This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

এককাপ চা | কাজী শফিকুর রহমান

কাজী শফিকুর রহমান


সোনালি অতীতের অনেক কথাই মনে পড়ে। মন চায় সেই অতীতে ফিরে যাই।চাই আগের মতো সবার সাথে জম্পেশ আড্ডা মারতে। কিন্তু তা তো হবার নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তেমনি একটি ঘটনা ----

দিনক্ষণ মনে নেই। সম্ভবত ১৯৮৮ সাল হবে তখন। এক বন্ধুর হলে গেলাম। অনেক কথাবার্তা হলো। উঠে আসবো তখনি বলল
 -যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা। 
 - ধন্যবাদ বন্ধু ,আরেকদিন এসে খেয়ে যাবো। আজ তাড়া আছে। 
- ঠিক আছে, যা তাহলে। 

এরপর কয়েকদিন কেটে গেলে।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতাম। সেই হলে অর্থনীতি বিভাগের ব্যাচমেট রোজের কাছে একদিন অন্য হলের একজন বন্ধু এলো। সেসময়ে আমিও ছিলাম। বন্ধুটির যাবার সময় রোজ বললো - দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।বন্ধুটি ধন্যবাদ দিয়ে চা পান না করে চলে গেল।

রুমে এসে ভাবলাম - অনেকক্ষণ তো ছিল সে বন্ধুটি। তবে শুরুতে  আমন্ত্রণ না করে কেন যাবার সময় করলো? ওরে বাবা! এবার বুঝলাম। এরপর যদি কোনদিন কেহ আমাকে বলে তবেই বুঝবে।

প্রচণ্ড রোদফাঁটা এক দুপুরে তৃষ্ণা আর খুদার জ্বালায় অস্তির হয়ে হলে ফিরছি। তার আগে বাস স্ট্যান্ডে আমাদের শহুরে ললনাদের দেখতে ভুল করি নাই। অডিটোরিয়ামের পাশ দিয়ে একাই ফিরছি। একটু চিপায় রোজের মতো একজনকে মনে হলো। একটু একটু করে পা ফেলছি আর রোজ আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। আরেকটু কাছে আসতেই কড়া ইন্ডিয়ান পারফিউমের গণ্ড নাকে আসলো। পায়ে হেভি কেডস, সিঙ্গাপুরের জিনস, থাইল্যান্ডের গেঞ্জি আর গলায় সোনার চেন পরে মাঞ্জা মারছেন আমাদের হবু অর্থনীতিবিদ রোজ সাহেব। মনে হচ্ছে হট নায়ক অনিল কাপুর।আমি কাছে আসতেই ব্রিটিশ ’৫৫৫’ প্যাকেট বের করে চুলগুলোতে একটা ঝাঁকি মেরে রজনী কান্তের মতো একটা সিগারেট উপরে ছুঁড়ে মেরে সেটি মাটিতে পড়ার আগে ক্ষিপ্র গতিতে দুই ঠোঠের মধ্যে নিয়ে স্টাইল মেরে সিগারেটটি ধরাল। সিগারেটটি ধরার পর প্যাকেটটি একটু দূরে ছুড়ে মারল।  আরে এ তো সেই রোজ! যে কিনা হলে আলু ভর্তা কিংবা কোন কোন দিন এক আধতা ডিম ভেজে কোনমতে খাবার খায়। খাওয়ার পর নাসির বিড়ি ফুঁকিয়ে অর্থনীতিবিদগিরী দেখায় আর বাহিরে এত উদার হস্ত। আর দু পা এগোতেই এক অতীব সুন্দরি এক ললনার মুখ দেখা গেল। 

ওদের দেখে ভাবছি কথা বলব কি না। ভাবনা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাবার আগে রোজ বলে উঠল – কি রে হলে যাচ্ছিস?
মনে মনে বললাম –হলে না গিয়ে  এই ভর দুপুরে কোন ললনার সাথে ধুতরা ফুলের সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলব নাকি! কিন্তু তা না বলে বললাম – হাঁ রে যাচ্ছি তো হলে। তুই কখন ফিরবি?
- ওকে হলে দিয়ে একটু পরে ফিরব।
- কে উনি? উনার সাথে কার যেন একটু মিল খুঁজে পাচ্ছি। 
 বলার সাথে সাথে রোজের চোখেমুখে আত্মতৃপ্তির ভাব লক্ষ্য করলাম। সে বলে উঠল -কার সাথে মিল রে? জানো, ও না খুব সহজ সরল। নিশ্চয় রংপুরে মফিজের নাম শুনেছো। ওকে দেখলে তোমাকে আর মফিজ দেখতে হবে না। 

শালা আমাকে মফিজ বলে। আজ বুঝবি মফিজ কাকে বলে, কত প্রকার  ও কি কি। 
কিন্তু বিরক্তির ভাব চোখেমুখে ফুটে না তুলে বরং একটু চিন্তিত ভাব নিয়ে বললাম – মোহিনীর সাথে।
- মোহিনী! মানে?
- কি রে খালি তো সারাক্ষণ আড্ডা মারিস, আর যখন মোহিনীর নাম শুনিস তখন তো প্রায় লাফিয়ে উঠিস? 
সঙ্গের সাথী সেই ললনা রাগত কণ্ঠে বলে উঠল – কে ভাই মোহিনী? আর ওর সাথে কি সম্পর্ক?
ললনার প্রশ্ন শুনে বুঝলাম , আজ আমার ভাগ্য সুপ্রসন্ন। বললাম – আরে এ মোহিনী সেই মোহিনী নয়। আপনি যা ভাবছেন তা নয়।তেজাব ছবিতে মাধুরী দীক্ষিত 'মোহিনী' চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কি রে রোজ তুই সহ আমরা অনেকে তো 'তেজাব' দেখেছি । মোহিনী চরিত্রের কথা ভুলে গেছিস! নিশ্চয় এর সাথে সাথে এক দো তিন নাচের কথাও মনে নেই? 

