This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

কবিতাঃ মন চুন্নি

মন চুন্নি -এ বি সিদ্দিক 


আমার সুখের ঘরে দিয়ে তালা
হারিয়ে ফেলেছি চাবি,
সেই চাবি নাকি তুই পেয়েছিস
বল কবে ফেরৎ দিবি?

আমার ভালোবাসার ব্যাংকে রে তুই বারবার চালাস হামলা,
হাতেনাতে এবার পরেছিস ধরা
এবার ঠেলা সামলা!

চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা
যদি না পরতিস ধরা,
ধরা যখন পরেছিস এবার
তখন বুঝবি এতে কত প্যাড়া।


NTRCA -এর প্রথম গণশুনানি কাল

বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে গণশুনানি অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) উদ্যোগে আটটি বিভাগে পর্যায়ক্রমে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ৪৫  মিনিটে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে  সিলেট বিভাগে প্রথম গণশুনানির আয়োজন করেছে ।

বুধবার (২৩ জানুয়ারি)এনটিআরসিএর একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ খবর নিশ্চিত করেছে। গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করবেন এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন। 
গণশুনানিতে সিলেট বিভাগের নিবন্ধন সনদধারীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। গণশুনানিতে তারা নিবন্ধন সম্পর্কিত সমস্যা, পরামর্শ, আবেদন এবং অভিযোগগুলো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। 
সূত্রঃ দৈ.শি

গল্পঃ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার জুটি


লেখকঃ খাইরুল আনাম
শিকাগো, আমিরিকা থেকে
দু'জায়গায় চাকুরীরত, ইদানিং বিবাহিত, দুই পেশার মানুষের মধ্যে ফোনে কথপোকথনঃ

ইঞ্জিঃ হ্যালো, ঢাকা? এটা কি ঢাকা? হ্যালো, এটাকি ......
ডাঃ  কি হলো? ফোন বেজে ওঠা থেকেই তো আমি হ্যালো, হ্যালো বলে যাচ্ছি। তবু অত চ্যাঁচাচ্ছো কেন?
ইঞ্জিঃ স্যরি। আসলে তুমি না অন্য কেউ ভেবে একটা কনফিউশান হচ্ছিল।
ডাঃ  কে মনে হচ্ছিল? আমার আম্মা না আমাদের কাজের বুয়া? গলার স্বর শুনে নিজের বউ চিনলে না? আশ্চর্য্য!
ইঃ  আবারও স্যরি। তা কেমন আছ বল, মানে ইয়ে, তোমার এ অবস্থায়। মানে ডাক্তার সাহেব কি বলল?
ডাঃ  কি আর বলবে? এখন এডিমা (edema) হয়ে ধুমসি হয়ে যাচ্ছি। একবার নিজে চোখে দেখলে মনে হয় লাথি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। ডাক্তার বলেছে, পরে এক্‌লামশিয়াও (eclampsia) ও হতে পারে। তখন বুঝবে। বাছার বৌ পাগল হওয়ার এত শখ বেরিয়ে যাবে।

ইঞ্জিঃ   কি সব বলছ? ওগুলোর মানে কি? বাবার জন্মেও তো ওই সব ওয়ার্ডের নাম শুনিনি। খুব খারাপ কিছু?
ডাঃ  বল কি? এ সবের নাম শোন নি? এগুলো তো সবাই জানে। তা তোমার আর দোষ কি? গলা শুনে নিজের বউকেই তো চিনতে পারলে না। তা যাকগে, আজ এত দেরীতে ফোন দিলে যে? কি হয়েছিল?
ইঞ্জিঃ  আর বোলনা। দরকারী কিছু কিনতে সকালে উঠেই চা না খেয়ে দৌড়তে দৌড়তে একটু বাজারে গিয়েছিলাম। দু’তিন জায়গায় ঘুরলাম। কিচ্ছু লাভ হলো না বোয়েচো। মন খারাপ। খালি ব্যাগ নিয়ে বাড়ী ফিরে এসেই তোমাকে ফোন দিলাম। তাই একটু দেরী হয়ে গেল। সামান্য দেরীর জন্য তুমি আবার কিছু মনে ক’রো না।

ডাঃ  আহারে, বেচারা! অত সকাল সকাল বাজারে গিয়েও কোন সুবিধে হলো না? খুব দরকারী কিছু? কি জিনিষটা?
ইঞ্জিঃ  না, মানে তেমন কিছু না। ঐ আর কি, সামান্য কয়েকটা এনট্রপি (Entropy) কিনতে গিয়েছিলাম। দেখলাম একগাদা লোক দোকানটায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ভীড়টা কমতে এগিয়ে গিয়ে দেখি, সব ফর্সা। তো পরের লেনে আইসোথার্ম (Isotherm) এর একটা দোকান ছিল। ভাবলাম এনট্রপি না পাই, অন্তত কেজি দুই আইসোথার্ম না হয় নিয়ে যাই। ও খোদা। সেখানেও সেই একই অবস্থা। আরো দু’সপ্তাহ নাকি দেরী করতে হবে, যে কোন একটা বা দু’টোই পেতে।

