি গান গাইতাম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল আমার জন্য। সবকিছু তখন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল আর আমার কেবলই মনে হতো, কোনো একটি ব্যাপার নিয়ে গান থাকা উচিত। কারও না কারও সেই গানটি লেখা উচিত। তখন আমিই সেই গান লিখতে শুরু করে দিলাম। কারণ, আমি তা গাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম। আমার আগেই যদি সেসব গান কেউ লিখে ফেলত, তাহলে আমি আর গান লেখা শুরু করতাম না। 

এভাবেই জীবনে একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আমিও নিজের মতো গান লিখতে থাকি। এসবের কোনোটাই আমি খুব গুছিয়ে কিংবা পরিকল্পনা করে করিনি। কবিতার বেলায়ও ঠিক তাই। হাইস্কুলের চৌকাঠ পেরোনোর আগে আমি কখনো কবিতা লিখিনি। 

আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমার হাতে এসে পড়ে গিন্সবার্গ, গ্যারি সিন্ডার, ফিলিপ হোয়ালেনের লেখা। তারপর আমি ফরাসি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ি, কবিতায় সুর বসাতে থাকি। তখনকার দিনে ফোক মিউজিক আর জ্যাজ ক্লাবের দারুণ চল ছিল, সেখানে কবিরা গানের সঙ্গে তাঁদের কবিতাও পড়ে শোনাতেন। আমার মনে বইয়ের পাতায় আটকে থাকা কবিতার চেয়ে কবির কণ্ঠে সেই প্রাণবন্ত কবিতা অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল। 

১৯৬১ সালে আমি একের পর এক ফোক মিউজিক কোম্পানির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হই। ফোকওয়েজ, ট্র্যাডিশন, প্রেস্টিজ, ভ্যানগার্ড—এরা সবাই আমাকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর আমি কলাম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করি। সেটা ছিল আমার জন্য একটি বিরাট ঘটনা। এভাবেই হয়তো আপাতদৃষ্টিতে যাকে ব্যর্থতা মনে হয়, নিজের অজান্তে সেটি ভবিষ্যতের সাফল্য বয়ে আনে। তখন আমি যদি সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ফোক মিউজিকের চুক্তি করতাম, তাহলে আমার সবকিছুই অন্য রকমভাবে হতো। মনে হয় না তাদের সঙ্গে আমার বেশি দিন থাকা হতো। মজার ব্যাপার হলো, তাদের অনেকের ব্যবসাই এখন উঠে গেছে! 

১৯৬৬ সালে আমার খুব খারাপ ধরনের একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। আমার মেরুদণ্ডের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায় আর আমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। আমার ক্যারিয়ার যেভাবে এগিয়ে চলছিল, তাতে বেশ ভালোভাবেই ছেদ পড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দেয়, আমি নতুন করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। এখন আমার মনে হয় সেই দুর্ঘটনা আমার জীবনে আশীর্বাদই বয়ে এনেছিল! 

আমার ছোটবেলা কেটেছে দাদির কাছে। দারুণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি, এখনো খুব মনে পড়ে তাঁকে। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বড় হতে হয়েছে আমাকে। এমনকি কিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, ভবিষ্যতে কী হবে তাও সব সময় পরিষ্কার ছিল না। আমার একাকিত্বই আমাকে শক্তি জোগাত। কারণ, আমার জীবনকে আমি সম্পূর্ণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলাম আর যা চাইতাম, ঠিক তা-ই করতাম। মিনেসোটার উত্তরে আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে আমার জীবনের অনেকখানি মিশে আছে। আমি জানি না, আমার জীবনটা কেমন হতো যদি আমি ইথিওপিয়া কিংবা দক্ষিণ আমেরিকায় বেড়ে উঠতাম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নিলেও আমি হয়তো সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হতাম। আমার মনে হয়, পরিবেশের এই প্রভাবটা সবার বেলায়ই সত্যি। 

যখন কেউ নতুন কিছু করে, পরিবর্তনের কথা বলে, তখন অধিকাংশ সময়ই তার পরিচিত মানুষেরা বা নিজের দেশের লোকেরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে না। স্বদেশে সে হয়তো উপহাসের পাত্র হয়, কিন্তু দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের লোকেরা ঠিকই তার কদর বুঝতে পারে। গৌতম বুদ্ধের কথাই ধরা যাক, তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের সম্পদ। এখন বৌদ্ধধর্ম সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছে কোথায়? চীন, জাপানসহ এশিয়ার অন্য প্রান্তে। তবে হ্যাঁ, সত্যকে প্রথম প্রথম কেউই মেনে নিতে না চাইলেও একসময় তা নিজগুণেই প্রকাশিত হয়। তত দিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতাও গড়ে ওঠে। আপনা-আপনিই তখন লোকে সেই আদর্শে চলতে থাকে, যে আদর্শকে তারাই একদিন তাচ্ছিল্য করেছিল। 

