This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

একুশ দুর্বার প্রলয় | আনু ইসলাম



একুশ,
তুমি দীপ্ত- দুর্বার প্রলয়
তুমি করেছ বাংলা ভাষা জয়,
তুমি চির অমর ফুলের ভ্রোমর
তোমার নেই, নেই কোন ক্ষয়-
তুমিই দ্বীপী প্রলয়।
একুশ,
তুমি ফিনকে পরা রক্তের দান
রেখেছ তুমি লাখ শহীদের মান,
মা বঙ্গের তুমিই প্রাণ
বাহবা তোমার তরে-
একুশ নামের বীর জোয়ান।
একুশ,
তোমাতে কেন গোলা বারুদের গন্ধ ?
তুমি লাশের পিঠে লাশে গড়া স্তম্ভ !
তুমি স্বাধীন বনের পাখি
তোমার জয়ের নেশায়-
বাংলার সর্বস্বই ভাসায়েছে আঁখি।
একুশ,
তুমি পথিকের পিপাসার জল
তুমি লাল সবুজের মাঝে টলমল,
তোমার কপালের লাল টিপ
রফিক, শফিক, জব্বারের-
রক্তে গড়া ভাষার প্রদীপ।
একুশ,
তুমি বাংলা বর্ণমালার অ, আ প্রতীক।

আসছে- প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৫ হাজার নতুন পদে নিয়োগ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৫ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি- হিসাবরক্ষক পদে আসছে নতুন নিয়োগ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদ


দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে হিসাব রক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

ছবিটি ক্লিক করে পড়তে পাড়েন। আবার চাপদিয়ে ধরে ডাউনলোড করেও পড়তে পাড়েন।


আছলাম সওদাগরকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীবাসী

হাফিজুর রহমান হৃদয়:
কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী) আসনের এমপি আছলাম হোসেন সওদাগরকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায় নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ
স্বাধীনতা পরবর্তী এ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো এমপি কিংবা মন্ত্রী না থাকায় সংসদে কথা বলার কেউ সুযোগ না পাওয়ায় সকল প্রকার উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত এসব অঞ্চলের জনসাধারণ। নদীবেষ্টিত এই অঞ্চলগুলোতে অনেক প্রতিভাবান ব্যাক্তি থাকলেও কারও ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। বরাবই কুড়িগ্রাম জেলা থেকে গেছে দারিদ্রের শীর্ষে। এর কারণ হিসেবে ভৌগলিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যকে দায়ী করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে এসব অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। সব দিক থেকে উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা সত্বেও সরকারদলীয় কোনো এমপি-মন্ত্রী না থাকায় এসব অঞ্চলের দারিদ্রতার কারণ হিসেবেও উল্লেখ করেন অনেকে। সম্ভাবনাময় এই জেলায় উন্নয়নের অংশ হিসেবে সোনাহাট স্থল বন্দর একটি রাজস্ব আয়ের উৎস সমূহের মধ্যে অন্যতম। তাই এই অঞ্চলে একজন মন্ত্রী হলে এই আসনের দুই উপজেলাসহ জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোও হবে অনেক উন্নত। বাড়বে সরকারের আয়ের উৎস। তখনই মুছে যেতে পারে দরিদ্র নামক নামটি। স্তানীয়রা বলছেন স্বাধীনতা পরবর্তী এ আসনে আমরা কখনও আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী দেখিনি। এবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এমপি পেয়েছি। আমারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বঙ্গকন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এমপি উপহার দিয়েছি। আমাদের দাবী এ আসনের নির্বাচিত প্রার্থী আছলাম ভাইকে মন্ত্রী করা হোকে। নাগেশ্বরী প্রেক্লাবের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, দুধকুমরের উপর সেতু নির্মাণ, নদী খনন, নদী শাসন, বাঁধ নির্মাণ, নন এমপিও স্কুল কলেজগুলোকে এমপিওভুক্ত করা, সড়ক পাকা করণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসহ সকল প্রকার উন্নয়নের জন্য আছলাম ভাইকে মন্ত্রী করা আমাদের জোর দাবি। ভূরুঙ্গামারী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মন্টু বলেন, আমরা প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী ও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আছলাম ভাইয়ের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছি। আমাদের এ অঞ্চল অনেক পিছিয়ে তাই আমাদের আছলাম ভাইকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। প্রভাষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ এবং শিল্প কারখানা না থাকায় বেকারত্ব ও দারিদ্র্য সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। এ সমস্যা দূরীভূত করতে গ্যাস সরবরাহসহ ইপিজেডের মত শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজন। আর এ আশা পূরণ করতে হলে চাই সরকারদলীয় মন্ত্রী। নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রধান বলেন, আমরা সকলে সম্মিলিতভাবে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছি। একইভাবে আমাদের সমন্বিত দাবি আছলামের নামটা মন্ত্রীসভায় থাকবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১ আসনে ৮জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধ করে আছলাম হোসেন সওদাগরের নৌকা মার্কা ১ লাখ ২২হাজার ১৪ ভোট পেয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম ঐক্যফ্রন্ট-বিএনপি মনোনিত প্রার্থী সাইফুর রহমান রানার ধানের শীষ পায় ১ লাখ ১৭ হাজার ৯শ ৩৫ ভোট।

ব্রেকিংঃNTRCA- এর 'গণবিজ্ঞপ্তির' নাড়ীনক্ষত্র

ছবিটিতে ক্লিক করে/ছবিটি ডাউনলোড করে পড়ুন

NTRCA বিষয়ক সকল সমস্যার সমাধান

VIDEO-1

VIDEO-2



VIDEO-3



VIDEO-4



VIDEO-5



ব্রেকিং নিউজঃনিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ চলতি মাসেই


বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ প্রক্রিয়া চলতি জানুয়ারি মাসেই শেষ করা হবে। নিবন্ধনধারীদের কাছ থেকে প্রায় ৩১ লাখ আবেদন গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিভিন্ন কারণে দুই বছর বন্ধ ছিলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশকার্যক্রম।
বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ দেয়ার লক্ষ্যে গত ১৮ ডিসেম্বর গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে এনটিআরসিএ। গত ১২ জুন যাদের বয়স ৩৫ অথবা তার কম এবং জনবল কাঠামো এবং এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী অন্যান্য শর্ত পূরণ করবে শুধু তারাই আবেদন করতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে আবেদন করা শুরু করেন নিয়োগ প্রত্যাশীরা। গতকাল ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নিয়োগের আবেদন গ্রহণ করেছে এনটিআরসিএ। শেষদিন পর্যন্ত মোট ৩১ লাখ আবেদন জমা পড়েছে বলে দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
আবেদন যাচাই-বাছাই করে মেধা তালিকা অনুসারে প্রার্থীদের নিয়োগের সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। সুপারিশকৃতদের তালিকা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে। সুপারিশকৃত প্রার্থীরা নিজ নিজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সুপারিশপত্রটি ডাউনলোড করে নিবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার শূন্যপদ রয়েছে। মামলাসহ বিভিন্ন কারণে দুই বছর বন্ধ ছিলো প্রার্থী বাছাই ও সুপারিশ কার্যক্রম। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করব আমরা। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে বলে আমার আশা। তিনি আরও বলেন, প্রার্থীদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে নিয়েগের বিষয়টি জানানো হবে। তারা সুপারিশ পত্রটি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।
চেয়ারম্যান আরও জানান, কোনও প্রতিষ্ঠান সুপারিশকৃতদের চাকরি না দিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে এনটিআরসিএ থেকে শিক্ষা বোর্ডকে বিষয়টি জানানো হবে। বোর্ড প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিবে।
সম্প্রতি বয়স ৩৫ উত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের আবেদনের সুযোগ এবং কম্পিউটার বিষয়ে ৬ মাসের ডিপ্লোমাধারীদের আবেদন ও নিয়োগ সংক্রান্ত রুল জারি করে হাইকোর্ট। এ রুল জারির ফলে নিয়োগের সুপারিশ বাধাগ্রস্থ হবে কিনা তা জানতে চাইলে সরকারের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ইতিপূর্বে দেয়া হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করেই নিয়োগের সুপারিশের বিষয়টি নিষ্পত্তি করছে এনটিআরসিএ। কেন তাদের আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়নি তার সুস্পষ্ট কারণ অবশ্যই রয়েছে।
সূত্রঃ প্রতিদিন