ডাঃ তাহলে তো বড় মুস্কিলের কথা। চিটাগাং-এ আর কোথাও পাওয়া যায় না? মানে অন্য কোন দোকানে? তুমি চাইলে আমি নিজে বা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের বলে ঢাকায় চেষ্টা করে দেখতে পারি। কি ওগুলো?
ইঞ্জিঃ থাক, তোমাকে খামকা কষ্ট করতে হবে না। ওগুলো তেমন কিছু না। ঠিকমতো জানা না থাকলে যত্রতত্র খুঁজে পাওয়াও যায় না। অবশ্য এগুলের নাম সবাই জানে। একেবারে অতি সাধারণ জিনিষ। অনেকটা তোমার ঐ এডিমা বা এক্‌লামশিয়ার মতো।
                                   

আজ রাতেই প্রকাশ হবে নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ


বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যে কোনও সময় তা প্রকাশ হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র। তালিকা প্রকাশের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ। রোববার দিবাগত রাতেই এই তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। কোনো কারণে রোববার এই তালিকা প্রকাশ না হলেও সোমবার প্রকাশ হতে পারে বলেও জানিয়েছে এনটিআরসিএ সূত্র।


কর্মকর্তারা জানান, আবেদন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যে কোনও সময় সুপারিশকৃত প্রার্থীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। জানা যায়, সুপারিশকৃতদের তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। এরপর সুপারিশপত্র প্রকাশ করা হবে। সুপারিশকৃত প্রার্থীরা নিজ নিজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুপারিশপত্রটি ডাউনলোড করে নিবেন। ফেব্রুয়ারিতে ৪০ হাজার শূন্য পদে যোগদান কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা গেছে, কোনও প্রতিষ্ঠান সুপারিশকৃতদের নিয়োগে বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে এনটিআরসিএ থেকে শিক্ষা বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হবে। বোর্ড প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে শিক্ষক পদে ৩১ লাখ আবেদন জমা পরে।

সখিনা সুলতানা ঝর্ণার "পিঙ্গল জীবন" নিয়ে আমার কিছু কথা

"পিঙ্গল জীবন" উপন্যাসের প্রচ্ছদ


শুরুতে এমন চমৎকার একটা বই উপহার দেওয়াতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি, "পিঙ্গল জীবন" উপন্যাসের শ্রদ্ধেয় ঔপন্যাসিক সখিনা সুলতানা ঝর্ণাকে।
.


সার-সংক্ষেপ ও সার্থকতাঃ


"পিঙ্গল জীবন" উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র- কুসুম। অত্যন্ত নম্র-ভদ্র এবং রুপ-লাবণ্যে সে যেন একটি সদ্যফোঁটা গোলাপ। বাবা-মা এবং ছোট দুই ভাইসহ বস্তির একটি জীর্ণ ভাড়াটে বাড়িতে তাদের বাস। দুঃখের সংসার বলে ম্যাট্রিক পাশের পর লেখাপড়া বিসর্জন দিয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ নিতে হয় তাকে। কিন্তু, তার রুপ-লাবণ্য এবং সুন্দর্য তারই শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। দুধে আলতা রুপ দেখে দুলাল দালালসহ ফ্যাক্টরির আর কিছু মানুষরুপি নরপশু তার শরীর উপভোগ করতে নির্লজ্জ বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাই কুসুমকে চরম দুঃসময়েও ইজ্জত রক্ষার্থে ফ্যাক্টরির কাজ ছেড়ে দিতে হয়। তরাঙ্গায়িত জীবন বসে থাকবার নয়। তাই সে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ নেয়। আফজাল আহমেদের পল্টনের বাসায় সকাল ছ'টায় যায়, রান্না শেষে ঠিক সন্ধ্যায় নিজ কুঠিরে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীর নিয়ে ফিরে আসে কুসুম। এভাবে একটানা খাটুনি চলতে থাকে কুসুমের। কিন্তু, ভাগ্যের নির্মমতায় কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার নরপশুদের কালো থাবায় পড়তে হয় তাকে। এই নরপশুগুলো হলো, আবরার(আফজাল সাহেবের ছেলে) ও তার পাঁচ বন্ধু। ভাগ্যিস তার হাতে ফলকাঁটা ছুরি ছিল, আর তা এলোপাতারি চালিয়ে অনেক আঘাত এবং ধস্তাধস্তির পর নিজেকে মুক্ত করে কুসুম। একের পর এক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জর্জরিত জীবন নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখের মধ্য দিয়ে কাঁটতে থাকে তার সময়গুলো। অপার দুঃস্বপ্ন ঘিরে বসে তাকে। যেন নিজের জীবন নিজের কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে তার।
লেখক একথা বলতে গিয়ে বলেছেন-

"গরিবের ঘরে সুন্দরী যুবতী মেয়ে থাকা মানে সাক্ষাৎ যমদূত থাকা।"