আমার বলার সাথে সাথে রোজের ভয়ার্ত ভাব কেটে গিয়ে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। আর মোহিনী ম্যাডামের মুখে লজ্জা রাঙানো পূর্ণিমা চাঁদ দেখা গেল। মোহিনী বলে উঠল – কি যে বলেন ভাই! কোথায় মাধুরী দীক্ষিত আর কোথায় আমি! তাঁর সাথে কি আমার তুলনা চলে।
- আলবত চলে। ওরা আমাদের মতো অভাব অনটন আর দুঃখ কষ্টে থাকলে বুঝত। এক গ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে পান করতে হয় না।
- ঠিক বলেছেন ভাই। বলেই একগাদা অভাব অভিযোগের কথা বলতে লাগল। মোহিনী বলছে আর আমি আড় চোখে রোজের দিকে তাকাচ্ছি। আর ভাবছি- তুই শেষ রে রোজ! রোজের চোখমুখে বিরক্তের ভাব ফুটে উঠছে। আর আড় চোখে  ছুঁড়ে মারা প্যাকেটটির দিকে বারবার তাঁকাচ্ছে।প্রেমিকাকে বাদ দিয়ে বারবার প্যাকেটটির দিকে তাকাচ্ছে কেন চান্দু ? নিশ্চয় কিছু আছে বাপধন। প্যাকেটের দিকে এগাতেই রোজ বলে উঠল
 – আরে কী করিস?
- নারে হঠাৎ ছোট একটু লেখার দরকার পড়ল। প্যাকেটটি ছিঁড়লে লেখার কাজ হবে।
- বাদ দে তো। ফেলে দেওয়া নোংরা প্যাকেট দিয়ে কি হবে। তারচেয়ে এই নে তোর লেখার কাগজ। বলেই একটু উঠে দাঁড়িয়ে পাছার নীচে এতক্ষণ বসে থাকা প্যাডের সাদা কাগজটি আমার দিকে দিল। শালা! তোর বসে থাকা পাছার কাগজটি নোংরা হলো না হলো ওই প্যাকেটটি। নিশ্চয় ওখানে সিগারেট আছে । আমাকে নিতেই হবে। কিছু হিবিজিবি লিখে ইচ্ছাকৃত ভাবে কলমটি ফেলে দিলাম। একটু বকবক করে খুদার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে বললাম - যাই রে।
- যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

সদ্য দেখা জুদাই ছবির কথা মনে পড়ল। সেই ছবিতে জনি লিভার এক সুন্দরি মেয়ের মুখে – আব্বা জুব্বা ডাব্বা শুনে গদগদ হয়েছিল। কিন্তু জনি লিভার জানতো না সেই মেয়েটি 'আব্বা জুব্বা ডাব্বা ' ছাড়া আর কোন কথা বলতে পারতো না। যখন সে বুঝলো তখন মাথার চুল ছিড়া  ব্যতীত কিছুই করার ছিল না। আজ তোকে সেই জনি লিভার বানিয়েই ছাড়বো। আমাকে রংপুরের মফিজ বলার স্বাদ চিরতরে বন্ধ করবো। 

- খাওয়াবি চা? তাহলে খাওয়া। 
রোজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল – বাদ দে, দুপুরবেলা চা না খাওয়াই ভাল। তারচেয়ে হলে গিয়ে ভাত খা। চা এর পাওনা বিকালে মিটাবো।

শালা তুই বিকালে খাওয়াবি! তাহলে তো দুনিয়া উল্টে যাবে। মুখে এসব না বলে বললাম – ঠিক বলেছিস বন্ধু। এখন ভাত খাবার সময়। চল ভাত খাই। মোহিনী ম্যাডামের তো খুদা লেগেছে  তাই না?
- না না ভাই। এই ,তুমি না ওনাকে খাওয়াতে চাইলে তাহলে ভাইকে নিয়ে খেয়ে এসো। আমি হলে ফিরলাম।

ললনা কথা শুনে বিষম খাবার যোগাড় হলো। মনে মনে আওড়াচ্ছি - আরে মোহনী, তুমি গেলে তো আমার আর ওর কাছ থেকে খোসানো হবে না। কোনভাবে সেই অপ্সরীকে যেতে দেওয়া যাবে না। আমি বললাম – এ কি কথা বললেন! আপনি যাবেন আর আমি খাব।কখনই নয়। খেলে একসাথে খাবো।
- কোথায় খেতে চান?
-দুপুর হয়ে গেছে।কাছাকাছি কোথাও যাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হয় সেন্ট্রাল ক্যাফেটেরিয়ায়। 

সেদিন ছিল সম্ভবত সোমবার। আর সোমবারে ক্যাফেটেরিয়াতে স্পেশাল বিরিয়ানি হয়। 
বন্ধুটির চোখেমুখে ঘোর আমবশ্যা নেমে এসেছে। সেই ললনা খুব সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠল – এই চলো না।

 ক্যাফেটেরিয়ার উদ্দেশ্যে দু এক কদম পা বাড়ালাম। রোজের মেঘাচ্ছন্ন মুখটি কণে বিদায় দিবার সময় বাবা মা এর হয় যেমনটি হয় প্রায় তেমনটি হলো। অনিল কাপুর শেষবারের মতো প্যাকেটটির দিকে তাঁকাল। আরো দু কদম এগতে আমি বুক পকেটে হাত দিয়ে বললাম – এই ছেড়েছে! আমার কলমটি মনে হয় লিখতে গিয়ে ভুল করে ফেলে এসেছি। তোমরা আগাও আমি আসছি। 

বলেই দ্রুত সেখানে গিয়ে কলম আর প্যাকেটটি তুললাম। প্যাকাটিতে হাত দিয়ে বুঝলাম অন্তত চার পাঁচটা সিগারেট সেখানে আছে। দ্রুত সেটি প্যান্টের পকেটে চালান করে দিয়ে ওদের সাথে এক হলাম। রাস্তায় মোহিনীর আর একদফা প্রশংসার সাগরে ভাসালাম। মোহিনী খুব খুশিতে গদগদ হয়ে আসে। 

ক্যাফেটেরিয়ায় এসে মোহিনী বলে উঠল – কী খাবেন ভাই?
গরম বিরিয়ানির খুশবু পুরো ক্যাফেটেরিয়াময়। বললাম – বিরিয়ানি। 
রোজ রূপী অনিল কাপুর সাথেসাথে বলে উঠল – আরে বিরিয়ানি খেলে পেট খারাপ হতে  পারে, তারচেয়ে নাস্তা খাই।
- ছি ছি ! তুমি এত কিপটে। মানুষ কি আর এমনি বলে - অর্থনীতিতে যারা পড়ে তার হাড় কিপটে হয়। ছি ছি তোমার এই কিপটেমির কারণে ভাইটি কী মনে করবেন। 

মোহিনীর রাগ দেখে রোজ নাকি সুরে তিন প্লেট বিরিয়ানির অর্ডার করল। যথাসময়ে বিরিয়ানি চলে এলো। এবার আমি খুব আয়েসের ভঙ্গিতে বিরিয়ানি চিবচ্ছি আর তাদের দুজনার প্রশংসা করে চলছি। আর রোজের কালিমাখা মুখ দেখে মনে মনে বললাম – আজ বেচারা কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে। তা না হলে কি এই বাঁদরের সাথে দেখা হয়! 