ফিরোজ সরকারঃ এক অদম্য শিল্পীর নাম

শিল্পীঃ ফিরোজ সরকার

চার(০৪) বছর বয়সে প্রাণ প্রিয় মা'কে চিরদিনের জন্য হারাবার পর লেখাপড়ায় মন বসতোনা, এমনকি বসাতেও পারতেননা। ভালোলাগতোনা কোন কিছুই। এদিক সেদিক করে চৌঁদিকে ছুটতেন তো ছুটতেন কেবলই কষ্টের বিপরীতে একটু যুত-কিঞ্চিত সুখের তরে। দিন যায় রাত কাটে অন্তরে বাসা বাঁধা কষ্টের সমাধান অসমাপ্তিই রয়ে যায়। বড়ই নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ত্ব আর হতাশায় কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। জানে ফিরে পাবেনা তবুও পাগলের মত খুঁজে ফেরত মা'কে। 
শান্ত্বনা নামের আল্পনা আর প্রকৃতির সুন্দর্যে খুঁজে নিত শূণ্য হৃদয়ে একতিলক শীতল মমতা
এ যেন শুষ্ক উত্তপ্ত বালির বুকে কিঞ্চিত জলে কেবলই শীতলতা আনার মত। যেখানে বুক ভরেনা শূণ্যতা রয়েই যায় তথাপিও। তবু কিছুটা লেখাপড়া করেছে নানার বাসায়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে একমাত্র অবশিষ্ট আপন সম্বল নানীও বিডিআর বিদ্রোহকালীন সময়ে ইন্তেকাল করেন। আপন বলতে আর কেউ রইলোনা। এমন এ অভাগা দিনে অশান্ত ক্লান্ত কমল মনে বয়ে আসে এক মহিয়সী নারীর প্রেম। বড়ই উল্মাদ হয়ে পড়েন ফিরোজ ভাইয়া। অতঃপর জীবন সঙ্গীনি সেই সে অপূর্ব নারী। শূণ্যতার বুকে পূর্ণতা আর নিরাশার বুকে আশা নিয়ে বাঁচতে শিখেন ফিরোজ ভাই। নিজেকে সাজিয়ে নেন হরেক রঙে। কর্মের সন্ধানে রাজারহাট থেকে ছুটে আসেন কুড়িগ্রাম সদরে। কাজও পান। স্টিল মিস্ত্রির কাজ। মন বসতনা কোন ভাবেই। পরবর্তিতে কলেজ মোড়ে আর্ট স্টোল দেন। মনের আনন্দে অন্তরের মাধুরী মিশায়ে দিন-ভর কাজ আর কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। অনেকবার বিভিন্ন কারনবশত স্থান পরিবর্তন করলেও ২০০৭ সালে তর্তাবোধায়ক সরকার ফকরুদ্দিন এর শাষনামলে উচ্ছ্বেদ করে দেওয়া হয় ফিরোজ ভাইয়ার চির সাধনার সেই আর্ট স্টোল। অর্থনৈতিকভাবে প্রায় পঙ্গু হয়ে যান ভাইয়া। তন্মধ্যে ভাবি হঠাৎ ব্রেইন স্টক করলে বড়ই হিমশিমে পরে যান এবং অনেক ঋৃণ করে বসেন। হাস্যজ্জ্বল সংসারে নেমে আসে এক গাঢ়কালো নিষ্ঠুর নির্মম হতাশা ও দূর্দিন। কিন্তু ভাইয়া তাতেও সাহস হারাননি। একনিষ্ঠ কাজ করতেন। আজ তিনি ঋৃণ মুক্ত প্রায়। তাই অন্য দশ জনের মতই একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন তার দুটি বাচ্চার ভালো একটা ভবিষ্যতের। হয়তো প্রশ্ন করছেন নিজেকে, যে কে এই ফিরোজ???
...

ফিরোজ ভাই অন্য কেউ না। একজন সাদামাটা আর সহজ সরল প্রাঞ্জল মনের মানুষ। পেশায় আর্টিস এবং ফটোগ্রাফার।যিনি অসামান্য ঋৃণে ঋৃণী করেছেন কুড়িগ্রামবাসীকে। যার তুলির ছোয়ায় আজও জীবন্ত হয়ে আছে কুড়িগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ফলক, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের শহীদ মিনার, ইতিহাস বিভাগের দেয়ালে দিপ্তমান শেখ মুজিবের সেই ঐতিহাসিক প্রতিচ্ছবি(যা বর্তমানে চুনকামে ঢাকা), রোভার স্কাউট সহ প্রতিটি বিভাগের ব্যানার দেয়ালিকায় জীবন্ত হয়ে আছে উনার হাতের পরশ। যিনি দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের দ্বারা কুড়িগ্রামের জর্জ কোর্ট এলাকা, নাট্যশালা, শাপলা চত্ত্বর সহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকাকে স্বপ্নের শহরে রুপায়িত করেছেন তারই পরম তুলির আঁচরে। কথা বলে জানলাম গত ১৯৯৪ থেকে এখন অবধি সূদীর্ঘ পথ পারি দিয়ে কাজ করছেন রাজশাহী, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, পীরগাছা(রংপুর) ও লালমনিরহাট অঞ্চলে। আলপনা, ফম ফন্ট ডিজাইন, বিয়ের যাবতীয় সাজ সজ্জা, বর কনে ও বিয়ের গাড়ি সাজানো, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ব্যানার, পাথর খুদাই সহ হরেক রকম কাজের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট ফিরোজ ভাইয়া। কুড়িগ্রামের সাথে সাথে বাহিরে অনেক কদর এবং দর আছে উনার কাজের। শিল্পমনা মানুষটি তার পরিবারকেও গড়ে তুলেছেন সেভাবে। এখন সুখে দিন কাটে অল্প আয়েও। স্বপ্ন দেখেন বড় একটা পুষ্প ভান্ডার করবেন। সেখানে আরো থাকবে ডিজিটাল অনেক যন্ত্রপাতি। যা তার কাজগুলোকে সহজ করে দিবে অনেকাংশে। স্বপ্ন পুরোন হোক ফিরোজ ভাইয়ের, সুখ অসীম সুখ ধরা দেক তার সংসারে। আমাদের সকলের অনুপ্রেরনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হোক ফিরোজ ভাইয়া।

কুড়িগ্রামের জন্য কুড়িটি দাবি


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
চিলমারী টু ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু, রৌমারী পর্যন্ত রেললাইন ও গ্যাসলাইন সম্প্রসারণ, ৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিশ্ববিদ্যালয় চালু ও নির্বাচনী আইন সংস্কারসহ 'কুড়িগ্রামের জন্য কুড়িটি দাবি' সংসদ প্রার্থীদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি।
মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে তারা বলেন, গণকমিটি জন্মের পর থেকে দৃঢ়ভাবে একটানা লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে চিলমারীতে পেদীখাওয়া বাঁধের ক্ষতিপূরণ আদায়, চিলমারীকে রক্ষায় ব্রহ্মপুত্রের ডানতীর রক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ণ, রমনা লোকাল দুইবার চলাচল, বাঁধের বাসিন্দাদের সম্মতিবিহীন ও পুনর্বাসনহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ ও চিলমারী নদীবন্দর চালুর দাবি প্রতিষ্ঠা; উলিপুরে বুড়িতিস্তা আন্দোলন, সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের গঙ্গাধর নদী অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকানোসহ জেলা সদরে একটি শাটল ট্রেন আদায় করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নদনদীর ড্রেজিং এর প্রতিশ্রুতি আমরা পেয়েছি।
আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, রেলমন্ত্রীর সাক্ষাৎ আমরা পেয়েছি কিন্তু নিজ এলাকার সাংসদরা দরখাস্তে সুপারিশ তো দূর কি বাৎ, সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেননি। সাক্ষাৎ এর জন্য তাজুল চৌধুরীর পিএস ঘুষ পর্যন্ত নিয়েছে। তাই ভোটের আগে সাফ কথা জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের দাবিগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্ত করা না হলে ব্যালটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব আমরা দিব।