লোকে তোমার নামে অনেক কিছুই বলতে পারে। গণমাধ্যম অনেক গল্পই বানাতে পারে তোমাকে নিয়ে। এখনকার দিনে কোনো কিছু গণমাধ্যমে না আসার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই! সবকিছুই যেন ব্যবসা; ভালোবাসা, সত্য, সৌন্দর্য—সব। মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনও আজ বাণিজ্যের উপকরণ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কাছে এসবের কোনো কিছুই টিকবে না। তুমি নিজেকে কী মনে করো, তোমার কত বড় উপাধি আছে, এসব তাঁর কাছে অর্থহীন। তিনি কখনো মানুষকে সম্পদ কিংবা পেশা দিয়ে বিবেচনা করবেন না। তিনি বলবেন না এ একজন কোটিপতি, ও একজন চিকিৎসক, সে একজন খেটে খাওয়া মানুষ। 

এখন পৃথিবীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে গেছে। ষাটের দশকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করত, তাদের অধ্যাপকেরা ছিলেন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তাঁদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীরা পথে ছড়িয়ে পড়ত। আমি রাজনীতি নিয়ে যা জেনেছি, শিখেছি, সবই এসেছে পথে নামা সেই মানুষগুলোর কাছ থেকে। তখনকার পরিবেশটাই ছিল অন্য রকম। এখন সবাই অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যে যার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। একতা বলতে যেন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তখনকার দিনে এত বিভেদ ছিল না। আজকের সঙ্গে সেদিনের তুলনা করতে গেলে মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদটাই আমার চোখে সবার আগে ধরা পড়ে। 

সময় তার নিজের নিয়মে বয়ে চলছে। সবকিছুই বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন, একটু একটু করে। আমি নিজের চলার গতি কমিয়ে দিয়েছি, কিন্তু বাকি সবকিছুই বড় বেশি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আমি যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম, আমি শিশুর মতো ভাবতাম। যখন বড় হলাম, আমি সেই শিশুসুলভ ভাবনাগুলোকে সরিয়ে রেখে দিলাম। আমি একটা ব্যাপার কখনোই বুঝতে পারি না, আর তা হলো মানুষ উদ্ধত হয় কেন? কেন মানুষ অহংকারী হয়ে ওঠে? লোকে এমনভাবে কথা বলে, চলাফেরা করে, জীবন কাটায় যেন অনন্তকাল ধরে তারা এভাবেই বেঁচে থাকবে। যেন মৃত্যু তাদের কখনো স্পর্শ করবে না। সবচেয়ে বড় সত্যিটাকেই তারা এভাবে অস্বীকার করে। আর মৃত্যুর পর তারা পৃথিবীতে কী রেখে যায়? ছেড়ে যাওয়া খোলসের মতো একটা শরীর আর কিছুই না।

আমি-ই তুমি | নাহার কৃপা

নাহার কৃপা

কল্পনার এক তোমার সাথে কত যে ব্যালে নাচ নেচেআমি-ই তুমি

কল্পনার এক তোমার সাথে কত যে ব্যালে নাচ নেচে যাই আমি !
আঙ্গুলে আঙ্গুলে ছোঁয়া লাগা মুদ্রা আমায় মাতাল করে দেয়।
আমার এক হাত হয়ে যাই আমি, অপর হাত তুমি।
আমি অনামিকা যেন কথা কই তুমি তর্জনীর সঙ্গে।
তোমার বৃদ্ধাঙ্গুলে রাজটিকা পড়ি আমি আমার করতলের চন্দনে।
মাঝে মাঝে বিদেশী ব্যালের সাথে প্রতিবেশী ভরত মিশিয়ে দেই অজান্তে।
নিজেই মাথার দুপাশে তুমি সূর্য আমি চন্দ্র হয়ে যাই।
পরক্ষনেই আবার পিরিতি বেড়ে গেলে তুমি এলিয়েন হয়ে যাও।
এসব কলার একপর্যায়ে আমার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
তোমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার ভিনগ্রহী এক স্বপ্ন নিয়ে
আমি পৃথিবীর বুকে নেমে আসি।
বধির আমি পৃথিবীর কিছুই শুনতে পাইনা কিছুটা সময়।
নিশ্চুপ নিরিবিলি তোমার আমার মাতাল করা তালের কাছে
তখন সবকিছু বেতাল মনে হয়।
দ্বিতীয় দীর্ঘশ্বাসে শ্রবন সচল হলে,
কল্পনার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি-ই তুমি।