খাওয়া শেষে রোজকে বললাম – দোস্ত অনেকদিন পর আজ না যোশ করে খেলাম। সিগারেট চা খাওয়াবি না।
রাগ করে বলল- না। এত বেশি চা চা করিস না তো। যা ভাগ।

মোহিনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে সেই প্যাকেটটি খুলে একটা সিগারেট বের করে ভাবলাম – রোজ কি আমাকে দেখে আর কখনো  বলবে না  -দোস্ত যাবি তাহলে! এককাপ চা অন্তত খেয়ে যা।

লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সেই সংগে রহিল ঈদ মোবারক। সাথে রহিল চায়ের আমন্ত্রণ। কী ভাবছেন, আপনারা উঠার সময়  বলবো - যাবেন, এক কাপ চা পান করে অন্তত যান। আরে না, আপনারা বসার সাথে সাথে এক কাপ ধূমায়িত চা পাবেন। ভাল থাকুন। বাঁচতে হলে প্রাণ খুলে হাসুন।


পুনশ্চঃ 
লেখা এবং ছবি লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।

মূল্যায়নের আশায় থেকো না | বব ডিলান

বব ডিলান



বব ডিলান ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম শিল্পী। কনসার্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে। বব ডিলানের জন্ম ১৯৪১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায়। বিগত পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে তাঁর অবদানে সমৃদ্ধ হয়েছে সংগীতজগৎ। গ্র্যামি, গোল্ডেন গ্লোব, অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পুলিৎজারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বব ডিলান টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বিংশ শতাব্দীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের অন্যতম। সূত্র: ওয়েবসাইট. ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে স্কট কোহেনকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ অনুবাদ করেছেন অঞ্জলি সরকার 

অনেকেই আমার সাক্ষাৎকার নিতে চায়। কিন্তু আমি যদি পারতাম, তাহলে সেই সব মানুষের সাক্ষাৎকার নিতাম, যারা আজ বেঁচে নেই, কিন্তু ফেলে রেখে গেছেন অনেক অসমাপ্ত কাহিনি, জন্ম দিয়েছেন অনেক প্রশ্নের। হ্যাঙ্ক উইলিয়ামস, মেরিলিন মনরো, জন এফ কেনেডি, এমন আরও অনেকে, যাঁদের জীবন মানুষকে এখনো ভাবিয়ে তোলে। কোটিপতিদের জীবন আমাকে আকৃষ্ট করে না। আমি জানি না, টাকার পাহাড় জীবনে কী-ই বা দিতে পারে। যাঁদের কাজ আমার পছন্দ হয়, আমি সেই কাজগুলোকে শ্রদ্ধা করেই খুশি থাকি। 

আমার মনে হয়, একজন গীতিকারের সবচেয়ে অসাধারণ গানগুলো পুরোপুরি তাঁর কল্পনার জগৎ থেকে আসে, যা তিনি বাস্তবে কখনো ছুঁয়ে দেখেননি। এ যেন এক অন্য রকম মুক্তি! যদিও নিজের বেলায় এমনটা করা সাধারণত হয়ে ওঠে না। বেশির ভাগ সময় চারপাশে যা ঘটে চলেছে, সেটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। কলেজের পড়াশোনার পাট আমার প্রথম বছরেই চুকে গিয়েছিল। লেখালেখি কিংবা সাহিত্য নিয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আমি শুধু আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াই। আমি জানি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আমার অনেক জানাশোনা থাকার কথা, কিন্তু সত্যিটা তার বিপরীত। আমি এসব নিয়ে তেমন কিছুই জানি না। আমি লিখতে শুরু করেছিলাম কারণ, আমি গান গাইতাম। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল আমার জন্য। সবকিছু তখন খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছিল আর আমার কেবলই মনে হতো, কোনো একটি ব্যাপার নিয়ে গান থাকা উচিত। কারও না কারও সেই গানটি লেখা উচিত। তখন আমিই সেই গান লিখতে শুরু করে দিলাম। কারণ, আমি তা গাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম। আমার আগেই যদি সেসব গান কেউ লিখে ফেলত, তাহলে আমি আর গান লেখা শুরু করতাম না। 

এভাবেই জীবনে একটি ঘটনা আরেকটি ঘটনার জন্ম দেয়। আমিও নিজের মতো গান লিখতে থাকি। এসবের কোনোটাই আমি খুব গুছিয়ে কিংবা পরিকল্পনা করে করিনি। কবিতার বেলায়ও ঠিক তাই। হাইস্কুলের চৌকাঠ পেরোনোর আগে আমি কখনো কবিতা লিখিনি। 

আমার বয়স যখন ১৮, তখন আমার হাতে এসে পড়ে গিন্সবার্গ, গ্যারি সিন্ডার, ফিলিপ হোয়ালেনের লেখা। তারপর আমি ফরাসি সাহিত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ি, কবিতায় সুর বসাতে থাকি। তখনকার দিনে ফোক মিউজিক আর জ্যাজ ক্লাবের দারুণ চল ছিল, সেখানে কবিরা গানের সঙ্গে তাঁদের কবিতাও পড়ে শোনাতেন। আমার মনে বইয়ের পাতায় আটকে থাকা কবিতার চেয়ে কবির কণ্ঠে সেই প্রাণবন্ত কবিতা অনেক বেশি প্রভাব ফেলেছিল। 

১৯৬১ সালে আমি একের পর এক ফোক মিউজিক কোম্পানির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হই। ফোকওয়েজ, ট্র্যাডিশন, প্রেস্টিজ, ভ্যানগার্ড—এরা সবাই আমাকে ফিরিয়ে দেয়। তারপর আমি কলাম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করি। সেটা ছিল আমার জন্য একটি বিরাট ঘটনা। এভাবেই হয়তো আপাতদৃষ্টিতে যাকে ব্যর্থতা মনে হয়, নিজের অজান্তে সেটি ভবিষ্যতের সাফল্য বয়ে আনে। তখন আমি যদি সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ফোক মিউজিকের চুক্তি করতাম, তাহলে আমার সবকিছুই অন্য রকমভাবে হতো। মনে হয় না তাদের সঙ্গে আমার বেশি দিন থাকা হতো। মজার ব্যাপার হলো, তাদের অনেকের ব্যবসাই এখন উঠে গেছে! 

১৯৬৬ সালে আমার খুব খারাপ ধরনের একটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। আমার মেরুদণ্ডের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায় আর আমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ি। আমার ক্যারিয়ার যেভাবে এগিয়ে চলছিল, তাতে বেশ ভালোভাবেই ছেদ পড়ে। কিন্তু একই সঙ্গে এই দুর্ঘটনা জীবনের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে দেয়, আমি নতুন করে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। এখন আমার মনে হয় সেই দুর্ঘটনা আমার জীবনে আশীর্বাদই বয়ে এনেছিল! 