আমাদের দাবিসমূহ :
১. চিলমারী টু ঢাকা রুটে ভাওয়াইয়া এক্সপ্রেস চালু।
২. ভূরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী, রৌমারী-রাজীবপুর ও কুড়িগ্রামের বাকি অংশে ১ টি করে মোট ৩ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন।
৩. চিলমারী টু রৌমারী/রাজীবপুর নৌ রুটে ফেরী সার্ভিস চালু।
৪. সোনাহাট টু কুড়িগ্রাম ও রৌমারী টু জামালপুর রেল লাইন চালু ও চিলমারী নদীবন্দর বাস্তবায়ন।
৫. রৌমারীকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর স্থাপন ও ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করা।
৬. ব্রহ্মপুত্রসহ সকল নদনদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে কৃষি জমিসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা করা।
৭. ব্রহ্মপুত্রের খনিজ সম্পদ ব্যবহারপূর্বক কাঁচ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প স্থাপন এবং বাকি বালু দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের দুই পাশে শহর গড়ে তুলে চরবাসিকে আধুনিক জীবনের সাথে যুক্ত করা।
৮. ব্রহ্মপুত্রে চরে হারিয়ে যাওয়া বন পুনরুদ্ধার করে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি ও মাছ-পাখি-কাছিম-শুশুকের বাস্তুসংস্থান নিশ্চিত করা।
৯. ৩শ মেঃওয়াট সম্পন্ন কয়েকটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা।
১০. আগামি ৫ বছরে রাষ্ট্রীয় খরচে ৫লক্ষ শ্রমিককে বিদেশে প্রেরণ করতে হবে।
১১. লালমনিরহাটে বিমানবন্দর ও আধুনিক রেলকারখানা স্থাপন করতে হবে।
১২. নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করতে হবে।
১৩. কুড়িগ্রাম জেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা ও ব্রহ্মপুত্রের তীর ধরে উলিপুর-চিলমারী ব্যাপী মেরিন ড্রাইভ সড়ক স্থাপন করা।
১৪. চরগবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা।
১৫. হাটগুলোতে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন ও হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
১৬. চিলমারী-হরিপুর সেতুর নকশাঁয় রেলপথ যুক্ত করা।
১৭.দেশের প্রতিটি উপজেলায় সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপন ও অডিটরিয়ামগুলোকে সংস্কার করা এবং প্রতিটি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘর স্থাপন।
১৮. অবৈধ ফকরুদ্দীন সরকারের দল নিবন্ধন আইন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার আইন বাতিলের দাবি তোলা।
১৯. এক স্তরের সরকারের বদলে দুই স্তরের সরকারের দাবি তোলা। যেন কেন্দ্রীয় সরকার ও সাংসদগণ শুধু আইন প্রবর্তন করবেন আর স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা উন্নয়ন কাণ্ড পরিচালনা করবেন। এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণকে যেকোন সময় প্রত্যাহার করা যায়।
২০. ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ৭০ অনুচ্ছেদ সংস্কার পূর্বক জনগণের হাতে ফেরান, প্রধানমন্ত্রী নামক পদের বদলে সবার হাতে ক্ষমতার বন্টন এর দাবি সংসদে তুলতে হবে।
জেলা কমিটির সভাপতি সালেহা ইয়াসমিন লাইলীর সভাপতিত্বে দাবিনামা পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট প্রদীপ কুমার রায়। এছাড়াও জেলা ও উপজেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

নানা রকমের সময় | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



স্থানীয় সময়, স্থানীয় মধ্য সময়, প্রমাণ সময় ইত্যাদি বিষয়গুলির ঠিকঠাক সংজ্ঞা ভূগোল বইগুলিতে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে অনেকের নানা অসম্পূর্ণ ও ভুল ধারণা আছে বলে আমি লক্ষ করেছি। যেমন ধরুন কেউ কেউ মনে করেন যে গ্রীণিচের স্থানীয় সময়কে গ্রীণিচের মধ্য সময় বা GMT (Greenwich mean time) বলে। আসলে কিন্তু তা নয়। ওরা 'Greenwich mean time' শব্দগুচ্ছে mean শব্দটির তাৎপর্য্য না বুঝে বিষয়টি ভুল বুঝে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে গ্রীণিচের স্থানীয় মধ্যসময়কে GMT বলে (স্থানীয় সময়কে নয়)। বর্ত্তমান নিবন্ধে এই বিষয়গুলি আলোচনা করছি, যা ভূগোলের শিক্ষকশিক্ষিকা ও ছাত্রদের এবং আগ্রহী সকলের খুব কাজে লাগবে বলে আমি আশা করি। এখানে আপাত সূর্য্য (apparent sun), মধ্যসূর্য্য (astronomical mean sun), স্থানীয় সময় (local time), মধ্যসময় (local mean time), কাল সমীকরণ (local mean time) ইত্যাদি বিষয়গুলির কথা আলোচনা করা হবে।

কোনো স্থানে সূর্য্যঘড়ি যে সময় দেয় তাকে ঐ স্থানের স্থানীয় সময় (local time) বলে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা হিসাবে সূর্য্য খুব একটা ভাল নয়। সূর্য্যঘড়ি সারা বছর ঠিক সময় দেয় না। একটা সংশোধনের দরকার হয়। ঐসংশোধনটা কবে কত (সূর্যঘড়ি কতটা স্লো বা কতটা ফাস্ট) তার গাণিতিক হিসাব আছে। প্রশ্ন: ঋতুভেদে দিনরাত্রির হ্রাসবৃদ্ধি হয়, কিন্তু দিনরাত্রি মিলে সর্বদা ২৪ ঘণ্টাই থাকে কি? যদি তা থাকত, অর্থাৎ সূর্য যদি বছরের প্রতিদিনই ঠিক ২৪ ঘণ্টায় এক পাক খেত (আপাত), তাহলে ঋতুভেদে সূর্যঘড়িতে কোনো পরিবর্তন দরকার হত না। কিন্তু সৌরদিন সর্বদা সমান (২৪ ঘণ্টা) থাক না — কখনো একটু বেশী, কখনো একটু কম হয়। বছরের নানা তারিখে সৌরদিনের মান দেখুন:

 তারিখ সৌরদিন 
 ১লা জানুয়ারী ২৪ ঘণ্টা - ২৫.৩ সেকেণ্ড ( - মানে 'মাইনাস')
 ১৫ই ফেব্রুয়ারী  ২৪ ঘণ্টা -২.৮ সেকেণ্ড 
 ১লা এপ্রিল ২৪ ঘণ্টা -১৭.৯ সেকেণ্ড
 ১লা জুলাই  ২৪ ঘণ্টা -১১.৬ সেকেণ্ড
 ১৫ই সেপ্টেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +১৮.৯ সেকেণ্ড
 ১৫ই অক্টোবর  ২৪ ঘণ্টা +১৩.৪ সেকেণ্ড
 ১লা নভেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +১.৭ সেকেণ্ড
 ১৫ই ডিসেম্বর  ২৪ ঘণ্টা +২৮.৮ সেকেণ্ড