.
অনেক টানাপোড়ানের জীবন কুসুমের। তবু মনস্থির করলো নিজের পায়ে নিজেকে দাঁড় করাবেই, অর্থা আত্ম-প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই, নিজ বাসায় গড়ে তুললো ব্লক এবং নার্সারি। তার পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জে বিক্রি করে শাড়ি-কাপড়। রাত-দিত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয় তাকে। এভাবে সমাজের অনেক লাঞ্চনা-বঞ্চনা এবং কটাক্ষকে অতিক্রম করে কুসুম হয়ে ওঠে নারী সমাজে এক আত্মবিশ্বাস এবং মানদন্ডের নাম। লেখকের ভাষায় বলতে গেলে যেন অবলা কুসুম হয়ে ওঠে-


"অলরাউন্ডার কুসুমে।"
.
লেখক তার কলমের যাদুকরী শক্তিতে বস্তির সেই নম্র-ভদ্র এবং ভীত মেয়েটিকে যেভাবে রুপায়িত করে আমাদের সম্মুখে ফুঁটে তুলেছেন তাতে পরিষ্কার যে, লেখকের মানষপটে নারী মুক্তির এক অনির্বাণ শিখা সদা প্রোজ্জ্বলিত। মূলত সেই শক্তির বলে লেখক সমাজের উপেক্ষিত, অবহেলিত ও নির্যাতিত নারী সমাজের প্রতি জোড়ালো আহ্বান করে বলেছেন, আমাদের মুক্তির জন্য সবার আগে আমাদেরই(নারীদেরই) জাগতে হবে। অপরদিকে আফজাল আহমেদ আপরাধের দায়ে নিজ পুত্রকে আইনের সপর্থ করে যে বিরল দৃষ্টান্তের জন্ম দিয়েছেন তা মূলত- আজকের এই বিবেক বিবর্জিত সমাজে বিবেকেরই শুভোদয়।
অনিশ্চিত মুক্তির বেদনা নিয়ে যখন অবহেলিত, উৎপীড়িত, নির্যাতিত এবং অবলা নারী সমাজ একবুক হুতাশায় বলে- গরিবের আবার ইজ্জত কী?
ঠিক তখনি ভীত-সন্ত্রস্ত নারী সমাজের মুক্তির দূত হয়ে লেখক ঘোষণা করলেন জাগরণী মুক্তির বার্তা-
আলরাউন্ডার শব্দটা কী শুধুই পুরুষের জন্য?
এর মধ্য দিয়ে পুরিষ্ফূটিত হয় লেখকের হৃদয়ে জমানো নারী সমাজের মুক্তির প্রবল বাসনা। লেখক সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই লেখালেখি করেন এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর লেখনি যেমন ধারালো তেমনি মাধুর্যপূর্ণ। প্রেম, দ্রোহ আর মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ তাঁর সাহিত্যের বড় গুণ। পরিশেষে বলা যায়, "পিঙ্গল জীবন" লেখকের একটি অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম ও সার্থক উপন্যাস।


বইয়ের নাম ও ধরণঃ
"পিঙ্গল জীবন", উপন্যাস


ঔপন্যাসিকঃ
সখিনা সুলতানা ঝর্ণা


Fb Link:
Sakhina Sultana Jharna


লেখক পরিচিতিঃ
জন্ম স্থান রাজশাহী জেলা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায় থেকে লোকপ্রশাসনে কৃতিত্বের সাথে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। বিসিকে কর্মজীবনের শুরু হলেও মাঝে কুষ্টিয়া মহিলা কলেজে শিক্ষকতা এবং বর্তমান টিএমএসএসে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করছেন। তিনি একাধারে কবি, লেখক, প্রাবন্ধিক, সমাজকর্মী এবং গার্লস গাইড। কবির প্রকাশিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ "নিপুন শব্দস্রোত" (যৌথ), "ছোঁয়ালে তোমার হাতখানি", "ধোঁয়াচ্ছন্ন কুয়াশা" (যৌথ), পিঙ্গল জীবন ইত্যাদি।


প্রকাশনীঃ
বলাকা


প্রকাশকঃ
শরীফা বুলবুল


প্রচ্ছদঃ
মোস্তাফিজ কারিগর


ISBN:
978-984-93137-9-3


ওয়েব সাইটঃ
www.balakaprokashon.com


পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ
৯৪


মূল্যঃ
২০০/-


প্রাপ্তিস্থানঃ
বলাকা প্রকাশনী


ব্যক্তিগত মতামতঃ
"যখন কবি আর কবিতা নিয়ে যুদ্ধ তখন পিঁছিয়ে পড়া নারীর কবিতার ময়দানে এক পাহাড় প্রত্যয় ও দৃঢ় বিশ্বাসের নাম- 'সখিনা সুলতানা ঝর্ণা'।"

শুধু এক দিক না, উল্টোটাও দ্যাখো


শুধু এক দিক না, উল্টোটাও দ্যাখোঃসুহৃদ সরকার
বাবা একটি পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার ছোট ছেলেটি বারবার সেটি ধরে টানাটানি করছে। এতে অনেকটা বিরক্ত হয়ে বাবা একটা বুদ্ধি বের করল। পত্রিকা থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে ফেললেন - যাতে পৃথিবীর একটা ম্যাপ ছিল। বাবা সেই পৃষ্ঠাটি ছিঁড়ে কয়েক টুকরা করে ছেলেকে দিলেন। 
“এখন তোমার হাতে কিছু কাজ আছে। আমি যে ম্যাপটা দিয়েছি সেটি ঠিকমতো জোড়া লাগাও, ঠিকভাবে।”