আমার ছোটবেলা কেটেছে দাদির কাছে। দারুণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি, এখনো খুব মনে পড়ে তাঁকে। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে বড় হতে হয়েছে আমাকে। এমনকি কিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছি, ভবিষ্যতে কী হবে তাও সব সময় পরিষ্কার ছিল না। আমার একাকিত্বই আমাকে শক্তি জোগাত। কারণ, আমার জীবনকে আমি সম্পূর্ণ নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলাম আর যা চাইতাম, ঠিক তা-ই করতাম। মিনেসোটার উত্তরে আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে আমার জীবনের অনেকখানি মিশে আছে। আমি জানি না, আমার জীবনটা কেমন হতো যদি আমি ইথিওপিয়া কিংবা দক্ষিণ আমেরিকায় বেড়ে উঠতাম। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নিলেও আমি হয়তো সম্পূর্ণ অন্য এক মানুষে পরিণত হতাম। আমার মনে হয়, পরিবেশের এই প্রভাবটা সবার বেলায়ই সত্যি। 

যখন কেউ নতুন কিছু করে, পরিবর্তনের কথা বলে, তখন অধিকাংশ সময়ই তার পরিচিত মানুষেরা বা নিজের দেশের লোকেরা তার যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারে না। স্বদেশে সে হয়তো উপহাসের পাত্র হয়, কিন্তু দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের লোকেরা ঠিকই তার কদর বুঝতে পারে। গৌতম বুদ্ধের কথাই ধরা যাক, তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের সম্পদ। এখন বৌদ্ধধর্ম সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করেছে কোথায়? চীন, জাপানসহ এশিয়ার অন্য প্রান্তে। তবে হ্যাঁ, সত্যকে প্রথম প্রথম কেউই মেনে নিতে না চাইলেও একসময় তা নিজগুণেই প্রকাশিত হয়। তত দিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতাও গড়ে ওঠে। আপনা-আপনিই তখন লোকে সেই আদর্শে চলতে থাকে, যে আদর্শকে তারাই একদিন তাচ্ছিল্য করেছিল। 

লোকে তোমার নামে অনেক কিছুই বলতে পারে। গণমাধ্যম অনেক গল্পই বানাতে পারে তোমাকে নিয়ে। এখনকার দিনে কোনো কিছু গণমাধ্যমে না আসার অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার আদৌ কোনো অস্তিত্বই নেই! সবকিছুই যেন ব্যবসা; ভালোবাসা, সত্য, সৌন্দর্য—সব। মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনও আজ বাণিজ্যের উপকরণ। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার কাছে এসবের কোনো কিছুই টিকবে না। তুমি নিজেকে কী মনে করো, তোমার কত বড় উপাধি আছে, এসব তাঁর কাছে অর্থহীন। তিনি কখনো মানুষকে সম্পদ কিংবা পেশা দিয়ে বিবেচনা করবেন না। তিনি বলবেন না এ একজন কোটিপতি, ও একজন চিকিৎসক, সে একজন খেটে খাওয়া মানুষ। 

এখন পৃথিবীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে গেছে। ষাটের দশকে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করত, তাদের অধ্যাপকেরা ছিলেন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। তাঁদের দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে শিক্ষার্থীরা পথে ছড়িয়ে পড়ত। আমি রাজনীতি নিয়ে যা জেনেছি, শিখেছি, সবই এসেছে পথে নামা সেই মানুষগুলোর কাছ থেকে। তখনকার পরিবেশটাই ছিল অন্য রকম। এখন সবাই অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, যে যার ঘর গোছাতে ব্যস্ত। একতা বলতে যেন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। তখনকার দিনে এত বিভেদ ছিল না। আজকের সঙ্গে সেদিনের তুলনা করতে গেলে মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদটাই আমার চোখে সবার আগে ধরা পড়ে। 

সময় তার নিজের নিয়মে বয়ে চলছে। সবকিছুই বদলে যাচ্ছে প্রতিদিন, একটু একটু করে। আমি নিজের চলার গতি কমিয়ে দিয়েছি, কিন্তু বাকি সবকিছুই বড় বেশি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আমি যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম, আমি শিশুর মতো ভাবতাম। যখন বড় হলাম, আমি সেই শিশুসুলভ ভাবনাগুলোকে সরিয়ে রেখে দিলাম। আমি একটা ব্যাপার কখনোই বুঝতে পারি না, আর তা হলো মানুষ উদ্ধত হয় কেন? কেন মানুষ অহংকারী হয়ে ওঠে? লোকে এমনভাবে কথা বলে, চলাফেরা করে, জীবন কাটায় যেন অনন্তকাল ধরে তারা এভাবেই বেঁচে থাকবে। যেন মৃত্যু তাদের কখনো স্পর্শ করবে না। সবচেয়ে বড় সত্যিটাকেই তারা এভাবে অস্বীকার করে। আর মৃত্যুর পর তারা পৃথিবীতে কী রেখে যায়? ছেড়ে যাওয়া খোলসের মতো একটা শরীর আর কিছুই না।

আমি-ই তুমি | নাহার কৃপা

নাহার কৃপা

কল্পনার এক তোমার সাথে কত যে ব্যালে নাচ নেচেআমি-ই তুমি

কল্পনার এক তোমার সাথে কত যে ব্যালে নাচ নেচে যাই আমি !
আঙ্গুলে আঙ্গুলে ছোঁয়া লাগা মুদ্রা আমায় মাতাল করে দেয়।
আমার এক হাত হয়ে যাই আমি, অপর হাত তুমি।
আমি অনামিকা যেন কথা কই তুমি তর্জনীর সঙ্গে।
তোমার বৃদ্ধাঙ্গুলে রাজটিকা পড়ি আমি আমার করতলের চন্দনে।
মাঝে মাঝে বিদেশী ব্যালের সাথে প্রতিবেশী ভরত মিশিয়ে দেই অজান্তে।
নিজেই মাথার দুপাশে তুমি সূর্য আমি চন্দ্র হয়ে যাই।
পরক্ষনেই আবার পিরিতি বেড়ে গেলে তুমি এলিয়েন হয়ে যাও।
এসব কলার একপর্যায়ে আমার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
তোমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার ভিনগ্রহী এক স্বপ্ন নিয়ে
আমি পৃথিবীর বুকে নেমে আসি।
বধির আমি পৃথিবীর কিছুই শুনতে পাইনা কিছুটা সময়।
নিশ্চুপ নিরিবিলি তোমার আমার মাতাল করা তালের কাছে
তখন সবকিছু বেতাল মনে হয়।
দ্বিতীয় দীর্ঘশ্বাসে শ্রবন সচল হলে,
কল্পনার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি-ই তুমি।