তালিকায় দখছেন ১লা জানুয়ারী সেৌরদিন ২৪ ঘণ্টার চয়ে ২৫.৩ সেকেণ্ড কম, ১৫ই অক্টোবর ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১৩.৪ সেকেণ্ড বেশী। সৌরদিনের গড় মান ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু সারা বছর ধ'রে সেৌরদিনর মান কিছুটা বাড়া-কমা করে (সৌরদিনর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মানের পার্থক্য প্রায় ৫৭ সেকেণ্ড)। এই বাড়া-কমার কারণ কী? পৃথিবী কি নিজ অক্ষে কখনো ধীরে, কখনো দ্রুত ঘোরে? না, তা নয়। পৃথিবীর অক্ষাবর্তন যথেষ্ট নিয়মিত। কিন্তু পৃথিবীতে দিনরাত্রির আবর্তনে আহ্নিকগতি  ছাড়া পৃথিবীর বার্ষিকগতিরও একটু প্রভাব আছে। সেটা সারা বছর সমান নয়। পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্য্যের চারদিকে ঘোরে। কক্ষপথের সব জায়গায় পৃথিবীর বেগ সমান থাকে না। এর ফলেই সারা বছর জুড়ে সেৌরদিনের একটু বাড়া-কমা হয়।

আকাশে সূর্যের দৈনিক আবর্তন সম্পূর্ণ নিয়মিত নয় — সূর্য কখনো একটু স্লো, কখনো একটু ফাস্ট ঘোরে। ঘড়ির কাঁটা হিসাবে সূর্য আদর্শ নয়। সূর্য্যঘড়ির এই অসুবিধা এড়াতে একটা কাল্পনিক সূর্যের কথা ভাবা হয় যা সর্বদাই ঠিক ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবীকে এক পাক খায়। একে মধ্য সূর্য্য (astronomical mean sun) বলে। সূর্যঘড়ি অনুযায়ী যে সময় তাকে স্থানীয় সময় (local time) এবং মধ্য সূর্য্য অনুযায়ী যে সময় তাকে স্থানীয় মধ্য সময় (local mean time) বলে। আমাদের হাতঘড়িগুলি চলে মধ্য সময় অনুযায়ী।

স্থানীয় সময় থেকে স্থানীয় মধ্য সময়কে বিয়োগ করলে বিয়োগ ফলকে কাল সমীকরণ (equation of time) বলে। অর্থাৎ, কাল সমীকরণ = স্থানীয় সময় (সূর্য্যঘড়ির সময়) - স্থানীয় মধ্য সময়। বা, স্থানীয় মধ্য সময় = স্থানীয় সময় (সূর্য্যঘড়ির সময়) - কাল সমীকরণ। কাল সমীকরণের মান বছরের কবে কত তার একটা তালিকা দিই:

 তারিখ          কাল সমীকরণ           
 ০১ Jan         -০৩ মি. ৪৫ সে.   ( - মানে 'মাইনাস')
 ১৫ Jan         -০৯ মি. ৩৪ সে.         
 ০১ Feb          -১৩ মি. ৩৮ সে.         
 ১৫ Feb          -১৪ মি. ৭ সে.           
 ০১ Mar          -১২ মি. ২১ সে.         
 ১৫ Mar          -০৮ মি. ৫১ সে. 
 ০১ Apr          -০৩ মি. ৪৮ সে. 
 ১৫ Apr         -০২ সে.                     
 ০১ May       -০২ মি. ৫৭ সে. 
 ১৫ May       -০৩ মি. ৪০ সে. 
 ০১ June       -০২ মি. ৯ সে. 
 ১৫ June        -৩১সে.
০১ Jul          -০৩ মি. ৫৩ সে.
১৫ Jul          -০৫ মি. ৫৯ সে.
০১ Aug      -০৬ মি. ১৮ সে.
১৫ Aug         -০৪ মি. ২৪ সে.
০১ Sep         +০৬ সে.
১৫ Sep         +০৪ মি. ৫৫ সে.
০১ Oct         +১০ মি. ২৬ সে.
১৫ Oct       +১৪ মি. ১৭ সে.
০১Nov          +১৬ মি. ২৪ সে.
১৫ Nov     +১৫ মি. ২০ সে.
০১ Dec      +১০ মি. ৫০ সে.                 
১৫ Dec      +০৪ মি. ৪১ সে.

কাল সমীকরণ হচ্ছে সূর্য্যঘড়ি বছরের কবে কতটা স্লো বা ফাস্ট যায় তার হিসাব। ফেব্রুয়ারী মাসে সূর্য্যঘড়ি প্রায় ১৪ মিনিট স্লো যায়, তখন সূর্যঘড়ির সময়ের সঙ্গে ১৪ মিনিট যোগ করলে তবে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যাবে। মে মাসে সূর্যঘড়ি ৩-৪ মিনিট ফাস্ট যায়, তখন সূর্য্যঘড়ির সময় থেকে ঐ ৩-৪ মিনিট বিয়োগ করলে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যাবে। উপরের তালিকায় সূর্য্যঘড়ি স্লো গেলে কাল সমীকরণকে ঋণাত্মক এবং ফাস্ট গেলে কাল সমীকরণকে ধনাত্মক ধরা হয়েছে। সূর্যঘড়ির সময় থেকে কাল সমীকরণকে বীজগাণিতিক প্রথায় বিয়োগ করলে স্থানীয় মধ্য সময় পাওয়া যায়। ১৬ই এপ্রিল, ১৪ই জুন, ১লা সেপ্টেম্বর, ২৫শে ডিসেম্বর — এই চারটি দিনে কাল সমীকরণের মান প্রায় শূন্য। এই দিনগুলিতে স্থানীয় সময় ও স্থানীয় মধ্য সময় একই। এই দিনগুলিতে সূর্য (বাস্তব সূর্য্য) এবং মধ্য সূর্য্য একই সঙ্গে মধ্যরেখা অতিক্রম করে। বছরের বিভিন্ন তারিখে কাল সমীকরণের মান নিয়ে একটি লেখচিত্র অঙ্কন করলে কেমন হবে তা সঙ্গের ছবিতে দেখানো হয়েছে।

সূর্য্যঘড়ির সময় থেকে ভারতীয় প্রমাণ সময় কী ক'রে বের করা যায় তা বলি। সূর্য্যঘড়ির সময় দেখুন (এটি আপনার স্থানের স্থানীয় সময়)। আপনার স্থানটি এলাহাবাদের পূর্বদিকে হলে প্রতি ডিগ্রী দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সূর্যঘড়ির সময় থেকে ৪ মিনিট সময় বিয়োগ করুন, স্থানটি এলাহাবাদের পশ্চিমে হলে ঐসময়টা যোগ করুন। পেলেন এলাহাবাদের স্থানীয় সময়। এলাহাবাদের স্থানীয় সময় থেকে ঐদিনের কাল সমীকরণ বিয়োগ করলে পাবেন এলাহাবাদের স্থানীয় মধ্য সময় বা ভারতের প্রমাণ সময়।

পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের বিস্তৃতি ৬৮°৭′ পূর্ব দ্রাঘিমা (অরুণাচলের পূর্ব সীমান্ত) থেকে ৯৭°২৫′ পূর্ব দ্রাঘিমা (গুজরাটের পশ্চিম সীমান্ত) পর্যন্ত। দুই দ্রাঘিমার পার্থক্য ২৯°১৮′ বা প্রায় ৩০°। ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় প্রায় ৪ মিনিট। তাহলে ৩০° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য প্রায় ১২০ মিনিট বা ২ ঘণ্টা। অরুণাচলে যখন সূর্য্য অস্ত যায় গুজরাটে তার প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক পরে অস্ত যায়। পূর্ব-পশ্চিমে ভারতের প্রায় মাঝখানে অবস্থিত এলাহাবাদের শহরের (৮২.৫° পূর্ব দ্রাঘিমা) স্থানীয় মধ্য সময় অনুযায়ী সারা ভারতের রেল, ডাক, বেতার এবং প্রশাসনিক কাজকর্ম ইত্যাদি চালানো হয়। এলাহাবাদের স্থানীয় মধ্য সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় বলে।

আশা করি এখন বিষয়গুলি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হল। সকলকে ধন্যবাদ।

সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার এবং সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব | শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র



সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার এবং সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বতত্ত্ব বিষয়ে সামোসের অ্যারিস্টার্কাসের গবেষণা

খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে সামোসের অ্যারিস্টার্কাস (৩১০-২৩০ খ্রীঃপূঃ) অর্ধচন্দ্র ও সূর্য্যের কৌণিক দূরত্বের পরিমাপ করে এবং চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্ব থেকে পৃথিবী থেকে সূর্য্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত এবং এই তিনি জ্যোতিষ্কের ব্যাসের অনুপাত নির্ণয় করেন। তাঁর পদ্ধতিটা খুবই সহজ। তবে তাঁর পরিমাপে কিছুটা ভুল হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন সূর্য্য চাঁদের ১৯ গুণ দূরে আর তার ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ৬.৭ গুণ। আজকের দিনে আমরা জানি যে সূর্য্য চাঁদের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ দূরে আর তার ব্যাস পৃথিবীর প্রায় ১১০গুণ (চাঁদের ব্য়াসের প্রায় ৪০০ গুণ)। পরিমাপে ভুল করলেও সূর্য যে পৃথিবীর চেয়ে অনেক গুণ বড়, তা তিনি প্রমাণ করেছিলেন। তাঁর গবেষণার ফলাফল ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বে তাঁর অনাস্থা এনে দেয়। সূর্য এত বড়, পৃথিবী এত ছোট — তাহলে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরবে কী ক'রে? তাঁর সাধারণ বুদ্ধিতে মনে হল একটা বড় বস্তুর চারদিকেই একটা ছোটো বস্তুর ঘোরা উচিত। তখন তিনি বললেন যে আকাশের বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনির মতো পৃথিবীও একটি গ্রহ আর সব গ্রহই আসলে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। এছাড়া পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের কথাও তিনি বলেছিলেন। কোপার্নিকাসের বহু (প্রায় ১৮০০ বছর) আগে সৌরজগতের সম্পূর্ণ তত্ত্বটাই তিনি উপস্থাপন করেছিলেন। তবে প্রাচীনকালের মানুষ তাঁর কথা মানেনি।

অ্য়ারিস্টার্কাস কী করে সূর্য্য ও তাঁদের দূরত্বের অনুপাত বের করেছিলেন তা বুঝতে গেলে সঙ্গের ছবি দেখুন। অর্ধচন্দ্র সূর্যের সঙ্গে নিঁখুত সমকোণ করে না, কোণটার মান ৯০° অপেক্ষা কিছু কম। কতটা কম? সেটাই আপনাকে মেপে দেখতে হবে। তাহলেই বের করতে পারবেন সূর্য চাঁদের কতগুণ দূরে। ছবিতে চাঁদের CD ব্যাসটা বাড়িয়ে দিলে পৃথিবীতে পৌঁছাচ্ছে। AB ব্যাসটা তার সমকোণে, সেটা বাড়িয়ে দিলে সূর্যে পৌঁছায়। আপনি পৃথিবী থকে চাঁদের ADB  অর্ধাংশকে দেখতে পাবেন। সেটা একটা অর্ধ গোলক। সূর্যের আলো পড়ছে চাঁদের CBD অর্ধ গোলকে। পৃথিবী থেকে আপনি যে ADB  অংশ দেখছেন তার শুধু ODB  অংশ আলোকিত। AOD অংশে আলো পড়ছে না। ফলে আপনি যতটা দেখছেন তার পূর্বের অর্ধাংশ AOD  কালো আর পশ্চিমের অর্ধাংশ BOD আলোকিত। এজন্য আপনি দেখবেন আধখানা চাঁদ। ঐ অর্ধেন্দু কিন্তু আসলে চাঁদের গোলকের এক-চতুর্থাংশ। অতদূরে দৃষ্টির গভীরতা  কাজ করে না বলেই অমন (অর্ধবৃত্তাকার চাকতির মতো) দেখায়। ছবিতে চাঁদের কলা ½ (অর্ধচন্দ্র) বলে AB ও CD পরস্পর লম্ব।  AB সূর্যে পৌঁছায়, CD পৃথিবীতে। D বিন্দু ADB চাপটির মধ্য বিন্দু হবে। তাই ∠EOS=৯০°। অতএব ∠AES-এর মান ৯০° অপেক্ষা কম হবে। কারণ ত্রিভুজের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০°। সূর্যের দূরত্ব অসীম নয় বলে ∠ESO-র মান শূন্য হতে পারে না। পৃথিবী থেকে সূর্যকে দেখি ES রেখায়, চাঁদকে EO রেখায়। সূর্য ও চাঁদের কৌণিক ব্যবধান তাই ∠OES, এই কোণটা ৯০° অপেক্ষা কম। পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় ∠OES-এর মান প্রায় ৮৯পূর্ণ৬/৭°। আমাদের চাই সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত, অর্থাৎ ES/EO । কী ক'রে সেটা পাব? খুব সহজ: △EOS আঁকুন যাতে ∠SOE=৯০°, ∠SEO= ৮৯পূর্ণ৬/৭° (প্রায়) এবং∠ESO= ⅐°(প্রায়) হয়। ES এবং EO-এর দৈর্ঘ্য স্কেল দিয়ে মেপে নিয়ে ভাগ ক'রে ফেলুন, তাহলেই হল। ত্রিভুজটা বড় আঁকুন, ছোটো আঁকুন তাতে কোন অসুবিধা নেই; যদি কোণগুলি একই থাকে তবে ES/EO-এর মান সর্বদা একই পাবেন। এর কারণ সদৃশকোণী ত্রিভুজের অনুরূপ বাহুগুলি সমানুপাতিক। অবশ্য আপনাকে বডে়া করেই ত্রিভুজটা আঁকতে হবে। তাছাড়া  ⅐° কোণ আঁকা সহজ নয়। ES/EO  হচ্ছে ∠ESO (=⅐°)–এর সাপেক্ষে অতিভুজ ও লম্বের অনুপাত। ত্রিকোণমিতিতে একে বলে cosec ⅐°। ত্রিকোণমিতির তালিকা থেকে পাওয়া যায় cosec⅐°=৪০০ (চার শত, প্রায়)। অর্থাৎ সূর্য চাঁদের ৪০০ (চার শত) গুণ দূরে। ত্রিকোণমিতি জানলে আপনাকে বিরাট ত্রিভুজ অঙ্কন ক'রে মাপজোক করতে হবে না। ত্রিকোণমিতিক তালিকা দেখেই উত্তরটা পেয়ে যাবেন।

অর্ধচন্দ্র যে সূর্যের সঙ্গে 89⁶/₇° (৮৯পূর্ণ৬/৭°)কোণ ক'রে থাকে (পৃথিবীতে বা আপনার চোখে) সেটা মাপবেন কী ক'রে? মাপা যায়, তার অনেক উপায় আছে। প্রাচীনকালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নিজের হাতে কোণ মাপার যন্ত্র তৈরী করতেন। আজকাল অনেক ভাল ভাল সেক্সট্যাণ্ট যন্ত্র পাওয়া যায়। অ্যারিস্টার্কাস যে কী কায়দায় ঐকোণটা মেপেছিলেন তা আমার জানা নেই। আর একটা অসুবিধা আছে। চাঁদ যে কখন আধখানা হল তা বুঝবেন কী ক'রে? আলো-আঁধারের সংযোগস্থল ঠিক কখন সরলরেখা হল, খালি চোখে তার সঠিক সময়টা বোঝা কষ্টকর। দূরবীণে আরো সহজে বোঝা যায়। অ্যারিস্টার্কাসের ভুলটা এখানেই হয়েছিল। তিনি সূর্য ও অর্ধচন্দে্রর মধ্যবর্তী কোণটা ৮৯পূর্ণ৬/৭°-এর বদলে পেয়েছিলেন ৮৭°। তাই তিনি বলেছিলেন সূর্য চাঁদের ১৯ গুণ দূরে (আসলে ৪০০গুণ হবে)।

সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাত ৪০০ বলে তো জানলাম, তাদের ব্যাসের অনুপাত কত? খুব সহজ, সূর্যের ব্যাসও চাঁদের ব্যাসের ৪০০ গুণ। কারণ আকাশে চাঁদ ও সূর্য উভয়ের চাকতিই সমান মাপের দেখায়। সূর্যের ব্যাস চাঁদের ৪০০ গুণ এবং দূরত্বও ৪০০ গুণ, তাই সূর্যকে চাঁদের সমান দেখায় (প্রায়)। চাঁদ ও সূর্যের চাকতি যে প্রায় সমান আকারেরই দেখায় তা বুঝবেন কী ক'রে? ভেবে দেখুন, চাঁদের চাকতি সূর্যের চাকতির চেয়ে ছোটো হলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় তা পুরো সূর্যকে অল্প সময়ের জন্য (বড়জোর কয়েক মিনিট) ঢেকে দেয় কী ক'রে? মাঝে মাঝে আবার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ হয়, তখন গ্রহণগ্রস্ত সূর্যের একেবারে কিনারার দিকে আলো থাকে। তখন চাঁদের চাকতি সূর্যের চাকতির চেয়ে একটুখানি ছোটো থাকে বলে চঁাদ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢাকতে পারে না, কিনারায় বলয়ের মতো একটু সরু আলোকিত ফালি থেকে যায়। পৃথিবী থেকে সূর্য বা চাঁদ কারও দূরত্বই সর্বদা সমান থাকে না। তাই তাদের চাকতিগুলির ব্যাস সর্বদা সমান দেখায় না। কিন্তু পৃথিবী থেকে তাদের আপাত আকারটা গড়ে আমরা প্রায় সমান সমানই দেখি। মাপজোক ক'রেও এটা প্রমাণ করা যায়। চাঁদের চাকতির একটি ব্যাসের দু'টি প্রান্ত থেকে আপনার চোখ পর্যন্ত দু'টি রেখা টানলে তারা প্রায় ½° কোণ তৈরী করে। একে বলে চাঁদের কৌণিক ব্যাস। সূর্যের কৌণিক ব্যাসও ½° (প্রায়)।

এখন প্রশ্ন: অ্যারিস্টার্কাস কী করে সূর্য্য, চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত মাপলেন? চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়ে। সেই ছায়ার ব্যাস মেপে আমরা সূর্য ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত জানতে পারি, কারণ পৃথিবী থেকে সূর্য ও চাঁদের দূরত্বের অনুপাতটা আমাদের জানা।পৃথিবীর ছায়াটা শঙ্কুর মতো সরু হয়ে মিলিয়ে যায়, তার কারণ সূর্য পৃথিবীর চেয়ে বড়। তা না হলে ছায়াটা ক্রমাগত সরু হওয়ার পরিবর্তে উল্টানো শঙ্কুর মতো মোটা হতে থাকত। তাহলে পৃথিবী নয়, সূর্যই বড়। কতগুণ বড়? সেটা বের করতে গেলে চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়া চাকতির কৌণিক ব্যাস জানতে হবে। চন্দ্রগ্রহণের স্থায়িত্ব থেকে সেটা জানা যেতে পারে।
চাঁদর কৌণিক ব্যাস ½°। চাঁদর দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার কৌণিক ব্যাস, ধরুন, x°। ছায়াটা আর চাঁদ যদি পরস্পরক মাঝ বরাবর অতিক্রম করে তবেই গ্রহণের স্থায়িত্ব সবচেয়ে বেশী হবে। আমরা আকাশে সূর্য্যকে (ও তার উল্টাদিকে পৃথিবীর ছায়াকেও) ঘণ্টায় ১৫° এবং চাঁদকে ঘণ্টায় ১৪.৫° করে ঘুরতে দেখি। তাহলে চাঁদের দিকে পৃথিবীর ছায়াটা ঘণ্টায় (১৫°-১৪.৫°) বা ½° ক'রে এগোয়। যদি পৃথিবীর ছায়া এবং চন্দ্রবিম্ব কেন্দ্র বরাবর পরস্পরকে অতিক্রম করে তাহলে পৃথিবীর ছায়াকে নিজের ও চাঁদের ব্যাসের যোগফলের সমান (½°+x°) পথ অতিক্রম করতে হবে। পৃথিবীর ছায়া চাঁদের দিকে প্রতি ঘণ্টায় ½° এগিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে চন্দ্রগ্রহণ সর্বোচ্চ পৌনে চার ঘণ্টা (৩.৭৫ ঘণ্টা) পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তার অর্থ ছায়াটা মোট ½°x৩.৭৫ বা, ১.৮৭৫° যায়। এর থেকে চাঁদের চাকতির ব্যাস ½° বাদ দিলে বাকী (১.৮৭৫-½°) বা ১.৩৭৫° হল পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস। এই ব্যাস চাঁদের ব্যাসের ১.৩৭৫/½ বা ২.৭ গুণ (প্রায়)। মানে চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস চাঁদের ব্যাসের ২.৭ গুণ। এবার সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর কতগুণ তা সহজ অঙ্ক কষেই বের করা যায়। আপনারা সে অঙ্ক কষার চেষ্টা করতে পারেন (না পারলে বর্ত্তমান লেখকের 'প্রাথমিক জ্য়োতির্বিজ্ঞান' গ্রন্থ দেখতে পারেন)। অঙ্ক কষে দেখুন যে, সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ১১০ গুণ। আয়তন ব্যাসের ঘনের সমানুপাতিক বলে সূর্যের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ১১০-এর ঘন বা প্রায় ১৩,০০,০০০ গুণ হবে। অর্থাৎ, সূর্যের পেটে প্রায় তের লক্ষ পৃথিবী এঁটে যাবে!

চাঁদ ও পৃথিবীর ব্যাসের অনুপাত কত? আমরা চাঁদের ব্যাস ১ ধরলে সূর্যের ব্যাস=৪০০। সুতরাং পৃথিবীর ব্যাস=সূর্যের ব্যাসের ১১০ ভাগের এক ভাগ=৪০০/১১০=৩.৬ (প্রায়)। তাহলে পৃথিবীর ব্যাস ও চাঁদের ব্যাসের অনুপাত=৩.৬ঃ১, মানে চাঁদের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের চারভাগের একভাগ প্রায় (তার চেয়ে কিছু বেশী)। অবশ্য বিজ্ঞানীরা আরো ভাল ক'রে হিসাব ক'রে দেখেছেন ৩.৬-এর চেয়ে ৩.৭ সংখ্যাটাই আরও সঠিক। তাহলে পৃথিবীর আয়তন চাঁদের (৩.৭)-এর ঘন বা ৫০ গুণ (প্রায়)।

অ্যারিস্টার্কাসের হিসাবে অবশ্য চাঁদের দূরত্বে পৃথিবীর ছায়ার ব্যাস চাঁদের দ্বিগুণ। আর তিনি তাঁর হিসাবে সূর্যের দূরত্ব চাঁদের দূরত্বের ১৯ গুণ পেয়েছিলেন। সেই মতো তিনি বলেছিলেন সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ৬.৭ গুণ এবং আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৬.৭-এর ঘন বা ৩০০ গুণ (প্রায়)। পরিমাপে ভুল হলেও তাঁর পদ্ধতিটা সঠিক, এখানেই তাঁর কৃতিত্ব। তাঁর পদ্ধতি অবলম্বন ক'রে আজকের দিনে আমরা সঠিক পরিমাপ পেতে পারি।