বাবা এবার পড়া শুরু করলেন, ভাবলেন এই ম্যাপটা জোড়া লাগানো সোজ কথা নয়। এখন আর বিরক্ত করার সময় পাবে না ছেলেটা। সারাদিন ব্যস্ত থাকবে সেটি নিয়ে। কিন্তু পনের মিনিট পরই ছেলেটা সেই ম্যাপ হাতে নিয়ে হাজির।
“তোমার মা কি তোমাকে ভুগোল পড়াচ্ছে নাকি?” অবাক হয়ে জানতে চাইলেন বাবা।

ভুগোল কি জিনিস আমি জানি না,” বলল ছেলেটি। “কিন্তু এই পৃষ্ঠার উল্টা দিকে একটা মানুষের ছবি আছে, আমি সেই মানুষটাকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেছি। আর সেটি মিলালেই দেখতে পেলাম পৃথিবীর ম্যাপটাও মিলে গেছে।

রেলমন্ত্রীর কাছে আন্তঃনগর ট্রেনের দাবী জানালো 'কুড়িগ্রাম সোসাইটি'


কুড়িগ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের দাবি নিয়ে রেলপথ মন্ত্রীর সাক্ষাৎ করেছে ঢাকায় বসবাসরত কুড়িগ্রাম জেলাবাসীর সংগঠন ‘কুড়িগ্রাম সোসাইটি, ঢাকা’র একটি প্রতিনিধি দল।

সোমবার(১৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এমপি হোস্টেলে রেলপথ মন্ত্রী এডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজনের সাথে দেখা করেন সমিতির সদস্যরা।
এ সময় রেলমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে কুড়িগ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি উপস্থাপন করেন তারা। রেলমন্ত্রী সবার কথা মনযোগ দিয়ে শোনেন এবং সার্বিক বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের সময় কুড়িগ্রাম সোসাইটির উপদেষ্টা সালেক সাব্বির আহমেদ রুবেল, সোসাইটির সহ-সভাপতি কুড়িগ্রামের কৃতী কন্যা সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও ক্রীড়া সংগঠক রেহেনা পারভিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন রিপন, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম পারভেজ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান,রাকিবুল হাসান রাহুল, প্রচার সম্পাদক আনু ইসলাম,সহ-প্রচার সম্পাদক মমিনুল ইসলাম,তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সাকিউল ইসলাম বাপ্পি ও অন্যন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

কে কতো বড় চোর?



ফ্রান্সের এক ব্যাংকে ডাকাতির সময়...ডাকাত দলের সর্দার বন্দুক হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো, "কেউ কোন নড়াচড়া করবেন না, টাকা গেলে যাবে সরকারের কিন্তু জীবন গেলে যাবে আপনার। তাই ভাবনা চিন্তা করে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করুন।"
এই কথা শোনার পর, সবাই শান্ত হয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে শুয়ে পড়েছিল।
এই ব্যাপারটাকে বলে "Mind Changing Concept” অর্থাৎ মানুষের ব্রেইনকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী অন্যদিকে কনভার্ট করে ফেলা।
সবাই যখন শুয়ে পড়েছিল, তখন এক সুন্দরী মহিলার অসাবধানবশত তার কাপড় পা থেকে কিছুটা উপরে উঠে গিয়েছিল। ডাকাত দলের সর্দার তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, "আপনার কাপড় ঠিক করুন! আমরা ব্যাংক ডাকাতি করতে এসেছি, রেপ করতে না।"
এই ব্যাপারটাকে বলে "Being Professional” অর্থাৎ আপনি যেটা করতে এসেছেন, ঐটাই করবেন। যতই প্রলোভন থাকুক অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়া যাবে না।
যখন ডাকাতরা ডাকাতি করে তাদের আস্তানায় ফিরে এলো.....তখন এক ছোট ডাকাত(MBA পাশ করা) ডাকাত দলের সর্দার(যে Class 5 পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে) -কে বললো, "বস চলেন টাকাটা গুনে ফেলি।"
ডাকাত দলের সর্দার মুচকি হেসে বললো, তার কোনই প্রয়োজন নেই। একটু পরে টিভি ছাড়লেই নিউজ চ্যানেলগুলোই বলে দিবে আমরা কত টাকা নিয়ে এসেছি। ;)
এই ব্যাপারটাকে বলে "Experience" 
অভিজ্ঞতা যে গতানুগতিক সার্টিফিকেট এর বাইরে যেয়েও কাজ করতে পারে, ইহা তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
ডাকাতরা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই, ব্যাংকের কর্মচারি...ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে ছুটে এসে বললো, স্যার তাড়াতাড়ি চলেন পুলিশকে ফোন দেই....এখন ফোন দিলে ওরা বেশিদূর যেতে পারবে না। 
ব্যাংক ম্যানেজার কর্মচারিকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ওদের -কে আমাদের জন্যই এই ২০ মিলিয়ন টাকা নিয়ে যেতে দেওয়া উচিত, তাহলে আমরা যে ৭০ মিলিয়ন টাকার গরমিল করেছি, তা এই ডাকাতির ভিতর দিয়েই চালিয়ে দেওয়া যাবে।
এই ব্যাপারটাকে বলে, "Swim with the tide" অর্থাৎ নিজের বিপদকেও বুদ্ধি দিয়ে নিজের সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করা।
কিছু সময় পরেই টিভিতে রিপোর্ট আসলো, ব্যাংক ডাকাতিতে ১০০ মিলিয়ন টাকার ডাকাতি। ডাকাতরা সেই রিপোর্ট দেখে বারবার টাকা গুনেও ২০ মিলিয়ন এর বেশি বাড়াইতে পারল না। ডাকাত দলের সর্দার রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে বললো,"শালা আমরা আমাদের জীবনের ঝুকি নিয়ে, এত কিছু ম্যানেজ করে মাত্র ২০ মিলিয়ন টাকা নিলাম। আর ব্যাংক ম্যানেজার শুধুমাত্র এক কলমের খোঁচাতেই ৮০ মিলিয়ন টাকা সরিয়ে দিল। শালা চোর ডাকাত না হয়ে পড়াশোনা করলেই ত বেশি লাভ হইত।"
এই ব্যাপারটাকে বলে "Knowledge is worth as much as gold!"
অর্থাৎ অসির চেয়ে মসী বড়।
ব্যাংক ম্যনেজার হাসছে, কেননা তার লাভ ৮০ মিলিয়ন। ৭০ মিলিয়ন টাকার গরমিল করেও সে আরো ১০ মিলিয়ন টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছে।
এই ব্যাপারটাকে বলে, "Seizing the opportunity/Daring to take risks!"
অর্থাৎ সুযোগ থাকলে তাকে কাজে লাগানোই উচিত। 
তাহলে এই ডাকাতিতে লাভ টা হইলো কার?
তাই লেখাপড়া ই সবচেয়ে বড় বিজনেস।