বিঃদ্রঃ- আগের লেখা যাই আমি !
আঙ্গুলে আঙ্গুলে ছোঁয়া লাগা মুদ্রা আমায় মাতাল করে দেয়।
আমার এক হাত হয়ে যাই আমি, অপর হাত তুমি।
আমি অনামিকা যেন কথা কই তুমি তর্জনীর সঙ্গে।
তোমার বৃদ্ধাঙ্গুলে রাজটিকা পড়ি আমি আমার করতলের চন্দনে।
মাঝে মাঝে বিদেশী ব্যালের সাথে প্রতিবেশী ভরত মিশিয়ে দেই অজান্তে।
নিজেই মাথার দুপাশে তুমি সূর্য আমি চন্দ্র হয়ে যাই।
পরক্ষনেই আবার পিরিতি বেড়ে গেলে তুমি এলিয়েন হয়ে যাও।
এসব কলার একপর্যায়ে আমার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।
তোমাকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার ভিনগ্রহী এক স্বপ্ন নিয়ে
আমি পৃথিবীর বুকে নেমে আসি।
বধির আমি পৃথিবীর কিছুই শুনতে পাইনা কিছুটা সময়।
নিশ্চুপ নিরিবিলি তোমার আমার মাতাল করা তালের কাছে
তখন সবকিছু বেতাল মনে হয়।
দ্বিতীয় দীর্ঘশ্বাসে শ্রবন সচল হলে,
কল্পনার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি-ই তুমি।

-----
পুনশ্চঃ ছবি এবং লেখা লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।


কবিতা : তোকে নিয়ে প্রেম | দেবযানী কথাসব

দেবযানী কথাসব


চল প্রেম ,তোকে নিয়ে পাতুরি 
বানাই, ধিমে আঁচে 
তপ্ত তাওয়াই সেঁকে, 
কিছুটা পুড়িয়ে ।

চল যমুনার জলে করি উদ্দাম-
ঢেউ সাগর জল কেলি 
যত রাখালের সাথে

গোকুলের অলিতে গলিতে নষ্টামি 
ধর্ম সমাজ ট্যাবুজ  শিকল  ধাস্টামি
ঘুঙুরে উড়িয়ে 

চল যাই কানহাইয়ার বাড়ি 
রুক্মিণী বৌ তার, বেগুন ভর্তায় 
লাল চুড়ি হাত
গরুরা জাবর কাটে
যদি ধর্মের চাকা আবারো 
ঘোরে।

তোকে নিয়ে হাডুডুডূ খেলি
রক্ত রাঙা শিশুর শরীর চোলি
থ্রিসাম ফোর্থসাম অ'সাম খেলা
ব্যাপক শুরু হবে

ঘামে ভেজা শরীর সিমেন চুমু
জাতীয় গান গাবে।

তোকে নিয়ে বিহারের হাটে
দেখি শেফালি কেমনে বিকোয় 
মাংসের কারবারি সব আসে পাশে 
ওৎ  পেতে রয় 

চল ঘুরে আসি শ্মশানের ঘাটে
কত শত লাল বেনারসি চোলি 
নববধূ মুখ 
অনাগত স্বপ্নের ছাই
পুড়ে যাওয়া সুখ
ডাঁই হতে থাকে ।

ইসকন টিসকন যাই 
মাথা চুল মুড়িয়ে  টুড়িয়ে ফেলি

কিংবা ধরমশালা গিয়ে 
দলাই লামার সাথে চলি।

তোকে নিয়ে আরো কয়েকটা 
রামায়ণ  মহাভারত বা ট্রয়ের যুদ্ধ 
হওয়া চায়
ক্লিওপেট্রার সম্মানে 

কামান বারুদে শুধু ফুল, রঙঝুরি 
আলো
এবার ভালবাসায় 

অনেক ঘৃণার লড়াইয়ে ক্লান্ত হয়ে
একটা ভালোবাসার যুদ্ধের 
অপেক্ষায়। আমি ।


-----

পুনশ্চঃ ছবি ও লেখা লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।

কুড়িগ্রামের হীরকখণ্ড সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার কোহিনূর রহমান | আব্দুল কাইয়ুম রন্জু

জাতীয় দলের ফুটবলার কোহিনূর রহমান




ভারত উপমহাদেশ থেকে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া মূল্যবান হীরকখন্ড কোহিনূর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দখলে গেলেও  ৭০ দশকে এসে কোহিনূর নামের এক মুল্যবান মানব সম্পদের দেখা মেলে উত্তরের অবহেলিত জনপদ কুড়িগ্রামের মোল্লা পাড়ায় ।বাবা জনাব আব্দুল খালেক এবং মা বেগম শামসুন নাহারের চতুর্থ পুত্র হয়ে এ পৃথিবীতে আগমন কোহিনূর রহমানের । সেসময় বাবা-চাচারা কুড়িগ্রামের অত্র অঞ্চলে ফুটবল শাসন করতো । তাঁদের দেখানো পথে একজন কোহিনূর রহমানের সৃষ্টি কুড়িগ্রামে ।                   

তখন ফুটবলের স্বর্ণযুগ । এমনই সময় কোহিনূর একটু একটু আলো ছড়াতে শুরু করলো কুড়িগ্রামের ফুটবলের সূতিকাগার খ্যাত মোল্লাপাড়ায়। বাড়ির সামনে বিস্তর গওহরপার্ক মাঠ । সেই মাঠেই সকাল-বিকেল অনুশীলন। একজন বিখ্যাত ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন চোখে মুখে । মূলত কোহিনুরের ফুটবলে হাতেখড়ি কুড়িগ্রাম পুরাতন শহরের রিভার ভিউ হাই স্কুলে। খুব অল্প বয়স থেকে তাঁর নৈপুণ্যের দ্যুতি ছড়াতে থাকে দেশের ফুটবল অঙ্গনে । ঢাকা ,খুলনা ,রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার লীগে ও টুর্নামেন্টে নজর কাড়া পারফর্মেন্স ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগের দল সাধারণ বীমায় খেলার সুযোগ করে দেয় । পরের বছর শান্তিনগরের হয়ে আগাখান গোল্ড কাপে অংশগ্রহণ করেন । থাইল্যান্ডের রাজবিথী ক্লাবের বিপক্ষে দ্রুত গতিতে গোল করে কোহিনূর প্রশংসা কুড়ান । ১৯৭৭ খ্রিঃ তিনি ঢাকা প্রথম বিভাগের নামীদল ওয়াপদার হয়ে আগাখান গোল্ড কাপে সুনাম অর্জন করেন । ১৯৭৮ খ্রিঃ ঢাকা প্রথম বিভাগ লীগে ওয়াপদার হয়ে ৮টি গোল করেন । দিলকুশার বিরুদ্ধে একটি ম্যাচে হ্যাট্রিক করেন । ১৯৭৮ খ্রিঃ শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে টাঙ্গাইলের বিরুদ্ধে জয়সুচক গোল করে রংপুর জেলা দলকে ফাইনালে তুলে নিয়ে আসার পিছনে কোহিনূরের অনবদ্য অবদান আজও অম্লান স্মৃতি হয়ে আছে।