সূর্য যখন পৃথিবীর চেয়ে অত বড় তখন পৃথিবীর চারদিকে সূর্য না ঘুরে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘোরাটাই তাঁর স্বাভাবিক বলে মনে হল। বুধ আর শুক্র যে সূর্যের চারদিকে ঘোরে সেকথা আগেই বলে গিয়েছিলেন পন্টুসের হেরাক্লিদেস (৩৮৮-৩১৫ খ্রীঃপূঃ)। হেরাক্লিদেস আরো বলেছিলেন তারায় ভরা আকাশ নয়, পৃথিবীটাই পশ্চিম থেকে পূর্বে রোজ এক পাক ক'রে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী থেকে ধ্রুবতারা পর্যন্ত রেখাটাকে অক্ষ ক'রে। এরই ফলে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার প্রত্যহ পূর্ব থেকে পশ্চিমে গতি লক্ষ্য করা যায়। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বার্ষিক গতির কথা অবশ্য হেরাক্লিদেসের মাথায় আসেনি। সেটা এল অ্যারিস্টার্কাসের মাথায়। তিনি বিশ্বজগতের কেন্দ্র থেকে পৃথিবীকে হটিয়ে সেখানে সূর্যকে বসালেন। বললেন বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি সবাই সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর আকাশের তারারা আছে সেখান থেকে বহু গুণ দূরে। সেইসঙ্গে হেরাক্লিডিস উদ্ভাবিত পৃথিবীর আহ্নিক গতির কথাও তিনি স্বীকার ক'রে নিলেন। এই আহ্নিক গতির জন্যই সূর্য-চন্দ্র-গ্রহ-তারার দৈনিক উদয়-অস্ত হয়। আর বার্ষিক গতির জন্য কী হয়? সেজন্য তারাদের পটভূমিতে সূর্যকে রোজ প্রায় ১° ক'রে পশ্চিম থেকে পূর্বে সরে যেতে দেখি। পৃথিবী তার কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূর্বে যত ঘুরবে, সূর্যকে তত পশ্চিম থেকে পূর্বে এক তারা ছেড়ে অন্য তারায় আসতে দেখা যাবে। এক বছর পরে সে আবার ফিরে আসবে আগের তারাটির পাশে। তারারা যে সূর্যের চেয়ে বেশী দূরে তা কিন্তু খালি চোখে আমরা বুঝতে পারি না। এর কারণ আমাদের দৃষ্টির গভীরতা অত দূরে কাজ করে না। পৃথিবী থেকে দেখে মনে হয় চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা সবাই সমান দূরে, তাই আকাশটা একটা ফাঁকা গোলকের মতো মনে হয়। আর মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনির রোজ পূর্বে উদয় ও পশ্চিমে অস্ত যাওয়া পশ্চিম থেকে পূর্বে পৃথিবীর অক্ষাবর্তনের ফল। তারা যে সূর্যের চারদিকেও ঘোরে তা বুঝবেন কী ক'রে? সেটা বোঝা যায় তারাও পশ্চিম থেকে পূর্বে একতারা ছেডে় অন্য তারায় আসে বলে। তারাদের পটভূমিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে পুরো এক পাক খেতে মঙ্গলের ৬৮৭ দিন, বৃহস্পতির ১২ বছর, শনির ২৯½ বছর লাগে। এই গতি আসলে তাদের সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর চেয়েও দূরে থেকে আবর্তনের ফল। তবে মাঝে মধ্যে গ্রহগুলি পশ্চিম থেকে পূর্বের তারায় না এসে পূর্ব থেকে পশ্চিমের তারার দিকে যায়, একে বলে বক্রগতি। এটা কেন হয়? মঙ্গলের কথা ভাবুন। সূর্যের চারদিকে নিজ নিজ কক্ষে ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবী আর মঙ্গল একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাশাপাশি এসে পড়ে। তখন অপেক্ষাকৃত দ্রুতগামী পৃথিবী মঙ্গলকে অতিক্রম ক'রে চলে যায়। ফলে পৃথিবী থেকে দেখলে মনে হয় মঙ্গল যেন উল্টা দিকে যাচ্ছে। গ্রহদের বক্রগতির এই ব্যাখ্যা অ্যারিস্টার্কাস কতটা করতে পেরেছিলেন তা আমার জানা নেই। কোপার্নিকাস এই ব্যাখ্যাটা করেছিলেন। গ্রহগুলি পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে ভাবলে কেন তারা পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘুরতে ঘুরতে কখনো কখনো পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে এই খামখেয়ালিপনা ব্যাখ্যা করা দুষ্কর।

পৃথিবী যদি সূর্যের চারদিকে ঘোরে তবে সারা বছর জুড়ে নক্ষত্রমণ্ডলগুলির আকৃতিতে একটা পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা উচিত। কালপুরুষের কথা ভাবুন। পৃথিবীর কক্ষপথের বিভিন্ন অবস্থান থেকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণে দেখার জন্য সারা বছর তাকে একই রকম দেখার কথা নয়। পৃথিবীর আহ্নিকগতির জন্য যেমন তারাদের পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঘুরতে দেখা যায় তেমনি বার্ষিক গতির জন্যও তো তারাদের একটা গতি লক্ষ্য করা উচিত? পৃথিবীর কক্ষপথের একটা বিন্দু থেকে কালপুরুষকে আজকে যেমন দেখি, এক বছর পর পৃথিবী সেই বিন্দুতে ফিরে এলে তাকে আবার আগের মতোই দেখব কিন্তু ৬ মাস আগে-পরে দেখলেও কালপুরুষকে একই রকম দেখায় কেন? এর উত্তরে অ্যারিস্টার্কাস বললেন যে সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের ব্যাসের তুলনায় তারাদের দূরত্ব বহুগুণ বেশী। তাই পৃথিবীর বার্ষিকগতির জন্য তারাদের কোনো বার্ষিক লম্বন (পৃথিবীর বার্ষিক গতির জন্য তারাদের ঐগতিটাকে 'বার্ষিক লম্বন' বলে) দেখা যায় না। কক্ষপথে পরিক্রমণরত পৃথিবীকে নিয়ে সূর্য তারাদের দূরতে তুলনায় একটি বিন্দু বিশেষ। এইভাবে তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রসার বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন।

অ্যারিস্টার্কাসের চেয়ে প্রায় ২৩ বছরের ছোটো সমসাময়িক কালের শ্রেষ্ঠ পদার্থবিজ্ঞানী আর্কিমিডিস তাঁর বিখ্যাত 'Sand Reckoner' গ্রন্থে অ্যারিস্টার্কাসের এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধারণার কথা বলে গেছেন। আর্কিমিডিস তাঁর ঐ বইয়ে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বালুকণা দিয়ে ভর্তি করতে কতগুলি বালুকণা লাগবে সেই বিশাল সংখ্যাটি হিসাব করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছিলেন অ্যারিস্টার্কাসের ব্রহ্মাণ্ডের ধারণা। তবু, দুঃখের বিষয়, অার্কিমিডিস অ্যারিস্টার্কাসকে সমর্থন করেননি।