[ভিনদেশি রম্যরচনা থেকে অনুবাদকৃত]
Collected

কে এই ছক্কা ছয়ফুর?



নাইমুল ইসলাম:

ছক্কা ছয়ফুরের ব্যাপারে অনেক শুনেছি,  লেখা পড়লাম এই প্রথম। 
আরিফ রহমান এর থেকে কপি করে টাইমলাইনে রেখে দিলাম।
---------------------------------------------
এক অনন্য সাধারণ বাংলাদেশি! বাংলার ইতিহাসে আর কখনো এমন মানুষের জন্ম হবে কি না সন্দেহ!

তাঁর নাম ছয়ফুর রহমান। পেশায় ছিলেন বাবুর্চি। খুব নামিদামি বাবুর্চি এমন নয়। সিলেটের সালুটিকর নামের একেবারেই গ্রাম্য বাজারের পাশের ছাপড়া ঘরের দিন আনি দিন খাই বাবুর্চি। তাঁর দ্বিতীয় পেশা ছিল ঠেলাগাড়ি চালনা। যখন বাবুর্চিগিরি করে আয় রোজগার হতো না তখন ঠেলাগাড়ি চালাতেন। কিন্তু এই লোকটির ছিল অসম সাহস। যেকোনো ইস্যুতে তিনি একেবারেই জনসম্পৃক্ত রাজনীতি করতেন। ধরুন সালুটিকর থেকে শহরে আসার বাসভাড়া আটআনা বেড়ে গেছে। ছয়ফুর রহমান কোর্ট পয়েন্টে একটা মাইক বেঁধে নিয়ে ওইদিন বিকালে প্রতিবাদ সভা করবেনই করবেন।

নিজেকে আল্লার গোলাম মো. ছয়ফুর রহমান বলে পরিচয় দিতেন। এমপি থেকে রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রপতি থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান বা তারও নিচে নেমে ইউপি চেয়ারম্যান পদে লড়াই; তার এসব লীলাখেলায় জনগণের মধ্যে হাস্যরসের সৃষ্টি হলেও তিনি একজন বীর মুক্তিযেদ্ধা ও সুবক্তা।

বক্তা হিসেবে অসম্ভব রসিক লোক ছিলেন। ছড়ার সুরে সুরে বক্তৃতা করবেন। তারপর মূল ইস্যু নিয়ে অনেক রসিকতা করবেন; কিন্তু দাবি তাঁর ঠিকই থাকবে।

তার বক্তৃতা শুনতে সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের ভিড় হতো। তো বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরেই তিনি একটুকরো কাপড় বের করে সামনে রাখতেন। তারপর সবাইকে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় বলতেন, 'আমি এই যে আপনাদের জন্য আন্দোলন করতেছি, আমার মাইকের খরচ দিবে কে? মাইকের খরচ দেন।'