১৯৭৯ খ্রিঃ কুড়িগ্রামের গর্ব কোহিনুব্র রহমান এ দেশের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব ঢাকা মোহামেডানের সাদাকালো জার্সি গায়ে জড়ান । ক্ষিপ্ত গতি সম্পন্ন এই রাইট উইঙ্গার সেই মৌসুমে লীগের প্রথম খেলায় ধানমন্ডি ক্লাবের বিরুদ্ধে জয়সুচক গোলটি করেন। ১৯৮২ খ্রিঃ লীগের শেষ খেলায় লীগ চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর বিপক্ষে গোল করেন । সে বছর ঢাকা লীগে মোহামেডানের কৃতি স্টাইকার সালাম মুর্শেদি ২৭টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার রেকর্ড অর্জন করেন যা অদ্যাবধি কেউ ভাঙ্গতে পারেনি। সালাম মুর্শেদির এই সর্বোচ্চ  গোলদাতার পিছনে কোহিনূর অসামান্য অবদান রাখেন। সে মৌসুমে মোহামেডান লীগ চ্যাম্পিয়ন হয় ।

১৯৮৩খ্রিঃ মারাত্মক ইনজুরিতে পড়ে কোহিনূরের ফুটবল ক্যারিয়ারে ছন্দপতন হয়। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে ১৯৮৫ খ্রিঃ  পর্যন্ত কোহিনূর ঢাকা প্রথম বিভাগ লীগে কখনো ঢাকা ওয়ান্ডারর্স বা অন্য কোন দলের হয়ে খেলেন । ১৯৮৬ শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে কুড়িগ্রাম জেলা দলকে সেমিফাইনালে উঠার পিছনে কোহিনূর বিশেষ ভুমিকা রাখেন। সে বছরই তিনি ফুটবলের জগত থেকে অবসর নিয়ে অ্যামেরিকায় পরিবার পরিজনসহ স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।       

এ দেশের ফুটবলের ইতিহাসে কোহিনূরের উল্লেখযোগ্য সাফল্যঃ--

ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান দলের সদস্য ১৯৮০,১৯৮১,১৯৮২

লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান ক্লাবের সদস্য ১৯৮০.১৯৮২

বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসাবে ঢাকা মোহামেডান ভারতের দুর্গাপুরে আশীষ-

জব্বার স্মৃতি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তিনি সে দলের সদস্য ছিলেন।

জাতীয় দলের হয়ে সবুজ দলের পক্ষে ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৮১ খ্রিঃ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানে কায়েদা আজম ট্রফি খেলেন ।

১৯৮২ দিল্লীতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন ।

সোনালী অতীতে কোহিনূর রহমান ঃ-   

সত্তর-আশি দশকে দেশব্যাপী ফুটবলের মাতম । ফুটবল জোয়ারে ভাসছি আমরা। ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের পয়েন্ট টেবিল আমাদের হাতের গনায়। রেডিও টিভিতে চোখ কান পেতে থাকি । দৈনিক বাসি পত্রিকায় খেলার পাতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করি । পাক্ষিক ক্রীড়া জগতের খোঁজে এদিক ওদিক চেয়ে থাকি । গোটা দেশ দুটো শিবিরে বিভক্ত । একদিকে ঐতিহ্যের প্রতীক ঢাকা মোহামেডান আর অন্যদিকে আধুনিকতার প্রতীক আবাহনী ক্রীড়া চক্র। এখন যেমন বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় ছেয়ে যায় দেশ ঠিক তখন আবাহনী-মোহামেডানের খেলায় সাদা-কাল আকাশী-হলুদ পতাকায় ছেয়ে যায় সারা দেশ । আমি আবাহনীর মেঝভাই জালাল হোসেন লাইজু মোহামেডানের । এক বাড়িতে দুই দলের পতাকা নিয়ে টানাটানি। সেই ফুটবলের ক্রেজে কুড়িগ্রামের একজন কোহিনুর ঢাকা মোহামেডানে খেলছে চোখ মন গর্বে ভোরে যায় ।কখন যে সমর্থন দূর্বার ছুটে চলা কোহিনূর ভাইয়ের পায়ের কারুকাজে মিশে যায় বুঝাই যায় না । ভিতর থেকে মনটা বলে উঠে আবাহনী জিতুক তবে কোহিনূরভাই গোল দিক।

কোহিনূর পাগল আমার মেঝভাই তার পুরো রুমটা কোহিনূরভাইয়ের ছবির পেপার কাটিংএ ভেসে দিয়েছে। রুমের দেওয়ালে চোখ পাততেই ১১ নম্বর জার্সির ছড়াছড়ি । তখন ঢাকা মোহামেডানে ১১ নম্বর জার্সিতে রাইট উইঙ্গার হিসেবে কোহিনুরভাই আর ১২ নম্বর জার্সিতে লেফট উইঙ্গার হিসেবে গাফফার বল নিয়ে ছুটে চলায় স্টাইকার সালাম গোলের বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। কোহিনূর ভাইয়ের পায়ে বল আর পূর্ব গ্যালারী থেকে হটপেটিস হটপেটিস বলে ভক্তদের আমুদেয় চিৎকার । আমরা অপেক্ষায় থাকি লীগ শেষে কবে কোহিনূরভাই কুড়িগ্রামে ফিরবে। আমাদের আইডল তখন কোহিনূরভাই। হবেই না বা কেন ? রোগ,শোক,অভাব অনটনের কুড়িগ্রামের তখন অহংকার করে বলার মত আর কি বা আছে !   