বিঃদ্রঃ- আগের লেখা যাই আমি !
আঙ্গুলে আঙ্গুলে ছোঁয়া লাগা মুদ্রা আমায় মাতাল করে দেয়।
আমার এক হাত হয়ে যাই আমি, অপর হাত তুমি।
আমি অনামিকা যেন কথা কই তুমি তর্জনীর সঙ্গে।
তোমার বৃদ্ধাঙ্গুলে রাজটিকা পড়ি আমি আমার করতলের চন্দনে।
মাঝে মাঝে বিদেশী ব্যালের সাথে প্রতিবেশী ভরত মিশিয়ে দেই অজান্তে।
নিজেই মাথার দুপাশে তুমি সূর্য আমি চন্দ্র হয়ে যাই।
পরক্ষনেই আবার পিরিতি বেড়ে গেলে তুমি এলিয়েন হয়ে যাও।
এসব কলার একপর্যায়ে আমার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
তোমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার ভিনগ্রহী এক স্বপ্ন নিয়ে
আমি পৃথিবীর বুকে নেমে আসি।
বধির আমি পৃথিবীর কিছুই শুনতে পাইনা কিছুটা সময়।
নিশ্চুপ নিরিবিলি তোমার আমার মাতাল করা তালের কাছে
তখন সবকিছু বেতাল মনে হয়।
দ্বিতীয় দীর্ঘশ্বাসে শ্রবন সচল হলে,
কল্পনার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি-ই তুমি।

-----
পুনশ্চঃ ছবি এবং লেখা লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।


কবিতা : তোকে নিয়ে প্রেম | দেবযানী কথাসব

দেবযানী কথাসব


চল প্রেম ,তোকে নিয়ে পাতুরি 
বানাই, ধিমে আঁচে 
তপ্ত তাওয়াই সেঁকে, 
কিছুটা পুড়িয়ে ।

চল যমুনার জলে করি উদ্দাম-
ঢেউ সাগর জল কেলি 
যত রাখালের সাথে

গোকুলের অলিতে গলিতে নষ্টামি 
ধর্ম সমাজ ট্যাবুজ  শিকল  ধাস্টামি
ঘুঙুরে উড়িয়ে 

চল যাই কানহাইয়ার বাড়ি 
রুক্মিণী বৌ তার, বেগুন ভর্তায় 
লাল চুড়ি হাত
গরুরা জাবর কাটে
যদি ধর্মের চাকা আবারো 
ঘোরে।

তোকে নিয়ে হাডুডুডূ খেলি
রক্ত রাঙা শিশুর শরীর চোলি
থ্রিসাম ফোর্থসাম অ'সাম খেলা
ব্যাপক শুরু হবে

ঘামে ভেজা শরীর সিমেন চুমু
জাতীয় গান গাবে।

তোকে নিয়ে বিহারের হাটে
দেখি শেফালি কেমনে বিকোয় 
মাংসের কারবারি সব আসে পাশে 
ওৎ  পেতে রয় 

চল ঘুরে আসি শ্মশানের ঘাটে
কত শত লাল বেনারসি চোলি 
নববধূ মুখ 
অনাগত স্বপ্নের ছাই
পুড়ে যাওয়া সুখ
ডাঁই হতে থাকে ।

ইসকন টিসকন যাই 
মাথা চুল মুড়িয়ে  টুড়িয়ে ফেলি

কিংবা ধরমশালা গিয়ে 
দলাই লামার সাথে চলি।

তোকে নিয়ে আরো কয়েকটা 
রামায়ণ  মহাভারত বা ট্রয়ের যুদ্ধ 
হওয়া চায়
ক্লিওপেট্রার সম্মানে 

কামান বারুদে শুধু ফুল, রঙঝুরি 
আলো
এবার ভালবাসায় 

অনেক ঘৃণার লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে
একটা ভালোবাসার যুদ্ধের 
অপেক্ষায়। আমি ।


-----

পুনশ্চঃ ছবি ও লেখা লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।