অদ্ভুত ব্যাপার হল, কোনোদিনই মাইকের খরচ উঠতে দেরি হয়েছে এমনটা হয়নি। দুই টাকা, এক টাকা করে তার সামনের কাপড়টি ভরে উঠত। তারপর যখন তিনশ' টাকা হয়ে গেল তখন মাইকের খরচ উঠে গেছে; তিনি তার কাপড়টি বন্ধ করে দিতেন।

অনেক সময় তার লেখা বই বিক্রি করেও জনসভার খরচ তুলতেন। অদ্ভুত কয়েকটি চটি সাইজের বই ছিল তার। একটির নাম 'বাবুর্চি প্রেসিডেন্ট হতে চায়'। সেই বইটির পেছনে তার দাত-মুখ খিচানো একটা সাদাকালো ছবি, নিচে লেখা 'দুর্নীতিবাজদেরকে দেখলেই এরকম ভ্যাংচি দিতে হবে'।

ছয়ফুর রহমান প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আশির দশকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে। তখন দেশে সরাসরি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন। তো সব প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নিরাপত্তার জন্যই সঙ্গে পুলিশ দেওয়া হলো। ছয়ফুর তাঁর নিরাপত্তার জন্য দেিয়া পুলিশ প্রত্যাখ্যান করে বললেন, 'এদেরকে খাওয়ানোর সাধ্য আমার নাই'। তবু সরকারি চাপাচাপিতে তাকে নূন্যতম দুইজন পুলিশ সঙ্গে নিতে হলো।

সে সময় দেখা যেত রিক্সায় দুইপাশে দুই কনেস্টবল আর ছয়ফুর রহমান রিক্সার মাঝখানে উঁচু হয়ে বসে কোথাও যাচ্ছেন।

নির্বাচনে খারাপ করেননি। সেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি ৬০-৬৫ জন প্রার্থীর মাঝে আট নম্বর হয়েছিলেন। তারপর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'আমি দেশের আট নম্বর প্রেসিডেন্ট। ইলেকশনের দিন বাকি সাতজন মারা গেলে আমি প্রেসিডেন্ট হতে পারতাম।'

অদ্ভুত এবং মজাদার সব নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তাঁর। যেমন, দেশের কোনো রাস্তাঘাট পাকা করার দরকার নেই! রাস্তা তুলে দিয়ে সেখানে খাল করে ফেলতে হবে! নদীমাতৃক দেশে সেই খাল দিয়ে নৌকায় লোকজন চলাচল করবে! খালের পানিতে সেচ হবে-সব সমস্যার সহজ সমাধান।

তিনি যদি কোনোভাবে ক্ষমতায় যেতে পারেন, তাহলে সিলেটের সুরমা নদীর উপরে বিশাল আকৃতির একটি দাঁড়িপাল্লা লটকানোর ওয়াদা করতেন। পাল্লার পাশে একটা অফিস খুলে একজন কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন; যার কাজ হবে সিলেটে কোনো অফিসার নিয়োগ হলে প্রথমে তাকে দাঁড়িপাল্লায় তুলে ওজন করে অফিসে রেকর্ড রাখবেন। বছর ছয়মাস পরে তাকে আবারও পাল্লায় উঠানো হবে। এতে যদি দেখা যায় তার ওজন বেড়েছে তাহলে নির্ঘাত বোঝা যাবে সিলেটের মানুষের কাছ থেকে ঘোষ খাইয়া বডি বানাইছে। আর ঘোষখোর অফিসারের রক্ষা নাই।

ঘোষখোর ধরার এই অভিনব পদ্ধতির কথা তিনি সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে টুলের উপর দাঁড়িয়ে প্রায়ই বক্তৃতা দিয়ে জনগণকে মাতিয়ে রাখতেন।

তাঁর দলের নাম ছিল 'ইসলামি সমাজতান্ত্রিক দল'। সেই দলে কোনো সদস্য নেওয়া হতো না। এমনকি উনার স্ত্রীকেও সদস্য করেননি। তিনি বলতেন, 'একের বেশি লোক হলেই দল দুইভাগ হয়ে যাবে'।

ছক্কা ছয়ফুর বেশ কয়েকবার নির্বাচন করেছেন। কখনোই তাঁকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি; সবাই মজার ক্যান্ডিডেট হিসেবেই নিয়েছিল। কিন্তু তিনি ১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে এক কাণ্ড ছিল বটে।

যথারীতি ছয়ফুর রহমান প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর প্রতীক-ডাব। তিনি একটা হ্যান্ডমাইক বগলে নিয়ে একা একা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্টার লিফলেট কিছুই নেই। কিন্তু বক্তৃতা তীর্যক। বাকি প্রার্থীদেরকে তুলাধুনা করে ফেলছেন। এরকম এক সন্ধ্যায় সিলেটের টিলাগড়ে তার উপর অন্য এক প্রার্থীর কয়েকজন পান্ডা হামলা করে বসল।

পরের দিন সেই খবর গোটা শহরে ছড়িয়ে পড়ল। সাধারণ মানুষ বিরক্ত হলো। আহা! একেবারেই সাধারণ একটা মানুষ, তাঁর সঙ্গে গুন্ডামি করার কী দরকার ছিল?