ক্রিকেটের সুদিনে ফুটবল ক্রেজ এখন অতীত । তবুও সার্বিক চেষ্টা চলছে ফুটবলের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার । পুরো দেশের মত কুড়িগ্রামেও চলছে বিভিন্ন কর্নার থেকে ফুটবলের উন্নয়নের নানাবিধ প্রচেষ্টা । ফুটবল হউক কুড়িগ্রামের নগরী এই আহবানে সাড়া দিয়ে সুদূর অ্যামেরিকা থেকে কোহিনূরভাই হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন । এখন প্রতিনিয়ত তার মনটা এখানেই পড়ে থাকে।

ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়াতে,এদেশের ফুটবলকে বিশ্বমানে পৌঁছাতে প্রয়োজন দ্রুত ফুটবল কাঠামোকে ঢেলে সাজানো ,সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন খাতে পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো সর্বোপরি কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে ফুটবল প্রেম হৃদয়ে ধারণ তবেই হয়তো একাধিক কোহিনূরের পায়ের আওয়াজ শুনতে পাবে কুড়িগ্রাম তথা গোটা বাংলাদেশ ।


-----
পুনশ্চঃ 
লেখা এবং ছবি লেখকের fb ID থেকে সংগৃহীত।

কবিতা : প্রেম | দেবযানী কথাসব

দেবযানী কথাসব

কবি দেবযানী কথাসব
চলো, আর একবার আমার প্রেমিক 
হয়ে যাও 
আমিও  গাছ-কোমর ধনেখালি 
পাড় শাড়ি।

আরো একবার তোমার হাসিতে
ধুয়ে যেতে যেতে ঈশ্বরী
 হয়ে যাবো
কিম্বা ধানক্ষেত ফিঙে।

এলো মেলো হয়ে যাওয়া ক্ষণ
বদলে যাওয়া আঙুল ছোঁয়া 
স্তব্ধ সময় 

আবেগ বিবাগী মন 
কবিতা শব্দের মাঝে আড়াল
পিয়াসী হলে

কামরাঙা  সকালের আলো
মাধবীলতার হাসিতে বেফাঁস ।

আর একবার মাতাল হতে 
সাগর বালি আড়ি
খুচরো ঝিনুক কিম্বা আমাদের 
স্বপ্ন বালি বাড়ি 
ভেসে যাওয়া ঢেউয়ে ।

কত কত পাহাড়ের খাঁজে 
আমাদের হাসিগুলো যতো
এখনো ঘুরে ঘুরে যায় 

তারই সাথে মিশে যাওয়া 
দীর্ঘশ্বাসে উদাসী হাওয়া,
 হয়তো ।

চলো আর একবার প্রেমিক 
হয়ে যাও
স্বপ্নদের ছুঁয়ে নেওয়া আদর 
জল রঙ
ক্যানভাসে ইচ্ছে ঘোড়ারা ছোটে
আমার উপোসী ঠোঁটে ।

ছোট ছোট কষ্ট গুলোকে যদিনা 
কষ্ট মনে হয়
ক্ষয়ে যাওয়া বিশ্বাসেরা 
ততো বড়ো ক্ষয় যদিনা মনে হয়

এখনো ঠোঁটের হাসি কনা 
কিছুটা  দামি মনে হয়
চলো, 
প্রেমিক হয়ে যাই ।।

-----
পুনশ্চঃ ছবি এবং লেখা কবির fb ID থেকে সংগৃহীত।

ঠিকানা পেল 'স্বাধীন'



অবশেষে পাগলি নাসিমার সন্তানের মা হলেন জোবেদ আলীর কন্যা মৌসুমী। মৌসুমী- মমিনুল দম্পত্তির ১০ বছরের বিবাহিত জীবনে কোন সন্তান নেই। তারা শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। তাই আজ বিকেল ৪ টায় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজ হাতে এই শিশু স্বাধীনকে মৌসুমীর কোলে তুলে দেন। এসময় তিনি ফুলবাড়ীর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার  দেবেন্দ্র নাথ ওঁরাও এর পক্ষ থেকে শিশুটির জন্য ১০০ ডলার মৌসুমীর হাতে তুলে দেন। জেলা প্রশাসক পাগলি নাসিমার সন্তান জন্মের পরে পরেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি শিশুটির নামও রেখেছিলেন 'স্বাধীন'!  শিশু ও মা পাগলির চিকিৎসার তদারকি করেছেন।

মৌসুমী- মমিনুল শিশুটির সাথে তার জন্মদাত্রী পাগলি নাসিমারও দায়িত্ব নেন।

নির্বাক কোকিল

কোকিল



সে বসন্তেই কোকিলের সুর থেমে গেল
চিরদিনের তরে যৌবনের অপমৃত্যু হল
তার সময় তার সংসার ধুলোয় লুটে গেল
দুঃখ শোকে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলো।
সে ক্ষোভে অভিমানে-
আর কোনদিন গান করলো না
বহমান কালের খেয়ায়
আর কোনদিন আনন্দে মাতলো না।
এখন, 
আগের মত তার শক্তি নেই
দেহে তারুন্যের উদ্দম নেই
চোখের চাহনিতে প্রেম নেই
তার মুক্ত আকাশ নেই, সবুজ প্রকৃতি নেই।
দুরন্ত কোকিল,
এখন শূণ্য আকাশে উড়াল দিতে ভয় পায়
ধরিত্রীর নরম সবুজ ঘাঁষে পা ফেলে চলতে ভয় পায়।
তাই সে নির্জন নিঃসঙ্গতা ভালোবাসে
আলোকে অস্থির হয়ে অন্ধ্যকার ভালোবাসে।
তার ভেতরের জ্বালা
গ্রীষ্মের দাবদাহে খেলা করে
তার শীতল অশ্রু
বর্ষার অথৈজলে মিশে চলে
হাড় কাঁপানো প্রখর শীতেও
কোকিল স্বাক্ষি শিমুলের ডালে বসে থাকে।
অতঃপর,
প্রাকৃতিক নিয়মে বসন্ত নেমে আসে
নতুন করে পৃথিবী ও প্রকৃতি সাজে 
বৃক্ষ ও তরুলতায় ফুলের মুকুল আসে
শিমুলের রক্তরাঙা ফুল ফোঁটে
মাটির বুকে উল্লাসে মেতে ওঠে মানুষ নামের অমানুষগুলো
কোকিলের ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হৃদয়ে-
ভেসে ওঠে প্রিয়সীর পবিত্র মুখ
ভেসে ওঠে বুলেটবিদ্ধ প্রিয়সীর নিথর রক্তমাখা শরীর
কানে ভেসে আসে প্রিয়সীর করুন চিৎকার...
নির্বাক কোকিলের অশ্রু গড়িয়ে চলে
সে সুখের এ অপবিত্র নগরীকে শত ধিক্কারে বিদায় জানায়
এ বসন্তেই উড়াল দেয় দুঃখের নগরীতে।
-----
কবিতাঃ নির্বাক কোকিল
কবিঃ আনু ইসলাম