অ্যারিস্টার্কাস তাঁর সমসাময়িক কালের চেয়ে সহস্রাধিক বছর এগিয়ে ছিলেন। তাঁকে বোঝার মতো মানুষ তখন ছিল না। পশ্চিম এশিয়া মাইনরের সমুদ্র উপকূলের কাছে তখনকার দিনের বিখ্যাত নগরী মিলেটাসের সামোস দ্বীপে খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০ সালে তাঁর জন্ম। জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তখন মিলেটাস বা সামোস নয়, গ্রীসের মূল ভূখণ্ডের এথেন্সও নয়, তা তখন চলে গেছে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত গ্রন্থাগারে। সামোস দ্বীপেই জন্ম হয়েছিল বিখ্যাত পণ্ডিত পিথাগোরাসের, তাঁর প্রায় তিন শতাব্দী আগে। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় দুই শতাব্দী আগে মিলেটাসের উত্তরে ক্লাজোমেনায়ে জন্মেছিলেন অ্যানােক্সাগোরাস নামে আর এক পণ্ডিত। পেরিক্লিসের আমলে তিনি এথেন্সে এসেছিলেন। চাঁদের যে নিজস্ব আলো নেই, চাঁদ যে সূর্যালোকে আলোকিত হয় একথা তিনি বলেছিলেন। চেষ্টা করেছিলেন চন্দ্রকলার কারণ ব্যাখ্যা করার। তিনি আরো বলেছিলেন চাঁদ মৃত্তিকা দিয়ে তৈরী এবং সূর্য একটা বড়, উত্তপ্ত, অগ্নিময় প্রস্তর। বলেছিলেন সূর্য নাকি অনেক বড়, এমনকি সমগ্র পেলপনেসাসের চেয়েও বড়! তখনকার লোকেরা অ্যানােক্সাগোরাসের এইসব কথা মেনে নিতে পারেননি। তখন লোকে ভাবত সূর্য ও চন্দ্র দুই দেবতা বিশেষ। অ্যানােক্সোগোরাস পেরিক্লিসের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক ব্যক্তিত্বে পেরিক্লিস আকৃষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু পেরিক্লিসের শত্রুরা অ্যানােক্সাগোরাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে। ধর্মবিরুদ্ধ মতবাদ ও নাস্তিকতার অভিযোগে তাঁর কারাদণ্ড হয়েছিল। সম্ভবত পেরিক্লিস কোনোরকমে তাঁকে কারামুক্ত করতে পেরেছিলেন। অ্যানােক্সাগোরাস এথেন্স ত্যাগ ক'রে চলে যান। পরবর্তী কালে অ্যারিস্টটল বলেছিলেন চাঁদ কেন বাড়েকমে, গ্রহণ কেন হয় তা নিয়ে ভাবার কিছু নেই, ওটা চাঁদের স্বভাব। প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের চিন্তায় ছিল প্রধানত নীতিবাদ ও ধর্মের প্রাধান্য। অ্যারিস্টার্কাস জন্মেছিলেন অ্যারিস্টটলের প্রায় ৯৮ বছর পরে। তবু তাঁর সমসাময়িক আলেকজান্দ্রিয়ার বড় বড় পণ্ডিতেরা তাঁর যুগান্তকারী তত্ত্বটিকে সমর্থন করেননি। সেদিনকার চিন্তাবিদেরা তখনো অতটা সাহস অর্জন করতে পারেননি। ক্লিন্থেস নামে সমসাময়িক এক পণ্ডিত বলেছিলেন,“গ্রীকদের কর্তব্য সামোসের অ্যারিস্টার্কাসকে অধর্মের জন্য অভিযুক্ত করা। পর্যবেক্ষণলব্ধ কিছু ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে তিনি কিনা এই মহাবিশ্বের বাসগৃহ পৃথিবীকে বৃত্তপথে চলমান এবং ঘূর্ণায়মান ভেবেছেন !” প্রাচীনকালে শুধু একজন মাত্র পণ্ডিত অ্যারিস্টার্কাসকে সমর্থন করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি হলেন টাইগ্রিস নদী তীরের সেলেকিউস (জীবনকাল ১৫০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি)।

সৌরজগৎ নিয়ে অ্যারিস্টার্কাসের বইটি কিন্তু পাওয়া যায়নি। তাঁর শুধু একটি বইই পাওয়া গেছে, সেটির নাম 'সূর্য ও চাঁদের আকার ও দূরত্ব প্রসঙ্গে' (On The Size and Distances of the Sun and the Moon)। এই বইয়ে আছে শুধু চাঁদ ও সূর্যের দূরত্বের অনুপাত এবং সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের ব্যাসের অনুপাতের আলোচনা। সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বার্ষিকগতির কথা এ বইয়ে নেই। এর কারণ কী? সৌরজগতের তত্ত্ব তিনি যে সত্যি সত্যিই আবিষ্কার করেছিলেন সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর্কিমিডিস Sand Reckoner নামক বিখ্যাত গ্রন্থে অ্যারিস্টার্কাসের সৌরকন্দ্রিক তত্ত্বের কথা পরিষ্কার বলে গেছেন, এবং এই বিষয়ে আর্কিমিডিসের মতো বিদ্বাণের সাক্ষ্যকে চূড়ান্ত ধরার অসুবিধা নাই।

অ্যারিস্টার্কাসের সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গেলেও বেঁচে আছে তাঁর বিরুদ্ধে বহু পণ্ডিতের সমালোচনা। 'সূর্য ও চাঁদের আকার ও দূরতম প্রসঙ্গে' বইটিতে তিনি কেন ভূকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গী মেনে নিয়েছিলেন? অ্যানােক্সাগোরাসের দুর্দশার কথা আমরা জানি। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় ১৯০০ বছর পরে গ্যালিলিওর লা²নার কথাও আমরা জানি। হতে পারে এই ধরণের একটা ভীতি অ্যারিস্টার্কাসকে প্রভাবিত করেছিল। সূর্য ও চাঁদের আকার নির্ণয়ে যে পদ্ধতি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন তাতে ভূকেন্দ্রিক ও সৌরকেন্দ্রিক উভয় তত্ত্বেই কাজ চলে। তাই লোকে মেনে নেবে না ভেবে চট ক'রে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের কথা না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছিলেন। আবার এমনও হতে পারে যে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কার তাঁর  'সূর্য ও চাঁদের দূরত্ব ও আকার বিষয়ে' বইটি লেখার পরবর্তী কালের চিন্তা এবং গবেষণার ফল।

কোপার্নিকাস তাঁর সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন ১৫৪৩ সালে। অ্যারিস্টার্কাসের সঙ্গে তাঁর প্রায় ১৮০০ বছরের ব্যবধান। ভাবতে অবাক লাগে অ্যারিস্টার্কাস এত আগে বলে গেলেও গ্রহদের গতিরহস্য পরবর্তী ১৮০০ বছর ধ'রে মানুষ বুঝতে পারেনি! গ্যালিলিও বলেছিলেন যে কোপার্নিকাস সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের আবিষ্কর্তা নন, তিনি প্রাচীনকালের এই বিস্মৃতপ্রায় তত্ত্বটিকে উদ্ধার করেছিলেন। কোপার্নিকাস যখন ইটালীতে ডাক্তারী পড়তে গিয়েছিলেন তখন সদ্য আবিষ্কৃত প্রাচীন গ্রীক পণ্ডিতদের লেখাগুলি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কোপার্নিকাস কিন্তু অ্যারিস্টার্কাসের থেকে নকল করেননি। একটি চিঠিতে কোপার্নিকাস লিখেছেন,“সিসেরোর মতে সাইরাকিউজবাসী হিসেটাস পৃথিবীর গতির কথা বলেছিলেন। প্লুটার্কের মতে প্রাচীনকালে আরো কেউ কেউ এই মতে বিশ্বাসী ছিলেন।” এখানে প্লুটার্ক অ্যারিস্টার্কাসের কথা লিখেছিলেন। কাজেই কোপার্নিকাস অ্যারিস্টার্কাসের তত্ত্বের কথা জানতেন। তাঁর যুগান্তকারী গ্রন্থ 'স্বর্গীয় গোলকদের ঘূর্ণন'-এর পাণ্ডুলিপিতে কোপার্নিকাস অ্যারিস্টার্কাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু বইটি ছাপাবার সময় তা বাদ পডে় যায়। অ্যারিস্টার্কাসের প্রায় বিস্মৃত তত্ত্বটির কতটুকু যে কোপার্নিকাসের হাতে পৌঁছেছিল সেটা অবশ্য খুবই সন্দেহজনক। প্রাচীনকালে কারও কারও রচনায় সেৌরকন্দ্রিক তত্ত্বের সমর্থন আছে সেটুকু জেনেই তিনি খুশি ছিলেন। তারপর বহুবছর ধ'রে নানা গাণিতিক হিসাবনিকাশ ক'রে ভূকেন্দ্রিক তত্ত্বের চেয়ে সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বের শ্রেষ্ঠত্ব তিনি প্রমাণ করেছিলেন। কোপার্নিকাস পেয়েছিলেন গ্যালিলিও এবং কেপলারের মতো যোগ্য উত্তরসূরী। সৌরকেন্দ্রিক তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে কোপার্নিকাস, কেপলার ও গ্যালিলিওর। তবু অ্যারিস্টার্কাসকে আমরা ভুলে যেতে পারি না। তাঁর বুদ্ধি এবং সাহস আমাকে অবাক করে।