ওইদিন বিকালে স্কুল ছুটির পর প্রথম মিছিল বের হলো সিলেট পাইলট স্কুলের ছাত্রদের উদ্যোগে। মিছিল লালদিঘীর রাস্তা হয়ে বন্দরবাজারে রাজাস্কুলের সামনে আসার পর রাজাস্কুলের ছেলেরাও যোগ দিল। ব্যস, বাকিটুকু ইতিহাস। মুহূর্তেই যেন সারা শহরে খবর হয়ে গেল। সন্ধ্যার মধ্যেই পাড়া-মহল্লা থেকে মিছিল শুরু হলো ছয়ফুরের ডাব মার্কার সমর্থনে। একেবারেই সাধারণ নির্দলীয় মানুষের মিছিল। পাড়া মহল্লার দোকানগুলোর সামনে আস্ত আস্ত ডাব ঝুলতে থাকল। রিক্সাওয়ালারা ট্রাফিক জ্যামে আটকেই জোরে জোরে 'ডাব, ডাব' বলে চিৎকার শুরু করে! সেই স্লোগান ম্যাক্সিকান ওয়েভসের মতো প্রতিধ্বনি হয়ে এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় চলে যায়। অনেক প্রেসমালিক নিজেদের সাধ্যমতো হাজার দুইহাজার পোস্টার ছাপিয়ে নিজেদের এলাকায় সাঁটাতে থাকলেন। পাড়া-মহল্লার ক্লাব-সমিতিগুলো নিজেদের উদ্যোগে অফিস বসিয়ে ক্যাম্পেইন করতে থাকল।

অবস্থা এমন হলো যে, ছয়ফুর রহমানকে নির্বাচনী সভায় আনার এপয়েন্টমেন্ট পাওয়াই মুশকিল হয়ে গেল।

ছয়ফুর রহমান ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তাঁদের অফিস ছেড়ে দিল ছয়ফুরের নির্বাচনী প্রচার অফিস হিসেবে। পাড়ায় পাড়ায় ছেলেরা তাঁর নির্বাচনী জনসভার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেখানে আনতে হলেও আগে মূল অফিসে গিয়ে ৫০০ টাকা এডভান্স করে আসতে হয়, নইলে ছয়ফুর রহমান আসেন না! কারণ, তাঁর বাবুর্চিগিরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফুলটাইম নির্বাচন করতে হলে সংসার খরচ দরকার।

আমার মনে হয় তিনিই একমাত্র প্রার্থী, যাকে তাঁরই নির্বাচনী জনসভায় নিয়ে আসার জন্য উল্টো টাকা দিতে হচ্ছে।

নির্বাচনের দিন জনগণ এক মহ-বিস্ময় প্রত্যক্ষ করল। আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইফতেখার হোসেন শামীম জামানত রক্ষা করেছিলেন। আর মেজর জিয়ার দল সহ বাকি সবারই জামানত বাজেয়াপ্ত হলো। ডাব প্রতীকে ছয়ফুর পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ভোট আর চাক্কা প্রতীকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ইফতেখার হোসেন শামীম পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ভোট।

দক্ষিণ সুরমার এক কেন্দ্রে ছয়ফুর রহমানের ডাব পেয়েছিল ১৮০০+ ভোট! ওই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রজাপতি মার্কা পেয়েছে কুল্লে ১ ভোট।

আরও অবাক করা একটি ব্যাপার ঘটে নির্বাচনের দিন। প্রায় ভোটকেন্দ্রে জনগণ ডাব
মার্কার ব্যালেটের সাথে টাকাও ব্যালেটবাক্সে ঢুকিয়ে দেয়।

নির্বাচনের পরে ছয়ফুর রহমানের নাম পড়ে গেল ছক্কা ছয়ফুর। তিনি হাসিমুখে সেই উপাধি মেনে নিয়ে বললেন, 'নির্বাচনে ছক্কা পিটানোয় মানুষ এই নাম দিয়েছে'।

উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ছক্কা ছয়ফুর সফল ছিলেন। তাঁর মূল ফোকাস ছিল প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা ঠিক করা। হুটহাট যেকোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাইমারি স্কুলে ঢুকে পড়তেন। শিক্ষক অনুপস্থিত থাকলেই শোকজ করে দিতেন। সেই সময় প্রাইমারি স্কুলগুলো উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল অনেকটাই।

তবে ছয়ফুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ নিতে হয় বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের কারণে। ইউনিয়ন পরিষদের দুর্নীতি বন্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। এতে ক্ষিপ্ত চেয়ারম্যানরা একজোট হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিলে যতদূর মনে পড়ে তাঁর উপজেলা চেয়ারম্যানশিপ স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে উপজেলা পরিষদ বাতিল করে দিলে ছক্কা ছয়ফুরের স্বল্পমেয়াদী জনপ্রতিনিধিত্বের চিরতরে ইতি ঘটে।