হে সব্যসাচী

আনু ইসলাম


শতরুপা রুপে অপরুপা
হেথা প্রিয়তমা ধরলার বক্ষে পলির রঙ্গ,
ভরা যৌবনে প্রবাহমান
চির ক্ষরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রের উত্তাল তরঙ্গ।
নিরুদ্দেশের উদ্দেশে ছুটে
নিয়ত আসতে স্মৃতি ঘেরা বাহের দেশে,
বজ্রকণ্ঠত জনসমুদ্রে
'মঙ্গা নয় চাঙ্গার দেশ' রটিলে স্ব-বেশে।
প্রত্যুষ রবি- রাতের চন্দ্র
নীলাম্বর-নীলাচল-মিষ্ট পবন সঙ্গ,
হে কবি- হে সব্যসাচী
সর্বকাল ধরে তোমাতে বিস্মিত বঙ্গ।
জন্ম ধন্য হে- গর্বিত মোরা
কুড়িগ্রামের মাটিতে প্রথম ডেকেছ মা,
কাঁদিয়ে বাংলা চলিলে তুমি
পিঞ্জর জুড়িলো জননী ফের ডাকিলে মা।
------
কবিতাঃ হে সব্যসাচী
কবিঃ আনু ইসলাম

পাগলীর সন্তান ও আমাদের অবস্থান | বাদশাহ্ সৈকত

বাদশাহ্ সৈকত
লেখকঃ বাদশাহ্ সৈকত

আবারো পাগলীকে নিয়ে লিখতে বাধ্য হলাম। কেন না বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি সত্যিই আমাকে কিছুটা হলেও মর্মাহত করে তুলেছে। এর আগেও "পাগলীর সন্তান প্রসব" শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। আবারো একই ঘটনা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে এক পাগলীর ছেলে সন্তান প্রসব। কিন্তু সেই সন্তানের জনকদের আমরা খুঁজে বের করতে পারি না।

আমাদের এতো পুলিশ, গোয়েন্দা, ডিবি, এসবি থাকতে পাগলীদের সাথে যৌন সঙ্গমকারীদের খুঁজে পাই না। নাকি অভিযোগ কারী না থাকলে এই জেনাকারী পুরুষদের খোঁজার কোন নিয়ম নাই। নাকি পাগলীদের ধর্ষনের বিষয়ে এদেশের সংবিধানে কোন আইন নাই এজন্যই তাদের খোঁজা হয় না। নাকি সেখানে কোন লাভ-লসের হিসাব নাই এজন্য সে বিষয়ে প্রশাসনের কোন মাথা ব্যাথা নাই।

ঘটনার বিবরন দেয়ার আগে পাগল বা পাগলী বিষয়ে আমার উপলদ্ধির কথা বলতে চাই। সেটা এরকম যে সৃষ্টি কর্তা এই মানব জাতির মধ্যে কিছু মানুষকে পাগল বানিয়েছেন। যাতে করে যারা পাগল হননি তারা এই পাগলদের দেখে ভাবতে পারেন যে সৃষ্টি কর্তা যে কোন মুহুর্তে তাদেরকেও পাগল বা পাগলী বানাতে পারেন। এই উপলদ্ধি থেকেই তারা যেন সৃষ্টি কর্তাকে ভয় করেন।

আর একটা উপলদ্ধি কথা না বললে নয়। আমার উপলদ্ধিতে পাগল হলো একটা সম্পুর্ণ স্বাধীন চেতনার নাম। পাগলদের কোন ঘর-বাড়ি থাকে না। তাদেরকে কোন ঘর-বাড়িতে আপনজনেরাও আটকিয়ে রাখতে পারে না। তারা দেশের আইন মানে না, রাজনীতি করে না। কাজ করে না, ব্যবসা-বানিজ্যও করে না। ভালো পোশাক পড়ে না, ভালো খাবারও খায় না। এক কথায় পৃথিবীতে তাদের কোন দায় বদ্ধতা নেই।

কিন্তু হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেয়া এই পাগলী কোন দায় বদ্ধতা থেকে সন্তান জন্ম দিলো। নাকি আমাদের মতোই সুস্থ দিনের বেলায় ভদ্র কোন পুরুষ তাকে দায় বদ্ধতায় ফেলে দিয়েছে।
পাগলীর সন্তান জন্ম দেয়ার এ ঘটনায় প্রাগৈতিহাসিক গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল। এক সময়ের ডাকাত শেষ বয়সে এসে ভিক্ষা বৃত্তি করে খেলেও তার কিন্তু যৌবনের ক্ষধা শেষ হয়ে যায়নি। সে সময় সুযোগ বুঝে এক ভিখারিনীকে কাঁধে তুলে জঙ্গলে নিয়ে যায় এবং যৌন ক্ষুধা মিটায়। বাঁধা দেয় না ভিখারিনীও। কেন না তারও তো একই ক্ষুধা আছে। এমন ঘটনা সন্তান জন্ম দেয়া এ পাগলীর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। কিন্তু সেটারও তো তদন্ত হওয়া উচিৎ নয় কি?
আর যদি কোন পাগল পাগলীর সাথে প্রাগৈতিহাসিকের মতো ঘটনা না ঘটিয়ে থাকে তাহলে এর দায়ভার কে নিবে।

গুটি কয়েকজন যুবক বা ব্যাক্তি পাগলীর প্রেগনেন্ট হওয়ার বিষয়টি টের পেয়ে অতি উৎসাহী হয়ে তাকে জোড় করে রাস্তা থেকে এনে হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং ফ্রীতে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে প্রেগনোন্সির বিষয়টি নিশ্চিত হয়। কিন্তু এই পাগলী তারপর থেকে সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তাকে পাহাড়া দেয়ার দায়িত্ব কেউ নেয়নি। কেন না এই সময়ের মধ্যে পাগলী বহুবার হাসপাতাল ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়েছ আবার ফিরে এসেছে অবস্থায় গর্ভবতী পাগগলীর দাযভার নিতে চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। এ রকম একটা অবস্থার এক সময হাসপাতালেই পাগলীর প্রসব বেদনা শুরু হয় এবং পাগলী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করে।

বিষয়টি জানার পর অনেকেই উৎসাহী হয়ে ওঠে এবং হাসপাতালে পাগলীর সন্তান ও পাগলীকে দেখতে যাচ্ছেন। এমন কি পাগলী ও তার সন্তানকে জামা কাপড়ও কিনে দিচ্ছেন। শুধু তাই নয় কুড়িগ্রামের  জেলা প্রশাসকও জামা-কাপড় পাঠিয়েছেন।
এখন আমার যেটা চাওয়া সেটা হলো যারা পাগলীকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন এবং প্রশাসনের যারা বিষয়টি অবগত হয়েছেন তাদের উচিৎ পাগলীর সন্তানের বাবা যেই হোক তাদেরকে খুঁজে বের করা এবং মুখশ উন্মোচিত করা। তানাহলে মানুষের চরিত্র নিমজ্জিত হতে হতে তলানীতে গিয়ে ঠেকবে।



পুনশ্চঃ ছবি এবং লেখা লেখকের fb প্রোফাইল থেকে সংগৃহীত।