এক নির্বাচনে খরচের জন্য তিনি কিছু টাকা সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন কোনো কারণে হয়নি। কিন্তু ছয়ফুর জনগণের টাকা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে সেই ঐতিহাসিক কোর্টপয়েন্টে আবার আসলেন। এসে বলেলেন, ‘আপনারা তো আমাকে নির্বাচনে খরচ চালানোর জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে না; তাই আমি আপনাদের টাকাগুলো ফেরত দিতে চাই।’ লোকজন অনেক খুশি হয়ে বলল, ‘আমরা টাকা ফেরত নিতে চাই না; এগুলো আপনি নিয়ে নিন’

তিনি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলেন তখন রেজিষ্টারি মাঠে তার প্রথম জনসভা ছিল। হাজার হাজার মানুষের ঢল। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তিনি তার বক্তব্যে প্রথমেই সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন,
‘আমার নির্বাচনের শুরুতে আমার দুইটা ঠেলাগাড়ি ছিল। সংসার চলে না তাই একটি বেছি লাইছি। আর আমার বাড়িতে আপনারার বসাবার জায়গা ও নাই। পয়লা যখন রিলিফের চালান পাইমু সেখান থেকে কিছু বেছিয়া আপনারার বসাবার জায়গা করবো যদি আপনারা অনুমতি দেন।’

তখন হাজার হাজার জনগণ একসাথে হেসে উঠে বলল, ‘অনুমতি দিলাম’।

তিনি ছোট ছোট কয়েকটি বইও রচনা করেন। 'বার্বুচি প্রেসিডেন্ট হতে চায়', ‘পড়, বুঝাে, বল’ তার আলোচিত বই।

অভাবের কারনে তিনি নৌকার মাঝিগিরিও করেছেন।বক্তৃতায় নিজেকে আল্লার গোলাম মোঃ ছয়ফুর বলে পরিচয় দেওয়া ছক্কা ছয়ফুর ওরফে ডাব ছয়ফুর আজ আর নাই। কিন্তু তাঁর কথাগুলো মানুষের অন্তরে রয়ে গেছে।

জীবনের শেষ সময়ে এই মহান মানুষটি সিলেট ডিসি অফিসের বারান্দায় চিকিৎসা খরচের দাবীতে অনশন করেছিলেন এবং দাবীও আদায় করেছিলেন। চিরকালীন দারিদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেই এই মানুষটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। সরলপ্রাণ এই সমাজবিপ্লবীর প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

নোট : এই লেখার কিছু অংশ একটা ছদ্মনামের আইডি থেকে পাওয়া। পরে ওই লেখাটা দেখা যায় আরিফ জেবতিক নামে একজন অনেক আগে লিখেছেন। আর বাকি অংশ লোকমুখে শোনা থেকে আমি লিখেছি।

লিখেছেন আরিফ জেবতিক। কালের কন্ঠে পত্রিকায় আবুল কালাম আজাদের ফেসবুক থেকে নেয়া বলে প্রকাশ করেছিল।

প্রিয় স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন



আপনার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আমাদের গর্ব করবার মত একটা স্মৃতিসৌধ উপহার দিয়েছিল। আমরা আপনাকে একটি যন্ত্রণাদায়ক জীবন ও মৃত্যু উপহার দিয়েছি। আপনার মৃত্যুদিন আমরা ভুলে গেছি। গুগল নিউজের গত কয়েক দিনের হিস্ট্রি ঘেঁটেও বাঙলায় আপনার মৃত্যুদিন পালন করার কোন খবর দেখলাম না।
আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। 

"স্মৃতিসৌধ বানাবার পর খুনের হুমকি দিয়ে বেনামি চিঠি পাঠানো হত তাঁকে প্রতিনিয়ত। একটা সময় হুমকি পেতে পেতে প্রবলভাবে মানসিক বিপর্যয় ঘটে তাঁর। অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড মুভিটা যারা দেখেছেন, তারা বুঝতে পারবেন আরও ভালোভাবে। সর্বক্ষণ ভয়ে থাকতেন মানুষটা,নিষেধাজ্ঞা আর হুমকির বাস্তব এবং অলীক ভয় ঘিরে থাকতো তাকে,অসম্ভব প্রতিভাবান এই মানুষটার চিন্তা-চেতনাই এলোমেলো করে দিয়েছিল।এমনভাবেই যে জীবদ্দশায় দুই-তিন বারের বেশী স্মৃতিসৌধে যাওয়া হয়নি তাঁর।
অথচ এতো বড় একজন রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিত্ব হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চিকিৎসা তো দূরে থাক,সামান্য খোঁজটাও কেউ নেয়নি।

যেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল ৭টা স্তম্ভে একটা জাতির সবচেয়ে গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস তুলে ধরা!

স্মৃতিসৌধের ডিজাইন করার সম্মানী পাবার কথা ছিল ২ লাখ টাকা, আয়কর চাওয়া হয়েছিল এর ৫০%, অর্থাৎ এক লাখ টাকা। ১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মানুষটাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। রাষ্ট্রীয় ভিভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন তাঁর অমর সৃষ্টি!
একজন সৈয়দ মাইনুল হোসেন এবং তাঁর প্রতি রাষ্ট্রের এবং জনগণের সম্মাননা!" আমাদের সর্বান্তকরণে ক্ষমা করবেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।

*সংগৃহীত